চলতি মৌসুমে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে আলুর বাম্পার ফলনেও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা। একদিকে আলুর ন্যায্য দাম না পাওয়া, অন্যদিকে উত্তরবঙ্গের আলু এ উপজেলার হিমাগার গুলোতে সংরক্ষণ করার কারণে স্থানীয় চাষীদের আলু হিমাগারে সংরক্ষণ পারছে না। এতে বাধ্য হয়ে দেশীও পদ্ধতিতে আলু সংরক্ষণ করছে অনেক কৃষক। এছাড়া তীব্র গরমে আলু পচেঁ নষ্ট হওয়ার আসংখ্যা ও রয়েছে। এর ফলে আলুর দাম এবং সংরক্ষণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের দানিয়াপাড়া এলাকায় শবনম কোল্ড স্টোরেজের সামনে আলু নিয়ে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন শ্রমিক ও কৃষকরা। আলু বস্তা ভর্তি ট্রাক, ছোট গাড়ি থেকে নামিয়ে সারি সারি করে আলুর বস্তা হিমাগারে রাখছে। বিভিন্ন স্থানের কৃষকরা তাদের আলু নিয়ে হিমারগারগুলোতে ভিড় জমিয়েছেন। কেউ কেউ আগেই আলু সংরক্ষণ করার জন্য হিমাগারের জায়গা বুকিং দিয়েছে। কেউ বা ভাড়ায় আলু রাখার জন্য নতুন করে চুক্তিপত্র করছেন। তবে আলু সংরক্ষণের পরও কৃষকদের চোখেমুখে দুশ্চিন্তার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। কারণ হচ্ছে উত্তরবঙ্গের আলু দিয়ে উপজেলার ১০টি হিমাগারগুলো কানায় কানায় ভরে গেছে।এর ফলে উপজেলার কৃষকরা বাধ্য হয়ে জমি বা বাড়িতে গোলায় করে সংরক্ষণ করছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৮ হাজার ৯৮০ হেক্টর জমিতে আলু রোপণ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ২২৫ হেক্টর বেশি। এ উপজেলায় ১০টি হিমাগার রয়েছে, যার মোট ধারণক্ষমতা ৭৩ হাজার ১৩০ মেট্রিক টন। এ বছর আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৩৪৩ মেট্রিক টন। এতে উৎপাদন হয়েছে ২লাখ ৭১ হাজার ২৩৩ মেট্রিক টন আলু। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবছর ৪ হাজার ৮৯০মেট্রিক টন আলু উৎপাদন বেশি হয়েছে। গত বছর আলু উৎপাদন হয়েছে ২লাখ ৬২ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন। এবছর ৮হাজার ৫৮২ মেট্রিক টন আলু বেশি উৎপাদন হয়েছে।
চন্দনধুল গ্রামের কৃষক স্বপন মৃধা বলেন, হিমাগারে ঘুষ দিয়ে কিছু আলু রেখেছি। বাকি ২ হাজার মন আলু দেশিও পদ্ধতিতে বাড়িতে (গোলা) রেখেছি। এবার যে পরিমান গরম তাতে আলু পচেঁ যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
লতব্দী এলাকার কৃষক আওলাদ হোসেন বলেন, আমি ২৪৫ শতাংশ জমিতে আলু রোপণ করেছি। আমার রোপণ ও কিনা আলু মোট ৭০০ বস্তা, এর মধ্যে ৫০০বস্তা নেপচুন কোল্ড স্টোরেজে রাখতে পেরেছি, ২০০বস্তা আলু রাখতে পারিনি। তিনি আরো বলেন, আমি নেপচুন কোল্ড স্টোরেজে অগ্রিম ২৩৫ টাকা প্রতি বস্তা ভাড়ায় ৭০০ বস্তার রশিদ কেটেছি,কিন্তু উত্তরবঙ্গের আলু দিয়ে হিমাগার ভরে ফেলার কারণে আমার ২০০ বস্তা রাখতে পারিনি।উল্টো হিমাগার কর্তৃপক্ষ আমার রশিদ ছিড়ে ফেলেছে। আমার মত অনেক কৃষকের সাথে এমন ঘটনা ঘটেছে।আমি উপজেলা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি আমাদের ১০টি হিমাগারে আগে স্থানীয় কৃষকদের আলু রাখার জন্য ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তারপর যেন উত্তরবঙ্গের আলু এনে হিমাগার মজুদ করে। তা না হলে এই উপজেলার কৃষকদের আলু সংরক্ষণের অভাবে বছর বছর লোকসানের মুখে পড়তে হবে।
নেপচুন কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার রুহুল আমিন বলেন, হিমাগারের কর্তৃপক্ষ কখনো আলু আনে না। পাইকার বা ব্যবসায়ীরা উত্তরবঙ্গ থেকে আলু কিনে এনে হিমাগার গুলোতে মজুদ করে। এতে আমাদের কি করার আছে। তিনি আরো বলেন,উত্তরবঙ্গের আলু আমাদের হিমাগার গুলোতে না আনা হলে হিমাগার গুলো খালি পড়ে থাকবে। এতে আমাদের লক্ষ লক্ষ টাকা লোকসান গুনতে হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আবু সাঈদ শুভ্র বলেন, এ উপজেলায় গতবারের চেয়ে এ বছর আলুর উৎপাদন বেশি হয়েছে। কিছু পাইকার ও ব্যবসায়ীরা উত্তরবঙ্গের আলু কিনে এনে এ উপজেলার ১০টি হিমাগারে মজুদ করেছে। আর এ কারনে স্থানীয় অনেক কৃষক রাখতে পারেনি। তাই কৃষি অফিস থেকে তাদেরকে পরামর্শ দিচ্ছি দেশিও পদ্ধতিতে বাড়িতে গুলায় আলু রাখার জন্য। এতে করে কৃষকরা বেশি দামে আলু বিক্রি করতে পারবে এবং তাদের বাড়তি খরচও হবে না।
এসআর