এইমাত্র
  • ফেনীতে বজ্রপাতে প্রাণ গেল কলেজ ছাত্র মাহাদীর
  • একজন আদর্শ স্বামীর গুণাবলী
  • চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন ৪৬ শতাংশ মানুষ
  • নতুন রেকর্ড গড়লেন ফারহান
  • বাবাকে খুঁজে পেতে ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপির মেয়ে ডিবিতে
  • পাকিস্তানে ট্রাক খাদে পড়ে একই পরিবারের ১৪ জন নিহত
  • নরসিংদীতে পুকুরে মিলল নারীর মরদেহ
  • আর ভিডিও বানাবে না পাকিস্তানি খুদে ভ্লগার সিরাজ
  • কালশীতে পুলিশ বক্সে আগুন দিলো অটোরিকশা চালকরা
  • গোপালগঞ্জে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ২০
  • আজ রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১৯ মে, ২০২৪
    দেশজুড়ে

    গোলায় উঠছে নতুন ধান, খুশি কিশোরগঞ্জের হাওরের কৃষকরা

    ছাইদুর রহমান নাঈম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি প্রকাশ: ৭ মে ২০২৪, ০১:৪৮ পিএম
    ছাইদুর রহমান নাঈম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি প্রকাশ: ৭ মে ২০২৪, ০১:৪৮ পিএম

    গোলায় উঠছে নতুন ধান, খুশি কিশোরগঞ্জের হাওরের কৃষকরা

    ছাইদুর রহমান নাঈম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি প্রকাশ: ৭ মে ২০২৪, ০১:৪৮ পিএম

    কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চল সহ সবখানেই এখন ধান শুকানোর ধুম। নাওয়া-খাওয়া ভুলে এখন চলছে ধান ঘরে তোলার তোড়জোড়৷ আবহাওয়া ভালো থাকায় এবছর ফলনও হয়েছে ভালো। ইতিমধ্যে ৮০-৯০ ভাগ ধান কাটা শেষ। বাকিগুলো কয়েকদিনের মধ্যে কাটা শেষ হবে। এখন চলছে পুরোদমে ধান মাড়াইয়ের কাজ।

    হাওরাঞ্চলে বোরো মৌসুমের ধান কাটা-মাড়াইয়ের শেষদিকে উৎসব মুখর পরিবেশে এখন সেই ধান রাত জেগে সিদ্ধ করে সকাল থেকে শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণীরা। রাত-দিন পরিশ্রমের পরেও কোন ক্লান্তি নেই তাদের। উৎপাদিত ফসলের বাম্পার ফলন ও দাম আশানুরূপ হওয়ায় খুশি কৃষকরা।

    জেলার ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও নিকলী হাওর ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন সড়ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও খেলার মাঠ দখল করে ধান শুকানোর ধুম পড়েছে। প্রচণ্ড রোদেও নেই কৃষক কৃষাণীদের কোনো ক্লান্তি বরং ধান শুকাতে পেরে স্বস্তির হাসি দেখা দিয়েছে তাদের চোখে-মুখে। ধান ও খড় শুকানোর কাজে খুবই ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধান শুকানোর কাজ করছেন তাঁরা। দ্রুত ধান শুকাতে মাঠের ঘাসের ওপর বিছানো হয়েছে ছোট-বড় পলিথিন। আর সেই পলিথিনে শুকানো হচ্ছে ধান। কেউ ধান উল্টিয়ে দিচ্ছেন, কেউ ধানের আবর্জনা পরিষ্কার করছেন। অনেকেই তাদের উৎপাদিত ফসল রোদে শুকিয়ে হাটে তোলার প্রস্ততি নিচ্ছেন। সবমিলিয়ে প্রখর রোদ আর বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে ধান ঘরে তোলা ও বাজার জাত করার কাজ। অবসর নেই কারও। অস্বস্তির রোদই যেন তাঁদের স্বস্তি এনে দিয়েছে।

