পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশকে ইতেকাফে বসেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। শনিবার (২২ মার্চ) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দলটির প্রচার বিভাগের একটি সূত্র।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের চাঁদ (আরবী শাওয়াল মাসের চাঁদ) দেখা পর্যন্ত তিনি ইতিকাফে থাকবেন। রোজা ২৯টি হলে ৩০ তারিখ পর্যন্ত আর রোজা ৩০টি হলে ৩১ তারিখ পর্যন্ত ইতিকাফে থাকবেন তিনি।
সাধারণত মুসলিমরা পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশকে সিয়াম সাধনার পাশাপাশি অধিকতর আত্মশুদ্ধির জন্য ইতেকাফে বসে থাকেন। এসময়টিতে ইতেকাফে থাকা ব্যক্তি দুনিয়ার অন্যান্য সকল কাজ-কর্ম বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ইবাদাত ও জিকির আযকারে মশগুল থাকেন।
ইতেকাফের গুরুত্ব: ২০ রমজানুল মুবারক সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ আগে থেকে ২৯ অথবা ৩০ রমজান অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখার সূর্যাস্ত পর্যন্ত পুরুষদের জন্য মসজিদে এবং নারীদের জন্য নিজ গৃহে নামাজের নির্ধারিত স্থানে নিয়মিত একাধারে অবস্থান করাকে ইতেকাফ বলে। রমজানের শেষ দশ দিনের এই ইতেকাফ সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কেফায়া। অর্থাৎ কোনো বস্তি বা মহল্লার একজনকে হলেও এই ইতেকাফ অবশ্যই করতে হবে। যদি অন্তত কোনো এক ব্যক্তি এই ইতেকাফ করে নেন, তাহলে সারা মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে ইতেকাফ আদায় হবে; কিন্তু মহল্লাবাসীর মধ্যে থেকে কেউ যদি ইতেকাফ আদায় না করেন, তবে এই দায়িত্বের প্রতি অবহেলার কারণে মহল্লাবাসী গুনাহগার হবেন। কাজেই সব মহল্লাবাসীর ওপর এই দায়িত্ব অর্পিত হয় যে, আগে থেকে তারা খোঁজখবর নিয়ে দেখবেন, তাদের এলাকার মসজিদে কেউ ইতেকাফ করবে কিনা। যদি এমন পাওয়া না যায়, তাহলে চিন্তাভবনা ও আলাপ-আলোচনা সাপেক্ষে ইতেকাফে বসাতে হবে। কিন্তু স্মরণ রাখতে হবে, উজরত অর্থাৎ বিনিময় বা পারিশ্রমিক দিয়ে কাউকে ইতেকাফে বসানো জায়েজ নয়। কেননা ইবাদতের উজরত দেওয়া ও নেওয়া উভয়ই শরিয়তের দৃষ্টিতে নাজায়েজ ও হারাম (শামী)। ইতেকাফকারী যেন তার নিজ শরীর ও সমুদয় সময়কে আল্লাহর রাস্তায় ওয়াকফ করে দেন।
ইতেকাফ অবস্থায় ইতেকাফকারী সার্বক্ষণিক নামাজের সওয়াব পেয়ে থাকেন। যেহেতু মসজিদ আল্লাহর ঘর, সেহেতু ইতেকাফকারী আল্লাহর প্রতিবেশী বা আল্লাহর ঘরের মেহমান হয়ে যান। ইতেকাফের ফজিলত অনেক বেশি। রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করলে ২৭ রমজান যদি শবে কদর না-ও হয়, তবু এ ১০ দিনের মধ্যে নির্দিষ্ট শবে কদরের ইবাদত ইতেকাফে আদায় হয়ে যায় এবং এর ফলে কদরের রাতের ফজিলতও লাভ করা যায়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যারা অন্তত এক দিন এক রাত ইতেকাফ করবে, তাদেরও জাহান্নামের মাঝখানে এরূপ তিনটি খন্দক আড় হবে, যার প্রত্যেকটির প্রশস্ত হবে ৫০০ বছরের রাস্তা।
ইতেকাফ অবস্থায় মানুষ আল্লাহর সম্মুখে এমনভাবে হাজির হয়ে থাকে যে, দুনিয়ার কোনো কিছুর প্রতিই তার খেয়াল থাকে না। তিনি তখন মৃত ব্যক্তির মতোই নিজেকে আল্লাহর মর্জির ওপর সঁপে দেন। মানুষ যতক্ষণ ইতেকাফ অবস্থায় থাকে ততক্ষণ তার প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদত হিসেবে লেখা হয়। তার ঘুম, খাওয়া-দাওয়া, প্রতিটি নড়াচড়া পর্যন্ত ইবাদতে গণ্য হয়।