যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে প্যাথলজি বিভাগে বিভিন্ন ধরণের রোগ পরীক্ষার টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে ক্যাশ কাউন্টারের রশিদ ছাড়াই পরীক্ষার টাকা গোপনে পকেটস্থ করা হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা না মেনে প্যাথলজির ইনচার্জ পারভেজ হোসেন এমনটি করছেন বলে জানা গেছে
রবিবারও (২৩ জুন) নগদ টাকা নিয়ে ৩৮ জনের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করা হয়েছে। অনিয়ম ধরা পড়ে হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কের কাছে ভুল স্বীকার করেছেন প্যাথলজি বিভাগের ইনচার্জ পারভেজ।
জানা গেছে, হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের নির্মাণ কাজ চলার কারণে আপাতত কোন রোগীর পরীক্ষা নিরীক্ষা না করার নির্দেশনা রয়েছে। আগামী ৩/৪ দিনের মধ্যে পরীক্ষার কার্যক্রম চালুর সম্ভাবনা রয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, এরই মধ্যে রবিবার (২৬ জুন) প্যাথলজি বিভাগের ইনচার্জ পারভেজ হোসেনের নির্দেশে ক্যাশ কাউন্টারের রশিদ ছাড়াই নগদ টাকা নিয়ে ৩৮ বিদেশগামীর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। ৮৩০ টাকা করে ৩৮ জনের কাছ থেকে গ্রহণ করা হয় ৩১ হাজার ৫৪০ টাকা।
মণিরামপুর উপজেলার মাজিয়ালী চাঁদপুর গ্রামের ইমান আলী সরদারের ছেলে আজিজুর রহমান জানান, এইচসিটি, আরবিএস, সিএইচওএল, এসজিপিটি, এসজিওটি, বিজি, এইচআইভিএজি, ভিডিআরএল পরীক্ষা করার জন্য তার কাছ থেকে ৮৩০ টাকা নেয়া হয়েছে।
কুয়েত যাওয়ার জন্য এসব পরীক্ষার রিপোর্টগুলো প্রয়োজন। তার মতো অনেকেই ক্যাশ কাউন্টারের রশিদ ছাড়াই নগদ টাকা দিয়ে পরীক্ষাগুলো করেছেন।
হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছে, হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে আর্থিক স্বচ্ছতা আনতে ২০১৮ সালে মে মাসে ক্যাশ কাউন্টার চালু করা হয়। ক্যাশ কাউন্টারের রশিদ ছাড়া কোন বিভাগে পরীক্ষা না করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু প্যাথলজি বিভাগে নিয়ম তোয়াক্কা করা হচ্ছিলো না।
সূত্রটি আরও জানায়, প্যাথলজি বিভাগে ক্যাশ কাউন্টারের রশিদ ছাড়া পরীক্ষা নিরীক্ষা করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সেখানে দায়িত্বরত ইনচার্জ পারভেজ হোসেনের নির্দেশে এই অনিয়ম করা হয়।
এর আগে, ইলেক্টোরাইড পরীক্ষার কোন রাজস্ব জমা দেয়া হতো না। ক্যাশ কাউন্টারের রশিদ ছাড়া পরীক্ষা করে সকল টাকা আত্মসাত করা হতো। বিগত দিনে প্যাথলজি বিভাগে করোনার পরীক্ষার ফির টাকার হিসাবে ব্যাপক গড়মিল দেখা দেয়। ২০২২ সালের ১২ মার্চ তদন্ত কমিটি গঠন হয়।
তদন্তে ২২ লাখ ১৬ হাজার ৭০০ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মেলে। পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় হাসপাতালটির সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায়, প্যাথলজি কনসালটেন্ট ডা. হাসান আব্দুল্লাহ ও টেকনিশিয়ান (ল্যাব) গোলাম মোস্তফার পেনশন আটকে রাখা হয়। এরপরও প্যাথলজি বিভাগের আর্থিক দুর্নীতি বন্ধ হয়নি।
ক্যাশ কাউন্টারের রশিদের অর্থ ছাড়া আর কোন টাকা রাজস্ব খাতে জমা করা হয় না। প্যাথলজি বিভাগে পরীক্ষার নগদ টাকা ভাগাভাগি হয়ে যাচ্ছে। এতে করে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এই বিষয়ে প্যাথলজি বিভাগের ইনচার্জ পারভেজ হাসান জানান, নগদ টাকায় ৩৮ বিদেশগামীর পরীক্ষা করা হয়েছে। ক্যাশ কাউন্টারের রশিদ ছাড়াই কিভাবে পরীক্ষা করলেন প্রশ্নে বলেন, প্যাথলজির নির্মাণ কাজ চলার কারণে ল্যাব বন্ধ থাকায় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই তাদের পরীক্ষা করেছেন।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, নির্মাণ কাজ চলার কারণে প্যাথলজি বিভাগে সকল প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। সেখানে ক্যাশ কাউন্টারের রশিদ ছাড়া ৩৮ জনের পরীক্ষা করার বিষয়টি জানতেন না। দুপুরের পর বিষয়টি তাকে জানানো হয়েছে।
অনিয়মভাবে পরীক্ষা করার বিষয়টি সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে জানতে পেরে প্যাথলজির ইনচার্জকে ডেকে জবাব চাওয়া হয়। এসময় তিনি নিজের অন্যায় স্বীকার করে নিয়েছেন।
আগামীতে ক্যাশ কাউন্টারের রশিদ ছাড়া কোন পরীক্ষা না করার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া ৩৮ বিদেশগামীর কাছ থেকে নেয়া নগদ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
আরইউ