বছর ঘুরে আবারো শুরু হয়েছে দেশের অন্যতম বৃহত্তম লোকমেলা হিসেবে খ্যাত চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সাদুল্যাপুর ইউনিয়নের বদরপুরের বেলতলীর হজরত শাহ্ সোলেমান লেংটা পাগলের মেলা। এবার পালিত হচ্ছে শাহ্ সোলেমান লেংটার ১০৫ তম ওরশ শরীফ।
মেলাকে ঘিরে ইতিমধেই অসংখ্য পাগল ও ভক্তবৃন্দদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে মতলবের বেলতলী। গত ৩১ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এই ওরশ শেষ হবে আগামী ৫ এপ্রিল।
মেলায় প্রতিদিন কয়েক কিলোমিটার জুড়ে অগনিত লোকের সমাগম ঘটে। অসংখ্য ভক্ত ল্যাংটা বাবার মাজার জিয়ারত করছেন এবং জিকির আসকার করে ঢোল বাদ্য, বাজনা বাজিয়ে মাজার ত্যাগ করছেন।
শাহ্ সোলেমান লেংটার ওফাত দিবস উপলক্ষে গত ১০৫ বছর যাবত উদযাপিত হয়ে আসছে এ মেলা। স্থানীয়দের মতে বেলতলীর বদরপুর গ্রামে সোলেমান শাহ্ নামে এক ফকিরের মাজার আছে। এই মাজারই ল্যাংটা ফকিরের মাজার হিসেবে পরিচিত।
কথিত আছে, সোলেমান শাহ্ জীবদ্দশায় একটুকরো কাপড় দিয়ে লজ্জাস্থান ঢেকে রাখতো বলে তাকে লেংটা পাগল ডাকতো সবাই। প্রতি বছরে অসংখ্য ভক্তরাই লেংটার মেলার আয়োজন করে থাকেন। নামে লেংটা হলেও আদতে এখানে আসা পাগলেরা কেউই লেংটা নন। তবে তারা ভাবের পাগল। শাহ্ সোলেমান শাহ্ জন্মস্থান কুমিল্লা জেলার বর্তমান মেঘনা থানার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আলা বঙ্গ ভূঁইয়া। তার জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন মতলবের বদরপুরের বেলতলীর তার বোনের বাড়িতে। সেখানে থেকে নারায়ণগঞ্জের বক্তাবলী গ্রামে তিনি বিয়ে করেন। অনেকেই দাবি করেন তার বংশধর এখনও আছে। সোলেমান শাহ্ কাউকে মুরিদ করেননি। তবে মতলব তথা দেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে তার ব্যাপক পরিচিতি ও অগণিত ভক্ত।
কয়েকজন ভক্ত জানান, তার বোনের বাড়িতেই হজরত শাহ্ সোলেমান লেংটা পাগলের মাজার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এরপর থেকেই শুরু হয়ে যায় লেংটা পাগলের মেলা।
শুধু তাই নয়, লেংটার মাজারের চারিপাশে রয়েছে তার অসংখ্য ভক্তবৃন্দদের মাজার।উল্ল্যেখযোগ্যভাবে রয়েছে শতবর্ষী বেল গাছ। আর সেখানেই দীর্ঘ সাধনে হজরত শাহ্ সোলেমান মগ্ন থাকতো বলে জানান ভক্তবৃন্দরা।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছোট-বড় লঞ্চ, ট্রলার, বাস, মিনি বাস, ট্রাক, মেক্সী, প্রাইভেটকার, সিএনজি, অটোবাইক যোগে ওরশে আসে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ মানুষ। তারা নিয়ে আসেন গরু, মহিষ, ছাগল, মোরগ, ডিম, ডাল, চাউল, নগদ অর্থসহ বিভিন্ন মানতি জিনিসপত্র।
এই মেলাকে ঘিরে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পকেটমার, ছিনতাই, মলমপার্টি, হিজরা, প্রতারকদের তৎপরতা বেড়ে যায়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভক্তরা লেংটা বাবার দরবারে পুণ্য, রোগমুক্তিসহ বিভিন্ন কামনা—বাসনা নিয়ে আসেন। এ ছাড়াও ঢোল—কারার মাধ্যমে বাবার উদ্দেশ্যে ধর্মীয় গান ও মজমা বসায় পুণ্যের আশায়।
ল্যাংটার মেলায় একদিকে আনন্দের হিল্লোল অন্যদিকে বসে গাঁজার রমরমা আসর। মাজারের পশ্চিম পাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চলছে গাঁজা সেবনের মহোৎসব। তবে ভক্তরা বলছেন, আধ্যাত্নিক সাধনা করতেই মগ্ন থাকেন তারা।
যদিও মাজার প্রাঙ্গনের বাহিরের নানান কার্যক্রমের দায় এড়িয়ে দীর্ঘ ৪৩ বছর যাবত খাদেম হিসেবে দায়িত্ব পালন করা খাদেম লাল মিয়া সরকার বলেন, মাজারের পবিত্ররা রক্ষায় আমরা কাজ করি। বাহিরে কি হয় সেটা আমাদের বিষয় না।
এদিকে এই বিষয়ে দায় এড়ানোর সুযোগ নেই জানিয়ে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, অসংখ্য মানুষের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার স্বার্থে সর্বদা কাজ করছে পুলিশ। মেলা ঘিরে নেতিবাচক সকল কার্যক্রম রোধে পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বাংলা ১৩২৫ সালের ১৭ চৈত্র সোলেমান শাহ বেলতর্লী বদরপুর তার বোনের বাড়িতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৮ চৈত্র তাকে বদপুরের এই বেলতলীতে (যেখানে মাজার) সেখানে তাকে দাফন করা হয়।
এমআর