নোয়াখালীর কবিরহাটে শের আলী (৩২) নামে এক যুবক আত্মগোপনে গিয়ে অপহরণের নাটক সাজিয়ে প্রতারণার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করেছে নোয়াখালী জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গ্রেপ্তারকৃত কথিত ভিকটিম শেরআলী (৩২) পেশায় একজন ড্রাইভার। সে নোয়াখালী জেলার কবিরহাট উপজেলার নলুয়া গ্রামের সামছুদ্দিনের ছেলে।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে নোয়াখালী গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে, গতকাল রবিবার রাত ৯টার দিকে কক্সবাজার পৌর বাস টার্মিনালের মারছা বাস কাউন্টারের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অপহরণের নাটক সাজিয়ে ভিকটিম নিজেই আত্নগোপনে থাকে। এরপর ভিকটিম তার চাচাকে দিয়ে অপহরণ মামলা দায়ের করান।
পুলিশ জানায়, জেলার হাতিয়া বাজার এলাকার মোবারকের (৩২) সাথে চট্টগ্রাম হালিশহর এলাকায় একই সাথে সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালানোর সুবাদে শেরআলীর সাথে ওস্তাদ সাগরিদ সম্পর্ক গড়ে উঠে। ২০২২ সালের ২২ জুলাই মোবারক মোটরসাইকেল ক্রয় করতে সঙ্গী হিসেবে শের আলীকে নিয়ে চট্টগ্রাম কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় মৌলভী বাজার মোটরসাইকেল শো-রুমে যায়। মোটরসাইকেল কিনতে যাওয়া মোবারক লুঙ্গি পরিহিত ছিল এবং ভিকটিম শেরআলী প্যান্ট পরে যাওয়ায় সে মোবারককে মোটরসাইকেল কেনার টাকা তার নিকট রাখার জন্য বলে এবং মোবারক মোটরসাইকেল কেনার এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা ও ১টি এন্ড্রয়েড মোবাইল সেট শেরআলীর কাছে রাখতে দেয়।
পুলিশ আরও জানায়, মোবারক মোটরসাইকেল শো-রুমে ঢুকে দরদাম করে মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন করার জন্য ছবি ও ভোটার আইডি কার্ড প্রিন্ট করার জন্য অন্য দোকানে গেলে এ সুযোগে শেরআলী মোবারকের টাকা ও মোবাইল সেট নিয়ে পালিয়ে নিজ এলাকায় চলে আসে। ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মোবারক ও তার বন্ধু ইউসুফ দুজন মিলে নলুয়া জনতা বাজারে এসে উক্ত বিষয়ে স্থানীয় লোকজনকে জানালে সেখানে সালিশী বৈঠক হয়। সালিশী বৈঠকে বিষয়টি অমীমাংসিত থাকায় স্থানীয় লোকজন বিষয়টি সমাধানের জন্য হাতিয়ার হরণী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আক্তার হোসেনের শরণাপন্ন হয়। একই দিন মোবারক ও শেরআলী হরণী ইউনিয়নের বয়ারচর বাজারে যায়। সেখানে মোবারক শেরআলীকে দোতলা বিল্ডিংঘরে রেখে চেয়ারম্যানকে ডেকে আনার জন্য গেলে ভিকটিম কৌশলে পালিয়ে যায়।
ভুক্তভোগীরা জানান, অপহরণের মিথ্যা প্রচার করে পরবর্তীতে তার চাচা দেলোয়ার হোসেন বিটু ভাতিজা শেরআলী ও তার ছেলে মারুফ অপহরণ হয়েছে দাবী করে তার সাথে জায়গা-জমি নিয়ে পূর্ব বিরোধ থাকা শামছুল হক মাঝি ও ওই এলাকার আরো ৯ জনসহ মোবারক ও তার বন্ধু ইউসুফের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ১২ জুলাই আদালতে অপহরণ মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে কবিরহাট থানায় উক্ত বিষয়ে নিয়মিত মামলা রুজু হয়। মামলাটি রুজু হওয়ার পর কবিরহাট থানা পুলিশ তদন্ত করে। পরবর্তীতে মামলার তদন্তভার ডিবি নোয়াখালীতে ন্যস্ত হয়।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, কথিত ভিকটিম শের আলী খুবই চুতর ও ধূর্ত প্রকৃতির। সে ঘনঘন মোবাইল সীম পরিবর্তন করায় তাহার সঠিক অবস্থান নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ে। তার মোবাইল নাম্বারের কললিস্ট পর্যালোচনায় দেখা যায় সে কক্সবাজার, বান্দরবন, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, কুমিল্লা, নারায়নগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জসহ একেক সময় একেক স্থানে অবস্থান করে। তাই তাকে গ্রেফতার করতে আমাদের যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। গ্রেফতার পরবর্তী কথিত ভিকটিম শের আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
এআই