রহমত, বরকত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমজান। বছরের সেরা মাস এটি। মুসলমানদের পবিত্র মাস রমজান। এ মাসের অসংখ্য ফজিলত ও মর্যাদার কথা কোরআন-হাদিস দ্বারা স্বীকৃত। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজব ও শাবান মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি নিতেন। রমজানের জন্য নিজেকে তৈরি করতে শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখতেন। রমজানের রোজা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াতের পরপরই ফরজ করা হয়নি। বরং এটি দ্বিতীয় হিজরিতেই ফরজ করা হয়।
রোজা রাখার সময় শেষ হওয়ার পর অর্থাৎ সূর্যাস্তের পর কিছু খেয়ে রোজা ভাঙাকে ইফতার বলা হয়। সূর্যাস্তের পর দেরি না করে দ্রুত ইফতার করা সুন্নত। নবিজির (সা.) বিভিন্ন হাদিসে দ্রুত ইফতার করাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সাহল ইবন সাদ থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, মানুষ যতক্ষণ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কল্যাণের মধ্যে থাকবে। (সহিহ বুখারি: ১৯৫৭)
আরেকটি বর্ণনায় আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহ তাআলার কথা বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, তারা আমার সবচেয়ে প্রিয় বান্দা, যারা তাড়াতাড়ি ইফতার করে। (সুনানে তিরমিজি: ৭০০)
নবিজি (সা.) সূর্যাস্তের পরপর নামাজের আগেই ইফতার করতেন বলে বর্ণিত রয়েছে। আনাস (রা.) বলেন, নবিজি (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাগরিবের নামাজ আদায়ের আগে কিছু কাঁচা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকতো তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি শুকনো খেজুর না থাকতো তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে ইফতার করতেন। (সুনানে আবু দাউদ: ২৩৫৬)
তাই কোনো অসুবিধা না থাকলে সূর্যাস্তের পরপরই ইফতার করার চেষ্টা উচিত। সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ আগেই ইফতারের খাবার সামনে নিয়ে ইফতারের সময়ের অপেক্ষা করা উচিত এবং অবশিষ্ট সময়টুকু আল্লাহর কাছে দোয়ায় কাটানো উচিত। ইফতারের পূর্বমুহূর্তে দোয়া কবুল হয়। হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেছেন, যাদের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। ওই তিন ব্যক্তির অন্যতম হলো রোজাদার, ইফতারের সময় রোজাদার যে দোয়া করে, তা ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না:
১) ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া
২) ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া
৩) মজলুম বা অত্যাচারিতের দোয়া। মজলুমের দোয়া আল্লাহ তাআলা মেঘমালার ওপর উঠিয়ে নেন এবং তার জন্য আকাশের দরজা খুলে দেওয়া হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার ইজ্জতের কসম! নিশ্চয়ই আমি তোমাকে সাহায্য করব কিছু সময় দেরি হলেও। (সুনানে তিরমিজি)
আরেকটি হাদিসে এসেছে, রোজাদারের দোয়া আল্লাহর কাছে এত প্রিয় যে আল্লাহ তাআলা রমজানের সময় ফেরেশতাদের উদ্দেশে ঘোষণা করেন, রমজানে তোমাদের আগের দায়িত্ব মওকুফ করা হলো এবং নতুন দায়িত্বের আদেশ করা হলো, তা হলো আমার রোজাদার বান্দারা যখন কোনো দোয়া মোনাজাত করবে, তখন তোমরা আমিন! আমিন! বলতে থাকবে (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক)।
নবিজি (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম ইফতারের পূর্বমুহূর্তে দোয়া করতেন। ইবনে আবি মুলাইকা (রহ.) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আমরকে (রা.) ইফতারের সময় দোয়া করতে শুনেছি,
اَللهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ بِرَحْمَتِكَ الَّتِيْ وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ أَنْ تَغْفِرَ لِيْ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিরাহমাতিকাল-লাতী ওয়াসি’তা কুল্লা শাইইন আন তাগফিরা লী
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার সেই রহমতের উসিলায় প্রার্থনা করছি সব কিছুর উপর পরিব্যপ্ত, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। (সুনানে ইবনে মাজা)
ইফতারের পূর্বমুহূ্র্তে আমরা এ দোয়াটি এবং কোরআন-হাদিসে বর্ণিত সুন্দর দোয়াগুলো পড়তে পারি। নিজের ভাষায়ও আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারি। আল্লাহ তাআলা তওফিক দান করুন!
এইচএ