চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে বন্য হাতির অত্যাচার থেকে মুক্তি ও হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনের দাবিতে ফের উত্তাল হয়ে উঠেছে জনপদ।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) ভোর ছয়টা থেকে কর্ণফুলী উপজেলার কেপিজেড দৌলতপুর স্কুল এলাকায় পিএবি সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন বিক্ষুব্ধ জনতা।
স্থানীয়রা জানান, গত ২২ মার্চ কর্ণফুলীর দৌলতপুর এলাকায় বন্য হাতির আক্রমণে তিন মাস বয়সী এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় শোকে-ক্রোধে ফেটে পড়ে জনতা এবং দীর্ঘ ছয় ঘণ্টা ধরে সড়ক অবরোধ করে প্রশাসনের কাছে স্থায়ী সমাধানের দাবি জানায়। আন্দোলনের মুখে প্রশাসন চারদিন সময় চেয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। কিন্তু নির্ধারিত সময় পার হলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ না আসায় বৃহস্পতিবার আবারও রাস্তায় নামে স্থানীয়রা।
সকালের দিকে দৌলতপুর স্কুল এলাকা ও আনোয়ারা উপজেলার সিইউএফএল সড়কের জাইল্লাঘাটা এলাকায় সড়ক অবরোধ করা হলে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। আটকে পড়ে শত শত যানবাহন, যার মধ্যে রয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের ট্রাকসহ বিভিন্ন পরিবহন। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েন কর্মস্থলে যেতে যাওয়া চাকরিজীবী ও স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভের নেতৃত্বে থাকা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওয়াসিম আকরাম বলেন, "বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা আমাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে আশ্বাস দিতে হবে যে কতদিনের মধ্যে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে। না হলে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।"
তিনি আরও অভিযোগ করেন, কেপিজেড (কর্ণফুলী ইপিজেড) কর্তৃপক্ষ এই সংকট নিরসনে কোনো ভূমিকা রাখছে না। অথচ, শিল্প এলাকার নিরাপত্তার স্বার্থেও তাদের সক্রিয় হওয়া উচিত।
এ বিষয়ে কেপিজেডের সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুশফিকুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সময়ের কণ্ঠস্বর-কে বলেন, "এটি বৃহত্তর শিল্প এলাকা, এখানে কখনো হাতির অস্তিত্ব ছিল না। তবে স্থানীয়দের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে আমরাও চাই হাতিগুলো দ্রুত অন্যত্র সরানো হোক। বনবিভাগকে একাধিকবার লিখিতভাবে জানানো হলেও তারা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। প্রয়োজনে আমরা সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত।"
কর্ণফুলী জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) জামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, "হাতি সংক্রান্ত বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগের অধীনে। তবে আমরা জনগণের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।"
এদিকে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনীর দুটি দল ঘটনাস্থলে গেলেও পুলিশ প্রশাসনের কোনো টিম সেখানে উপস্থিত হয়নি বলে জানা গেছে। কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শরীফের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বন্য হাতি ও মানুষের সহাবস্থানের এই চিরন্তন দ্বন্দ্ব চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় বহু বছর ধরে চলমান। বনভূমি সংকুচিত হওয়ায় হাতিগুলো বাধ্য হয়ে লোকালয়ে চলে আসছে এবং ক্ষুধার্ত হয়ে ফসল-গবাদি পশু ও মানুষ আক্রমণ করছে। কর্ণফুলীতে এই সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলেও, প্রশাসনের কার্যকর উদ্যোগের অভাবে জনজীবন দিন দিন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে।
স্থানীয়রা বলছেন, স্থায়ী সমাধান না আসা পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। এদিকে, প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তা এবং বনবিভাগের নিষ্ক্রিয়তা প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
এসআর