সীতাকুণ্ডের এক ব্যবসায়ীর জীবনাবসান ঘটল বাকি বিক্রির দুষ্টচক্রের বলিতে। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া টিটু সূত্রধর (৩৫) অবশেষে দেনার চাপে পড়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
শনিবার (১৬ মার্চ) বিকেল আনুমানিক ৫টার দিকে বিষপান করেন তিনি, পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত ৮টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু ঘটে।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের রহমতেরপাড়ার বাসিন্দা স্বপন সূত্রধরের ছেলে টিটু ২০১৩ সালে ইউনিটেক্স মিলের সামনে চৌধুরী মার্কেটে ছোট একটি দোকান দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন।
প্রথমদিকে ব্যবসা ভালো চললেও, ক্রেতাদের বাকি দেওয়ার প্রবণতা তাকে ধীরে ধীরে বিপদে ফেলে। একদিকে বাকিতে বিক্রি, অন্যদিকে নতুন মাল ক্রয়ের প্রয়োজনীয়তা। এই দুইয়ের ফাঁদে পড়ে দেনার পরিমাণ বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে দেনাদারদের চাপ সহ্য করতে না পেরে তিনি আত্মহননের পথ বেছে নেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
চমেক হাসপাতালে সময়ের কণ্ঠস্বর-কে টিটুর পরিচিতরা জানান, চৌধুরী মার্কেটে তিনি ছিলেন বেশ পরিচিত এবং সবার সাথেই ছিল তার ভালো সম্পর্ক। কিন্তু তার এই সহজ-সরল ব্যবহারের সুযোগ নিয়েছে অনেকেই। তিনি যাদের বিশ্বাস করে বাকিতে পণ্য বিক্রি করেছিলেন, তাদের অনেকেই পাওনা টাকা ফেরত দেননি। এতে করে তার ব্যবসার মূলধন শেষ হয়ে যায় এবং ক্রমাগত দেনার বোঝা বাড়তে থাকে।
এদিকে, সামনে ঈদ থাকায় দেনাদারদের চাপ আরও বেড়ে যায়। ব্যবসায় চরম সংকটের মুখে পড়েন টিটু। পরিবারের সদস্যরা জানান, গত কয়েকদিন ধরে তিনি দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন এবং তাকে হতাশাগ্রস্ত দেখাচ্ছিল। অবশেষে সেই হতাশার চূড়ান্ত রূপ দেখা দিল শনিবার বিকেলে, যখন তিনি বিষপান করে নিজের জীবন শেষ করে দিলেন।
টিটুর মৃত্যুর খবরে পুরো চৌধুরী মার্কেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। তার দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক সহকর্মী ও পরিচিতরা এই ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
এলাকার এক ব্যবসায়ী গণমাধ্যমকে জানান, টিটু ভাই অনেক সহজ-সরল মানুষ ছিলেন। তিনি কারও সাথে খারাপ আচরণ করতেন না। ব্যবসায়িক লেনদেনেও ছিলেন অত্যন্ত বিশ্বস্ত। কিন্তু এই বাকি বিক্রির অভ্যাসই তাকে শেষ করে দিল।
আরেকজন ব্যবসায়ী বলেন, অনেক সময় আমরা চিন্তা করি, বাকি বিক্রি করলে ক্রেতা ধরে রাখা যায়। কিন্তু সেই বাকি যখন পাওনা হয় না, তখন ব্যবসায়ীকে পথে বসতে হয়। টিটুর মতো একজন ভালো মানুষকে এভাবে চলে যেতে হলো, এটা খুব কষ্টের।
এ বিষয়ে সীতাকুণ্ড থানার ওসি মজিবুর রহমান সময়ের কণ্ঠস্বর-কে বলেন, আমরা ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। এটি নিছক আত্মহত্যা নাকি এর পেছনে আরও কোনো কারণ আছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এসআর