শেরপুরে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আব্দুল হালিম জীবন (৪৮) হত্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান ও দুই নারীসহ ছয় জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে আরও তিন জনের।
সোমবার (১ এপ্রিল) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোনালিসা বেগম এ সব তথ্য জানান। গ্রেপ্তাররা জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
গ্রেপ্তাররা হলেন, সদর উপজেলার চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ (৪৫), একই ইউনিয়নের ডাকপাড়া গ্রামের আবেদ আলীর ছেলে মোবারক মোস্তাক (৩২), আফিল উদ্দিনের ছেলে রকিব হোসেন জিহাদ (২০), হযরত আলীর ছেলে কালু মিয়া (২৫), শহরের পূর্বশেরী এলাকায় ভাড়ায় বসবাসকারী ফারুক আহাম্মেদের স্ত্রী রুপা বেগম (২৮) ও কান্দাশেরীচর এলাকার ফারুক হোসেনের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৪০)। গ্রেপ্তারদের মধ্যে জিহাদ ও কালু হত্যার সময় ধস্তাধস্তিতে আহত হয়। তারা বর্তমানে চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
পুলিশ সুপার জানান, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী দ্বৈত নাগরিক আব্দুল হালিম জীবনকে হত্যার মূল কারণ পারিবারিক বিরোধ। জীবন দীর্ঘ ২৫ বছর আমেরিকায় বসবাস করে দুই বছর আগে দেশে এসে নিঃসন্তান হওয়ায় আরও একটি বিয়ে করেন। দ্বিতীয় বিয়ে ও জমিজমা নিয়ে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয়। সেই বিরোধের জের ধরে জীবনের বাবা তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা করেন। জীবন ও তার স্ত্রী বাবা সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেন। একটি মামলায় তার বাবা প্রায় দেড় মাস কারাভোগ করে এক সপ্তাহ আগে জামিনে আসেন। ওইসব বিরোধের জের ধরে জীবনের প্রবাসী এক ভাইয়ের বন্ধু শাহিনকে দিয়ে জীবনকে শায়েস্তা করার জন্য বললে শাহিন তার ব্যবসায়ী পার্টনার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফকে দিয়ে পরিকল্পনা করে। পরে মনোয়ারা বেগম ও রুপা বেগম নামে দুই নারীকে দিয়ে ফাঁদ পেতে শনিবার (৩০ মার্চ) সাড়ে ৩টার দিকে জীবনকে কৌশলে ডেকে নিয়ে সদর উপজেলার চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের ব্যাঙের মোড় এলাকায় আব্দুর রউফের সাঙ্গপাঙ্গ কালু, ময়নাল, জিহাদ, মোবারকদের হাতে তুলে দেয়। পরে তারা জীবনকে অপহরণ করে দুর্গম চরের ঘরে আটকে রেখে রাত ৯টার দিকে তার ফোন থেকে স্ত্রী আতিয়া আক্তারের কাছে ফোন করে ৯৩ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণের নাটক সাজানোর চেষ্টা করে। পরবর্তীতে তারা জীবনকে পার্শ্ববর্তী চুনিয়ারচর এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদীর চরে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে গিয়ে মারপিট ও ছুরিকাঘাত করে নৃশংসভাবে হত্যা ও মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ওই সময় ধস্তাদস্তিতে কালু ও জিহাদ আহত হয়।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, ওই ঘটনায় রহস্য উদঘাটনের পাশাপাশি এখন পর্যন্ত মাস্টারমাইন্ড আব্দুর রউফসহ ছয় জনকে গ্রেপ্তার এবং নয় জনের সস্পৃক্ততার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তদন্তে আসামি সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
সাংবাদিক সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খোরশেদ আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সাইদুর রহমান, ডিআইও-১ জাহাঙ্গীর আলম, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হক উপস্থিত ছিলেন।
রোববার (৩১ মার্চ) ভোররাতে শেরপুর সদরের চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকা চুনিয়ারচর থেকে আব্দুল হালিম জীবনের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জীবন শহরের মধ্য নওহাটা এলাকার সাইদুর রহমান সুরুজ মাস্টারের ছেলে।
এফএস