বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে লক্ষ্মীপুরে ছাত্র-জনতার উপর গুলি করে চার শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনায় ২টি মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন শতাধিক আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী। তবে মামলার প্রধান আসামি যুবলীগ নেতা সালাহ উদ্দিন টিপু রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এদিকে গ্রেফতারের কয়েকদিনের মধ্যে জামিনে বাহির হয়ে আসছে অন্তত ৪০ জন আসামি। ফলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন মামলার বাদী ও তার পরিবার। এতে প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।
জানা যায়, গত ৪ আগষ্ট যুবলীগ নেতা সালাহ উদ্দিন টিপুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা ছাত্র জনতার ওপর গুলি করে। এতে সাদ আল আফনান, কাউছার হোসেন বিজয়, সাব্বির হোসেন ও ওসমান পাটোয়ারী নামে চার শিক্ষার্থী নিহত হয়। এছাড়া গুলিবিদ্ধসহ আহত হয় অন্তত দুই শতাধিক ছাত্র জনতা।
এসব ঘটনায় লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানায় হত্যা ও বিষ্ফোরক আইনে পৃথক ৪টি মামলা দায়ের করে পুলিশ ও ভুক্তভোগী পরিবার। চার মামলায় প্রায় ১৫শ জনকে আসামি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে শতাধিক আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। তবে গ্রেফতারের কয়েকদিনের মধ্যে হত্যা মামলার অনেক আসামি জামিনে বেরিয়ে এসেছে।
তাদের মধ্যে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক, অ্যাডভোকেট নুরুল হুদা পাটোয়ারী, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জহির উদ্দিন মাহমুদ বাবর, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমিন, স্বাধীনতা চিকিৎসক ফোরাম (স্বাশিপ) এর জেলা সভাপতি ডাঃ জাকির হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সদস্য সচিব শেখ মুজিবুর রহমান, কৃষক লীগের সাবেক জেলা সভাপতি ওমর হোসাইন ভুলু, জেলা যুবলীগ নেতা পরাণ চৌধুরী, জেলা ছাত্রলীগেরসহ সভাপতি মারুফ হোসেন সুজন, দালাল বাজার ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা রাজনসহ প্রায় ৪০ জন।
অভিযোগ রয়েছে, একটি মহল মামলার বাদীকে চাপ দিয়ে এসব হত্যা মামলার আসামিদের জামিন করাতে বাধ্য করছেন।
৪ আগষ্টে গুলিতে শহীদ আফনানের মা নাছিমা আক্তার সময়ের কন্ঠস্বরকে বলেন, সন্ত্রাসীরা গুলি করে ও পিটিয়ে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। আমি ছেলে হত্যার বিচারের জন্য মামলা করেছি। মামলা তুলে নিতে সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোনে হুমকি দিচ্ছে। বাড়িতে বিভিন্ন লোক পাঠাচ্ছে। মামলার পর থেকে আমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছি। অথচ অনেক আসামি এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না। আবার যারা গ্রেফতার হচ্ছে তারা কয়দিন পর জামিনে বেরিয়ে আসছে।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার এসআই মোবারক হোসাইন ও ফজলুল হক বলেন, আমরা প্রায় শতাধিক আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করেছি। বাকি আসামিদের গ্রেফতার করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া আসামিরা যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে এজন্য ইমিগ্রেশনে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে জামিনের বিষয়টি সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ার।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক আরমান হোসাইন বলেন, জুলাই বিপ্লবে যারা ছাত্র জনতার উপর নির্বিচারে গুলি করেছে। চার শিক্ষার্থীকে হত্যা করেছে। দুই শতাধিক ছাত্র জনতাকে আহত করেছে। তারা এখনও গ্রেফতার হচ্ছে না। যাদেরকে ছাত্র জনতা আটক করে পুলিশে দিচ্ছে তারাও কয়েকদিনের মধ্যে জামিনে বাহির হয়ে আসছে। অন্যদিকে মামলার বাদীকে সন্ত্রাসীদের হুমকির কারণে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। এটা আসলেই আমাদের জন্য দুঃখজনক।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের এত আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা থাকার পরও প্রধান আসামিসহ গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হওয়া, এটি দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। আগামীর বাংলাদেশের জন্য হুমকি।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট হাসিবুর রহমান বলেন, কিছু আসামি গ্রেফতার হয়েছে। আবার অনেকে জামিনে বেরিয়ে আসছে। তবে প্রধান আসামিসহ এখনও অনেকে আত্মগোপনে রয়েছে। পুলিশ আরও সক্রিয় হলে বাকি আসামি গ্রেফতার হবে।
জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মাওলানা ফারুক হোসাইন নুরনবী বলেন, চার আগষ্ট প্রকাশ্যে সন্ত্রাসীরা গুলি করে চার শিক্ষার্থীকে হত্যা করেছে, অনেক মানুষকে আহত করেছে। কিন্তু সন্ত্রাসীরা গ্রেফতার হচ্ছে না। দুই একজন গ্রেফতার হলেও তারা জামিনে বেরিয়ে আসছে। এটা দুঃখজনক। অথচ অতীতে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে বছরের পর বছর নিরাপরাধ মানুষকে জেল বন্ধি করে রেখেছে। আমরা চাই সকল আসামিকে গ্রেফতার করে রাষ্ট্র সুষ্ঠ বিচার নিশ্চিত করবে।
এমআর/আরআই