এইমাত্র
  • বাঁধ ভেঙে শেরপুরে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত
  • নোয়াখালীতে সড়কে প্রাণ গেল ২ বিএনপি-জামায়াত নেতার
  • গজারিয়ায় কাভার্ডভ্যান-ট্রাক ও সিএনজির ত্রিমুখী সংঘর্ষে আহত ২
  • যার ফোনকলে সিদ্ধান্ত বদলান রাহুল দ্রাবিড়
  • চুয়াডাঙ্গায় পল্লী উন্নয়ন কিশোরী সংঘের সচেতনামূলক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
  • রূপচাঁদা মাছের দোপেঁয়াজা তৈরির রেসিপি
  • মাদারীপুরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি
  • চুয়াডাঙ্গায় কিশোর শ্রমিকের লাশ নিয়ে বিক্ষোভ
  • টাঙ্গাইলে পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারা ২২ শিক্ষার্থীর মানববন্ধন
  • রূপগঞ্জে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা ভবনে অভিযান শুরু
  • আজ মঙ্গলবার, ১৮ আষাঢ়, ১৪৩১ | ২ জুলাই, ২০২৪
    শিল্প ও সাহিত্য

    খোদ প্রকৃতিই যে জন্মের শুভেচ্ছা জানায়

    শেখ ফরিদ প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ১১:২৯ এএম
    শেখ ফরিদ প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ১১:২৯ এএম

    খোদ প্রকৃতিই যে জন্মের শুভেচ্ছা জানায়

    শেখ ফরিদ প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ১১:২৯ এএম
    আহমদ ছফা

    প্রকৃতির প্রতি দরদী আত্নাকে ভুলে না এই পৃথিবী। তাইতো এই ঘোরলাগা বৃষ্টি বারবার ফিরে এসেছে তাঁর জন্ম ও মৃত্যুর দিনে।

    বলছি বাঙালি মুসলমান সাহিত্যিকদের অন্যতম কান্ডারী আহম্মদ ছফার কথা।আজ রবিবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১ (৩০ জুন ২০২৪) ঠিক এই দিনেই জন্মেছিলেন ছফা সাহেব। আজকের এই বৃষ্টিভেজা দিনে তাঁর ৭৮তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে খোদ প্রকৃতি।

    প্রেমের মেঘে আষাঢ় নেমেছিলো ছফার মনে- প্রাণে। সেদিনও ছিলো অঝোর বৃষ্টির ধারা। আবার পৃথিবী যেদিন তাকে জানায় শেষ বিদায়, সেদিনও বৃষ্টি ছুঁয়েছিলো তার খাঁটিয়া। তাই প্রকৃতির সাথে যে তাঁর আত্মিক সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ তা অস্বীকার করা যায় না। পুষ্প, বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ উপন্যাসে প্রকৃতির সাথে তাঁর যে মমতাময়ী, স্নেহকাতর, নিবিড় সম্পর্ক , তার বিস্তর উপলব্ধি পেয়েছেন পাঠকরা।

    'একবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে কলোনিতে থেঁতলে যাওয়া কয়েকটি আহত বেগুন চারাকে কুড়িয়ে খুব যত্নে রোপণ করেছিলেন। আরও মজার তথ্য কি জানেন! একবার পাখি পাগল ছফা সাহেব বানিয়ে ফেলেছিলেন ঠিক কক্ষ এক সমান খাঁচা। কারণ তিনি মাথায় রেখেছিলেন যেনো পাখিদের কোন ভাবেই বন্দী মনে না হয় অথবা ভেবেছিলেন পাখিরা যেনো একটু হলেও উড়তে পারে। '


    আহমদ ছফা জন্মেছিলেন ১৯৪৩ সালে গাছবাড়িয়া, চন্দনাইশ, চট্রগ্রামে। ছফার প্রাথমিক শিক্ষা বাবার হাতে তৈরি দক্ষিণ গাছবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর ১৯৫৭ সালে নিজের গ্রামের নিত্যানন্দ গৌরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ছাত্রাবস্থায় তাঁর মনে বিপ্লবী চেতনা জন্ম নেয়। মাস্টারদা সূর্যসেনের বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে অনুপ্রাণিত হয়ে কয়েকজন বন্ধু মিলে উপড়িয়ে ফেলেন চট্রগ্রাম দোহাজারী রেললাইন।

    ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে চট্রগ্রাম নাজিরহাট কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে কিন্তু সেখানে তিনি নিয়মিত ক্লাস করেননি। এরপর তিনি ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ থেকে প্রাইভেটে পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে এমএ পরীক্ষা দেয়ার আগেই বাংলা একাডেমির পিএইচডি গবেষণা বৃত্তির জন্য আবেদন করেন এবং তিন বছরের ফেলোশিপ প্রোগ্রামের জন্য মনোনীত হন।

