বাজারে মানভেদে একেকটি রাউটারের দাম একেক রকম। তবে সর্বোচ্চ কতই হতে পারে? শুনলে চমকে উঠবেন, ৩০ হাজার টাকার রাউটার ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)।
এখানেই শেষ নয়, রাউটার ছাড়াও আরও বেশ কিছু পণ্য বাজার দরের চেয়ে বেশি দামে কিনেছে আরইবি। এসব পণ্য হলো- প্রিন্টার, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্লিপ প্রিন্টার ও এসি। বুধবার (১০ জুলাই) জাতীয় দৈনিক দেশ রূপান্তরের এক প্রতিবেদনে এ খবর প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘প্রি-পেমেন্ট ই-মিটারিং ইন ঢাকা ডিভিশন আন্ডার রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন প্রোগ্রাম (ফেইজ-১)’ নামে একটি প্রকল্পের আওতায় এসব মালপত্র কিনেছে আরইবি, যা পরবর্তীতে বিভিন্ন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে সরবরাহ ও স্থাপন করেছে আরইবি। এ ছাড়াও একেকটি লেজার প্রিন্টার ১৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছে প্রতিষ্ঠানটি। বাজারে যেসব প্রিন্টারের দাম সর্বোচ্চ ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
আরইবির প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান পরিচালক (কারিগরি) মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখানে কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি। দরপত্রের মাধ্যমে মালপত্রগুলো কেনা হয়েছে। যেখানে অনেক বেশি প্রতিযোগিতা হয়েছিল। এখানে কিছু আইটেমের দাম বেশি মনে হলেও কোনো কোনো আইটেমের দাম বাজারদরের চেয়ে অনেক কম। যেমন একটা মিটার স্থাপন করতে ন্যূনতম ৩০০ টাকা দরকার। কিন্তু এখানে ঠিকাদার এই কাজটি মাত্র সাড়ে ৪ থেকে সাড়ে ৫ টাকায় করেছে। যথাযথ নিয়ম মেনে সব আইটেম মিলে সর্বনিম্ন দরদাতাকেই কাজ দেওয়া হয়েছে। এখানে কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এ তথ্য যদি সঠিক হয়, তাহলে এটা পুকুর চুরি নয় বরং সাগর চুরি। পণ্যের প্রকৃত বাজার মূল্যের সঙ্গে আরইবির কেনাকাটায় যে বিশাল তারতম্য, তাতে রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করা হয়েছে এখানে। দরপত্র প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতদের যোগসাজশ ছাড়া এটা করা অসম্ভব। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির আওতায় এনে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘যে প্রক্রিয়ায় সর্বনিম্নদাতাকে কাজ দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে সেই দরপ্রক্রিয়াটিই প্রশ্নবিদ্ধ। দরপত্রের সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের স্বার্থ জড়িত এখানে। বাজারদর যাচাই না করে তারা কেন এটা গ্রহণ করলেন? ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জন্য এক ধরনের যোগসাজশে এ ধরনের দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে দরপত্র প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতদের চেয়ে বেশি দায়ী প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনা দরকার।’