জমির মালিকানা দাবি করে শুটকি মাছের ১০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সভাপতির দুই ছেলে।
জীবিকার একমাত্র অবলম্বন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানের সামনে আসহায়ের মত দোকান মালিকরা। ভুগছেন নিরাপত্তাহীনতা আর পন্য নস্ট হয়ে যাওয়ার শংকায়। দোকান বুঝে পেতে ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুরের এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন স্থানীয়সহ এলাকাবাসী।
প্রতিষ্ঠান মালিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৬ বছর আগে বেল্লাল মোল্লার কাছ থেকে ১০টি দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন তারা। ভাড়া নেয়ার সময় দোকান প্রতি ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা অগ্রিম নেয় বেল্লাল মোল্লা।
৫ আগষ্ট গনঅভ্যুত্থানের পর ওই জমির দাবী করেন কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সভাপতি আজিজ মুসুল্লী, রাশেদুল-আফতাব ও বেল্লাল মোল্লা। উদ্ভুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবেলায় তিনজনকে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানের জন্য বার বার অনুরোধ জানান। কিন্তু দীর্ঘদিনেও বিষয়টি সমাধান না করেননি তারা। পৌর বিএনপির সভাপতির ছেলে লতাচাপলী ইউনিয়ন যু্বদলের সহ-সাধারন সম্পাদক রিয়াজ মুসুল্লী দোকানীদের নতুন করে ভাড়ার চুক্তিপত্র করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। জমির মালিকানার বিষয়টি সমাধান না হওয়ায় দোকানীরা রিয়াজ মুসুল্লির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ করতে রাজি না হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালে রিয়াজ মুসুল্লী ও তার ভাই মহিপুর থানা যুবদলের যুগ্ন আহ্বায়ক সালাউদ্দিন মু্সুল্লীসহ তাদের অনুসারীরা দোকানগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মালিক বলেন, বেল্লাল মোল্লার সাথে লাখ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়ে ভাড়াচুক্তি করেছি। শুটকি বিক্রি করে জীবিকা চলে। দোকানে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে আমাদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। নতুন করে ভাড়াচুক্তি করতে বলেছে। দুইদিন পর ঈদ। রোজার একমাস কোন বিক্রি ছিলোনা, লোকসানে দিন কেটেছে। ঈদে দোকান খুলতে না পারলে আমাদের ব্যবসা লাটে উঠবে।
জমির মালিক দাবীদার বেল্লাল মোল্লা বলেন, ১৯৯৬ সালে পটুয়াখালী পৌরসভার কমিশনার মিলন মিয়ার স্ত্রী উম্মে সালমার কাছ থেকে এই জমির সাড়ে ১৬ শতাংশ ক্রয় করেছি। দোকান তুলে ভাড়া দিয়েছি। ভাড়া দেয়ার সময় অন্য কেউ এ জমির মালিকানা দাবি করেনি। হঠাৎ ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা দোকানগুলো দখলে নিয়েছে। এর আগে মুসুল্লী বাড়ির ছেলেরা আমাকে মারধর করেছে। আমি দীর্ঘদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম।
জমির মালিকানা দাবি করা রাসেদুল ও আফতাব বলেন, সাবেক লতাচাপলী মৌজার ১১২৭ নং ক্ষতিয়ানে ৫১৭৮/১০০২ এবং ৫১৮০/১০০৩ দাগের মালিক ৭ জন। আরজআলী, ওয়াজেদ আলী, আবদুল আলী, সোমেদ আলী, সেকান্দার আলী, সুলতান শেখ ও চান মিয়া। এসব মালিকের কাছ থেকে ৫ একর ৯৯ শতাংশ জমি লাল মিয়া ১৯৭০ সালে ক্রয় করেন। লাল মিয়ার ওয়ারিশগন ৭ মাস আগে আমাদের নামে আমোক্তারনামা দেয়। জমি বুঝে পাওয়ার জন্য অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। জমি বুঝে পাওয়ার জন্য দেওয়ানি মামলা চলমান রয়েছে।
কুয়াকাটা পৌর বিএনপির ১নং যুগ্ন সাধারন সম্পাদক আলাউদ্দিন ঘরামী বলেন, সভাপতির দুই ছেলে জোরপূর্বক ক্ষমতা খাটিয়ে এ কাজটি করেছে।দোকানে তালা দেওয়ার কারন রিয়াজের কাছে জানতে চাইলে সে উল্টা পাল্টা কথা বলে, দোকানীদের ভয়ভীতি দেখায়। এভাবে তাদের দোকানে তালা মারা কোনভাবেই ঠিক হয়নি। এটা আসলে দলের জন্য বদনাম।
কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সভাপতি আজিজ মু্সুল্লীর ছেলে লতাচাপলী ইউনিয়ন যুবদলের সহ সাধারন সম্পাদক রিয়াজ মুসুল্লী বলেন, জমির বিষয়টি ফয়সালার জন্য প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। দোকানীদের আমাদের কাছ থেকে ডিট নিতে বলেছি। কোন সমাধান না পেয়ে বৃহস্পতিবার দোকানগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছি।
কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সভাপতি আজিজ মুসুল্লী জানান, ওই জমির বৈধ মালিকানার কাগজপত্র রয়েছে। বেল্লাল মোল্লা আওয়ামী লীগের ক্ষমতার জোরে ওই জমি দখল করে মার্কেট নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছিল। রাসেদুল-আফতাব ওই জমি দাবি করলেও তাদের দাগ অন্য যায়গায়। আমার দাগের মধ্যে তাদের জমি নেই। যারা আমার সঙ্গে ডিট করেছে তাদের দোকান খুলে দেয়া হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, খোজখবর নিয়ে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এসআর