এইমাত্র
  • তিন বাহিনীর পোশাক ডিজাইনার, অনুমোদনকারীকে গ্রেপ্তার করা হোক: আসিফ
  • জার্মান চ্যান্সেলরের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক
  • ফেরেশতাদের শব্দ রেকর্ড করলো নাসা!
  • হলিউডে অভিষেক হতে যাচ্ছে দিশা পাটানির
  • আওয়ামী লীগ একটি গণহত্যাকারী সিন্ডিকেট: জামায়াত আমির
  • বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধীদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দুই পক্ষের মারামারি
  • কাজ বা জুটি নিয়ে ভাবনা নেই অভিনেত্রী তাসনুভা তিশার
  • না ফেরার দেশে সংগীতশিল্পী মনির খানের বাবা
  • মাদ্রাসায় ২য় শ্রেণীতে ১ জনকে নিয়েই পাঠদান, অনুপস্থিত ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির সকল শিক্ষার্থী
  • ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে যুবক নিহত
  • আজ বুধবার, ৯ মাঘ, ১৪৩১ | ২২ জানুয়ারি, ২০২৫

    ফিচার

    মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় দেশসেরা খুলনার সুশোভন বাছাড়
    মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় এবার প্রথম হয়েছে খুলনার সুশোভন বাছাড়। এই অর্জনের মধ্যদিয়ে সে কৃতিত্বের ধারা অব্যাহত রেখেছে। সুশোভন খুলনা নগরীর বড় বয়রা দাসপাড়া এলাকার সুভাষ চন্দ্র বাছাড় ও বন্দনা সেনের একমাত্র ছেলে। সুশোভনের কৃতিত্বের এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে রোববার (১৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজন ভিড় করে তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এমন কৃতিত্বে গর্ববোধ করেন সকলে। সুশোভন বলেন, ভালো ফলাফলের জন্য পড়ালেখার কোনো বিকল্প নাই।সুশোভন এ বছর নগরীর সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। এর আগে, টিএনটি আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০২২ সালে এসএসসি পাস করে। সুশোভন পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি প্রতিটি পরীক্ষায় সব বিষয়ে লেটার মার্কস নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে এবং প্রতি ক্লাসে বৃত্তিপ্রাপ্ত হয়েছে। দেশসেরা হয়ে সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে সুশোভন বাছাড়। একইসঙ্গে সুশোভনের বাবা ও মা তার শিক্ষকসহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সন্তানের এমন সাফল্যে। আগামীতে সে যেন দেশ সেরা একজন চিকিৎসক হয়ে দরিদ্র মানুষের সেবা করতে পারে সেজন্য সকলের দোয়া আশীর্বাদও কামনা করেছেন তারা।সুশোভন বলেন, পড়ালেখা হতে হবে বুঝে শুনে। সারা পাঠ্যপুস্তকে কতটুকু প্রয়োজন আর কোনটা প্রয়োজন না সেটা জেনে বুঝে পড়তে হবে। তবে নিয়মিত বইয়ের সংস্পর্শে থাকার কোনো বিকল্প নেই ভালো জ্ঞান অর্জনের জন্য। সেটাই হয়েছে আমার জীবনে। আমি এ পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক ছাড়া আর কিছুই ভাবিনি। সে কারণে প্রতিটা পরীক্ষাই সাফল্য পেয়েছি। তবে এই সাফল্যের পেছনে আমার বাবা-মা ও শিক্ষকদের অবদান সবচেয়ে বেশি। এছাড়া আমার সহপাঠিরাও নানাভাবে সহযোগিতা করেছে।সুশোভন আরও বলেন, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ভেবেছিলাম মেধাতালিকায় সেরা ১০ জনের একজন হবো, কিন্তু প্রথম হবো এটা ছিল কল্পনাতীত। এটা হয়তো আমার ভাগ্যকে সুপ্রসন্ন করেছে। আগামীতে আমি একজন নিউরোসাইন্সের চিকিৎসক হতে চাই। একটা হাসপাতালও করতে চাই। যেখানে দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দেবো।সুশোভনের মা বন্দনা সেন বলেন, আমরা ভীষণ গর্বিত। ছেলের এমন সাফল্য আমাদেরকে আনন্দসাগরে পাঠিয়েছে। খবরটি শুনে আমি কেঁদে ফেলেছিলাম। এত আনন্দ পেয়েছি যে, সে কারণেই আমার চোখ দিয়ে জল এসেছে। তবে সুশোভন কখনও রাত জেগে পড়েনি, সকাল সাতটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত শুধুমাত্র দিনের দৈনন্দিন কাজ ছাড়া সব সময় পড়ালেখা করতো। ছোটবেলা থেকে তার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। শুধু তাই নয় ছোটবেলা থেকেই সে বিভিন্ন ওষুধ নিয়ে নাড়াচাড়া করতো আর বলতো আমি একদিন বড় ডাক্তার হবো।সুশোভনের বাবা স্কুল শিক্ষক সুভাষ চন্দ্র বাছাড় বলেন, আমাদের একমাত্র সন্তান এত ভালো একটি ফল করবে এটা বুঝতে পারিনি। সৃষ্টিকর্তার কৃপা ছিল বলেই এমনটি হয়েছে। নিজের ছেলে যেন একজন ভালো মানুষ হয় সেজন্যও সকলের কাছে আশীর্বাদ চেয়েছেন।এফএস
    প্রথমবারের মতো কাঁকড়ার সম্পূরক খাবার উদ্ভাবন করলেন নোবিপ্রবি গবেষক
    বাংলাদেশে কাঁকড়া উৎপাদনের ক্ষেত্রে চাষীদের সাধারণত দুই কারণে প্রকৃতির উপর নির্ভর করতে হয়। যার একটি হলো কাঁকড়ার খাবার এবং অন্যটি কাঁকড়ার পোনা। উম্মুক্ত জলাশয়ে কাঁকড়া প্রকৃতিতে যে মাছ জাতীয় খাবার পায় তা খেয়ে বেঁচে থাকে।  আবার ঘেরে বা খাঁচায় চাষ করা কাঁকড়াদের স্বল্পমূল্যের শামুক, তেলাপিয়া ও সাগরের অন্যান্য মাছ খাবার হিসেবে দেয়া হয়। কিন্তু খাবার হিসেবে মাছের ব্যবহার, সংগ্রহ ও সংরক্ষণ কষ্টসাধ্য এবং এতে করে প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীলতা ক্রমশ বাড়ছে। এদিকে প্রাকৃতিক উপায়ে অতিমাত্রায় খাবার ও পোনা সংগ্রহের দরুণ প্রকৃতিতে বৈষম্যের জন্য বিরুপ প্রভাব পড়ছে। এ সংকট নিরসনে তথা উৎপাদন বৃদ্ধিতে ঘেরে বা খাঁচায় চাষকৃত কাঁকড়াদের সম্পূরক খাবার দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কী হতে পারে সে খাবার? এর অনুসন্ধান করতেই গবেষণা করেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) একদল গবেষক।কাঁকড়ার জন্য নতুন সম্পূরক খাবার তৈরীর উদ্যোগ নেন নোবিপ্রবির গবেষকগণ। আর দেশে প্রথমবারের মতো কাঁকড়ার এ  সম্পূরক খাবার উদ্ভাবনে সফলতা পান নোবিপ্রবির ফিশারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল মামুন ও তাঁর দল। নতুন উদ্ভাবিত খাবার নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি  বিশ্ববিদ্যালয়ের  নামানুসারে রাখা হয় ‘এনএসটিইউ ক্র্যাব ফিড’। দেশের বাইরে অষ্ট্রেলিয়া ও ভিয়েতনামে কাঁকড়ার এ ধরণের খাবারের প্রচলন থাকলেও বাংলাদেশে এটাই প্রথম। বিভিন্ন আকারের কাঁকড়ার জন্য খাওয়ার উপযোগী করে তৈরী করা হয়েছে ৪৫% প্রোটিন সমৃদ্ধ এই খাবার। তাই ঘেরে কিংবা খাঁচায় উভয় প্রক্রিয়ায় বেড়ে ওঠা কাঁকড়াদের খাবার হিসেবে খাওয়ানো যাচ্ছে এটি। এতে করে চাষীদের প্রকৃতি নির্ভরতা অনেকটা কমেছে। পাশাপাশি বেড়েছে কাঁকড়ার উৎপাদন ও রপ্তানি।গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ২০১৪ সাল থেকে ছোট বড় সাইজের নরম খোলসযুক্ত (সফট শেল) কাঁকড়া হিমায়িত করে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। যার দরুণ প্রকৃতিতে এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে এবং নষ্ট হতে শুরু করেছে ইকোসিস্টেম। ছোট ছোট কাঁকড়াও রেহাই পাচ্ছে না রপ্তানি থেকে। এই পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০২২ সালে মৎস্য অধিদপ্তরের আওতায় সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেন তিনি। এতে গবেষণা সহযোগী হিসেবে গ্লোব এগ্রোভেট, ইরওয়ান ট্রেডিং কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্স  বিশ্ববিদ্যালয়কে সংযুক্ত করা হয়।গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, ঘেরে ও খাঁচায় কাঁকড়ার চাষ সম্ভব এবং এদের সম্পূরক খাবার দিলে কাক্সিক্ষত পুষ্টিগুণও পাওয়া যাচ্ছে। তাই বর্তমানে চাষীরা প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল না হয়ে বরং সম্পূরক খাবারের মাধ্যমে কাঁকড়া উৎপাদনে আগ্রহী। তাই নতুন উদ্ভাবিত খাবার কাঁকড়ার জন্য একটি উপযোগী খাবার হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।গবেষক ড. মামুন জানান, গবেষণার শুরুর দিকে কক্সবাজারে কাঁকড়ার প্রচলিত খাদ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে একটি গবেষণা পরিচালনা করা হয়। পরবর্তীতে বৃহৎ পরিসরে কক্সবাজার এবং সাতক্ষীরার ৮০ জন চাষীকে নির্বাচন করা হয়। নির্বাচিত চাষীদের হ্যাচারীর কাঁকড়ার পোনা, সম্পূরক খাবার ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হয়। তাদের মাধ্যমে ঘেরে ও খাঁচায় উৎপাদিত কাঁকড়ার খাবারের বিভিন্ন দিক পর্যবেক্ষণ করা হয়। পাশাপাশি মা কাঁকড়ার লালন, স্বজাতি ভক্ষণ প্রতিরোধে শেলটার ব্যবহারকরণ, মজুদ ঘনত্ব ইত্যাদি নিরীক্ষণ করা হয়। বর্তমানে একই বিভাগের সাতজন শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তর পর্যায়ে কাঁকড়ার আরও বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন। তারা শস্য বহুমূখীকরণ বা বিন্যাসকরণ অর্থাৎ ‘কাঁকড়া, চিংড়ি ও সাদা মাছের পলিকালচার’ নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এক্ষেত্রে গবেষকদল বিভিন্ন উদ্যোক্তা, হ্যাচারি মালিক, ফিড ইন্ডাস্ট্রিসহ সংশ্লিষ্টদের কারিগরি সহায়তা প্রদানের জন্য উন্মুক্ত, যা মৎস্য খাতকে গতিশীল করবে।এইচএ
