স্নায়ুর চূড়ান্ত পরীক্ষা নিয়ে শেষ পর্যন্ত জয় সাকিব আল হাসানদের দল রংপুর রাইডার্সেরই। ৩ বল হাতে রেখে তামিম ইকবালের দল ফরচুন বরিশালকে তারা হারাল ১ উইকেটে।
তবে ম্যাচের রোমাঞ্চ এই বর্ণনাতে বোঝা সম্ভব নয়। শেষ ১৭ বলে রংপুরের দরকার ছিল মাত্র ৩ রান, হাতে ৩ উইকেট। সেই রানেই রংপুরকে চেপে ধরে বরিশাল। ১৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে প্রিটোরিয়াসকে ফিরিয়ে যার শুরুটা করেন ওবেড ম্যাককয়। উনিশতম ওভারে মাত্র ১ রান দিয়ে আবু হায়দারের উইকেট নেন কাইল মেয়ার্স। ৯ উইকেট হারিয়ে তখন হারের শঙ্কায় রংপুর। তবে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের করা শেষ ওভারে ঠান্ডা মাথায় সিঙ্গেলের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় দুই রান তুলে নেন শামীম হোসেন ও হাসান মাহমুদ। হতাশ হতে হয় বরিশালকে।
তবে ১৫২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা রংপুর ছিল বেশ সুবিধাজনক স্থানেই। তৃতীয় ওভারের শুরুতেই হারায় মুমিনুল হকের উইকেট। কোনো রান না করেই ফেরেন তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে ঝড় তোলেন ওপেনার ব্রেন্ডন কিং ও সাকিব আল হাসান। মাত্র ২৩ বলে ৫৩ রান যোগ করেন এই দুজন। রংপুর যখন সহজ জয়ের দিকে আগাচ্ছিল, তখনই বিপুল বিক্রমে ফিরে আসে বরিশাল।
৮৭ রান হতেই একে একে ফেরেন ব্রেন্ডন কিং (২২ বলে ৪৫), সাকিব (১৫ বলে ২৯), নুরুল হাসান সোহান ও শেখ মেহেদী হাসান। এর মধ্যে ৩টি উইকেটই নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ষষ্ঠ উইকেটে ৩১ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন জেমস নিশাম ও টম মুরস। ১১৮ রানের মাথায় ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে যখন মুরস ফেরেন তখনো দলের দরকার ৩৪ রান।
তবে ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসকে নিয়ে ভালোই এগোচ্ছিলেন নিশাম। দলীয় ১৩৭ রানে বিদায় নেন তিনিও (২৮)। এরপরই শেষের দিকের সেই নাটক।
এর আগে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুরুটা দুর্দান্ত করে বরিশাল। ঘরের ছেলে তামিম ইকবাল চার-ছক্কায় মাতিয়ে রাখেন স্টেডিয়াম। দলীয় ৩৮ রানের মাথায় থামেন তিনি। ব্যক্তিগত প্রথম ওভারের প্রথম বলেই তাকে ফেরান সাকিব আল হাসান। ২০ বলে ৩৩ রান আসে তার ব্যাট থেকে। যেখানে ছিল ৩টি চার ও ২টি ছক্কার মার।
তামিম ফিরলেও বরিশাল রান তুলছিল দারুণ গতিতে। দ্বিতীয় উইকেটে ৭২ রানের জুটি গড়েন টম ব্যান্টন ও কাইল মেয়ার্স। যদিও তাতে মেয়ার্সের অবদানই বেশি। ১২তম ওভারের চতুর্থ বলে ১১০ রানের মাথায় ফেরেন ব্যান্টন (২৬)।
এর পরের ওভারেই ধ্বংসযজ্ঞ চালান আবু হায়দার। শুরুটা মুশফিকুর রহিমকে দিয়ে। ইনিংসে আবু হায়দারের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই উইকেটের পেছনে নুরুল হাসানের হাতে ক্যাচ দেন মুশফিক। দ্বিতীয় বল কোনোরকমে ঠেকালেও তৃতীয় বলে ফেরেন সৌম্য সরকার। তাকে সরাসরি বোল্ড করেন আবু হায়দার। পঞ্চম বলে আরও এক উইকেট। এবার দারুণ ব্যাট করতে থাকা কাইল মেয়ার্সকে দুর্দান্ত এক ক্যাচে পরিণত করেন আবু হায়দার নিজেই। ওই ওভারে মাত্র ১ রান দেন তিনি।
হঠাৎ এমন বিপর্যয় আর সামলে উঠতে পারেনি বরিশাল। ১ উইকেটে ১১০ রান থেকে ১১৬ রানে ৫ উইকেটে পরিণত হওয়া দল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটে ভরসা খুঁজছিল। তবে নিজের দ্বিতীয় ওভারে এসে মাহমুদউল্লাহকেও শিকারে পরিণত করেন আবু হায়দার। তৃতীয় ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজকে ফিরিয়ে পূর্ণ করেন ৫ উইকেট।
১২৯ রানে ৮ উইকেট হারানো বরিশালকে দেড়শ পার করতে বড় ভূমিকা রাখেন সাইফুদ্দিন আহমেদ ও ওবেড ম্যাককয়। আটে নামা সাইফুদ্দিন ৯ বলে ১০ রান করে হাসান মাহমুদের বলে বোল্ড হন। আর ১২ বলে ১২ রানে অপরাজিত থাকেন ম্যাককয়।
রংপুরের হয়ে আবু হায়দারের ৫ উিইকেট ছাড়াও দারুণ বল করেছেন হাসান মাহমুদ। ৪ ওভারে ৩১ রান খরচায় ২ উইকেট শিকার করেন তিনি। একটি করে উইকেট সাকিব আল হাসান ও জেমস নিশামের।
এফএস