কৃষক থেকে হাতবদল হয়ে ভোক্তা পর্যায়ে চারগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ। বর্তমানে চরফ্যাশন খুচরা বাজারে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে প্রতিপিস ৩০০ থেকে ৪৮০ টাকা। অথচ ক্ষেত থেকে যে তরমুজটি চাষিরা ১৫০ টাকায় বিক্রি করেন, বাজারে সেই তরমুজের দাম ৪৮০ টাকা। চরফ্যাশন থেকে প্রতিদিন সড়ক ও নদীপথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তরমুজ নিয়ে যাচ্ছেন পাইকাররা।
ক্রেতারা বলছেন, কৃষকের ক্ষেতের চেয়ে বাজারে কয়েকগুণ বেশি তরমুজের দাম। ফলে তরমুজের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকের চেয়ে অধিক লাভবান পাইকাররা। চাষিরা বলছেন, বর্তমানে প্রতিটি তরমুজের গড় ওজন প্রায় ৫ থেকে ৮ কেজি। রমজানের শুরু থেকেই তরমুজ সংগ্রহ করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়েছেন কৃষকরা। বাজারে চাহিদার সুযোগ নিয়ে সিন্ডিকেট চক্র ইচ্ছেমতো দামে তরমুজ বিক্রি করছেন। এতে একদিকে যেমন ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত কৃষক, অপরদিকে চড়া দামে তরমুজ কিনতে হয় ক্রেতাদের। দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে কেজি দরে।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) চরফ্যাশন পাইকারি বাজারে ৪ থেকে ৬ কেজি ওজনের তরমুজ ১০০ পিস বিক্রি হচ্ছে ১৪ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকায়। সেই হিসেবে তরমুজের পিস পড়ে ১৪০ থেকে ২৫০ টাকা। অথচ খুচরা পর্যায়ে সেই তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা থেকে ৪৮০ টাকার বেশি দামে।
কুমিল্লার তরমুজ ব্যাপারী মো. জুয়েল বলেন, 'চরফ্যাশনে এবার তরমুজের আগাম জাতের ভালো ফলন হয়েছে। রমজানে চাহিদা বেশি থাকায় কৃষকদের কাছ থেকে এক কানি (১৬০ শতাংশ) জমির তরমুজ কিনতেই লাগছে ৪ লাখ টাকা। পরিবহন ও শ্রমিক মিলে চট্টগ্রামে পৌঁছাতে লাগছে আরও ৫০ হাজার টাকা। ফলে বাড়তি দামে বেচতে হচ্ছে।'
বাজারে তরমুজ কিনতে আসা হাছান লিটন বলেন, 'এবছর আমার সন্তানদের এখনো তরমুজ খাওয়াতে পারিনি। রমজান উপলক্ষে তরমুজের দাম বেশি। বাড়তি দামে তরমুজ কেনার সামর্থ্য নেই।'
চরফ্যাশন উপজেলার নজরুলনগর এলাকার তরমুজ চাষি আবুল কালাম জানান, তারা ক্ষেত থেকে পিস হিসেবে আড়তদার ও পাইকারদের কাছে তরমুজ বিক্রি করেন। বর্তমানে মাঝারি থেকে বড় আকারের ১০০ তরমুজ ১৩ থেকে ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
মুজিবনগর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে শামিম পাটওয়ারী বলেন, ‘আমরা ক্ষেত থেকে যে তরমুজটি ১৫০ টাকায় বিক্রি করেছি, এখন বাজারে সেই তরমুজের দাম ২৫০ থেকে ৪৮০ টাকা। যদিও আমাদের লোকসান হয়নি। আমাদের কাছ থেকে তারা ছোট-বড় সাইজ দেখে দাম ঠিক করেছে। এত দামে যেহেতু বিক্রি করি নাই, তাই ক্রেতার ওপর এত চাপ পড়ুক তা চাই না।’
তরমুজের পাইকারি বিক্রেতা আলী হোসেন বলেন, 'কৃষকের ক্ষেত থেকে কিছুটা কম দামে তরমুজ কিনলেও পরিবহন ভাড়াতে অনেক খরচ হয়ে যায়। তাছাড়া শ্রমিকদের মজুরি বেড়ে গেছে। সব খরচসহ প্রতি পিস তরমুজের দাম পড়েছে ৩৩০ টাকা। এজন্য আকারভেদে তরমুজ বিক্রি করতে হয়।'
চরফ্যাশন কৃষি কার্যালয়ের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে তরমুজ চাষে লক্ষমাত্র ছিল ১০ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমি, তবে ১০ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষাবাদ হয়েছে। এই বছর উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে আগাম জাতের তরমুজসহ বিভিন্ন জাতের তরমুজ চাষ করা হয়েছে। কিছু চাষি তরমুজ বিক্রি করেছে, তবে আগাম জাতের তরমুজের কারনে দাম তুলনামূলক বেশি।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ঠাকুর কৃষ্ণ দাস বলেন, 'চরফ্যাশন উপজেলায় ড্রাগন, ড্রাগন সুপার, গ্লোরি, জাম্বু ও বাংলা লিংক জাতের তরমুজ চাষ হয়। তরমুজ চাষে কৃষকদের হেক্টর প্রতি খরচ হয় দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা।'
এ বিষয়ে চরফ্যাশন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাজমুল হুদা জানান, 'চরফ্যাশন উপজেলা তরমুজ চাষের জন্য বিখ্যাত। এখানের কৃষকরা পবিত্র রমজান মাসকে টার্গেট করে বেশি লাভের আশায় এবার আগাম তরমুজ চাষ করেছেন এবং ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। এরই মধ্যে তরমুজ চাষীরা তাদের উৎপাদিত তরমুজ সংগ্রহ করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়েছেন। কৃষকরা লাভবান হবেন।'
এআই