বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে স্বস্তির খবর নিয়ে আসছে নতুন ১১ কার্গো এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস)। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চলতি মাসে দুটি এবং আগামী মাসে আরও নয়টি কার্গো এলএনজি দেশে পৌঁছাবে, যা জাতীয় গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বর্তমানে মহেশখালী থেকে প্রতিদিন ৯৮০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে, যার ফলে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে গ্যাস সংকট অনেকটাই কমে এসেছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন এলএনজি সরবরাহের ফলে আগামী দুই মাসের বেশি সময় গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে এবং কোনো সংকটের আশঙ্কা নেই। বাংলাদেশের এলএনজি সরবরাহের ইতিহাসে এর আগে কখনো একসঙ্গে এত বড় পরিমাণে এলএনজি আসেনি। ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট প্রথমবারের মতো কক্সবাজারের মহেশখালীতে ভাসমান টার্মিনালের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ শুরু হয়। তবে প্রায় সাত বছর পর এই প্রথম একসঙ্গে ১১ কার্গো এলএনজি সরবরাহ হতে যাচ্ছে, যা দেশের জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট দীর্ঘদিনের সমস্যা। চাহিদা ও যোগানের মধ্যে ফারাক থাকার ফলে প্রায়শই গ্যাস সংকট দেখা দেয়। বিশেষ করে আশুগঞ্জ–বাখরাবাদ পাইপলাইনকে ওয়ানওয়ে করে দিয়ে চট্টগ্রামকে পুরোপুরি এলএনজি নির্ভর করে ফেলার কারণে এই সংকট আরও প্রকট হয়। তবে সাম্প্রতিক এলএনজি আমদানির গতি বাড়ায় চট্টগ্রামে গ্যাসের প্রবাহ ও সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। আগামী অন্তত দুই মাস এই সরবরাহ অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে।
একটি এলএনজি কার্গোর ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ ৬৬ হাজার ঘনমিটার লিকুইড গ্যাস। গ্যাসিফিকেশনের পর এটি প্রায় ৬০০ গুণ বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন ৯৮০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে সরবরাহ করা হলে ১১ কার্গো এলএনজি অন্তত ৪০ দিনের গ্যাস চাহিদা পূরণ করতে পারবে। ফলে দেশের অন্তত দুই মাসের গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত হয়েছে, যা জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক।
বর্তমানে বাংলাদেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩,২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে স্থানীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে প্রায় ২,২০০–২,৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ঘাটতি পূরণ করতে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। নতুন ১১ কার্গো এলএনজি এই ঘাটতি পূরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে এবং দেশের শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও আবাসিক খাতে গ্যাস সংকট লাঘব করবে।
শীতকাল শেষে গ্যাসের প্রবাহে আর কোনো বাধা থাকবে না, ফলে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে। এটি শিল্প ও বিদ্যুৎ খাতের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনাও কমিয়ে দেবে। বিশেষ করে রপ্তানিমুখী শিল্পখাত, বিশেষ করে বস্ত্র ও পোশাক শিল্পে গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত হলে উৎপাদন ব্যাহত হবে না।
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত হলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা কমে আসবে, যা শিল্প উৎপাদন ও সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় স্বস্তি আনবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিল্পের জন্য নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং রপ্তানিতে গতি আসবে।
বাংলাদেশের নিজস্ব গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উৎপাদন ক্রমশ কমছে। ফলে চাহিদা পূরণে আমদানি নির্ভরতা বাড়ছে। সরকার দীর্ঘমেয়াদে এলএনজি আমদানির জন্য বিভিন্ন উৎসের সঙ্গে চুক্তি করছে এবং আন্তর্জাতিক বাজার থেকে স্পট কার্গো সংগ্রহ করছে। তবে বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম ও সরবরাহ পরিস্থিতি ভবিষ্যতে কেমন থাকবে, তা নির্ভর করছে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির উপ-মহাব্যবস্থাপক, পাইপলাইন ও পুরনির্মাণ ডিপার্টমেন্ট প্রকৌ. মো. আহসান হাবীব সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, বর্তমানে গ্যাসের যোগান ঠিকমতো রয়েছে এবং প্রেসারও স্বাভাবিক। এটি ধরে রাখা গেলে দেশের অর্থনীতি ও শিল্পখাতের জন্য একটি সুসংবাদ হয়ে থাকবে।