কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার ভাওরখোলা ইউনিয়নের শিবনগর ও চরনারায়নপুর গ্রামে জমি সংক্রান্ত পুরনো বিরোধকে কেন্দ্র করে দুটি পৃথক হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে এক শিশু ও নারীসহ অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন।
অভিযোগপত্রে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মারধর, শ্লীলতাহানির চেষ্টা এবং অর্থ ছিনতাইয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে। ঘটনার পর মেঘনা থানায় দুটি পৃথক লিখিত অভিযোগ দিলেও এখনও পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এ নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।
প্রথম ঘটনাটি ঘটে ২০২৪ সালের ১৪ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে। শিবনগর গ্রামের বাসিন্দা রেখা আক্তার (৪১) জানান, তিনি তার নিজ বসতবাড়িতে অবস্থান করছিলেন। এ সময় মৃত ইছহাক মিয়ার ছেলে বাছেদ মিয়ার (৫২) নেতৃত্বে একদল লোক ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে তার বাড়িতে হামলা চালায়।
রেখা অভিযোগ করেন, “তারা আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কাঠের রোল দিয়ে মাথায় আঘাত করে। বাম কাঁধে রক্ত জমাট বাঁধা জখম হয়। এরপর আমাকে বিবস্ত্র করার চেষ্টা করে। শ্লীলতাহানির চেষ্টাও করেছে।” তার চিৎকারে পরিবারের অন্য সদস্যরা ছুটে এলে হামলাকারীরা তাদের ওপরও চড়াও হয়। স্বামী আলেক মিয়া ও অন্য স্বজনদেরও মারধর করা হয়। পরে স্থানীয়রা এসে তাদের উদ্ধার করে মেঘনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
রেখা আক্তার থানায় দেওয়া অভিযোগপত্রে ছয়জনের নাম উল্লেখ করেছেন। তারা হলেন-বাছেদ মিয়া (৫২), তার ছেলে মিলন মিয়া (৩২), মুছা মিয়া (২৫), ইছহাক মিয়ার ছেলে শাহজাহান মিয়া (৬০), শাহজাহানের ছেলে অলু মিয়া (৩৪) এবং বাছেদ মিয়ার স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৪০)। এছাড়াও আরও তিন-চারজনকে অজ্ঞাত আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ওই গ্রামের ফৈজুদ্দিন দরবেশ মাজারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে বাদীর স্বামী আলেক মিয়ার সঙ্গে আসামিদের বিরোধ চলে আসছিল। সেই বিরোধের জেরেই এই হামলা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে চলতি বছরের ৩১ মার্চ সকালে, একই গ্রামের বাসিন্দা বাবু মিয়ার (৪৩) বাড়িতে। অভিযোগপত্রে তিনি জানান, জমি নিয়ে পুরনো বিরোধের জেরে শাহজাহান মিয়ার ছেলে বিল্লাল হোসেন (৩২), আব্দুল বাছেদের ছেলে হিরন মিয়া (৩৫), মিলন মিয়া (৩০), মুসা মিয়া (২৭), শাহজাহান মিয়ার ছেলে অলিউল্লাহ (২৮), মৃত ইছহাক মিয়ার ছেলে বাছেদ মিয়া (৫২) ও শাহজাহান মিয়া (৬০) লাঠিসোটা ও হকিস্টিক নিয়ে তার বাড়িতে হামলা চালায়।
হামলার সময় মো. আরাফাত (১১) ও ইউনুছ মিয়াকে (২০) এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়। আরাফাতের মাথা ও ডান পায়ে গুরুতর আঘাত এবং ইউনুছের শরীরজুড়ে নীল ও ফাটা জখম হয়। ইউনুছের পকেট থেকে ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
বাবু মিয়া বলেন, ঈদের দিন “আমার ছেলেটার ডান পা রডের আগাতে পা ফাটিয়ে দিয়েছে। চিকিৎসা করিয়েছি, কিন্তু কেউ দেখতে আসেনি। বরং হামলাকারীরা এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা এখন ঘরের ভেতরেও নিরাপদ নই।” এই ঘটনাতেও প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে একাধিক স্থানীয় ব্যক্তির নাম অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
দুটি অভিযোগেই হামলাকারীদের প্রকাশ্যে চলাফেরা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। রেখা আক্তার বলেন, “অভিযোগ দিয়েছি মাসখানেক, কোনো ব্যবস্থা নেই। প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘুরছে তারা, যেন কিছুই হয়নি। অথচ আমরা প্রতিদিন আতঙ্কে থাকি।”বাবু মিয়া বলেন, “আমরা কোনো ধরনের মামলা-মোকদ্দমা চাইনি, শুধু শান্তিতে থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন জীবন নিয়ে টানাটানি চলছে। পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, বাধ্য হয়েই আমাকে মামলা করতে হয়েছে।”
এ বিষয়ে মেঘনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল জলিল বলেন,“বিষয়টি নিয়ে ডকুমেন্টস দেখে বলা সম্ভব। আপনি চাইলে থানায় এসে বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন।
শিবনগর গ্রামে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, অনেক বাড়ির দরজা দিনে-দুপুরেও বন্ধ। শিশুরা খেলছে না, নারীরা বাইরে আসছেন না। একজন গ্রামবাসী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এই গ্রামে আগে এমনটা ছিল না। এখন সবাই ভয়ে আছে। পুলিশ ব্যবস্থা না নিলে বড় কিছু ঘটে যেতে পারে।”
এমআর