এইমাত্র
  • সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ গ্রেপ্তার
  • এবার সংবিধান বাতিলের দাবি হাসনাত আবদুল্লাহর
  • বৃষ্টি হলেই রাস্তায় হাঁটুপানি, চরম ভোগান্তিতে কুমিল্লা নগরবাসী
  • পিরোজপুরে ৪৫৮টি মন্দিরে চলছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি
  • নির্বাচন থেকে সংস্কার বেশি গুরুত্বপূর্ণ: জামায়াতের আমির
  • রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া পুলিশের সংস্কার হবে না: নুরুল হুদা
  • মিরসরাইয়ে ট্রেনে কাটা অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার
  • প্রধান উপদেষ্টার কাছে সব ইউনিয়ন পরিষদ বাতিল চেয়েছি: মির্জা ফখরুল
  • আমরা মাঠে আছি, নির্ভয়ে মণ্ডপে যান: সেনাপ্রধান
  • মধ্যপ্রাচ্যে থাকা প্রবাসীদের জন্য সুখবর দিলেন আসিফ নজরুল
  • আজ শনিবার, ২০ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৫ অক্টোবর, ২০২৪
    দেশজুড়ে

    ওসি পদে পোস্টিং নিতে বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তার দৌড়ঝাঁপ

    শাহাদাৎ বাবু, নোয়াখালী প্রতিনিধি প্রকাশ: ৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:১২ পিএম
    শাহাদাৎ বাবু, নোয়াখালী প্রতিনিধি প্রকাশ: ৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:১২ পিএম

    ওসি পদে পোস্টিং নিতে বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তার দৌড়ঝাঁপ

    শাহাদাৎ বাবু, নোয়াখালী প্রতিনিধি প্রকাশ: ৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:১২ পিএম

    বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন দমনে কঠোর অবস্থান ও বিএনপি জামাতের নেতাকর্মীদের হয়রানিসহ ঘুষ দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ থাকার পরেও নোয়াখালী ডিএসবির (বিশেষ গোয়েন্দা) শাখার বিতর্কিত পুলিশ পরিদর্শক জিয়া মো. মোস্তাফিজ ভুইয়া এখনো স্বপদে বহাল থেকে তার চাহিত নোয়াখালী সদর অথবা হাতিয়া থানায় পোস্টিং নিতে ব্যাপক তোড়জোড় চালিয়ে যাচ্ছেন।

    গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ৫ই আগস্টে স্বৈরশাসকের পতনের পর নোয়াখালী জেলায় সকল থানার ওসি ও পুলিশের সকল শাখায় গণহারে বদলি হলেও এই কর্মকর্তা এখনো বহাল তবিয়তে থাকায় জেলাবাসীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় প্রশ্ন তুলছেন যে, কোন খুটির বলে তিনি এখনো স্বপদে বহাল রয়েছেন ? ফ্যাসিবাদের দোষর হয়ে স্বৈরাচারের মতো করে নিজের দাম্ভিকতা প্রকাশ করে বলেছেন, আমাকে বদলি করার মতো ক্ষমতা জেলার কারো নেই। তবে কি সেটাই সত্যি ?

    খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২ সালের এপ্রিলে লক্ষীপুর জেলা থেকে নোয়াখালীতে এসে মে মাসে ডিএসবিতে যোগদান করেন। আর ডিএসবিতে যোগদান করে পাসপোর্ট ভেরিফাইয়ের জন্য কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সময় বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রতিটি পাসপোর্ট থেকে ১২০০ টাকা হারে ঘুসের টাকা নির্ধারন করেন। নির্ধারিত ঘুসের টাকা ব্যাতিত কাউকে সময়মতো পাসপোর্ট দেওয়া হতো না তাদের মনগড়া সময় সাপেক্ষ রিপোর্টিং এর কারণে।

    ডিএসবির পাসপোর্ট শাখায় কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ১২০০ টাকা ঘুসের মধ্যে তৎকালীন এসপি শহীদুলকে প্রতি পাসপোর্টের জন্য ৬০০ টাকা,ডিআই-১ এর জন্য ৫০০ টাকা বাকি ১০০ টাকা তদন্ত সংশ্লিষ্ট ও অফিসের লজিস্টিক বাবদ তিনি খরচ দেখাতেন। এদিকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্যেও প্রতি আবেদনের ৫০০ টাকা সংশ্লিষ্ট থানাগুলোর ওসি থেকে মাসোয়ারা পেতেন। তৎকালীন এসপি শহীদুল ইসলাম বদলি হওয়ার পর এসপি মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান এইখাত থেকে মাসোয়ারা না নিলেও এই দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেননি তিনি।