    ভিসা ছাড়াই ২০২৫ সালে যেসব দেশে যেতে পারবেন বাংলাদেশিরা
    বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ভিসা প্রাপ্তির বিষয়টি একটি চিরাচরিত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের সীমানা পেরিয়ে অন্য দেশের মাটিতে পা রাখার এই অনুমতির শিথিলতা বিভিন্ন সময়ে কমবেশি হয়ে থাকে। বিশ্ব রাজনীতি ও আন্তঃদেশীয় সম্পর্কের ভিত্তিতে সৃষ্ট এই অবস্থার প্রধান শিকার হন মূলত বিদেশে যাওয়া নাগরিকরাই।ভিসা প্রক্রিয়ার নানা জটিলতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে তথ্য-প্রযুক্তির যুগেও অনেক ভ্রমণকারীকে ভিসা প্রক্রিয়া নিয়ে চরম বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হয়। সেখানে ভিসামুক্ত গন্তব্যগুলো যেকোনো দেশের জন্যই এক বিরাট সুখবর। প্রতিবারের মতো এই বছরও পাসপোর্টের মানের ভিত্তিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্রমের তালিকা প্রকাশ করেছে হেনলি পাসপোর্ট ইন্ডেক্স। এই তালিকায় উঠে এসেছে- একটি দেশের পাসপোর্টের জন্য কতগুলো দেশের ভিসা-শিথিলতা রয়েছে। তন্মধ্যে বাংলাদেশের পাসপোর্টধারীরা কোন দেশগুলোতে ভিসা ছাড়া যেতে পারবে চলুন জেনে নেওয়া যাক।পরিপূর্ণভাবে ভিসা-মুক্ত অভিবাসন নীতিতে দেশ ত্যাগ বা বিদেশে প্রবেশকালে কোনো ধরনের কাগুজে বা ডিজিটাল অনুমতিপত্র দেখানোর শর্ত থাকে না। ফলশ্রুতিতে দেশি বা বিদেশি মুদ্রায় ভিসা ফি দেওয়ারও কোনো অনুষঙ্গ নেই। এই কার্যনীতির একমাত্র নথি হিসেবে কাজ করে পাসপোর্টটি। তবে এই সুবিধা নিয়ে গন্তব্যের দেশটিতে অবস্থান করার জন্য থাকে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা, যার বিস্তৃতি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম।২০২৪-এ হেনলি পাসপোর্ট ইন্ডেক্স অনুসারে পৃথিবীর ২২টি দেশ বাংলাদেশের পাসপোর্ট থাকা নাগরিকদের সম্পূর্ণ ভিসা-অব্যহতি সুবিধা দিয়েছিল। কিন্তু এবার এই সংখ্যাটি কমে দাড়িয়েছে ২১। চলুন, বাংলাদেশের জন্য এই ভিসামুক্ত গন্তব্যের দেশগুলো এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।১. বাহামাস২. বার্বাডোস৩. ভুটান৪. ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ৫. কুক দ্বীপপুঞ্জ৬. ডমিনিকা৭. ফিজি৮. গ্রেনাডা৯. হাইতি১০. জ্যামাইকা১১. কিরিবাতি১২. মাদাগাস্কার১৩. মাইক্রোনেশিয়া১৪. মন্টসেরাট১৫. নিউ১৬. রুয়ান্ডা১৭. সেন্ট কিট্স এবং নেভিস১৮. সেন্ট ভিন‌্সেন্ট এবং গ্রেনাডাইন্স১৯. দ্যা গাম্বিয়া২০. ত্রিনিদাদ ও টোবাগো২১. ভানুয়াতু২০২৪-এর সূচকের পূর্ণাঙ্গ ভিসামুক্ত ক্যাটাগরি থেকে যে দেশটি এবার বাদ পড়েছে সেটি হচ্ছে লেসোথো। দেশটিতে যেতে হলে বাংলাদেশিদের এখন থেকে দেশ ত্যাগের পূর্বেই যথাযথ আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ভিসা সংগ্রহ করতে হবে। ক্যাটাগরির বাকি ২১টি দেশের প্রত্যেকটিই অপরিবর্তিত রয়েছে, কোনোটির সঙ্গেই নতুন কোনো দেশের প্রতিস্থাপন হয়নি।২০২৫ সালে অন-অ্যারাইভাল ভিসায় যেসব দেশে যেতে পারবেন বাংলাদেশিরাএই অভিবাসন নীতি অনুসারে বিদেশ গমনকারী গন্তব্যের দেশে প্রবেশের আগ মুহুর্তে ভিসা হাতে পান। বিমানবন্দর, সমুদ্র বন্দর, কিংবা স্থলবন্দর; যেকোনো চেকপয়েন্টে এই কার্যক্রমটি সম্পন্ন করা হয়। এ ধরনের অনুমতি নিয়ে বিদেশে প্রবেশ এবং সেখানে থাকার জন্য সুনির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। এই সময়সীমা একেক দেশে একেক রকম। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিনামূল্যে দেওয়া হলেও কোনো কোনো দেশে এই ভিসার জন্য ফি রাখা হয়।২০২৫-এর হেনলি পাসপোর্ট ইন্ডেক্স মতে, বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের ক্ষেত্রে ১৬টি দেশে এই ভিসা-নীতি অনুসরণ করা হবে। দেশগুলোর তালিকা নিম্নরূপ:১. বলিভিয়া ২. বুরুন্ডি ৩. কম্বোডিয়া ৪. কেপ ভার্দে দ্বীপপুঞ্জ ৫. কমোরো দ্বীপপুঞ্জ ৬. জিবুতি ৭. গিনি-বিসাউ ৮. মালদ্বীপ ৯. মৌরিতানিয়া ১০. মোজাম্বিক ১১. নেপাল ১২. সামোয়া ১৩. সিয়েরা লিওন ১৪. সোমালিয়া ১৫. তিমুর-লেস্তে ১৬. টুভালু আগের বছর এই সংখ্যাটি ছিল ১৮। এবার এই ক্যাটাগরি থেকে বাদ পড়েছে সেশেলস  এবং টোগো। সেশেলস  এখন থেকে বাংলাদেশিদের জন্য ইটিএ পদ্ধতি অনুসরণ করবে, আর টোগো’তে থাকছে ই-ভিসা নীতি।২০২৫ সালে যেসব দেশে যেতে বাংলাদেশিদের ইটিএ প্রয়োজন হবেইলেকট্রনিক ট্রাভেল অথরাইজেশন বা ইটিএ হচ্ছে ভ্রমণের ডিজিটাল ছাড়পত্র, যা সরাসরি পাসপোর্টের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। এই অনুমতি ভ্রমণের আগে নিতে হয়, তবে প্রক্রিয়াটির জন্য দূতাবাসে সশরীরে না যেয়ে অনলাইন থেকেই করে নেওয়া যায়। ইটিএ প্রদানকারী প্রত্যেকটি দেশের অভিবাসন ওয়েবসাইটে এই ইলেক্ট্রনিক পরিষেবাটি রয়েছে।বিদেশ ভ্রমণ বাড়ায় কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন বেড়েছে ২৩৩% বিদেশ ভ্রমণ বাড়ায় কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন বেড়েছে ২৩৩%২০২৫-এ ৩টি দেশে ভ্রমণকালে এই ছাড়পত্র পাওয়া যাবে। দেশগুলো হলো:১. শ্রীলঙ্কা২. কেনিয়া৩. সেশেলসবিগত বছরের অন-অ্যারাইভাল তালিকায় থাকা সেশেলস এ বছর যুক্ত হয়েছে ইটিএ ক্যাটাগরিতে।হেনলি ইন্ডেক্স অনুযায়ী সম্পূর্ণ ভিসা-অব্যহতি, অন-অ্যারাইভাল ও ইটিএ- এই তিন ভিসা-নীতিকে এক সঙ্গে ভিসামুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই নিরীখে চলতি বছর বাংলাদেশের জন্য ভিসামুক্ত গন্তব্যের সংখ্যা সর্বমোট ৪০ যা গত বছরে ছিল ৪২। এই পরিবর্তনের কারণে হেনলি ইন্ডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৭ থেকে নেমে এসেছে ১০০তে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ সর্বনিম্ন মাত্রায় পৌঁছেছিল। তারপর থেকে একটানা তিন বছর ক্রমশ উন্নয়নের পর আবারও নিম্নগামী হলো বাংলাদেশি পাসপোর্টের মান।এ বছরে যে দেশগুলো বাংলাদেশিদের ই-ভিসার সুবিধা দিচ্ছেইটিএ এবং ইলেক্ট্রনিক বা ই-ভিসা উভয়ের সঙ্গেই অনলাইন পদ্ধতির সম্পৃক্ততা থাকলেও দুয়ের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। ই-ভিসা মূলত পড়াশোনা, চাকরি বা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিনের জন্য বিদেশ গমনের নিমিত্তে করা হয়ে থাকে। অপরদিকে, ইটিএ-এর মূল উদ্দেশ্য থাকে পর্যটন বা ট্রাঞ্জিট; তথা স্বল্প সময়ের জন্য গন্তব্যের দেশটিতে থাকা।ডিজিটাল পদ্ধতির পরেও ই-ভিসার আবেদন প্রক্রিয়াতে প্রায় ক্ষেত্রে সহায়ক নথির প্রয়োজনীয়তা থাকায় প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয়। অন্যদিকে, ইটিএ-এর জন্য খুব বেশি নথির বাধ্যবাধকতা নেই, যার কারণে প্রক্রিয়া বেশ দ্রুত এবং সহজ হয়।এ বছর যে দেশগুলোতে যেতে বাংলাদেশের পাসপোর্টধারীদের ই-ভিসা করতে হবে, সেগুলো হলো-১. আলবেনিয়া২. অ্যান্টিগুয়া এবং বারবুডা৩. আজারবাইজান৪. বাহরাইন৫. বেনিন৬. বতসোয়ানা৭. ক্যামেরুন৮. কলম্বিয়া৯. নিরক্ষীয় গিনি১০. গিনি১১. ইথিওপিয়া১২. গ্যাবন১৩. জর্জিয়া১৪. কাজাখস্তান১৫. কিরগিজস্তান১৬. মালয়েশিয়া১৭. মলদোভা১৮. মায়ানমার১৯. ওমান২০. পাকিস্তান২১. কাতার২২. সাও টোমে এবং প্রিন্সিপে২৩. সুরিনাম২৪. সিরিয়া২৫. তাজিকিস্তান২৬. তানজানিয়া২৭. থাইল্যান্ড২৮. টোগো২৯. তুর্কি৩০. উগান্ডা৩১. উজবেকিস্তান৩২. ভিয়েতনাম৩৩. জাম্বিয়া৩৪. জিম্বাবুয়েশেষাংশ২০২৪-এর তালিকা থেকে লেসোথো বাদ যাওয়ায় ২০২৫-এ বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য সম্পূর্ণভাবে ভিসামুক্ত দেশগুলোর সংখ্যা ২২ থেকে কমে ২১ হয়েছে। বর্তমানে ইটিএ পদ্ধতি অবলম্বন করা সেশেলস  বিগত বছর ছিল অন-অ্যারাইভাল তালিকায়। একই তালিকাভূক্ত টোগো এবার থেকে অনুসরণ করছে ই-ভিসা পদ্ধতি। তাই ১৮ থেকে অন-অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধা দেওয়া দেশের সংখ্যা কমে দাড়িয়েছে ১৬। একই কারণে গতবারের ২টি থেকে বেড়ে বর্তমানে ৩টি দেশে রয়েছে ইটিএ ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে ২০২৫-এ মোট ৪০টি দেশে ভিসা ছাড়া যেতে পারবেন বাংলাদেশের পাসপোর্টধারীরা। উপরন্তু, বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকার সুবাদে এই বছরে মোট ৩৪টি দেশ থেকে ই-ভিসার সুবিধা থাকছে।
    বিরল প্রজাতির পাখি পাতি মার্গেঞ্জারের দেখা মিলেছে তিস্তায়
