চট্টগ্রামে যৌতুকের দাবিতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক তরুণী। মামলার অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, ৫০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে তাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। এ ঘটনায় আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পাঁচলাইশ থানাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) সকালে চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক ফেরদৌস আরার আদালতে ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন ওই তরুণী। মামলার আসামিরা হলেন তার স্বামী ফাহিম আহমদ (২৪), শাশুড়ি ডা. শামীমা আক্তার (৫০) এবং শ্বশুর ডা. আশফাক আহমদ (৬৫)। তারা নগরীর পাঁচলাইশ থানার পাঁচলাইশ হাউজিং সোসাইটির স্যানমার নোবেলা হাসিন ভবনের বাসিন্দা।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ভুক্তভোগী তরুণী আল হিয়াদাহ্ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে এলেভেল সম্পন্ন করে বর্তমানে ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি তার শ্বশুরবাড়ির ভবনের উপরের ফ্ল্যাটের এক শিশুকে টিউশন পড়াতেন। সেই সূত্রেই আসামিরা তার সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেন।
প্রস্তাবের সময় আসামিরা আশ্বাস দেন যে, বিয়ের ক্ষেত্রে তাদের কোনো আর্থিক দাবি নেই এবং নববধূর পড়াশোনার ক্ষেত্রেও কোনো বাধা আসবে না। এমনকি স্বামী ফাহিম আহমদকে প্রতিষ্ঠিত চাকরিজীবী বলেও উল্লেখ করা হয়। এসব আশ্বাসের ভিত্তিতে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর ১৫ লাখ টাকা দেনমোহরে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।
বিয়ের পরপরই তরুণী জানতে পারেন, তার স্বামী ফাহিম আহমদ বেকার এবং অলস জীবনযাপন করেন। এরপরই তার শ্বশুর-শাশুড়ি তাকে যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকেন। ১০ ভরি স্বর্ণালংকার ও সেগুন কাঠের মূল্যবান ফার্নিচার দেওয়ার জন্য তাকে বাধ্য করা হয়।
যখন তিনি এই দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানান, তখন থেকেই শুরু হয় নানান ধরনের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন। ক্রমাগত হুমকি ও অত্যাচারের মাধ্যমে তার জীবন দুর্বিষহ করে তোলা হয়। একপর্যায়ে তার পড়াশোনা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা।
গত ১৭ মার্চ রাত সাড়ে ১১টার দিকে নির্যাতনের মাত্রা চূড়ান্ত রূপ নেয়। সেদিন তার স্বামী ফাহিম আহমদ ৫০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। তরুণী তাতে রাজি না হলে তীব্র কথাকাটাকাটির পরপরই স্বামী তাকে তলপেটে লাথি মারেন। শ্বশুর-শাশুড়িও তাকে কিল-ঘুষি মেরে গুরুতর আহত করেন।
মারধর করার পর তরুণী চরম ব্যথায় কাতরালেও তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে কেউ রাজি হননি। একা রিকশাযোগে তিনি ন্যাশনাল হাসপাতালে যান, কিন্তু তার শারীরিক অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সেখান থেকে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এ ঘটনার পর ভুক্তভোগী তরুণী আদালতের শরণাপন্ন হন এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এর ১১(গ)/৩০ ধারা এবং দণ্ডবিধির ৩১৩ ধারায় তার স্বামী, শাশুড়ি ও শ্বশুরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
বাদির আইনজীবী মো. খুরশিদ-উল-আলম সিকদার মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, “যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগ এনে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। আদালত সংশ্লিষ্ট থানাকে ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।”
এআই