এইমাত্র
  • গণহত্যা দিবস: আজ অন্ধকারে থাকবে দেশ
  • বেরোবিতে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা
  • গাজীপুর ৩০ বোতল মদসহ আটক ২
  • দেশবিরোধী আন্দোলনে উসকানিদাতাদের গ্রেপ্তার করা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • ১২ কারখানার মালিকের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার
  • ময়মনসিংহে কাভার্ডভ্যানের চাপায় প্রাণ গেল ২ জনের
  • আপনাদের ভালোবাসা ছাড়া আমি কিছুই না: তামিম ইকবাল
  • বরিশালে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে স্মৃতিচারণ ও অলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
  • অবশেষে ছাড়পত্র পেল শাকিব খানের ‘বরবাদ’
  • নৌকা প্রতীকে নিবন্ধন চেয়ে ইসিতে আবেদন
  • আজ বুধবার, ১২ চৈত্র, ১৪৩১ | ২৬ মার্চ, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    কাপাসিয়ায় নদীর মোহনায় জেগে উঠা এক ভূখন্ড 'ধাঁধার চর'

    ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ০৩:১১ পিএম
    ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ০৩:১১ পিএম

    কাপাসিয়ায় নদীর মোহনায় জেগে উঠা এক ভূখন্ড 'ধাঁধার চর'

    ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ০৩:১১ পিএম

    কাপাসিয়ায় শীতলক্ষ্যা ও ব্রহ্মপুত্রের মোহনায় বিন্দু বিন্দু বালু জমে জেগে উঠা মনোলোভা এক ভূখন্ড 'ধাঁধার চর'। অনেকের কাছে মাইঝ্যার চর বা মাঝের চর নামেও বেশ পরিচিত। ধারনা করা হচ্ছে প্রায় আড়াইশ বছর আগে গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া ও নরসিংদী জেলার সীমানাবেষ্টিত শীতলক্ষ্যা ও ব্রহ্মপুত্রের তারাগঞ্জ, রানীগঞ্জ, লাখপুর, চরসিন্দুর এলাকায় নদীর মাঝ খানে এ চর জেগে উঠে।

    আয়তনের দিক দিয়ে ২৫০ একর। সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা সবুজে ঘেরা ধাঁধার চর দৈর্ঘ্যে সাড়ে চার কিলোমিটার। বর্ষাকালে নদীর বিশাল ঢেউ দেখলে মনে হয়, এ যেন আরেক সমুদ্র সৈকত। দূর থেকে দেখে যে কারো মনে হবে এ যেনো ভেসে উঠা দৈত্যকার কোনো জাহাজ। দেখতে বেশ চমৎকার মনোলোভা এ 'ধাঁধাঁর চর। বর্ষাকালে এর ঢেউ দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসেন নানা বয়সী পর্যটকরা। এখানে পেয়ারা, বড়ই, কলা, জাম, জলপাইসহ রকমারি ফল যেন আগ বাড়িয়ে ইশারা করে। আম-কাঁঠালের সবুজ ছায়া, পাখির কিচিরমিচির, ফসলের মাঠ, নদীর হিমেল হাওয়া যেন ক্লান্তিনাশের এক মহৌষধার এ ধাঁধার চর।

    এছাড়া আরও যা আছে কাপাসিয়া ভূখণ্ডে দীর্ঘতম নদ ব্রহ্মপুত্র, বানার নদ হয়ে শীতলক্ষ্যার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। শীতলক্ষ্যা নদের পাশেই দরদরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম মহানায়ক ও স্বাধীন বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমেদ। এখানেই তিনি শৈশব-কৈশোর কাটিয়েছেন। এছাড়া ব্রিটিশ রাণী ভবানী দরদরিয়াতে বসবাস করতেন। এখনও সেই রানীর ডাকবাংলোর ধ্বংসাবশেষ দৃশ্যমান রয়েছে। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে শতবর্ষী লিচুগাছ, যেখানে বেঁধে নির্যাতন করা হতো অবাধ্য নীল চাষীদের।