    শীতের এ মৌসুমে শনিবার সকালে তিস্তা নদীর পাড়ে দেখা মিলেছে বিরল প্রজাতির পাখি পাতি মার্গেঞ্জারের । দুর্লভ পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনায় তিস্তা যেন ফিরে পেয়েছে পাখি কেন্দ্রিক সৌন্দর্য। বালুময় তিস্তার চরগুলো পরিযায়ী পাখিতে মুখরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীর পাড়ে বাড়ছে পাখিপ্রেমী দর্শনার্থীদের ভিড়। কয়েক বছর আগে স্থানীয় বাসিন্দারা একবার এ প্রজাতির পাখি তিস্তায় দেখেছিল। গত বছর শেষে ডিসেম্বর মাসে দ্বিতীয়বারের মতো তিস্তা নদীতে দেখা মিলছে পাতি মার্গেঞ্জার পাখির।বহু অচেনা পাখির ভিড়ে এবার তিস্তায় দেখা মিলেছে বিরল প্রজাতির পাখি পাতি মার্গেঞ্জারের। পরিযায়ী এ পাখি দেখতে অনেকটা রাজহাঁসের মতো। ঠোঁট, পা, পায়ের পাতা কমলা রঙের। ডানা ধূসর, সাদার মিশ্রণ।নদীর চরে এখন পাতি মার্গেঞ্জারের মতো বিচরণ করছে অগণিত পরিযায়ী পাখি। এর কোনোটা হাজার মাইল দূর থেকে এসে মোহনীয় করে তুলছে প্রকৃতি ও পরিবেশ। তিস্তা এখন পরিযায়ী পাখির নির্ভয় বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।শীতের শুরুতেই নদীর পাড়ে পরিযায়ী পাখির দলবেঁধে ওড়াউড়ি, ছোটাছুটি আর ডুব সাঁতারের সুন্দর মুহূর্ত দেখে মুগ্ধ মাঝি, কৃষাণ-কৃষাণি ও স্থানীয় লোকজন। ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখির উড়ন্ত দৃশ্য উপভোগ করতে পিছিয়ে নেই দর্শনার্থীসহ শৌখিন আলোকচিত্রীরাও।সুদূর সাইবেরিয়া, মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ চীন, লাদাখ থেকে এসব পাখি আসছে। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ হাঁস, ছোট কান প্যাঁচা, লম্বা পা তিসাবাজ, জিরিয়া, টিটি, মনকান্ড, চখাচখিসহ ৫০ থেকে ৫৫ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে নদীপাড়ে। জানা গেছে, প্রতি বছর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরিযায়ী পাখির কলতানে মুখর হয়ে ওঠে তিস্তা নদীর এপার-ওপার। এবার বেশ কিছু নতুন পরিযায়ী পাখির দেখা পাওয়া গেছে। নদীর পরিবেশ-প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় তিস্তাকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করছে পাখিগুলো। নদীতে শামুক, জলজ পোকামাকড় তাদের খাদ্য। তিস্তায় এসব খাদ্য পাওয়া যায় বলে এখানে বিচরণ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে পাখিগুলো।দীর্ঘদিন ধরে পাখির ছবি তুলতে দেশ-বিদেশে ছুটে বেড়িয়েছেন নদী গবেষক ও শৌখিন আলোকচিত্রী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ। শীতের এ সময়ে দেশে অতিথি পাখির আনাগোনা বাড়ে। ফলে পাখিপ্রেমীদের জন্য এ সময়টা দারুণ পাখির ছবি তোলার জন্য বেছে নিয়েছে এ সময়টি নৌকায় করে তিস্তা নদীতে পাখির ছবি তুলেছেন। রংপুরের পীরগাছা ও কুড়িগ্রামের উলিপুর সীমান্তঘেঁষা তিস্তা নদীতে পাখির বিরল মার্গেঞ্জার দেখা যায়। তিস্তায় পানি এখন কম, অনেক স্থানে হাঁটুসমান। এমনই এক জায়গায় পানিতে মাছসহ জলজপ্রাণি শিকার করছিল মার্গেঞ্জারটি।শীত মৌসুমে পরিযায়ী পাখি তিস্তায় আসে।  মেয়ে মার্গেঞ্জার। ছেলে পাখিগুলো আরও দেখতে আকর্ষণীয়। একে ইংরেজিতে ‘কমন মার্গেঞ্জার’ বলে।মার্গেঞ্জার পাখিটি রাজহাঁসের মতো। অনেক শিকারি তিস্তায় আসা পরিযায়ী পাখি শিকারের জন্য ওত পেতে থাকে। জীবন রক্ষা করতে শীতপ্রধান দেশ থেকে শত শত কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে পরিযায়ী পাখিরা উত্তরাঞ্চলে আসে। তাই এসব পাখি রক্ষায় প্রশাসনকে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে।জানা গেছে, পাতি মার্গেঞ্জার প্রবহমান নদী ও নালয় বিচরণ করে তারা স্রোতের বিপরীতে পানিতে ডুব দিয়ে মাছ শিকার করে। সেই সঙ্গে জলজ পোকামাকড়, ব্যাঙ, চিংড়ি, শামুকজাতীয় প্রাণিসহ লতাপাতা খায়। গাছের প্রাকৃতিক গর্তে এরা আবর্জনা ও কোমল পালকের স্তূপ বানিয়ে ৬ থেকে ১৭টি ডিম পাড়ে। ডিমের রঙ পীতাভ। এরপর ২৮ থেকে ৩২ দিনে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।তিস্তাকে যেন পাখির নির্ভয় বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত করা যায় এজন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীলদের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।সামাজিক বন বিভাগ রংপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন  বাসসকে বলেন, প্রতি বছর শীতে নদীতে বিরল পরিযায়ী পাখিরা আসে। শিকারিদের হাত থেকে এসব পাখি রক্ষায় সামাজিক বন বিভাগের একটি টহল টিম বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে।এইচএ
    প্রবীণ সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম বেদু আর নেই
    প্রবীণ সাংবাদিক, জাতীয় প্রেসক্লাবের প্রবীণ সদস্য এবং দেশের জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল ‘সময়ের কণ্ঠস্বর’র প্রতিষ্ঠাকালীন সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বেদু আর নেই। রবিবার (১২ জানুয়ারি) ভোর ৫টায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি ডায়াবেটিস ও হার্টের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, দুই মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়—স্বজন, সহকর্মী ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।মরহুমের লাশ বর্তমানে ঢাকার বারডেম হাসপাতাল হিমাগারে রাখা হয়েছে। তাঁর দুই মেয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে আসার পর আগামী বুধবার (১৫ জানুয়ারি) মরহুমের প্রথম নামাজে জানাজা উত্তরা ৫নং সেক্টরের জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে এবং জাতীয় প্রেসক্লাবে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর মৃত্যুর আগে আমিনুল ইসলাম বেদুর মরণোত্তর দেহ দানের প্রতিশ্রুতি  অনুযায়ী মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে পরিবারের পক্ষ থেকে হস্তান্তর করা হবে।আমিনুল ইসলাম বেদুর মৃত্যুতে জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি হাসান হাফিজ ও সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া, উওরা মিডিয়া ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ অনলাইন মিডিয়া এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শরিফুল ইসলাম খান, সময়ের কণ্ঠস্বর’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক পলাশ মল্লিক, জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা, মহাসচিব এডভোকেট সাইফুল ইসলাম সেকুল এবং সাংগঠনিক সম্পাদক লায়ন আল আমিন গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।প্রবীণ এই সাংবাদিক দীর্ঘ ৩৬ বছর এপিপি ও স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার বার্তা সম্পাদক এবং বহুল আলোচিত সাপ্তাহিক সাম্প্রতিকের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রকাশক ছিলেন। তিনি দেশের জনপ্রিয় অনলাইন সংবাদমাধ্যম সময়ের কণ্ঠস্বরের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, রবীন্দ্র একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন মিডিয়া এসোসিয়েশনের উপদেষ্টা, উত্তরা সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক, উত্তরা সাহিত্য পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা।উল্লেখ্য, ১৯৩০ সালে চট্টগ্রাম জেলার ভিংরোল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আমিনুল ইসলাম বেদু। তিনি বাংলাদেশ মানবতাবাদী সমিতির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক নির্বাহী সভাপতি। একইসঙ্গে তিনি বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতির সাবেক নির্বাহী সভাপতি। বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য। তিনি রবীন্দ্র একাডেমির অন্যতম উদ্যোক্তা ও সহ-সভাপতি। উত্তরা সাহিত্য পরিষদেরও সভাপতি তিনি। ১৯৯৯ সালে ‘সাকিয়াত’ সাপ্তাহিক কর্তৃক সাংবাদিকতার জন্য সম্মাননা লাভ করেন। চট্টগ্রাম সমিতিও তাকে গুণিজন সম্মাননায় ভূষিত করে।আমিনুল ইসলাম বেদু ৬টি সাহিত্য সমালোচনামূলক প্রবন্ধ গ্রন্থের লেখক এবং ‘দ্য নিউজম্যান’ নামে সাংবাদিকতার ওপর সহায়ক একটি গ্রন্থের জন্য বিশেষভাবে সমাদৃত। পিএম
    আজ সারাদিন ‘ধন্যবাদ’ জানানোর দিন
