গত কয়েকদিনের কনকনে শীতকে উপেক্ষা করে প্রতিদিনই বাড়ছে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। ক্রেতা-বিক্রেতা আর বিনোদনপ্রেমীদের ভিড় জানান দিচ্ছে জমে উঠেছে মাসব্যাপী জামদানি শিল্প পণ্য মেলা। নতুন প্রজন্মের কাছে দেশীয় জামদানি সর্ম্পকে পরিচিতি ও মসলিনখ্যাত ঐতিহ্যবাহী জামদানি শাড়ির বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বরিশালের গৌরনদীতে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী জামদানি শিল্প পণ্য মেলা।
মেলায় জামদানি শাড়ির পাশাপাশি দেশীয় বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন দোকানীরা। ফলে জামদানি শিল্প পণ্য মেলা এখন অনেকটা বাণিজ্য মেলায় পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত উৎসবের আমেজ থেকে বঞ্চিত গৌরনদীবাসী যেন প্রান ফিরে পেয়েছে মেলার কারনে। বাংলাদেশ জামদানি ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্ট এসোসিয়েশনের আয়োজনে গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে বরিশাল জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে গৌরনদী থানা সংলগ্ন পৌরসভার বালুর মাঠে ৬০টি স্টল নির্মান করে শুরু হয় মাসব্যাপী জামদানি শিল্প পণ্য মেলা।
মেলায় জামদানি শাড়ির স্টল থেকে শুরু করে থ্রি-পিচের স্টল, গৃহস্থলি পণ্য, কসমেটিক্স, কাপড়চোপড়, আসবাবপত্র, ইলেকট্রনিক্স পণ্য, দেশী-বিদেশী পোশাক, জুতা, সাজসজ্জা ও প্রসাধনী জাতীয় পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের বাহারি সমাহার রয়েছে। বিনোদনের জন্য নৌকা দোলা রাইড, ড্রাগন ট্রেন, ভূতের ঘরসহ রয়েছে বিভিন্ন ব্যবস্থা। এছাড়াও মুখরোচক খাবারের দোকানের কমতি নেই মেলা প্রাঙ্গনে। সবকিছুর মধ্যে দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে মেলার মধ্যবর্তীস্থানে নির্মিত অস্থায়ী ঝর্ণা।
সবমিলিয়ে মেলা শুরুর পর থেকেই কনকনে শীতকে উপেক্ষা করে বরিশাল, গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, কালকিনি, উজিরপুর, কোটালীপাড়া, মুলাদী, বাবুগঞ্জ, বানারীপাড়াসহ বিভিন্ন উপজেলার বিনোদনপ্রেমীদের আকর্ষনীয় স্থান হয়ে উঠছে গৌরনদী জামদানি মেলা প্রাঙ্গন। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মেলায় দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। তবে শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় অন্যান্য দিনের তুলনায় সেইদিন দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে বেশি। এ দুইদিনে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে মেলায় ঘুরতে আসেন চাকরিজীবীরা।
আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা থেকে মেলায় আসা দর্শনার্থী বিএম জাহিদ বলেন, করোনার পর থেকে বিনোদনের জন্য তেমন কোন ব্যবস্থা হয়নি। দীর্ঘদিন পরে হলেও গৌরনদীতে মাসব্যাপী মেলা শুরু হয়েছে। তাই স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে মেলায় ঘুরতে পেরে আনন্দিত। একাধিক নারী দর্শনার্থীরা জানিয়েছেন, এই মূহুর্তে বাচ্চাদের পড়াশুনার চাপ কম। লেখাপড়ার পাশাপাশি শিশুদের মানসিক বিকাশে বিনোদনের প্রয়োজন। তাই স্বামী-সন্তান নিয়ে মেলায় ঘুরতে এসেছি। তাছাড়া মেলায় প্রবেশে টিকিটের মূল্য মাত্র দশ টাকা ও মেলার স্টলগুলোর বাহারি পণ্যের দাম হাতের নাগালে থাকায় তারা বেজায় খুশি।
মেলার আয়োজক মাজেদুল ইসলাম ও আলী আজগর বলেন, দেশের বিভিন্নপ্রান্তে আমাদের মেলা আয়োজনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেই আলোকে গৌরনদীবাসীকে বিনোদন দেওয়ার জন্যই এ মেলার আয়োজন। মেলার আনন্দ যেন পরিবারের সবাই মিলে একসাথে উপভোগ করতে পারে সেজন্য মেলায় অশ্লীলতার কোন ছিটেফোটাও নেই।
গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক মো. আবু আবদুল্লাহ খান বলেন, ১৪টি শর্তে বরিশাল জেলা প্রশাসন থেকে জামদানি শিল্প পণ্য মেলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ পাওয়া গেলে সাথে সাথে মেলা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
মেলা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি পণ্যের দোকানেই ক্রেতাদের ভিড় রয়েছে। বাহিরের যেকোন দোকাদের চেয়ে গুনেমানে মেলার প্রতিটি পন্য কমদামে বিক্রি হওয়ায় ক্রেতারাও তাদের পছন্দমতো পন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে বেশ খুশি বিক্রেতারাও।
এমআর