এইমাত্র
  • সরকারি হস্তক্ষেপে বিমানের টিকিট মূল্য কমলো ৭৫ শতাংশ
  • ৪৮ ঘণ্টায় ৯৭০ ফিলিস্তিনির প্রাণ কাড়ল দখলদার ইসরায়েল
  • রোহিঙ্গা শনাক্তে ইসিকে ডাটা দেবে ইউএনএইচসিআর
  • সংস্কার বিষয়ে কাল এলডিপির সঙ্গে বসছে ঐকমত্য কমিশন
  • নতুন টাকায় থাকছে না ব্যক্তির ছবি: অর্থ উপদেষ্টা
  • ঈদে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সুখবর আসছে
  • তিন শিশুকে বলৎকার চেষ্টার অ‌ভি‌যো‌গে মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেফতার
  • মাদক সেবনের দায়ে যুবলীগ নেতাসহ ৩ জনের কারাদণ্ড
  • বাজিতপুরে আগুনে দোকান ভস্মীভূত, অর্ধকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি
  • গাজায় ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা বাংলাদেশের
  • আজ বৃহস্পতিবার, ৬ চৈত্র, ১৪৩১ | ২০ মার্চ, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    তরমুজের শহর গলাচিপা, খ্যাতি ছড়িয়েছে দেশজুড়ে

    আরেফিন লিমন, গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১০:৪৫ পিএম
    আরেফিন লিমন, গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১০:৪৫ পিএম

    তরমুজের শহর গলাচিপা, খ্যাতি ছড়িয়েছে দেশজুড়ে

    আরেফিন লিমন, গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১০:৪৫ পিএম

    পটুয়াখালীর উপকূলীয় উপজেলা গলাচিপা ধীরে ধীরে "তরমুজের শহর" হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। নদী ও চরাঞ্চলবেষ্টিত এ উপজেলার উর্বর মাটিতে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ তরমুজ উৎপাদিত হয়। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং রোগবালাই কম থাকায় কৃষকরা বাম্পার ফলন পেয়েছেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যাপারীরা গলাচিপার তরমুজ কিনতে ছুটে আসছেন। ফলে কৃষকদের আশা, এবার তরমুজের বেচাকেনা সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।

    গলাচিপার বিভিন্ন চরাঞ্চলের কৃষকরা এবার আগাম জাতের তরমুজ চাষ করে ভালো লাভের আশা করছেন। উপজেলার গোলখালী, পানপট্টি, রতনদী তালতলী, চর কাজল, চর বিশ্বাস, চর কুকরী-মুকরীসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর তরমুজ চাষ হয়েছে। আগাম তরমুজ চাষে ফলনও হয়েছে ভালো। কৃষক মো. খোকন (৪৭) জানান, তিনি ১২ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন, যেখানে প্রতি বিঘায় ৮৫ হাজার টাকা খরচ হলেও দেড় থেকে দুই লাখ টাকা বিক্রির আশা করছেন। কৃষক জহিরুল ইসলাম (৫৫) জানান, তার সাত বিঘা জমিতে ভালো ফলন হলেও এক অজানা রোগে কিছু গাছ মরে গেছে। অপরদিকে, কৃষক কামাল হোসেন (৩৬) জানান, তিনি দেরিতে তরমুজ চাষ করেছেন, যাতে বাজারে ভালো দাম পান। তবে তিনি সার ও কীটনাশকের দাম বেশি হওয়ায় কিছুটা উদ্বিগ্ন।

    তরমুজ মৌসুমে গলাচিপার পরিবহন খাতে বিশাল অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়। ট্রলার চালক, ট্রাক শ্রমিক, এজেন্ট, হেলপার-সব মিলিয়ে হাজারো মানুষ এ সময় সরাসরি কাজের সুযোগ পান।

    পটুয়াখালী জেলার সবচেয়ে বড় তরমুজ ঘাট গলাচিপার আমখোলা-মুশুরীকাঠি। এ ঘাট থেকে ব্যবসায়ীরা তরমুজ কিনে রাজধানী সহ বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠায়। এখান থেকেই জেলার অধিকাংশ তরমুজ সরবরাহ করা হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। মুশুরীকাঠি থেকে হরিদেপুর পর্যন্ত সাতটি ঘাট করা হয়েছে, যেখান থেকে প্রতিদিন ১৫০-২০০ ট্রাক তরমুজ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। পুরো গলাচিপা উপজেলা থেকে প্রতিদিন ২০০-৩০০ট্রাক তরমুজ রওনা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারের উদ্দেশ্যে।

    ঘাট পরিচালক মো. নাসির গাজী জানান, প্রতিদিন ঘাটে ১৫০০ শ্রমিক কাজ করেন। তরমুজের মৌসুমজুড়ে এ ঘাটগুলোতে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। গলাচিপা ও রাঙ্গাবালীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নদীপথে তরমুজ বোঝাই করা ট্রলার এসে নোঙর করে এই ঘাট গুলোতে। ট্রলার থেকে তরমুজ ট্রাকে উঠানোর কাজ করে ঘাট শ্রমিকরা। প্রতিপিচ তরমুজ ট্রলার থেকে ট্রাকে তুলতে নেয়া হয় ১ টাকা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে এই কর্মযজ্ঞ। এ কাজে সবচেয়ে বেশি অংশ নেয় স্থানীয় যুবকরা।