    প্রতিদিন আমাদের বহু মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। তাদের ছোট ছোট সহযোগিতায় আমাদের জীবন সুন্দর হয়, সহজ হয়। কিন্তু আমরা মুখ ফুটে তাঁদের ক’জনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি! কতজনকে বলি, ‘আপনাকে ধন্যবাদ।’ ধন্যবাদ একটি ছোট্ট শব্দ হলেও এর মহত্ব কিন্তু বিশাল। কারও প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশকালে ধন্যবাদ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যে মানুষগুলো আপনাকে সমর্থন দিয়েছেন, বিপদে যিনি বা যারা পাশে থেকেছেন, যারা সবসময় আপনার ছায়া হয়ে ছিলেন আজ তাদেরকে ধন্যবাদ দিন। ধন্যবাদ দিন তাদেরও, যারা অবহেলায়-অপমানে আপনাকে রক্তাক্ত করেছে বিভিন্ন সময়। কেননা তারা অবহেলা না করলে, প্রত্যাখান না করলে আপনি আজ এ পর্যন্ত আসতে পারতেন না। সফল হতে পারতেন না।  আজ ১১ জানুয়ারি, 'থ্যাঙ্ক ইউ ডে' বা ‘আপনাকে ধন্যবাদ’ জানানোর দিন। প্রতিবছর জানুয়ারির ১১ তারিখে এ দিবসটি পালন করা হয়। যে ব্যক্তি সামান্য অবদানের মাধ্যমেও আপনার জীবনকে সুন্দর করে তুলেছে তাকে আজ মন খুলে জানিয়ে দিন 'থ্যাঙ্ক ইউ’। তাকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। দিবসটি প্রচলন করেছেন শিকাগোর ইভেন্টোলজিস্ট আদ্রিয়েন সিউক্স কুপারস্মিথ, ১৯৯৪ সালে। তিনি একাই প্রায় দুই হাজার দিবস তৈরির পেছনে অবদান রেখেছেন। এখন আমেরিকাতে অনেকে জানুয়ারির ১১-১৮ অর্থাৎ পুরো সপ্তাহজুড়ে এই দিবসটি পালন করে থাকেন।এবি 
    বিশ্ব ব্রেইল দিবস আজ
    প্রতি বছর ৪ জানুয়ারি বিশ্ব ব্রেইল দিবস পালন করা হয়। আজকের এই দিনে সারাবিশ্বে পালন করা হয় দিবসটি। অন্ধ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের পড়া ও লেখার বিশেষ পদ্ধতির নাম ব্রেইল। এ পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন লুইস ব্রেইল। ফলে দিবসটি ব্রেইল দিবস হিসেবেই পরিচিত।ব্রেইল ১৮০৯ সালের ৪ জানুয়ারি প্যারিসের নিকটবর্তী কুপভেরি নামক একটি ছোট শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাকে সম্মান জানাতেই তার জন্মদিনে ব্রেইল দিবস পালন করা হয়।২০১৮ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ঘোষণা করা হয়েছিল দিবসটি।  এরপর ২০১৯ সালে চার জানুয়ারি প্রথম ‘ব্রেইল দিবস’ পালিত হয়। এই পদ্ধতি আবিষ্কারের দৃষ্টিহীনরা শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে। মেধা এবং দক্ষতায় নিজেদের প্রমাণ করতে পারছে। মাত্র তিন বছর বয়সে অন্ধ হয়ে যান লুইস ব্রেইল। তারপরও তার জীবন থেমে থাকেনি। পড়াশোনার জন্য তিনি ভর্তি হয়েছিলেন প্যারিসের দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি বিশেষ স্কুলে। সেখানে তিনি জানতে পারেন অ্যালফাবেট কোডের কথা। শত্রুপক্ষের নিশানা থেকে বাঁচতে ফরাসি সৈন্যরা রাতে তাদের অফিসারদের সাথে এ কোডে ব্যবহার করতেন।  যা ছিল বেশ কিছু অ্যালফাবেট কোড বিন্দু আর ছোট লাইনের সমষ্টি। সেগুলো এমনভাবে খোদাই ছিল আঙুল স্পর্শ করলেই পড়া যেত।  মূলত এ পদ্ধতি থেকেই ব্রেইলের মাথায় অন্ধদের শিক্ষার কৌশল মাথায় আসে।২০ বছর বয়সে অন্যান্য অন্ধ ব্যক্তিকে শিক্ষা দিতে তিনি অগ্রসর হন; ১৮২৭ সালে প্রথম ব্রেইল পদ্ধতির বই প্রকাশ করেন।ব্রেইল পদ্ধতিতে ছয়টি ডট দিয়ে অক্ষর, সংখ্যা, চিহ্ন ইত্যাদিকে চিহ্নিত করা হয়।  ব্যবহারকারীরা সেগুলোর ওপর আঙুল বুলিয়ে অক্ষরগুলো অনুধাবন করেন; সেখানে নিজের ভাব অনুযায়ী কাজ করেন।  তবে এই পদ্ধতি দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের আশীর্বাদ। যা সাধারণ মানুষ উপলব্ধি করতে পারে না।এইচএ
    শুক্রবার বায়তুল মোকাররমে আসছেন মসজিদুল আকসার ইমাম
    আজ শুক্রবার মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রথম কিবলা ফিলিস্তিনের মসজিদুল আকসার ইমাম শায়েখ আলী ওমর ইয়াকুব আব্বাসী বায়তুল মোকারম জাতীয় মসজিদে আসছেন। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) তিনি ঢাকায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব চত্বরে একটি ইসলামী সম্মেলনে বক্তব্য দেবেন বলে জানা গেছে।সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, লন্ডনপ্রবাসী সিলেটের ব্যবসায়ী মাওলানা ফরিদ আহমদ খানের আমন্ত্রণে মসজিদুল আকসার ইমাম ইয়াকুব আব্বাসী গত ২৯ ডিসেম্বর ঢাকায় আসেন। ১০ দিনের সফরে তিনি ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় ওয়াজ মাহফিল ও ইসলামী সম্মেলনে অংশ নেবেন।বুধবার (১ জানুয়ারি) পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল ও নাসিরনগর, কুমিল্লার দেবীদ্বার, চট্টগ্রামের কক্সবাজার ও হাটহাজারী মাদ্রাসার মাহফিলে অংশ নিয়েছেন শায়েখ আলী ওমর। গতকাল তিনি ফেনীর সোনাগাজীতে আল–হাসনাইন একাডেমির মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন।মসজিদুল আকসার ইমাম ইয়াকুব আব্বাসী ঢাকার বনানী, মোহাম্মদপুরের বসিলা, সিলেটের সুনামগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জে বিভিন্ন মাহফিলে অংশ নেবেন। এর মধ্যে ৭ জানুয়ারি সিলেটের কাজীর বাজার মাদ্রাসা ও গোলাপগঞ্জ দারুল উলুম মাদ্রাসায় মাহফিলে অংশ নেবেন।আগামী ৮ জানুয়ারি ইয়াকুব আব্বাসী ফিলিস্তিনের উদ্দেশে রওনা দেবেন বলে জানিয়েছেন লন্ডনপ্রবাসী ব্যবসায়ী মাওলানা ফরিদ আহমদ খান। তার ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও আমন্ত্রণে শায়েখ আলী ওমর ইয়াকুব ২০১৮ সাল থেকে প্রায় প্রতিবছরই বাংলাদেশে আসছেন।
    বিশ্ব জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ দিবস আজ
    আজ ২ জানুয়ারি, বিশ্ব জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ দিবস। অনেক দেশেই জনসংখ্যা বৃদ্ধি রীতিমতো ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। আবার কোথাও জনসংখ্যা বৃদ্ধি নয় বরং হ্রাস পাওয়াটাই সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে দিবসটি।আমাদের দেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম শুরু হয় স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই। প্রথমে বেসরকারি পর্যায়ে এই কার্যক্রম শুরু হলেও পরবর্তীতে তা সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়। এক পর্যায়ে এই কার্যক্রমে বেশ সফলতা আসে। সাম্প্রতিককালেও এই কার্যক্রম চলছে। তবে বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে এই ব্যাপারে সচেতনতা নেই বললেই চলে। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষিত-সচেতন দম্পতিও অধিক সন্তান নিচ্ছেন।বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের চূড়ান্ত জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। এর মধ্যে গ্রামে বসবাস করেন দেশের মোট জনসংখ্যার ১১ কোটি ৬০ লাখ। অন্যদিকে শহরে বাস করেন ৫ কোটি ৩৭ লাখ।  ২০১১ সালে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৯৭৬ জন করে বসবাস করলেও ২০২২ সালে এসে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১ হাজার ১১৯ জন করে বসবাস করছেন।পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে প্রতি মিনিটে জনসংখ্যা বাড়ছে চার জন। এক লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বাংলাদেশে ১৯৬১ সালে জনসংখ্যা ছিল তিন কোটির ওপরে। সেই জনসংখ্যা এখন বেড়েছে পাঁচগুণের বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে জনসংখ্যা ২০ কোটিতে পৌঁছাবে কয়েক বছরের মধ্যেই।এবি 
    বিদায় ২০২৪, স্বাগত নতুন আশা-প্রত্যাশার ২০২৫
    বিদায় ২০২৪, শুরু হলো নতুন বর্ষ ২০২৫। মহাকালের গর্ভে আশ্রয় নিল আরও একটি বছর। দুঃখ-বেদনা ভুলে নতুন আশায় স্বাগত ২০২৫ সালকে। পৃথিবীর নানা প্রান্তে ভিন্ন ভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা ১ মিনিটে যাত্রা শুরু করে নববর্ষ-২০২৫।বিদায় মানেই আনন্দ-বেদনার মহাকাব্য। বিদায়ের দিনে চোখের দৃশ্যপটে একটি বছর যেন এক মুহূর্ত। আজ ভোরের সূর্য আগামীর নতুন পৃথিবী। গেল বছর ঘটে গেছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানান ঘটনা। তবুও জীবন যাচ্ছে চলে জীবনের গতিতে। এগিয়ে যাচ্ছে মানুষ, নতুন আশায়, নতুন স্বপ্নের প্রত্যয়ে।পুরোনো বছর পেছনে ফেলে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার ঊষালগ্নে জমকালো আয়োজনে মেতে ওঠে বিভিন্ন দেশ, দেশের মানুষ, যা ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ নামে পরিচিত। থার্টি ফার্স্ট নাইটের ছোঁয়া পৃথিবীর নানান দেশের মতো আমাদের লেগেছে সমানভাবে।বিদায়ী বছর ২০২৪ সালের সব দুঃখ বেদনা ভুলে গিয়ে এবং নতুন বছরের নতুন আশা-আকাঙ্ক্ষা ও উদ্দীপনা নিয়ে বিশ্ববাসীর সঙ্গে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে আজ মধ্যরাতে পালিত হচ্ছে ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’। যা গভীর আগ্রহের স্থানে ছিল এই ক্ষণ, সবাই মিলে নতুন বছরকে বরণ করে নিচ্ছে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ, বিশেষ করে যুব সমাজ মধ্যরাতে ১২টা ১ মিনিট বাজার সঙ্গে সঙ্গে নববর্ষের বিভিন্ন কর্মসূচি উদযাপনে মেতে উঠছে।এদিকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূস পৃথক বার্তায় ইংরেজি নববর্ষ ২০২৫ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এছাড়া ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে দেশের মানুষ ইতোমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অন্যান্য বার্তা পাঠানো মাধ্যমে তাদের প্রিয়জন ও বন্ধু-বান্ধবদের শুভ কামনা জানাচ্ছেন।’সময়ের কন্ঠস্বরের সকল পাঠককে নতুন বছর ২০২৫ এর শুভেচ্ছা।এফএস
