নারায়ণগঞ্জের সাবেক এমপি শামীম ওসমানের 'সবচেয়ে কাছের ছোটভাই' হিসেবেই পরিচিত মনিরুল আলম সেন্টু চেয়ারম্যান৷ শামীম ওসমানের আশীর্বাদেই ২০২১ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান৷ এর আগে নিজেই ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগে যোগদানের কথা জানান প্রকাশ্যে৷ শামীম ওসমানকে 'পীর' আখ্যা দিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিতও হন একসময়কার এই বিএনপি নেতা৷ কিন্তু ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পরে ফের বিএনপিতে ফিরতে উঠেপড়ে লেগেছেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কুতুবপুরের নৌকা প্রতীকের বর্তমান এই ইউপি চেয়ারম্যান৷
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত আওয়ামী শাসনামলের পুরোটাজুড়েই দোর্দণ্ড দাপটে ছিলেন সেন্টু৷ তোষামোদি করে শামীম ওসমানের আস্থা অর্জন করেন সেন্টু। এর আগে চলচ্চিত্র অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী এমপি থাকাকালে তাকেও নানাভাবে ম্যানেজ করেন সেন্টু৷ ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে শামীম ওসমানের নির্দেশে ধানের শীষ প্রতীক না নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন সেন্টু৷ ওই নির্বাচনে শামীম ওসমানের ছক অনুযায়ী নৌকার ভরাডুবি ঘটিয়ে সেন্টুকে চেয়ারম্যান করা হয়৷ এরপর থেকে আওয়ামী লীগের প্রায় প্রতিটি মিছিল-সমাবেশে সেন্টুর সরব উপস্থিতি ছিল৷ ২০২১ সালে অনেক নাটকীয়তা শেষে সেন্টুর হাতেই নৌকা তুলে দেয়া হয় শামীম ওসমানের তদবিরে। নৌকা পেয়ে সেন্টু জানান, ২০১৯ সালেই তিনি থানা আওয়ামী লীগের সদস্য হয়েছেন৷ জানান, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি শামীম ওসমানের নির্দেশে কাজ করছেন৷ ২০১৮ সালের নির্বাচনেও শামীম ওসমানের জন্য কাজ করার কথাও উল্লেখ করেন৷ এমনকি ২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে শামীম ওসমানের জন্য নৌকায় ভোট চেয়ে সেন্টু চষে বেড়িয়েছেন ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চল৷
২০২৪ সালের ২৮ জুলাই ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের এক জরুরি সভায় সেন্টু আন্দোলনকারী ছাত্রজনতাকে 'সন্ত্রাসী, নাশকতাকারী ও দুর্বৃত্ত' হিসেবে আখ্যা দিয়ে প্রতিরোধের ডাক দেন৷ কিন্তু ০৫ আগস্টেই পল্টি দেন ফের। এদিন থেকে নিজেকে আবার বিএনপি নেতা হিসেবে দাবি করতে থাকেন শামীম ওসমানকে পীর আখ্যা দিয়ে দল থেকে বহিস্কৃত সেন্টু। নৌকা প্রতীকের ইউপি চেয়ারম্যান হয়েও বিএনপির ব্যানার ব্যবহার করে অংশ নেন একাধিক অনুষ্ঠানে, যা নিয়ে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ক্ষোভ৷ এমনকি ফতুল্লা থানা বিএনপির পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, সাবেক এমপি শামীম ওসমানের দোসর সেন্টু বিএনপির কেউ নন।
একাধিক সূত্র জানায়, সেন্টুকে বিএনপিতে ঠাঁই করে দিতে তৎপর আওয়ামী আমলের সুবিধাভোগী স্থানীয় বিএনপির একটি অংশ। এদের মধ্যে ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটু একসময় সেন্টুর সরাসরি কর্মী ছিলেন৷ অন্যদিকে ফতুল্লা থানা বিএনপির সহসভাপতি হাজী শহীদুল্লাহ সেন্টুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পরিচিত। এরাই 'শামীম ওসমানের ছোটভাই সেন্টুকে' বিএনপিতে ফেরাতে কেন্দ্র দৌড়ঝাপ করছেন৷ তাদের সিগন্যাল পেয়ে সেন্টুও কেন্দ্রে লিখিতভাবে দলে ফেরার আবেদন করেছেন৷ যদিও সেই আবেদনে সেন্টু নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান হওয়া, আওয়ামী লীগে যোগদান এবং সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ, শামীম ওসমানকে পীর আখ্যা দিয়ে তার মুরিদ হয়ে যাওয়া- এসব বিষয়ের কিছুই উল্লেখ করেননি।
কিন্তু সেন্টুর এমন তৎপরতা রুখতে নড়েচড়ে বসেছেন ফতুল্লা থানা বিএনপির অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ৷ তারা রীতিমতো জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলন করে সেন্টুর কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি সেন্টুর জন্য লবিং চালানো টিটু-শহীদুল্লাহর বহিস্কার চেয়েছেন৷ এ বিষয়ে ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভূঁইয়া বলেন, সেন্টু এখনো নৌকার চেয়ারম্যান৷ সে শামীম ওসমানের চিহ্নিত দোসর৷ তিনি নিজের মুখেই আওয়ামী লীগের সদস্যপদ নেয়ার কথা জানিয়েছেন৷ ছাত্রজনতা হত্যার কমপক্ষে নয়টি মামলার আসামি সেন্টু কি আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেছেন? তিনি কি চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দিয়েছেন? তিনি কেন্দ্রে হাস্যকর আবেদন করেছেন, যেখানে এসবের কিছুই উল্লেখ করেননি৷ তার সকল কিছুর ডকুমেন্ট আছে আমাদের কাছে৷ কেন্দ্রেও সেগুলো দিয়েছি আমরা, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে কেন্দ্র। সেইসাথে সেন্টুর জন্য তদবির করায় আমরা ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটু ও সহসভাপতি হাজী শহীদুল্লাহর বহিস্কার দাবি করছি৷
এনআই