    ইটনা উপজেলার বরিবাড়ি গ্রামে সড়কে ধান শুকাচ্ছিলেন হালিমা আক্তার। তিনি বলেন, নিজের উঠান আছে। সেটা ছোট আর রোদ কম পাওয়া যায়। এনে যে ধান ২-৩ দিনে শুকাইবে সেই ধান হামার উঠানে শুকাইতে ৮-৯ দিন নাইগবে। পরে যদি বৃষ্টি আসে তাহলে আরও বিপদ। কামের মানুষও পাওয়া যায় না। পাইলেও দাম বেশি দেওয়া নাগে। সেই জন্য রাস্তায় আসছি ধান শুকাইতে। সময়ও কম লাগে, টাকাও বাঁচে।

    অন্যদিকে হাটগুলোতে চলছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের দর কষাকষি ও বেচাকেনা। কৃষকরা তাদের ধান ভটবটি, মিনি ট্রাক ও নৌকা দিয়ে হাটগুলোতে নিয়ে যাচ্ছেন। আশানুরূপ দাম হাঁকলেই বিক্রি করছেন খুচরা ও পাইকারি ক্রেতাদের কাছে। হাটে ধানের দাম ঠিক হওয়ার আগেই কৃষকদের হাতে টাকা গুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করছেন পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী। বোরোর বাম্পার ফলনে ও ভালো দামে হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে।

    ইটনা উপজেলার শিমুলকান্দি গ্রামের কৃষক সোবান আলী জানান, পরিশ্রম আর পরিচর্যায় এ বছর বোরো মৌসুমে তাদের উৎপাদিত ফসলের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। বর্তমানে ধানের দামও ভাল হওয়ায় তারা বেজায় খুশি। কেন না খরচ বাদ দিয়ে তাদের বিঘা প্রতি লাভ হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। এটা গ্রামের খেটে খাওয়া কৃষকদের হিসাব বলে যোগ করেন তারা। তিনি আরো জানান, কিছু জমিতে কাটা-মাড়াই কাজ শেষের দিকে। সেই ধান ঘরে তোলার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন তারা।

    এ বছর কিশোরগঞ্জের ইটনা, অষ্টগ্রাম, মিঠামইন হাওরসহ নিকলী, বাজিতপুর, তাড়াইল, করিমগঞ্জ, কটিয়াদী এবং উজান এলাকার অন্যান্য উপজেলায়ও বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের দামও ভালো। মাড়াইস্থলে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে সাড়ে আটশ থেকে সাড়ে নয়শ টাকায়।

    নিকলী উপজেলার ছাতিরচর গ্রামের কৃষাণী সালমা বেগম বলেন, এখন আমরা ধান সিদ্ধ করছি খাওয়ার চাল তৈরির জন্য। সকালে বস্তায় করে সিদ্ধ ধান সড়কে নিয়ে আসি শুকানোর জন্য। রাস্তায় পলিথিন বিছিয়ে শুকাতে দিছি। আকাশের অবস্থা ভালো আছে, সারাদিনে সব ধান শুকিয়ে যাবে বলে তিনি জানান ।

    ইটনা সদর ইউনিয়নে ধান শুকাচ্ছিলেন খাইরুল ইসলাম। ধান ও খড় শুকানোর জায়গার তীব্র সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, বাড়ির আশপাশে কোনো ফাঁকা জায়গা নেই। সে কারণে এখানে আসা। তা ছাড়া এ রাস্তায় ধান শুকানোর অনেক সুবিধাও আছে। আজকে এখানে ২০-২৩ টি পরিবারের ধান দেওয়া আছে। প্রতিটি পরিবার থেকে কমপক্ষে ২-৩ জন করে এখানে কাজ করছেন। সবাই সবাইকে সহযোগিতা করছেন। বিশেষ করে ঝড় বা বৃষ্টি এলে ধান কখনো ভিজবে না। আমরা সবাই সবাইকে সহযোগিতা করি।

    কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি বছর জেলায় ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর আবাদ হয়েছে হাওরে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ লাখ ৫৩ হাজার ৬২৫ টন ধান। যা বিক্রি হবে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কিছু দিনের মধ্যেই বাকি ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা।

    কিশোরগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুস সাত্তার বলেন, ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে আমরা আশা করছি কয়েক দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তুলতে পারবে কৃষকরা। রাত জেগে কৃষকরা কাজ করছেন৷

    আরইউ

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…