যশোরের কেশবপুর খ্রিস্টান মিশনের নবম শ্রেণির ছাত্রী রাজেরুং ত্রিপুরার (১৫) আত্মহত্যা নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। ৬ দিনেও তার লাশ বুঝে পায়নি পরিবারের সদস্যরা। তবে জীবিত তিন ছাত্রীকে উদ্ধার করেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী ও যৌথবাহিনী।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) খ্রিস্টান মিশনের সামনে এলাকাবাসী ও ছাত্ররা বিক্ষোভ করেছে। পরে মিশনের পরিচালক জেসিকা সরকারকে পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
কেশবপুরে পৌর শহরের সাহা পাড়ায় “হোপ হাউজ গালর্স হোম এন্ড খ্রিষ্টান সেন্টার” নামে খ্রিষ্টান মিশন থেকে গত ১৪ মার্চ রাতে মিশনের ছাত্রীনিবাস থেকে ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী রাজেরুং ত্রিপুরার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তার মৃত্যু ছিলো যথেষ্ট সন্দেহজনক। মিশনের সুপার জেসিকা সরকার ও তার স্বামী প্রদীপ সরকার তার মরদেহটি নিয়ে অনেক নাটকীয়তার মধ্যে কেশবপুর সরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়। পরে তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। সে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করা হয়।
রাজেরুং ত্রিপুরা পিতা রমেশ ত্রিপুরার বাড়ি বান্দরবন জেলার থানচি উপজেলার কালুপাড়া এলাকার। ওই দিন মিশনের পরিচালক জেসিকা সরকার ও তার স্বামী প্রদীপ সরকার জানান, কর্তৃপক্ষ বলছে রাজেরুং ত্রিপুরার লাশ ময়না তদন্তের পরে তার বাবা-মা এর নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে ছাত্রীর বাবা-মা জানেনা তার মেয়ের লাশ কোথায় আছে। তাহলে লাশ কার কাছে হস্তান্তর করা হলো। এমন প্রশ্ন তাদের।
এদিকে রাজেরুং ত্রিপুরার রহস্যজনক মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে সোমবার সকালে তার বাবা রমেশ ত্রিপুরাসহ তারা ৪ জন বান্দরবান থেকে কেশবপুর আসলে তাদের খ্রিষ্টান মিশনের ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। তারা স্থানীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের ঘটনাটি জানান। প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ তাদেরকে রাতে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। ইতিমধ্যে রাজেরুং ত্রিপুরার পিতা রমেশ ত্রিপুরাকে কেশবপুর খ্রিষ্টান মিশনে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি এমন সংবাদ প্রচার হলে মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় প্রতিবেশী, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কারীদের একটি দল তাদের সাথে নিয়ে খ্রিষ্ঠান মিশনে প্রবেশের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। এরপরে যৌথবাহিনীর সহোযোগিতায় বহু কষ্টের পরে তারা ভিতরে প্রবেশ করে আরো এক প্রতিবন্ধকতা শিকার হয়ে পড়েন। এরপর কেশবপুর থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা বারবার অনুনয় বিনিময় শেষে তারা মিশনের ভিতরে প্রবেশের সুযোগ পায়।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কারীদের উপজেলা সমন্বয়ক সম্রাট হোসেন বলেন, রাজেরুং ত্রিপুরার মৃত্যুটি যথেষ্ট রহস্যজনক। প্রতিবেশীদের ভিতরে প্রবেশে বাধা দিয়েছে শুনে আমরাও এসেছি। এখন শুনছি এখানে অনেক কিছু হয়ে থাকে। এর একটা বিচার হওয়া জরুরি।
এ সময়ে যৌথ বাহিনী জানতে পারেন ভিতরে রাজেরুং ত্রিপুরার গ্রামের আরো তিনটি মেয়ে আটকানো রয়েছে এবং তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। পরে পুলিশ মিশনের ভিতরে অভিযান চালিয়ে খ্রিষ্টান মিশনে থাকা বান্দরবন জেলার থানচি উপজেলার কালুপাড়া এলাকার রেবিকা ত্রিপুরা, স্বস্তিকা ত্রিপুরা ও জেসিন্তা ত্রিপুরা নামে তিনজনকে উদ্ধার করে মিশনের সুপার জেসিকা সরকারসহ তাদের থানা পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
রাজেরুং ত্রিপুরা বাবা রমেশ ত্রিপুরা বলেন, এখানে আমার মেয়ের সাথে তাঁরা খারাপ কিছু ঘটিয়েছে। তারা আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। মেয়ের লাশটি কোথায় রেখেছে তাও ঠিক করে বলছে না। মেয়ের লাশ আগে হাতে পায় তারপর যা করতে হয় করবেন তিনি।
কেশবপুর থানার ওসি তদন্ত খান শরিফুল ইসলাম বলেন, খ্রিস্টান মিশনের সুপার জেসিকা সরকার যৌথ বাহিনীর সাথে থানায় এসে উদ্ধার হওয়া তিন ছাত্রীকে তাদের অভিভাবকদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। তারা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
এনআই/আরআই