    আমার ঘর চাই না, দু'মু‌ঠো খাবার চাই
    ডিসেম্বরের শীতের রাত। চারদিকে নিস্তব্ধতা। ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন পরিবেশ, কনকনে শীতে বাইরে বের হওয়াও যেন অসহনীয়। তবুও সেই কুয়াশা ভেদ করে সন্ধান পাওয়া গেল কয়েকজন মানুষের। তাদের মুখমন্ডল ঢাকা, গায়ে মোটা কাপড়। সারারাত জু‌ড়ে যে ক্যাম্পাসে শিকারি পেঁচার থাক‌তো কলরব , আজ সেখা‌নে নীরবতা। প্রকৃ‌তির বৈরিতায় শী‌তে জবুথবু বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন পাকা দালানের বন্ধ ঘরে কম্বল গায়ে দিয়ে আরামে ঘুমাচ্ছে, তখনই চোখে পড়ল কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের গেটের বা‌হি‌রে মেঝেতে শুয়ে থাকা এক বৃদ্ধাকে। মাথার নিচে একটি প্লাস্টিকের বোতল, মেঝেতে পাতলা চটের পাটি, শরীরে জড়ানো পুরাতন নোংরা এক জ্যাকেট। মাথার চুল এলোমেলো, গায়ের রং কালো। জ্যাকেটটি হয়তো কোনো ভাগ্যবান ব্যক্তির পুরনো অব্যবহৃত জিনিস। বৃদ্ধার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল তার নাম হানিফা। তার পরনে শুধু একটি লুঙ্গি আর পুরনো জামা। শরীরে তেমন কোনো শক্তি নেই, কাজ করার সামর্থ্যও নেই। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের হোটেলের অবশিষ্ট খাবার খেয়েই তার দিন পার হয়। তবে শুক্রবারে ভিড় বেশি থাকায় কোনো দিন একেবারে না খেয়ে থাকতে হয়। মাঝে মাঝে কেউ হয়তো একটু চানাচুর বা বিস্কুট দিয়ে যায়। তি‌নি আরও জানান, মসজিদের ভেতরে জায়গা না পাওয়ায় মসজিদের গেটের বা‌হি‌রে মেঝেতে ঘুমান।  আমার শরীরে ময়লা কাপড়, জায়গা দেবে কে? অনেকেই বলে এখান থেকে চলে যেতে। কিন্তু আমি যাব কোথায়? এই পৃথিবীতে আপন বলতে কেউ নেই। সবাই আমাকে পাগল ব‌লে ডাকে। কাছে গেলেই দুর্গন্ধের অজুহাতে দূরে সরে যায়, কেউ আবার লাঠি দিয়ে আঘাত ক‌রে। নিজের জন্মস্থানে ফিরে গেলে লোকজন গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ময়মনসিংহ শহরের কানিহারি গ্রামে হানিফার বাড়ি। কিন্তু সেখানে পরিবারের কেউ নেই, ভিটেমাটিও নেই। প্রতিবেশীদের কাছে তিনি একেবারেই মূল্যহীন। সন্তান জন্মদানের সময় তার স্ত্রী মারা যায়। এরপর থেকেই নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করছেন। আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা হলে তারা না দেখার ভান করে চলে যায়।হানিফা আরও বলেন, "এই শীতে ভালো একটা কম্বল, জ্যাকেট আর একটি পাটি থাকলে হয়তো শীতটা কাটিয়ে উঠতে পারতাম। আমার ঘর চাই না দু'মু‌ঠো খাবার চাই।বিশ্ব‌বিদ্যালয়ের ক‌য়েকজন দোকা‌নির সা‌থে কথা ব‌লে জানা যায়, হা‌নিফা শান্ত ও ভা‌লো ম‌নের মানুষ। অ‌নেক‌দিন ধ‌রে মস‌জি‌দের গেই‌টের বা‌হি‌রে ঘুমাতে দেখ‌ছি। আবার দিনহ‌লে অন্যত্র চ‌লে যায়। দোকা‌নে দোকা‌নে ঘু‌রে যা পায় তাই খে‌য়ে ক্ষুধা নিবারণ ক‌রে।নাম প্রকা‌শে অ‌নিচ্ছুক শিক্ষার্থী‌রা জানান, এই শী‌তে বা‌হি‌রে ঘুমা‌নো কা‌রো প‌ক্ষেই সম্ভব না। মান‌বিকতা থে‌কেই সাধ্যমত অর্থ দি‌য়ে সাহায্য ক‌রে‌ছি। একটা পুর‌নো শী‌তের কাপড়ের ব্যবস্থা ক‌রে দি‌য়ে‌ছি। সবাই য‌দি নি‌জ অবস্থান থে‌কে সামান্য ক‌রেও সাহায্য ক‌রে বৃদ্ধার অ‌নেক উপকা‌রে আস‌বে।দেশ স্বাধীন হলেও হানিফার জন্য এই দেশে ঘর হয়নি। তার নিঃসঙ্গ জীব‌নে শীত এবং দু'মু‌ঠো খাবা‌রের কষ্ট যেন ছাত্র জনতার আ‌ন্দোলনের চেতনার বিপরীত ছবি হয়ে ধরা দেয়। পিএম
    আজ বিশ্ব শাড়ি দিবস
    কথায় বলে, ‘শাড়িতে নারী’। বাঙালি নারীর নাকি আসল সৌন্দর্য ফুটে ওঠে শাড়ি গায়ে জড়ালে। আপনি যদি একজন শাড়িপ্রেমী হয়ে থাকেন তাহলে আজকের দিনটি আপনারই। আজ ২১ ডিসেম্বর ‘আন্তর্জাতিক শাড়ি দিবস’। সৌন্দর্য, বহুমুখিতা এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্বের জন্য পরিচিত শাড়ি। বিশ্বের অন্যতম আইকনিক এবং চিরন্তন এই পোশাকটির প্রতি সম্মান জানানোর উদ্দেশে দিবসটি পালিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঐতিহ্যবাহী ফ্যাশনের একটি গ্লোবাল চিহ্ন হিসেবে পরিণত হয়েছে শাড়ি। এই দিনটি আসলে শাড়ি উদযাপন করার জন্য। আমাদের চিরচেনা শাড়িকে বস্ত্র না বলে বিস্ময়বস্ত্রই বলতে হয় ৷ এ যেন এক টুকরো কাপড় নয়, বরং জীবনের গল্প বলা এক ক্যানভাস। কন্যা, জায়া, জননীরূপে ভূগোলকের এই দিকে শ্বাশত নারীরূপের প্রতীক হয়ে উঠেছে শাড়ি। নারীর শক্তিমত্তা আর আবেদনময়তা- দুটিরই অনন্য প্রকাশ ঘটে এই ৬ গজের বস্ত্রখন্ডে। প্রেয়সীকে শাড়িতে সবচেয়ে বেশি আরাধ্য মনে হয়। দেবীও শাড়ি পরেই অসুরনিধন করেন। মায়ের শাড়ির আঁচলের ঘ্রাণ পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় সুবাস সকলের। এই শাড়ির তৈরি কাঁথা প্রজন্মান্তরে আমাদেরকে জড়িয়ে রাখে ওম সহযোগে। যুগে যুগে শাড়ির প্রেমে মজেছেন সকলেই। যদিও কালের বিবর্তনে ব্যপক পরিবর্তন এসেছে শাড়ির ড্রেপিংয়ে। যুক্ত হয়েছে বৈচিত্র্যময় ব্লাউজ। কাঁচুলি, চোলি আর জ্যাকেট স্টাইল পেরিয়ে কোর্সেট,ব্রালেট, ট্যাংকটপ আর ক্রপটপ সঙ্গী হয়েছে শাড়ির। ৬ গজ থেকে ৯ গজ পর্যন্ত বেড়েছে এর দৈর্ঘ্য।বিশ্ব শাড়ি দিবসের উৎপত্তিবিশ্ব শাড়ি দিবস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল শাড়ির সাংস্কৃতিক গুরুত্বকে স্বীকৃতি দেওয়ার এবং এর বৈশ্বিক জনপ্রিয়তা প্রচার করার জন্য। যদিও এই দিনের সঠিক উৎপত্তি ব্যাপকভাবে ডকুমেন্ট করা হয়নি, তবে এটি শাড়ি প্রেমী এবং সাংস্কৃতিক সমর্থকদের দ্বারা তৈরি হয়েছে যারা এই পোশাকটির ঐতিহ্য এবং কারিগরি দক্ষতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে চেয়েছিলেন। এই দিনটি পালন করার মাধ্যমে, মানুষকে শাড়ি পরিধান করতে, এর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে এবং এই পোশাকটি তৈরির ইতিহাস ও শিল্পকলার সঙ্গে পরিচিত হতে উৎসাহিত করা হয়।  সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক শাড়ি শাড়ি কেবল একটি পোশাক নয়— এটি সংস্কৃতির সারবত্তা এবং ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রথাগতভাবে দক্ষিণ এশিয়ার নারীরা শাড়ি পরিধান করলেও, বিশ্বের অন্যান্য অংশেও পরিচিত একটি পোশাক। সাধারণত শাড়ি বলতে পাঁচ থেকে নয় গজ দীর্ঘ একটি কাপড়ের টুকরো বোঝানো হয় যা শরীরের চারপাশে বিভিন্ন রকমভাবে পরিধান করা হয়। স্থানীয় ও উৎসবের ভিত্তিতে এর পরিধান ধরন পরিবর্তিত হয়। শাড়ির সরলতা ও সৌন্দর্য একে দৈনন্দিন পোশাক এবং ধর্মীয় বা সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিধানযোগ্য করে তোলে, যা এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বহুমুখী পোশাকগুলোর একটি করে তোলে। বিভিন্ন অঞ্চলের শাড়ি পরার নিজস্ব পদ্ধতি রয়েছে। আবার শাড়ির কাপড়ের নানা ধরন রয়েছে। যেমন- সুতি, সিল্ক, মসলিন, জর্জেট, শিফন বা ক্রেপ। বিভিন্ন আবহাওয়া, উৎসব বা ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী শাড়ি পরিবর্তিত হতে পারে।বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে নারীরা শাড়ি পরিধান করে থাকেন। স্থানীয় সীমানা পেরিয়ে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী এই পোশাকটি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। দক্ষিণ এশীয় না হওয়া অসংখ্য নারীরা বিশ্বব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠানে শাড়ি পরিধান করে থাকেন। এটি একধরনের মাধুর্য এবং নারীত্বের প্রতীক হিসেবে গণ্য হয়।সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিশ্বের ডিজাইনাররা শাড়িকে আধুনিক রুচি অনুযায়ী পুনরায় ডিজাইন করেছেন। নতুন নতুন কাপড়, ডিজাইন এবং শাড়ি পরার পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন তারা। ফলে এটি তরুণ প্রজন্মের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ঐতিহ্যবাহী এবং আধুনিক উপাদানের সংমিশ্রণে শাড়ি এখন একটি গ্লোবাল ফ্যাশন স্টেটমেন্ট, যা আন্তর্জাতিক রানওয়ে এবং রেড কার্পেটেও দেখা যায়। বছরের পর বছর ধরে তাই পোশাক হিসেবে রাজত্ব করে আসছে শাড়ি নামের পোশাকটি। বিশ্ব শাড়ি দিবসের গুরুত্বশাড়ি যারা ভালোবাসেন তাদের জন্য আলাদা কোনো দিবসের প্রয়োজন হয় না। তবুও বিশ্ব শাড়ি দিবস এমন একটি সুযোগ, যেখানে শাড়িপ্রেমীরা এই আইকনিক পোশাক তৈরির শিল্পকর্ম এবং কারিগরি দক্ষতাকে উদযাপন করতে পারেন। শাড়ি তৈরি করার জন্য কাপড় বোনা থেকে শুরু করে সূক্ষ্ম ডিজাইন ফুটিয়ে তোলা, হাতে সেলাই করার প্রক্রিয়া সবকিছুই অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ এবং দক্ষতার কাজ। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতের গ্রামীণ অঞ্চলের কারিগররা শতাব্দীজুড়ে শাড়ি বোনা এবং তৈরির ঐতিহ্যকে জীবিত রেখেছেন। তাদের জ্ঞান আর কৌশল প্রজন্মের পর প্রজন্মে উপহার দিচ্ছে নানা রঙের নানা ঢঙের শাড়ি। এই দিনটিতে, ব্যক্তি ও সম্প্রদায় একত্রিত হয়ে শাড়ি পরিধান করে এবং তাদের বিভিন্ন স্টাইল ও কাপড় প্রদর্শন করে ঐতিহ্য উদযাপন করেন। এই দিনটি নারীদের শাড়ি শিল্পে অবদানও তুলে ধরতে সাহায্য করে। কারণ শাড়ি ডিজাইন, তৈরি এবং বিক্রিতে নারীরা বড় ভূমিকা পালন করে থাকেন।এবি 