    নোয়াখালী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের একটি সূত্র থেকে জানা যায়, গড়ে প্রায় প্রতিদিন ৪০০ টি পাসপোর্ট ভেরিফাইয়ের জন্য ডিএসবিতে যায়। মানুষ জরুরিভাবে পাসপোর্টের অর্থ পরিশোধ করলেও তাদেরকে আমরা সময়মত পাসপোর্ট ডেলিভারি দিতে পারি না এই ডিএসবির ভেরিফাইয়ের জটিলতার কারণে । অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, তৎকালীন এসপিকে প্রতিমাসে ডিএসবি থেকে ৩৭ লক্ষ টাকা মাসোয়ারা হিসাবে প্রদান করতেন এই ডিআই-১ জিয়া মো. মোস্তাফিজ।

    একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, তাঁর দায়িত্বকালীন সময়ে এ পর্যন্ত মোট ৩ লক্ষ ২০ হাজার পাসপোর্ট ভেরিফাই করেছেন। আর এখান থেকে প্রতিটি পাসপোর্টের ব্যক্তিগতভাবে ৫০০ টাকা ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স বাবদ আরো ৫০০ টাকা করে নিয়ে হয়েছেন শত কোটি টাকার মালিক।

    খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তার সন্তান কানাডাতে পড়াশোনা করার সুবাদে সমুদয় টাকা হুন্ডির মাধ্যমে কানাডায় পাচার করে দিয়েছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছেন। গুরুতর অভিযোগের মধ্যে তার বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক সেবেনের মত অভিযোগ। অভিযোগ রয়েছে অফিস কক্ষে বসেই তিনি মাদক সেবন করতেন। একদিন অবচেতনভাবে তার কক্ষে একটি মদের বোতল ফেলে যান। আর সেই ফেলে যাওয়া মদের বোতলের ছবি তুলে সদ্য বিদায়ী এসপি আসাদুজ্জামানকে দেওয়ার অপরাধে মাস্টাররোলের চাকরি থেকে অফিস পিয়ন মো. হারুনকে বরখাস্ত করেন ডিআই-১ জিয়া মো. মোস্তাফিজ ভুইয়া।

    জানা যায়,আরেক অফিস পিয়ন সবুজ ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার রতন কৃষ্ণ পালের মাধ্যমে বিদেশি মদ সেবন করতেন এবং পুলিশের একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে সরবরাহও করতেন। এবিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায়ের একজন সিনিয়র নেতা। পাশাপাশি তিনি এটাও নিশ্চিত করেন যে, বর্তমানে বেগমগঞ্জের একজন প্রভাবশালী বিএনপির নেতাকে দিয়ে জোর তদবির করছেন নোয়াখালীর সদর অথবা হাতিয়া থানায় ওসি হিসাবে পোস্টিং নিতে।

    পুলিশের একটি সূত্র থেকে জানা যায়, আওয়ামীলীগের আমলে এর আগে দুই দফা বিভিন্ন থানায় ওসি হিসাবে পোস্টিং নিয়েছিলেন মোস্তাফিজ। কিন্তু কোথাও ৬ মাসের বেশি চাকরি করতে পারেননি। কেন পারেনি এই প্রশ্নে সূত্র জানায়,তার অধস্তনদের সাথে রূঢ় আচরণ, নৈতিক স্খলন জনিত অপরাধ এবং বেপরোয়া ঘুস বাণিজ্য ছিল অন্যতম কারণ।

    সরকারি গাড়ির অপব্যবহার করে চলেছেন অনায়াসে। পুলিশের চাকরি বিধানে ডিআই-১ হিসাবে গাড়ি ব্যবহারে প্রাধিকার না হওয়া সত্ত্বেও ডাবল কেবিনের একটি পুলিশ ভ্যান গত এক বছর ধরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যাক্তিগত গাড়ির ন্যায় ব্যবহার করে আসছেন ডিআই-১ মোস্তাফিজ। আর এতে জ্বালানি খরচ বাবদ সরকারের কয়েক লক্ষ টাকা গর্চা দিতে হয়েছে। এদিকে ৫ই আগস্টের পর সোনাইমুড়ী ও চাটখিল থানার ওসিরা গাড়ির অভাবে স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। উল্লেখ্য এর আগে নোয়াখালীতে কোনো ডিআই-১কে গাড়ি হাকিয়ে অফিস করতে দেখা যায়নি।

    স্বৈরাচারী সরকারের সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের এমপিদের মনোনীত প্রার্থী সদর উপজেলার একেএম সামছুদ্দিন জেহান,সুবর্ণচর উপজেলার এমপি পুত্র সাবাব চৌধুরী, বেগমগঞ্জের শাহরিয়ার ও সেনবাগের এমপি পুত্র দীপুকে জিতিয়ে আনতে ডিআই-১ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনকে সাজান। এবং তাদেরকেই নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো যাদের তালিকা মোস্তাফিজ সরবরাহ করেছিলেন।

    অপরদিকে ৫ আগস্টের সরকার পতনের পর ৭ আগস্ট ডিএসবি অফিসে রহস্যময় কারণে ঘটে আগুন লাগার ঘটনা। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সারাদেশে উত্তপ্ত পরিস্থিতি থাকলেও নোয়াখালী জেলাশহর এবং সদর উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বভাবিক রাখতে অত্যন্ত বিচক্ষণ ভাবে সমর্থ হয় তৎকালীন পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান। ৫ আগস্টের বিপ্লবে স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটে কিন্তু ৭ই আগস্ট কেন রহস্যময়ভাবে আগুন জলে ডিএসবি অফিসে ?