    তরমুজ মৌসুম ঘিরে গলাচিপার তরমুজ ঘাটগুলোতে অস্থায়ী দোকানের ছড়াছড়ি। বিভিন্ন চর থেকে আসা কৃষক, শ্রমিক ও ব্যাপারীদের কথা মাথায় রেখে স্থানীয়রা গড়ে তুলেছেন অস্থায়ী হোটেল, চায়ের টং দোকান ও খাবারের দোকান।

    ভাসমান হোটেল ব্যবসায়ী মোসামাৎ আকলিমা বেগম (৩৬) জানান, তরমুজের মৌসুম শুরু হলে তিনি তার ছোট্ট খাবারের হোটেলটি চালু করেন। প্রতিদিন ২০-২৫ কেজি চালের ভাত বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে কোহিনুর (৪০), সেফালি (৪৩) সহ আরও অনেকে হোটেল, চায়ের দোকান এবং অন্যান্য পণ্য বিক্রির জন্য অস্থায়ী দোকান খুলেছেন।খাবারের পাশাপাশি পান-সিগারেটের দোকান, ঠান্ডা পানীয় ও বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানও বসে ঘাটের আশপাশে। শ্রমিকরা কাজের ফাঁকে এসব দোকান থেকেই চা ও হালকা খাবার সংগ্রহ করেন। রাতে থাকার জন্য রয়েছে ব্যবস্থা। ফলে শুধু তরমুজ নয়, এ মৌসুমে গলাচিপার ঘাটগুলো একটি ছোটখাটো বাণিজ্যিক কেন্দ্র হয়ে ওঠে।

    ঢাকা থেকে আসা ব্যাপারী রাজু আহমেদ (৪৮) জানান, তিনি চর কাজল থেকে তরমুজ কিনছেন। ক্ষেত থেকে ঢাকায় পৌঁছানো পর্যন্ত প্রতি তরমুজে ৩২-৩৫ টাকা খরচ হচ্ছে। তবে আগাম তরমুজ বেশি আসায় বাজার কিছুটা কমে গেছে। তার মতে, গলাচিপায় কোথাও কোনো চাঁদাবাজির শিকার হতে হয়নি, যা ব্যবসার জন্য ইতিবাচক দিক। তিনি বলেন, তরমুজ ঘাটগুলোতে এই মৌসুমে উৎসব লেগে থাকে।

    উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আরজু আক্তার বলেন, “গলাচিপার বিভিন্ন এলাকায় তরমুজ চাষ হয় এবং এখানকার ভূমি এ চাষের জন্য উপযোগী। তবে গত বছরের তুলনায় এবার কিছুটা কম জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। এ বছর ৮ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় কম। এক জমিতে বারবার একই ফসল চাষ করলে রোগবালাই বেশি হয় এবং ফলন কমে যায়। কৃষি কর্মকর্তারা পরামর্শ দিচ্ছেন, একই জমিতে বারবার তরমুজ চাষ না করে ফসলের রোটেশন (ফসল পরিবর্তন) করে বছরে একটা ডাল ফসল দিলে বা এ পদ্ধতি অনুসরণ করলে ফলন আরও ভালো হবে।

    জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ির উপপরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, জেলায় গত বছর ২৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হলেও এ বছর তা বেড়ে ২৮ হাজার ৫০০ হেক্টর হয়েছে, যা ৫,০০০ হেক্টর বেশি। তরমুজের বাণিজ্যিক মূল্য এবার ৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে তিনি আশা করছেন। এ বছর গ্রেট ওয়ান, বিগ ফ্যামেলি, আনন্দ, আনন্দ সুপার, সুইট ফ্যামিলি, লাকী ড্রাগন, এশিয়ান-৩ ও ড্রাগন জাতের তরমুজ চাষ বেশি হয়েছে। কৃষক যাতে ন্যায্য মূল্য পায় সেদিকে কৃষি বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি রয়েছে।

    এদিকে গলাচিপার কৃষকরা জানিয়েছেন, তরমুজ চাষে বিনিয়োগ বেশি হলেও লাভও ভালো। যদি সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ পাওয়া যায়, তবে আরও বড় পরিসরে চাষ সম্ভব হবে।

    গলাচিপা শুধু তরমুজ চাষের জন্য নয়, এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমেও ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। সঠিক পরিকল্পনা ও সরকারি সহায়তা পেলে গলাচিপা হতে পারে দেশের সবচেয়ে বড় তরমুজ উৎপাদন ও সরবরাহ কেন্দ্র। এবারের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের জন্য সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা ও ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করা জরুরি।

    এনআই

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    চলতি সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

    Loading…