    অল্প লিখে গল্প হওয়া কবি
    কবি হেলাল হাফিজ গৃহী ছিলেন না। স্বেচ্ছায় সন্ন্যাস বেছে নিয়েছিলেন। নিঃসঙ্গতা কুরে কুরে খেয়েছে তাকে। একজীবনে কত বর্ণিল ও তীব্র বিষাদই না তাকে বিদ্ধ করল।পোড়াল। না পুড়লে নাকি সোনা খাঁটি হয় না। সন্ন্যাস, আত্মপীড়ন, নির্লিপ্তির পথে দীর্ঘকাল হাঁটলেন। সে এক কষ্টদ্রাবী দুর্গম শিল্পযাত্রা।কত নারী এলো জীবনে, তার পরও তৃষ্ণার শেষ নেই, নেই। তাও বুঝি শিল্পচূড়া থেকে গেল অনেকটাই অধরা! কবিতার জন্যে সব ছেড়েছুড়ে বিবাগী জীবন। জুয়ার টেবিল, স্কুল মাস্টারি, সাংবাদিকতা, সরকারি চাকরি প্রত্যাখ্যান, হোটেল বাস, অকৃতদার থাকা, নির্মোহ বৈরাগ্য—আলো-আঁধারি রহস্যকুয়াশা, কৌতূহল কিছু কম নেই তাকে ঘিরে। তার সম্পর্কে বলা হয়, ‘হেলাল হাফিজ অল্প লিখে গল্প হয়েছেন।’ মোক্ষম ও যথার্থ মূল্যায়নই বটে। পাঠকসাধারণের অপার কৌতূহল এবং আগ্রহ এই ব্যক্তিমানুষটির জীবনযাপনের ধারা-প্রকৃতি, নানা বিষয়ে তার চিন্তা-ভাবনা, পর্যবেক্ষণ, অনুভূতি সম্পর্কে। একখানি মাত্র কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ গভীর মমতা-ভালোবাসায় স্পর্শ করেছে অজস্র মানুষের হৃদয়। দোলায়িত, শিহরিত, মুগ্ধ-আপ্লুত করেছে পাঠক-মনন। সে এক আশ্চর্য নান্দনিক টান, সম্মোহনও।৭ অক্টোবর ১৯৪৮ কবি হেলাল হাফিজের জন্ম। নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলায়। মাত্র তিন বছর বয়সে মাকে হারান। বলতেন, মাতৃহীনতার বেদনাই তাকে কবি করেছে। স্কুল শিক্ষক পিতা আবার বিয়ে করেন। দুই সংসারে মোট চার ভাই তিন বোন। গ্লুকোমা, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ নানা ব্যাধির আক্রমণে শরীর ছিল অত্যন্ত দুর্বল। জীবনের অন্তিমলগ্নেও শাহবাগের একটি হোটেলে বরাবরের মতো বসবাস করতেন। তার প্রিয় প্রতিষ্ঠান জাতীয় প্রেস ক্লাব ছিল প্রকৃতই সেকেন্ড হোম। জীবনসায়াহ্নে সেখানে যাতায়াত করতে পারতেন না শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে।কবি হেলাল হাফিজের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ ১৯৮৬ সালে প্রকাশের পর ব্যাপক তোলপাড় তোলে। মোট ৩৩টি মুদ্রণ হয়েছে। এটি রেকর্ড। প্রকাশিত অন্য গ্রন্থগুলো হচ্ছে ‘কবিতা ৭১’ (ইংরেজি অনুবাদ ‘দ্য টিয়ার্স দ্যাট ব্লেজ’সহ), ‘একজীবনের জন্মজখম’ (ইংরেজি অনুবাদ ‘বার্থ উন্ড অব ওয়ান লাইফ’সহ)। শেষতম গ্রন্থ ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’ বের হয় ২০১৯ সালে, ঢাকা ও কলকাতা থেকে একযোগে।অসামান্য জনপ্রিয় কবি হেলাল হাফিজকে বলা হয় দ্রোহ ও প্রেমের কবি। তার সবচেয়ে বিখ্যাত কবিতাটির নাম ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’। সে কবিতার দুটি পঙক্তি হলো ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/ এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়...’কিভাবে জন্ম ঐতিহাসিক সেই কবিতাটির? কবির জবানিতেই জানা যাক। তিনি আমাকে বলেছেন, “উত্তাল ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে একদিন সন্ধ্যায় আমি পুরনো ঢাকা থেকে ইকবাল হলে (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ফিরছিলাম। সেই সময়টাতে একটু ‘অব্যবস্থিতচিত্ত’ ছিলাম। পানাহার করে ফিরছিলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার আস্তানায়। তখন বাংলা অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান যে কতটা সর্বগ্রাসী ও সর্বপ্লাবী ছিল, সেটা যারা না দেখেছেন, তাদের বোঝানো দুষ্কর। গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়ায় আমার রিকশাটি থেমেছিল। সমানে মিছিল চলছিল সেখানে। ইপিআর (বর্তমানের বিজিবি) ও পুলিশ মিছিলকারীদের পেটাচ্ছিল। ধাওয়া দিচ্ছিল। মিছিল থেকেও ইটপাটকেল ছোড়া হচ্ছিল। একটা রিকশা ছিল থামানো। বয়স্ক সেই রিকশাওয়ালা বলে উঠল, ‘মার মার শালাদের। কোনো কোনো সময় মার্ডারও করা যায়।’ রিকশাওয়ালারা মাঝে মাঝে টুকটাক ইংরেজি শব্দও বলে। এই কথাটা আমার মগজে ও মনে গেঁথে গেল। ওই ঘটনা থেকেই এ কবিতার জন্ম।”নন্দিত কবি হেলাল হাফিজ জানান, “আহমদ ছফা আর কবি হুমায়ূন কবির এই দুজন আমাকে তৎকালীন দৈনিক পাকিস্তানের সাহিত্য সম্পাদক কবি আহসান হাবীবের কাছে নিয়ে যান। কবিতাটা হাবীব ভাইয়ের হাতে দিয়ে তারা বললেন, ‘হাবীব ভাই, এ আমাদের এক তরুণ কবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে পড়ে।’ আহসান হাবীব অনেক বড় মাপের কবি। উনি কবিতাটা পড়েন আর আমার দিকে তাকান। অবাক চোখে দেখছেন আমাকে। আমার তখন কীই বা বয়স। হাবীব ভাই পড়া শেষ করে আরো এক-দুইবার পড়লেন। পড়েই ছফাকে বললেন, ‘ছফা এই কবিতাটা আমি দৈনিক পাকিস্তানে ছাপতে পারব না। কারণ দৈনিক পাকিস্তান সরকারি কাগজ আর কবিতাটি হচ্ছে রাষ্ট্রদ্রোহী কবিতা, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লেখা। সশস্ত্র সংগ্রামের আহ্বান জানানো হয়েছে এই কবিতার মাধ্যমে। এটা ছাপলে আমার চাকরি তো যাবেই, কাগজটাও বন্ধ হয়ে যাবে, আরো কত কী যে হবে! তাই আমি কবিতাটি ছাপতে পারলাম না। তবে হেলালের আর কবিতা না লিখলেও চলবে। তিনি তো বড় কবি। পাকা জহুরিও। চকিতেই তিনি বুঝতে পেরেছেন যে, এই ভূখণ্ডের তত্কালীন সাড়ে সাত কোটি মানুষের তীব্র যে আকাঙ্ক্ষা, সেই আকাঙ্ক্ষা এই কবিতায় সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। হাবীব ভাই আর ছাপলেন না কবিতাটা। আমরা চলে এলাম।” কবি হেলাল হাফিজের ভাষায়, “কবিতাটির প্রথম দুটি লাইন ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/ এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’। ছফা ভাই ও হুমায়ূন কবির এক রাতে সমস্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়ালে চিকা মেরে দিলেন। তখন তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এত ভবন ছিল না। মূলত আর্টস ফ্যাকাল্টি ও কার্জন হল। মাত্র দুই রাতে গোটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দেয়ালে দেয়ালে স্লোগান হিসেবে এই পঙক্তি লেখা হলো। চিকা মারা যাকে বলে। এখনকার প্রজন্ম অবশ্য চিকা মারা কী, সেটার মর্ম বুঝতে পারবে না। গভীর রাতে ভীতিকর পরিবেশে দেয়াল লিখনরত তরুণদের জিগ্যেস করা হয়েছিল, তোমরা কী করছো? উত্তরে ওরা বলেছিল, চিকা (ছুঁচো) মারছি। সেই থেকে দেয়াল লিখনের কাজকে বলা হতো চিকা মারা। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই কবিতা রণাঙ্গনের মানুষের মুখে মুখে ফিরেছে। যারা মহান মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন, সেই বীর যোদ্ধাদের জাগরণী ও উজ্জীবন মন্ত্র ছিল এই কবিতাটি। স্বাধীনতার পরে, বিশেষ করে বাম রাজনীতি যারা করতেন, হক, তোহা, সিরাজ সিকদার গ্রুপ—এরা এই কবিতাটিকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা শুরু করল। কবিতাটি আমাকে রাতারাতি তারকা খ্যাতি এনে দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। যে সমাজে একটু পীড়ন থাকবে, নির্যাতন থাকবে, শোষণ থাকবে, সেই সমাজে এই কবিতা থাকবেই—এটা বাদ দেওয়া যাবে না। এর পর থেকে এই একটি কবিতাই আমার জীবনধারা আমূল বদলে দিল।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তা করিডর দিয়ে চলাই তার দায়। ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলে, ‘ওই যে কবি হেলাল হাফিজ যায়, দ্যাখ! দ্যাখ!’ আমার নাম না নিয়ে এটাও বলে যে এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়। যেখানেই যাই, সেখানেই একটু অতিরিক্ত পাত্তা পাই। তখন টিএসসি নতুন হয়েছে। ইউরোপ-আমেরিকার মডেলে। টিপটপ। হাই ফাই। রোজ দুপুরে আমাকে কে খাওয়াবে, তা নিয়ে কম্পিটিশন হয়। আমাকে কোনো বিল দিতে হয় না।”কবিকে প্রশ্ন করি, একদা যৌবনে আপনি লিখেছিলেন সেই বিখ্যাত কবিতার পঙক্তি—এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/ এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়। এখন জীবনসায়াহ্নে এসে বার্ধক্যে উপনীত হয়ে আপনি কী ধরনের পঙক্তি লিখবেন?এ প্রশ্নের উত্তরে কবি হেলাল হাফিজ বললেন, ‘এখন যৌবন যার... এই দ্যুতিময় পঙক্তির যিনি স্রষ্টা, তিনি চিরনবীন। বাস্তবে তার বয়স যতই হোক না কেন। এটা ঠিক, শরীর একটা বড় ফ্যাক্টর। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যত দিন সমাজে অন্যায় উৎপীড়ন অনিয়ম অনাচার থাকবে, এই পঙক্তিমালাকে আশ্রয় করে প্রতিবাদী কিছু মানুষ ঘুরে দাঁড়াতে চাইবে। রুখে দাঁড়াবে অন্যায়-বৈষম্য। এই কবিতার পঙক্তি তাদের প্রাণিত করবে। এমনটা হতেই পারে যে, বেশির ভাগ মানুষই ক্ষমতার বলয়ের মধ্যে থাকতে চাইবে। কলাটা-মুলোটার জন্যে। কিন্তু কিছু মানুষ তো ব্যতিক্রমী থাকবেই। তারা রুখে দাঁড়াবে। অন্যায়-অবিচারের অবসান চাইবে।’সুত্র: দৈনিক কালের কণ্ঠলেখক: কবি হাসান হাফিজ, সম্পাদক: দৈনিক কালের কণ্ঠ।