    আসুন জেনে নেয়া যাক, সেদিন রহস্যময় আগুনে নোয়াখালী ডিএসবি অফিসের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সমৃদ্ধ একাধিক সরকারি ল্যাপটপ,গুরুত্বপূর্ণ নথি এবং ফটোকপি মেশিনসহ আরো অনেক কিছু পুড়ে যায়। ডিএসবি ( বিশেষ গোয়েন্দা) শাখায় রক্ষিত রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং নথিপত্র পুড়ে যাওয়ার পরও অজ্ঞাত কারণে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি।

    পুলিশের সেই সূত্র থেকে জানা যায়, এখানে সেই সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষিত ছিল যা বিগত দিনে যেসকল মানুষ যাদের নামে মামলা ছিলো তাদের পাসপোর্ট আবেদনের ভেরিফাইয়ের নেগেটিভ রিপোর্টকে মোটা অংকের বিনিময়ে ডিআই-১ পজিটিভ রিপোর্ট হিসেবে চালিয়ে দিয়েছিল এবং রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট থেকেও লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে করা হয়েছিল সেইসব রিপোর্ট । এসব তথ্য ছাড়াও আরো বেশকিছু গোপন তথ্য সংরক্ষিত ছিল ল্যাপটপসহ বিভিন্ন নথিতে। কিন্তু রহস্যজনক সেই অগ্নিকাণ্ডে সকল কিছু পুড়ে ছাই। সূত্র দাবি করে ভবিষ্যতে যাতে কোনরূপ তদন্তের মুখে পড়তে না হয় এজন্যই কৃত্রিম আগুন লাগার ঘটনা সংঘটিত করা হয়। এই আগুন লাগার ঘটনা তদন্ত করার জোর দাবি এখন সর্ব মহলের।

    নোয়াখালীতে আসার পর হতে ডিআই-১ নিজেকে চট্রগ্রামের লোক বলে পরিচয় দিতেন। কিন্তু তার জাতীয় পরিচয় পত্রে বাড়ি নরসিংদী জেলায় বলে জানা যায়। পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, উক্ত মোস্তাফিজ যখন যেখানে চাকরি করেছেন সুবিধাজনক বাড়ির ঠিকানার পরিচয় দিয়েছেন।

    নোয়াখালী জেলায় কর্মরত নোয়াখালীস্থ চট্রগ্রাম সমিতির নেতা ট্রাফিক পুলিশের টিআই সিরাজ উদ-দৌলা বলেন, তিনি নিজেকে চট্টগ্রামের দাবি করলেও তার বাড়ি কোথায় সেটা আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারবো না। এর আগে নোয়াখালী জেলায় কর্মরত চট্রগ্রামের পুলিশ সদস্যদের নিয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। আর সেই সিন্ডিকেট গড়ার নেপথ্যের কারিগর সদর থানার তৎকালীন ওসি মো. আনোয়ার হোসেন ও ডিএসবির ডিআই-১ জিয়া মো. মোস্তাফিজের সিন্ডিকেট এসপিকে মাসোয়ারা দিয়ে অন্যান্য জেলার পুলিশ কর্তাদের রীতিমতো কোনঠাসা করার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

    সম্প্রতি এ জেলায় বদলি হয়ে আসা নবাগত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল ফারুক ২০২৪ সালের গত ২৬ সেপ্টেম্বর জেলার কর্মরত সাংবাদিকদের নিয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়েজন করেন। সেই প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত একাধিক সাংবাদিক ডিআই-১ জিয়া মো. মোস্তাফিজ ভুইয়ার আংশিক দূর্ণীতির চিত্র তুলে ধরে তদন্তের দাবি জানান।

    কিন্তু দাবি জানানোর বেশকিছুদিন পার হলেও অদৃশ্য কারণে কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করার খবর পাওয়া যায়নি। এই বিষয়ে জেলার নবাগত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল ফারুক জানান, দূর্গাপুজাসহ বিভিন্ন থানা পরিদর্শনে ব্যস্ত থাকায় তদন্ত কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। তবে কোনো বিতর্কিত দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে থানার ওসি হিসাবে পদায়ন করা হবে না।

    খবর নিয়ে জানা যায়, তৎকালীন স্বৈরসরকারের আমলে বিরাট বড় আওয়ামী লীগার হলেও এখন জেলায় শীর্ষস্থানীয় বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে নিজেকে বিএনপিপন্থী অফিসার দাবি করে থানার ওসির পদ ভাগিয়ে নিতে সর্বোচ্চ দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন এই কর্মকর্তা।

    এমআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…