কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে অগ্নিকাণ্ডের লেলিহান শিখায় শত শত বসত বাড়ি পুড়ে ছাই হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে অসহায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও স্থানীয় জনতার মাঝে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
তথ্য সুত্রে দেখা যায়, গত কয়েক মাসের ব্যবধানে এই দুই উপজেলায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে বেশ কয়েক দফায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে।
নিহত-আহত হওয়ার পাশাপাশি পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল প্রায় এক হাজার বসত বাড়ি। তবে উক্ত আগুনের সুত্রপাতের সঠিক তথ্য উদঘাটন নিয়েও আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দারা গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়েছেন, নানান অপকর্মে জড়িত অপরাধী চক্রের সদস্যরা তাদের স্বার্থ হাসিল করার লক্ষ্যে পরিকল্পিত ভাবে গভীর রাতের অন্ধকারে ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে।
আবার আগুনে পুড়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় রোহিঙ্গারা বলছে ভিন্ন কথা। তাদের দাবি অসহায় রোহিঙ্গাদের জিম্মি করে এবং তাদের মাথা বিক্রি করে ক্যাম্প গুলোতে সাহায্য প্রদানকারী বিদেশী এনজিও সংস্থার কাছ থেকে কোটি কোটি বাজেট আদায় করে নিয়ে আসার পাশাপাশি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে, নাশকতায় জড়িত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে ক্যাম্প আগুন লাগার ঘটনা ঘটাচ্ছে ক্যাম্পে দায়িত্বরত অর্থলোভী এনজিও কর্মকর্তারা।
এদিকে তারেই ধারাবাহিকতায়, গত ১৬ জানুয়ারি গভীর রাতে টেকনাফে উপজেলার অন্তর্গত হ্নীলা ইউনিয়নে অবস্থিত নয়াপাড়া ২৬নং মোচনী রেজিস্ট্রেশন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রহস্যময় আগুনের সূত্রপাত ঘটে।
উক্ত আগুনের লেলিহান শিখায় প্রায় দুই শতাধিক বসত বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায় এবং পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুর করুণ মৃত্যু হয়। এতে বসত বাড়ি হারা হয়ে পড়ে প্রায় ৬ শতাধিক অসহায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ক্যাম্পের বাসিন্দা পানের দোকানদার মো. জোবায়ের নামে এক যুবক সময়ের কন্ঠস্বরকে জানান, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আমার পার্শ্ববর্তী ব্লকের মধ্যে হঠাৎ করে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। আগুনের লেলিহান শিখাটি স্বল্প সময়ের মধ্যে ক্যাম্পের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
আগুন লাগার আগ মুহূর্তে পুড়ে যাওয়া অনেক বসত বাড়ির দরজায় তালা লাগানো ছিল। এতে করে বোঝা যাচ্ছে নাশকতায় জড়িত অপরাধী চক্রের সদস্যরা ইচ্ছে করে ক্যাম্পে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে বলেও ধারণা করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় রোহিঙ্গারা।
আগুনে পুড়ে করুন মৃত্যুর শিকার হওয়া, শিশু কন্যা আয়েশা সিদ্দিকার পিতা ইব্ররাহিম গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়েছেন, আগুন লাগার সাথে সাথে সবাইকে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। এরপর থেকে মেয়েকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে জানতে পারি আমার শিশু কন্যা ঘুমন্ত অবস্থায় আগুনে পুড়ে মারা গেছে। পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হয়েছে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আগুন লাগার আসল ঘটনা উদঘাটন করে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য জোর দাবী জানিয়েছেন তিনি।
আগুন লাগার বিষয়ে ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মোহাম্মদ কাউসার সিকদার বলেছেন, ক্যাম্পের একটি ঘর থেকে আকস্মিক আগুনের সূত্রপাত ঘটে। আগুনের লেলিহান শিখা মুহূর্তের মধ্যে আশপাশের ঘর ও বিভিন্ন স্থাপনায় ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ক্যাম্পে দায়িত্বরত এপিবিএন পুলিশ,স্থানীয় জনতা ও পাশ্ববর্তী রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কয়েক শ' বসত বাড়ি এবং নানা প্রকার স্থাপনা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। উক্ত ঘটনায় এক কন্যা শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তবে আগুন লাগার ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পিত কিনা সে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বাহিনীর সদস্যরা তদন্ত করছে। তদন্ত শেষ হওয়ার পর ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটন হবে বলেও জানান তিনি।
এআই