    বিশ্ব মানবাধিকার দিবস আজ
    বিশ্ব মানবাধিকার দিবস আজ মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর)। ‘আমাদের অধিকার, আমাদের ভবিষ্যৎ এখনই’—এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলো মানববন্ধন ও আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করবে। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি বাণী দিয়েছেন।বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার রক্ষা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গ্রহণ করে। এ ঘোষণার মাধ্যমে স্বীকৃত হয় যে জন্মস্থান, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বিশ্বাস, অর্থনৈতিক অবস্থা কিংবা শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্বিশেষে মানবাধিকার সর্বজনীন ও সবার জন্য সমান। প্রতিটি মানুষ জন্মগতভাবেই এসব অধিকার লাভ করে। প্রত্যেক ব্যক্তির অধিকার ও রাষ্ট্রের দায়-দায়িত্বের বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ঘোষণাপত্র গ্রহণের দিনটি প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে সাংবিধানিক অধিকার তথা মানবাধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। রাষ্ট্রপতির বাণীআন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তিনি বলেছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও মানবাধিকার দিবস উদযাপনের উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই।তিনি বলেন, মানুষের সর্বজনীন, সহজাত, অহস্তান্তরযোগ্য ও অলঙ্ঘনীয় অধিকারই হলো মানবাধিকার। মানবাধিকার মানুষের মৌলিক অধিকার ও চাহিদা নিশ্চিতের পাশাপাশি, সবার নিরাপত্তা বিধান এবং স্বাধীনতা ও মর্যাদা সমুন্নত রাখে। ১৯৪৮ সালের এই দিনে মানবাধিকার রক্ষা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতিসংঘ কর্তৃক মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। একটি মানবিক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে প্রণীত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানেও মৌলিক মানবাধিকার, স্বাধীনতা, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তির যুগেও ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও রক্ষায় প্রতিনিয়ত আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হচ্ছে। দেশে মানবাধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি জনসাধারণের সম্পৃক্ততা ও সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তৃণমূল পর্যায়ে কমিশনের কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে। সমাজে মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি, সহমর্মিতা, ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি করতে হবে। বিশ্বের সব নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের অধিকার রক্ষায় সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।বাণীতে আরও তিনি বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে একটি গণমুখী ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে নিয়মিত গণশুনানি আয়োজন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও প্রতিবেদন দাখিল, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানবাধিকার বিষয়ে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ প্রেরণ, মানবাধিকার বিষয়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধিকল্পে বিভিন্ন জেলা কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন, শিশু ও নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা বন্ধে কার্যক্রম গ্রহণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে হবে। মানবাধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় ভুক্তভোগীদের প্রতিকার পাওয়ার পথ সুগম করতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিরপেক্ষভাবে কার্যকর অবদান রাখবে—এটিই সবার প্রত্যাশা।এবি 
    এরশাদ শাসনের পতন: পর্দার আড়ালে যা ঘটেছিল
    আজ থেকে ৩ দশক আগে, ১৯৯০ সালের এই দিনে, ৬ই ডিসেম্বর ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন সাবেক সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। সামরিক জান্তা এরশাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ বছর আন্দোলনের পর তার পতন হয়েছিল। তীব্র গণআন্দোলনের মুখে তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদের কাছে তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। সে আন্দোলনে প্রায় ৩৭০ জন জীবন দিয়েছিলেন, পঙ্গু-গুম হয়েছিলেন অসংখ্য মানুষ। হরতাল হয়েছিল প্রায় ১ বছর ৩২৮ দিন! অবরোধ হয়েছিল ৭০ দিন। জাতীয় সম্পদ ও আর্থিক ক্ষতিও হয়েছিল প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার। এরশাদের এই ক্ষমতা হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে যে রক্তাক্ত সংগ্রামের যাত্রা শুরু হয়েছিল তার পরিসমাপ্তি ঘটে। শুরু হয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অগ্রযাত্রা। দিনটিকে আওয়ামী লীগ 'গণতন্ত্র মুক্তি দিবস', বিএনপি 'গণতন্ত্র দিবস' এবং এরশাদের জাতীয় পার্টি 'সংবিধান সংরক্ষণ দিবস' হিসেবে পালন করে থাকে। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল এই দিনকে 'স্বৈরাচার পতন দিবস' হিসেবেও পালন করে থাকে। সামরিক শাসকের ক্ষমতা দখল থেকে এরশাদ পতন ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সামরিক বাহিনীর প্রধান হোসাইন মোহাম্মাদ এরশাদ রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। ক্ষমতা দখল করেই সামরিক ফরমান 'এমএলআর ৮২' জারি করেন। এতে বলা হয়, যেকোনো ভাবে সামরিক শাসনের বিরোধিতা করলে ৭ বছরের জেল। তথাকথিত এই কালো আইনে হাজারো রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার হয়। ক্ষমতা দখল করে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তিনি কথা রাখেননি। বরং বেসামরিকীকরণ প্রক্রিয়ায় নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করেন। সুবিধাবাদীদের নিয়ে দল গঠন ও প্রহসনের নির্বাচন করেন। ফলে তখন এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সকল ছাত্র সংগঠন ও রাজনৈতিক দল প্রতিবাদ জানায়। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষও এতে যোগ দেয়। স্বৈরাচারকে মোকাবিলায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে বোঝাপড়ার পরিবেশ তৈরি হয়। নানা প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের মধ্যে জোট-ঐক্য গড়ে ওঠে। রাজনৈতিক দলগুলো শেষে ৩টি জোটে ঐক্যবদ্ধ হয়। ৮, ৭ ও ৫ দলীয় জোট। আন্দোলন জোরদার করতে ৩ জোটের লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হয়। ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যেও ২টি জোট গড়ে ওঠে, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও সংগ্রামী ছাত্র জোট। আন্দোলন আরও জোরদার করতে ১৯৯০ সালের ১০ অক্টোবর জেহাদের মরদেহ সামনে রেখে ২৪টি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য গঠন করা হয়।