বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। প্রতিষ্ঠা সময় ছাত্র অধিকার রক্ষায় সোচ্চার থাকলেও গত ১৫ বছরে দলীয় আনুগত্য এবং নানা অপকর্মের কারণে বিতর্কিত হয়ে উঠেছে সংগঠনটি। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ছাত্রলীগের ছিল অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রভাব। আবাসিক হলগুলোতে আসন বাণিজ্য, ডাইনিংয়ের টাকা আত্মসাৎ, গেস্টরুমে নির্যাতন, শিক্ষকদের অবমাননা এবং র্যাগিংসহ নানা অভিযোগ ছিল ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। বাকৃবিসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ তার নিয়ন্ত্রণ হারায়। এরপর থেকেই বদলাতে শুরু করে ক্যাম্পাসের পরিবেশ। শিক্ষার্থীরা ফিরে পায় শান্তি। মুক্ত পরিবেশে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম।
বাকৃবিতে ছেলেদের জন্য ৯টি এবং মেয়েদের জন্য ৫টি হল রয়েছে। হলগুলোতে আবাসন সংকট না থাকলেও আগে শিক্ষার্থীদের আসন পেতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের টাকা দিতে হতো। প্রতি আসনের জন্য নেওয়া হতো ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা।
ভেটেরিনারি অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রায়হান হৃদয় বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর হলে উঠলে ছাত্রলীগের অত্যাচারের কারণে হল ত্যাগ করি। পরবর্তী প্রায় দুই বছরের মতো হলের বাইরে ছিলাম। যা আমার পরিবারের জন্য আর্থিক চাপ তৈরি করেছিল। তারপর হলে উঠার চেষ্টা করলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাকে বাধা দেয়। হলের প্রাধ্যক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে টাকা ছাড়া হলে তোলতে অপারগতা জানান। শেষ পর্যন্ত ফজলুল হক হলের ছাত্রলীগ নেতাদের মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে হলে উঠতে বাধ্য হই।
শিক্ষার্থীরা জানান, বর্তমানে মেধার ভিত্তিতে সিট বণ্টন করা হচ্ছে । প্রতিটি কক্ষে তিনজন শিক্ষার্থী থাকছেন। ছাত্রলীগের সময়ে এক কক্ষে চার বা তারও বেশি শিক্ষার্থী ছিলেন।
হলের ডাইনিং ব্যবস্থাপনাতেও পরিবর্তন এসেছে। শিক্ষার্থীরা ১শ’ টাকার মধ্যে দুইবার স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু খাবার খাচ্ছেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, আগে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে ডাইনিংয়ের খাবারের ছিল নিম্নমানের এবং অস্বাস্থ্যকর। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হতো খাবার জন্য। এমনকি মাসের মধ্যভাগে ডাইনিং বন্ধ হয়ে যেতো। কিন্তু টাকা চলে যেতো নেতাদের পকেটে।
কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থী জাকিয়া জাহান বলেন, “আগের ফ্যাকাশে ঝোলের জায়গায় মানসম্পন্ন খাবার পাচ্ছি। মুরগি, মাছ, সবজি সবকিছুর মান বেড়েছে এবং খেতেও সুস্বাদু। এখন ডাইনিংয়ে লাইন ধরে খেতে হয়।"
ছাত্রলীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা হতো। এছাড়াও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে জোরপূর্বক যুক্ত করত। কেউ অপারগতা দেখালে গেস্টরুমে র্যাগিং চালানো হতো বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ জানান, "পরীক্ষা থাকায় একদিন ছাত্রলীগের মিছিলে যেতে পারিনি। এর কারণে রাতে বেধড়ক স্ট্যাম্প দিয়ে মারধর করা হয় এবং দুই ঘণ্টা জানালার গ্রিলে ঝুলিয়ে রাখে। তাদের নির্যাতনের ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পাইনি।”
গত ১৫ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা অপকর্মের বিচার করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রশাসনের উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের নির্ভয়ে অভিযোগ দেওয়ার জন্য একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ গ্রহণ করতে হলে হলে গিয়ে তাদের উৎসাহিতও করা হচ্ছে। ১০ নভেম্বর শেষ হবে অভিযোগ দেওয়ার সময়। এরপর শুরু হবে বিচার বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির সদস্যবৃন্দ।
এইচএ