    সে সময় তার গবেষণার বিষয় ছিল ‘১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলার মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব, বিকাশ, এবং বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে তার প্রভাব’। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে পিএইচডি অভিসন্দর্ভের জন্য জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের সান্নিধ্যে আসেন। দীর্ঘকাল তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকে। কিন্তু পরে আর পিএইচডি সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।

    ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে প্রাইভেটে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ পরীক্ষা দেন। ১৯৭১ সালে ‘লেখক সংগ্রাম শিবির’ গঠন ও এর বিভিন্ন কার্যক্রমে সক্রিয় অংশ নেন। ৭ই মার্চ ‘স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পত্রিকা’ হিসেবে প্রতিরোধ প্রকাশ করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এপ্রিল মাসে কলকাতা চলে যান। মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে সেখান থেকে দাবানল নামের পত্রিকা সম্পাদনা করেন। দেশ স্বাধীন হবার পর বাংলাদেশে ফিরে লেখালেখি করতে থাকেন।১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে দৈনিক ইত্তেফাকের সাংবাদিক নাজিমুদ্দিন মোস্তানের সহায়তায় কাঁটাবন বস্তিতে ‘শিল্পী সুলতান কর্ম ও শিক্ষাকেন্দ্র’ চালু করেন।


    পরে ১৯৮৬-তে জার্মান ভাষার ওপর গ্যেটে ইনস্টিটিউটের ডিপ্লোমা ডিগ্রিও লাভ করেন তিনি, যা তাঁকে পরবর্তী সময়ে গ্যেটের অমর সাহিত্যকর্ম ফাউস্ট অনুবাদে সহায়তা করেছিল।

    বাংলাদেশের স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে রচিত ‘বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস (১৯৭২)’ প্রবন্ধগ্রন্থে আহমদ ছফা বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের মানচিত্র অঙ্কন করেন এবং বাংলাদেশি বুদ্ধিজীবীদের সুবিধাবাদিতার নগ্ন রূপ উন্মোচন করেন। আহমদ ছফা তার বিখ্যাত ‘বাঙালি মুসলমানের মন (১৯৭৬)’ প্রবন্ধে বাঙালি মুসলমানের আত্মপরিচয়ের হাজার বছরের বিবর্তন বিশ্লেষণপূর্বক তাদের পশ্চাদগামিতার কারণ অনুসন্ধান করেছেন। ড. আনিসুজ্জামান ও সলিমুল্লাহ খানসহ আরও অনেকে ছফার ‘বাঙালি মুসলমানের মন’ প্রবন্ধ সংকলনটিকে বাংলা ভাষায় রচিত গত শতাব্দীর সেরা দশ চিন্তার বইয়ের একটি বলে মত দিয়েছেন।

    ছফা রচিত প্রতিটি উপন্যাসই ভাষিক সৌকর্য, বিষয়বস্তু ও রচনাশৈলীর অভিনবত্বে অনন্য। আবুল ফজল ও আরও অনেকের মতে, ছফার ‘ওঙ্কার (১৯৭৫)’ বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সর্বোত্তম সাহিত্যিক বহিঃপ্রকাশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে রচিত ‘গাভী বিত্তান্ত (১৯৯৫)’ বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ ব্যঙ্গাত্মক উপন্যাসগুলোর একটি। ‘পুষ্প বৃক্ষ ও বিহঙ্গ পুরাণ’-এ (১৯৯৬) ছফা ঢাকা শহরের প্রেক্ষিতে ফুল, পাখি, বৃক্ষ তথা বৃহৎ প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের এক নিজস্ব বয়ান হাজির করেন।

    প্রতিষ্ঠানবিরোধী আহমদ ছফা ১৯৭৫ সালে ‘লেখক শিবির পুরস্কার’ ও ১৯৯৩ সালে বাংলা একাডেমির ‘সাদত আলী আখন্দ পুরস্কার’ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ২০০২ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে সাহিত্যে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করেন।

    আহমদ ছফা ছিলেন অসাধারণ গুণ সম্পন্ন একজন মানুষ। মানুষের প্রতি, সাহিত্যের প্রতি বা সৃজনশীল জীবন যাপনের প্রতি উনার ছিলো প্রবল দরদ।অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের সাথে পরিচয়ের মধ্যামে তিনি যেসব সৃজনশীল, প্রতিভাবান মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান। তিনি সুলতানের শিল্পকর্মকে সংগ্রহ করেন এবং পরে শিল্পী সুলতান কর্ম ও শিক্ষাকেন্দ্র চালু করেন। তাঁর লেখায় বাংলাদেশি জাতিসত্তার পরিচয় নির্ধারণ প্রাধান্য পেয়েছে।

    'ঘর করলাম নারে সংসার করলাম না'- এ তাঁরই লেখা গান। মৃত্যুর পর আহমদ ছফা অনেক বেশি জীবন্ত হয়ে শুয়ে আছেন তুরাগের কোলে।

    এসএফ

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…