আন্দোলনের সময়ে জনগণ ও রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে থেকে চাপ আসতে থাকে এরশাদ পতন পরবর্তী কর্মসূচী নিয়ে। সে পরিস্থিতিতে ৩ জোটের রূপরেখা ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের ১০ দফা প্রণীত হয়। মূলত ৩ জোটের রূপরেখা হচ্ছে স্বৈরাচার হটানোর পর ক্ষমতা হস্তান্তরের রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক পদ্ধতি-প্রক্রিয়ার একটি দলিল। এই দলিলকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম পর্ব হচ্ছে এর মূল ঘোষণা এবং দ্বিতীয় পর্বে আচরণ বিধি। এটি ৪টি ধারা ও ৮টি উপধারার একটি ছোট দলিল। সে সময় সংগ্রামের দিনগুলো ছিল অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ও বিপজ্জনক। সামরিক শাসক সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। একদিকে সভা-সমাবেশ-মিছিল, মত প্রকাশসহ সব ধরনের নাগরিক অধিকার রদ করা হয়েছিল। অন্যদিকে ছাত্ররাও হয়ে উঠেছিল তার বিপরীতে প্রচণ্ড বেপরোয়া। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন, হামলা-মামলা, হত্যা-গুম, নির্যাতন চলছিল সমান তালে। ছাত্ররাও পদে পদে স্বৈরাচারের বাঁধার সৃষ্টি করেছিল।এদিকে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই হরতাল-বিক্ষোভ চলতো। কারফিউ, সান্ধ্য আইন, দেখামাত্র গুলির নির্দেশ, দুইয়ের অধিক চলাফেরা নিষেধ ছিল। সে পরিস্থিতিতে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হয়েছে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে শহরের অলিগলিতে ঝটিকা মিছিল হতো। যখন তখনই বুটের খট্‌খট্ শব্দ, সাইরেন, হুইসেল এক মহাতঙ্কের পরিস্থিতি সৃষ্টি করতো। প্রতিপক্ষ ও পুলিশের মুখোমুখি হওয়া ছিল যেন তখন প্রতিদিনের বিষয়। এভাবেই পার হয়েছিল মাস, বছর।     এরপর ১৯৯০ সালের ১ ডিসেম্বর ঢাকা সেনানিবাসে এক জরুরি বৈঠকে বসেন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা। বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল প্রেসিডেন্ট এরশাদ যেভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন, সে প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনীর ভূমিকা কী হওয়া উচিত সে বিষয়ে আলোচনা করা। জেনারেল এরশাদ বিরোধী আন্দোলন তখন তুঙ্গে। এর কয়েকদিন আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় চিকিৎসক নেতা ডা. শামসুল আলম মিলনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।সেনানিবাসের ভেতরে ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নিলেন যে দেশের চলমান সংকট একটি রাজনৈতিক বিষয় এবং এ সঙ্কট সমাধানের জন্য রাষ্ট্রপতিকে রাজনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে। ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা আরো সিদ্ধান্ত নিলেন যে চলমান রাজনৈতিক সংকটে সেনাবাহিনীর করনীয় কিছু নেই। এমন অবস্থায় প্রেসিডেন্ট এরশাদ সেনা সদরকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে দেশে সামরিক আইন জারী করা হবে।এরপর ডিসেম্বরের তিন তারিখে তখনকার সেনা প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল নূর উদ্দিন প্রেসিডেন্ট এরশাদের সাথে দেখা করতে যান। এদিকে সেনা কর্মকর্তারা চেয়েছিলেন যে সেনাবাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল নূর উদ্দিন যেন প্রেসিডেন্ট এরশাদকে পদত্যাগের জন্য সরাসরি বলেন।কিন্তু সেনাপ্রধান প্রেসিডেন্ট এরশাদকে সরাসরি পদত্যাগের কথা না বললেও তিনি জানিয়ে দেন যে দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর অফিসাররা কোন দায়িত্ব নিতে রাজী হচ্ছে না। তখন ঢাকা সেনানিবাসে ব্রিগেডিয়ার পদে কর্মরত ছিলেন আমিন আহমেদ চৌধুরী, যিনি পরবর্তীতে মেজর জেনারেল হয়েছিলেন। অবশেষে জেনারেল চৌধুরী (সেনাপ্রধান) প্রেসিডেন্টকে বলেছিলেন আপনার উচিত হবে বিষয়টির দ্রুত রাজনৈতিক সমাধান করা। অথবা বিকল্প কোন ব্যবস্থা নেয়া।" সে সময় জেনারেল এরশাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী সামরিক শাসন জারীর বিষয়ে সেনাবাহিনী একমত নয় বলেও প্রেসিডেন্টকে পরিষ্কার জানিয়েছিলেন তখনকার সেনাপ্রধান  জেনারেল চৌধুরী।প্রেসিডেন্টের সাথে সেনাপ্রধানের বৈঠক নিয়ে তখন দেশজুড়ে নানা গুঞ্জন। একদিকে ক্যান্টনম্যান্টের ভেতরে নানা তৎপরতা অন্যদিকে রাস্তায় এরশাদ বিরোধী বিক্ষোভ। সব মিলিয়ে এক উত্তেজনাকর পরিস্থিতির তৈরি হয়েছিল।ডিসেম্বর মাসের চার তারিখে সেনাবাহিনীর চীফ অব জেনারেল স্টাফ মেজর জেনারেল আব্দুস সালাম প্রেসিডেন্ট এরশাদকে সরাসরি বলেন যে তার পদত্যাগ করা উচিত।"পদত্যাগের কথাটা জেনারেল সালামই প্রথম সরাসরি বলেন। অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। আর্মি অধৈর্য হয়ে যাচ্ছে," বলছিলেন আমিন আহমেদ চৌধুরী।জরুরী অবস্থা এবং কারফিউর মতো কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমেওে যখন গণআন্দোলন দমানো যাচ্ছিল না তখন সেনাবাহিনীর দিক থেকে নেতিবাচক মনোভাব দেখলেন মি: প্রেসিডেন্ট এরশাদ।এমন অবস্থায় ডিসেম্বরের চার তারিখ রাতেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন জেনারেল এরশাদ। তখন এরশাদ সরকারের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছিলেন মওদুদ আহমেদ. যিনি বর্তমানে বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা। মি: আহমেদ জানালেন সেনাবাহিনীর মনোভাব বোঝার পরেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি মি: এরশাদ।এরপর ডিসেম্বর মাসের চার তারিখে তখনকার ভাইস-প্রেসিডেন্ট মওদুদ আহমেদকে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবার জন্য বাংলাদেশে টেলিভিশনে পাঠিয়েছিলেন মি: এরশাদ। তবে উদ্দেশ্য ছিল, প্রেসিডেন্টের পরিকল্পিত নির্বাচন সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা তুলে ধরা।কিন্তু বিরোধী দলগুলো এ নির্বাচনের প্রস্তাব আগেই বর্জন করেছিলো, তবুও  মি: এরশাদ চেয়েছিলেন ভাইস-প্রেসিডেন্টের মাধ্যমে নির্বাচন সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা তুলে ধরার মাধ্যমে জনগণকে আশ্বস্ত করা। পরিকল্পনা অনুযায়ী মি: এরশাদের নির্দেশ মতো ভাইস-প্রেসিডেন্ট মওদুদ আহমদ সন্ধ্যার সময় বাংলাদেশ টেলিভিশনে গিয়েছিলেন ভাষণ রেকর্ড করার জন্য। সে ভাষণ তিনি রেকর্ডও করেছিলেন। তবে সে ভাষণ রেকর্ড করার পর মওদুদ আহমদ যখন বাসায় ফিরে আসেন তখন তিনি জানতে পারেন প্রেসিডেন্ট পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।এরপর কয়েক ঘন্টা পর মধ্যরাতে মওদুদ আহমেদকে আবারো বাংলাদেশ টেলিভিশনে যেতে হয়েছিল প্রেসিডেন্ট এরশাদের পদত্যাগের ঘোষণা দেবার জন্য।ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পর্কে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘৫ তারিখে বিরোধী দল থেকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব আসলো যে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন সাহেব উপ-রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণ করে তারপর ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির কাজ করবেন তিনি এবং তার অধীনেই একটি নির্দলীয় সরকার হবে।তিনি বলেন, ‘৬ তারিখ বিকেল তিনটায় আমি রিজাইন করলাম। আমি রিজাইন করার পরে সাহাবুদ্দিন সাহেবকে ভাইস-প্রেসিডেন্ট অ্যাপয়েন্ট করলেন প্রেসিডেন্ট সাহেব। তারপর প্রেসিডেন্ট এরশাদ নিজে রিজাইন করলেন এবং তারপর সাহাবুদ্দিন সাহেব ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে গণতন্ত্রের নতুন যাত্রা শুরু করলেন।’ উল্লেখ্য, এরশাদ বিরোধী আন্দোলন বিভিন্ন সময় ছন্দপতন হয়েছিল। তবে ১৯৮৭ সালে একটি মিছিলে পুলিশের গুলিতে নূর হোসেন নিহত হবার ঘটনা আন্দোলনে গতি এনেছিল। তবে ১৯৯০ সালের  ২৭শে নভেম্বর চিকিৎসক নেতা ডা. শামসুল আলম মিলনকে হত্যার পর আন্দোলনের মোড় ঘুরে গিয়েছিল। এই বিষয়ে তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বিএনপি সমর্থিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের নেতা খায়রুল কবির খোকন বলেন,  "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে দখল করার জন্য বহিরাগত মাস্তানরা পরিকল্পিতভাবে ডা: মিলনকে হত্যা করেছিলো তখন। এটা ছিল আন্দোলনের টার্নিং পয়েন্ট, "। ডা: মিলন যখন রিক্সায় করে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ডা: মিলনের সাথে একই রিক্সায় ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের তখনকার মহাসচিব ডা: মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন।অভিযোগ রয়েছে জেনারেল এরশাদ সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দখল চেষ্টার অংশ হিসেবে ডা: মিলনকে হত্যা করেছিলো তখন।এবি 

    Loading…