জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাট ছিল দেশের মধ্যে অন্যতম উত্তরাঞ্চলের গাইবান্ধা, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, রংপুর, পঞ্চগড়, বগুড়া ঠাকুরগাঁও, সহ বেশ কয়েকটি জেলার মানুষের রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগের একমাত্র সহজ রাস্তা ছিল এটি। যমুনা নদীর বাম তীর ঘেঁষে জামালপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল বাহাদুরাবাদ ঘাট, অপর প্রান্ত নদীর ডান তীরে ছিল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি ঘাট ও বালাসীঘাট।
গাইবান্ধার প্রান্তে ঘাটের স্থান পরিবর্তন হয়েছিল বেশ কয়েকবার নদীর নাব্যতার কারণে। কিন্তু বাহাদুরাবাদ ঘাটে এ সমস্যা ছিল না, নাব্যতার সংকট দেখা দিলে পন্টুন সরিয়ে কার্যক্রম ঠিক রাখা যেত ঘাটের। এতে করে রেললাইনের কোন পরিবর্তন করা লাগতো না। অপর প্রান্তের গাইবান্ধার ভরতখালি কঞ্চিপাড়া রেলওয়ে স্টেশন হারিয়ে গেলেও রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ স্টেশনটি এখনো ঐতিহ্য বহন করছে কালের সাক্ষী হয়ে।
বাদুরাবাদ ঘাটকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল ব্যবসা-বাণিজ্য,কর্মসংস্থান হয়েছিল কয়েক হাজার মানুষের, রেলওয়ের স্টীমার ঘাটসহ রেললাইনের দুই পাশে দিয়ে ছিল দোকানপাট। ভাতের হোটেল থেকে শুরু করে, ফলমূলের দোকান, কনফেকশনারী, কী ছিল না বাহাদুরাবাদ ঘাটে? তখনকার ভাতের হোটেলগুলি বেশ সমাদৃত ছিল।
আন্তঃনগর ট্রেনের মধ্যে তিস্তা আর একতার যা বর্তমান ব্রহ্মপুত্র নামে চলে এই রুটে, ফেরী সংযোগ ছিল এই দুটি ট্রেনের জন্য, ট্রেন দুটি প্রথমের দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে এসে, যাত্রা বিরতিহীন ভাবে এসে থামতো বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাটে, সে কারণেই হয়তো দেশের উত্তরে জেলার মানুষের মাঝে জনপ্রিয় ছিলো এই রাস্তাটি।
১৯৯৮ সালে যমুনায় বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হলে কালক্রমে এই রুটের চাহিদা কমতে শুরু করে উত্তরাঞ্চলের মানুষের কাছে। ট্রেন থেকে ফেরি, ফেরি থেকে ট্রেন এভাবে পরিবর্তন করে গন্তব্যে যাওয়ার চেয়ে সেতু রোডে সরাসরি গন্তব্যে যাওয়া স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে উত্তর অঞ্চলের মানুষ।
এর প্রভাব পড়তে শুরু করে বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাটে। ২০০৩ সালে সেতুর উপর দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হলে কালপরিক্রমায় যাত্রী ফেরী সার্ভিস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় বাহাদুরাবাদ ঘাটে। এরপর আস্তে আস্তে ভাঙতে থাকে যমুনার বাম তীর, একসময় নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায় ঐতিহ্যবাহী বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাট। বেকার হয়ে পড়ে ফেরিঘাটে সকল প্রকার ব্যবসায়ী সহ শ্রমিকেরা, আজও তারা খুঁজে ফেরে সেই ঐতিহ্যবাহী বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাট।
বর্তমানে বাহাদুরাবাদ ফুটানিবাজার ঘাট দিয়ে মানুষ পারাপার হয় নৌকা দিয়ে আবার বর্ষাকালে মিনি লঞ্চ দিয়ে পারাপার হয়ে থাকেন।
ফুটানিবাজার এলাকার হামিদ খান জানান, একসময় বাহাদুরাবাদ ঘাট ছিলো সবসময়ের জন্য ব্যস্ততম রেলওয়ে স্টেশন, ভাতের হোটেল, ফলমূলের দোকান বেশ জমজমাট থাকত এখন কালক্রমে হারিয়ে শুধু নাম আছে।
বাহাদুরাবাদ ঘাট সাবেক দোকানদার হযরত আলী, মোহাম্মদ ছহরাব, মহিউদ্দিন তারা জানান, বাহাদুরাবাদ ঘাট দেশের মধ্যে নামকরা ঘাট ছিলো আমরা জমজমাট ব্যবসা করতাম সবসময় ভিড় লেগে থাকত দোকানে কিন্তু যমুনা সেতু চালু হলে এই রাস্তার চাহিদা কমে আস্তে আস্তে কালক্রমে হারিয়ে গেছে।
এমআর