এইমাত্র
  • রাজধানীবাসীর জন্য পহেলা বৈশাখে যে নির্দেশনা দিল ডিএমপি
  • ডেঙ্গুতে দু’জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ২২ রোগী
  • আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট ১৭ ঘণ্টা পর চালু
  • নেতানিয়াহুর ছবিতে পেটানোর খবর ইসরাইলের গণমাধ্যমে
  • ‘মহাকাশ প্রযুক্তিতে সহযোগিতা বাংলাদেশ-তুরস্কের জন্য লাভজনক হবে’
  • সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ প্রধান উপদেষ্টার
  • আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরবরাহ বন্ধ, বাড়তে পারে লোডশেডিং
  • বেনাপোল কাস্টমসে ৯ মাসে রাজস্ব বেড়েছে ৩৬৬ কোটি টাকা
  • ফটিকছড়িতে বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার
  • তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে ডলারের মান
  • আজ রবিবার, ৩০ চৈত্র, ১৪৩১ | ১৩ এপ্রিল, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    ঈদ উপহার পেয়ে খুশিতে আনন্দিত তারা

    আরিফ হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (বরিশাল) প্রকাশ: ৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৫২ পিএম
    আরিফ হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (বরিশাল) প্রকাশ: ৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৫২ পিএম

    ঈদ উপহার পেয়ে খুশিতে আনন্দিত তারা

    আরিফ হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (বরিশাল) প্রকাশ: ৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৫২ পিএম

    মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র মানুষের সম্মানের কথা চিন্তা করে গোপনে রাতের আধারে বস্তিতে গিয়ে ঘরে ঘরে ঈদের আগের দিন এবং ঈদে দিন সকালে উপহার পৌঁছে দিয়েছেন চাকরীজিবী বন্ধুদের নিয়ে করা ‘ইভেন্ট- ৮৪ গ্রুপ’। আর সেই উপহার পেয়ে ঈদের দিন সন্তানদের মুখে পোলাউ-মাংস,সেমাই দিতে পেরে খুশি পরিবারগুলো।

    সাহায্য পাওয়া বিউটি নামে এক গৃহবধূ রবিববার (৬ এপ্রিল) দুপুরে নগরীর বেলের্স পার্ক বসে কথা গুলো বলছিলেন একই এলাকার সহযোগিতা পাওয়া শতবর্ষী এক মায়ের সাথে। তবে ঈদের দিন উপহার পেয়ে খুশি দেখে হৃদয় ছুঁয়েছে বলে জানিয়েছেন ৮৪ গ্রুপের বরিশালের অ্যাডমিনের দায়িত্বে থাকা বরিশাল জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মানবিক সাজ্জাদ পারভেজ। তিনি তার এস এসসি ৮৪ ব্যাচের ৪২ বন্ধুদের সাথে নিয়ে গঠন করা এই গ্রুপটি মানবিক কাজে সহায়তা করে থাকেন। তাদের ৮৪ গ্রুপের সদস্যরা দেশের দশ জেলায় অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে ইতি মধ্যে মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

    তাদের মূল টার্গেট হলো অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করা এবং তাদের পাশে থাকা। ঈদের আগে দিন রাতে ও ঈদের দিন সকালে নগরীর কেডিসি রাজ্জাক কলোনী, ভাটার খাল বস্তি, স্টিডিয়াম কলোনীতে বসবাস করা প্রায় দুই শতাধিক দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয় ঈদ উপহার সামগ্রী। ধনী-গরীব সবাই মিলে ঈদ খুশি ভাগাভাগি করে নেবার জন্যই প্রত্যেক পরিবারের মাঝে সেমাই, চিনি, দুধ, পোলাউর চাল, মুরগী, তৈল ঈদ শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে দেন।

    জানা গেছে, মুখফুটে বলতে পারবে না, এই মানুষগুলোর জন্য কিছু করার তাড়না থেকেই এই উদ্যোগ গ্রহণ করেন ‘ইভেন্ট- ৮৪ গ্রুপ’। তাদের এ উদ্যোগের সাথে সম্পৃক্ত হন দেশ বিদেশের ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, প্রবাসী ও অন্যান্য পেশাজীবীরা। প্রবাসী শওকত মীর্জা’র উদ্যোগে ২০২৩ সালে ৮৪ ইভেন্টের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছিলো প্রত্যেকে নিজেদের সাধ্যমত সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। অসহায় পরিবার গুলো তাদের ঈদের উপহার পেয়ে তা রান্না করে সন্তানদের মুখে দিতে পেয়ে খুশিতে আনন্দিত হয়ে পড়েন।