    শীতলক্ষ্যাকে ঘিরে কাপাসিয়ার রয়েছে নানা ইতিহাস-ঐতিহ্য। কখনও সমৃদ্ধ জনপদ, কখনও গভীর অরণ্য, কখনও নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়া, কখনও বা নতুন নতুন ভূমির সৃষ্টি। শীতলক্ষ্যা ও ব্রহ্মপুত্র মিলিত হওয়ার কারণে বৃন্দু বৃন্দু বালি কনা জমাট বেঁধে সৃষ্টি হয়েছিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা মনোলোভা ধাঁধার চর। দেখতে অনেকটা নদীর তলদেশ থেকে জেগে উঠা টাইটানিক আকরিতির মতো লাগে।

    শীতলক্ষ্যা ও ব্রহ্মপুত্র নদের মাঝে জেগেউঠা নদীর অববাহিকার ঐতিহাসিক এক নিদর্শন 'ধাঁধাঁর চর', একডালা দুর্গ,এগারোশিন্দুরে ঈশা খা দুর্গ,টোকের সুলতানপুরে ঐতিহাসিক শাহী মসজিদ (গায়বী মসজিদ),দরদরিয়ায় রানী ভবানীর বসবাস চিহ্ন,যুগে যুগে মানুষকে আকৃষ্ট করে আসছে। বহু ঐতিহাসিক নদী শীতলক্ষ্যা, ব্রহ্মপুত্র,বানার নদী এবং নদীগুলোর অববাহিকার ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেছেন নদী পরিবাজক বহু ব্যাক্তি। রানীগঞ্জ, লাখপুর, চরসিন্দুর এলাকার ঠিক মাঝখান দিয়ে ব্রহ্মপুত্র ও শীতলক্ষ্যা প্রবাহিত হয়েছে।

    এছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদী টোকের শেষ প্রান্ত উত্তরে কিশোরগঞ্জ, পূর্ব ও দক্ষিণ পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে লাখপুর দিয়ে শীতলক্ষ্যায় মিলিত হয়েছে। ইতিহাস ও স্থানীয়দের কাছ থেকে আরো জানা যায়, চরের সূচনালগ্নে এর মালিকানা নিয়ে ভাওয়ালের রাজা ও বারো ভূঁইয়াদের এক ভূঁইয়া মহেষ উদ্দীনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। বিরোধ মেটাতে এগিয়ে এলেন স্থানীয় মাতবররা। তারা একটি কলসি নদীতে ভাসিয়ে দিলেন। বললেন, কলসিটি নদীর যে পাড়ে গিয়ে ভিড়বে চরের দখল পাবেন সেই পাড়ের লোকজন। কলসিটি নদীর পশ্চিম পারে অর্থাৎ ভাওয়াল রাজার এলাকায় (বর্তমানে গাজীপুরের কাপাসিয়া) এসে ভিড়ে। তারপর থেকেই ধাঁধার চরটি পশ্চিমপারের ভাওয়াল রাজার পরগনার (বর্তমানে গাজীপুরের কাপাসিয়া) দখলে চলে আসে।

    হিন্দু কৃষকরা ভাওয়ালের রাজাকে খাজনা দিয়ে চাষাবাদ শুরু করেন। পরে ১৮১৬-১৯ সালে ব্রিটিশ সরকার চরের জরিপ করে কৃষকদের বৈধ মালিকানা দেয়।১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর হিন্দুরা চরের জমি বিক্রি করে ভারতে পাড়ি জমায়। এখন পুরো চরের মালিকানা মুসলিম কৃষকদের হাতেই। এ চরের মাটি খুবই উর্বর। একসময় চরে প্রচুর আখ হতো। এখন সবচেয়ে বেশি আলু চাষ হয়। সারবিহীন ফসল সুস্বাদু।

    ১৯৬০, ১৯৮৮, ১৯৯৮ সালের বন্যায় এ চরটি তলিয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে পূনরায় আবার চরটি দুই নদীর মোহনায় জেগে ওঠে। এখন পর্যন্ত আছে।১৯৬০ সালের বন্যায় চরে কোমর পর্যন্ত পানি জমে থাকার ফলে মাটির উর্বরাশক্তি আরো বাড়তে থাকে। যে কারণে কৃষকরা সারবীহীন ফসল ফলাত।২০০৬ সালের সার্ক সম্মেলনের সময় "ধাঁধার চর" গ্রামীণ পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব উঠে। কিন্তু তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি।

    এসআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    চলতি সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

    Loading…