    প্রচার বিমুখ ‘ইভেন্ট-৮৪ গ্রুপ’এর সেবক সাজ্জাদ বলেন, প্রস্তাবটি শোনার পর এটি বাস্তবায়নের জন্য অর্থ, শ্রম, বুদ্ধি ও পরামর্শ দিয়ে আমরা বন্ধুরা মহৎ এ কাজে এগিয়ে আসি। প্রতিমাসের বেতনের একটি অংশ থেকে একটা অর্থ দেই সংগঠনে। আর সেই অর্থ দিয়েই আমরা দেশের স্বচ্ছলদের কাছে আমাদের আহ্বান পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি। উদ্যোমী এই বন্ধুরা বলেন, গল্পটা ছিলো মানবতার, ভালোবাসার। আমাদের একতা ও সবাইকে নিয়ে সবার পাশে দাঁড়ানোর সক্ষমতায় এটা এখন মহাযজ্ঞে পরিনত হয়েছে। যাদের উপহার দেয়া হবে তাদের ছবি না তুলে নাম গোপন রাখা রেখে হাতে গোনা কয়েকজনকে নিয়ে আমরা ঈদ উপহার বিতরণ শুরু করেছি।

    এর অন্যতম কারন-সামাজিক দূরত্ব ও রাষ্ট্রীয় বিধি মেনে চলা। যাদের উপহার দেওয়া হচ্ছে, তাদের কোনো ছবি তোলা বা নাম প্রকাশ করা সম্পূর্ণ নিষেধ। তারা বলেন, কঠোরভাবে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হচ্ছে। স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য আমরা উপহার সামগ্রী গ্রহণকারীদের একটা তালিকা সংরক্ষণ করছি। বরিশালে বিভিন্ন অসচ্ছলব্যক্তিকে সহায়তা করেছি। কয়েকজন শিশুর লেখা পড়ার দায়িত্ব নিয়েছি। চিকিৎসার জন্য অনুদান দেওয়া অব্যাহত রয়েছে।

    প্রতিবেদকের প্রশ্নঃ

    দিনে না এসে কেন রাতে এসে উপহার দেওয়া হচ্ছে। উত্তরে সমাজ সেবক সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, ঈদ উপহার দেয়াটি যেন তাদের মনে গ্রহন নিয়ে কোন প্রশ্ন না থাকে। পাশে বাড়ির কেউ যেন তাদের ছোট না করতে পারে। সেজন্যই এই রাতে ঘরে ঘরে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। হঠাৎ রাতে ঘরের দরজা খুলেই সামনে একটি ব্যাগ দেখে প্রথমে প্রশ্ন উঠে কে রাখলো এটা। কি আছে এটার মধ্যে। পরে ব্যাগটি খুলে দেখতে পান ব্যাগে লেখা আছে ঈদ উপহার। পরে তারা ঈদ উপহার পেয়ে আনন্দিত হয়ে উঠেন।

    কেডিসি বালুর মাঠ কলোনীর এক গৃহবধূ বলেন, এর আগে কখনো কেউ এভাবে কিছু দেয়নি। ছেলেগুলো বাসায় এসে দিয়ে গেলো ঈদ উপহার। আমার স্বামী রিক্সা চালায় আয় প্রতিদিন ৩শ’ টাকার মত। তা দিয়ে তিন ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনা, ঘর ভাড়া , বেটে ভাত দেওয়া কষ্ঠের হয়ে দায়িছে। ঈদে সন্তানদের জন্য কোন ভালো খাবারও কিনতে পারিনি।

    তিনি বলেন, গরীবদের পাশে এখনও ভালো মানুষ গুলো দাড়ায় বলেই আল্লাহ তালার আমাদের বাচিয়ে রেখেছে। তারই প্রমান আজ নিজ চোখে দেখলাম। উপহারটি পেয়ে ঈদের দিন সকালে সন্তানদের মুখে একটু ভালো খাবার রান্না করে দিতে পেরে আমার মনটা জুড়িয়ে গেছে। যারাই দিয়েছে আল্লাহ যেন তাদের আমাদের মত আরো অনেক অসহায় পরিবারকে দেওয়ার সাম্যর্থ দেন।

    ঈদ উপহার পেয়ে স্বামী হারা বিউটি বলেন, আমার স্বামী মারা গেছে আজ ৩ বছর। রেখে গেছেন দুইটি ছোট ছোট সন্তার। কি করবো তাদের নিয়ে। কি খাওয়াবো ওদের। এই চিন্তায় ৪ দিন না খেয়ে ছিলাম। পরে সন্তাদের মুখে ভাত যোগান করে দেওয়ার জন্য একটি বাসায় কাঝ করি। সেখান থেকে ২ হাজার টাকা পাই। এক হাজার টাকা দিয়ে ঘর ভাড়া দেই। আর বাকি এক হাজার টাকা দিয়ে পুরো এক চলতে হয়। তবে বেশির ভাগ সময়ই আলু আর ডাল দিয়ে ভাত খেতে হয়। তাদের উপহার পেয়ে অনেক দিন পরে ঈদের দিন মাংস পোলাউ রান্না করে ছেলেদের খাওয়াতে পেরেছি। আল্লাহ যেন এই ভাই বাচিয়ে রাখে গরীবদের সহযোগীতা করার জন্য।

    সমাজ সেবক সাজ্জাদ বলেন, আমরা চাই, সমাজের প্রতিটি মানুষ ঈদের আনন্দ উপভোগ করুক। তাই প্রকৃত অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাড়িয়ে বিভিন্ন সময় তাদের সহযোগীতা করার জন্য সবার প্রতি আহবান জানান।

    এসআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…