এইমাত্র
  • টাঙ্গাইলে বাস চাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
  • ফরিদপুরে নিখোঁজের একদিন নদী থেকে শিশুর লাশ উদ্ধার
  • এক বছর পর মাঠে ফিরলেন নেইমার
  • 'চাপাবাজীর অস্কার অনন্য মামুন পাবেন', বলছেন শাকিব ভক্তরা
  • রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ও ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাবিতে মশাল মিছিল
  • ২০২৫ সালের ছুটির তালিকা প্রকাশ
  • শেখ হাসিনার পদত্যাগ মীমাংসিত, বিতর্ক সৃষ্টি না করার আহ্বান রাষ্ট্রপতির
  • শেখ হাসিনা কীভাবে পদত্যাগ করেছেন, জানালেন আসিফ মাহমুদ
  • শুরু হলো বরবাদ'র শুটিং, শাকিব খান যোগ দেবেন কবে?
  • মিয়ানমার উপকূলে নৌকাডুবি, ১১ মরদেহ উদ্ধার
  • আজ মঙ্গলবার, ৭ কার্তিক, ১৪৩১ | ২২ অক্টোবর, ২০২৪
    লাইফস্টাইল

    গাছে গাছে হেমন্তের দূত ছাতিম ফুল

    লাইফস্টাইল ডেস্ক প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৪৬ এএম
    লাইফস্টাইল ডেস্ক প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৪৬ এএম

    গাছে গাছে হেমন্তের দূত ছাতিম ফুল

    লাইফস্টাইল ডেস্ক প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৪৬ এএম

    হেমন্তের আভাস পেয়ে জেগেছে হেমন্ত দূত ছাতিম ফুল। শরতের শেষ প্রান্তে এসে গাছে গাছে ফোটা ছতিম ফুল হেমন্তে বিলোয় তার মনোমুগ্ধকর সৌরভ। প্রকৃতির নিয়মানুযায়ী এবারও শহর থেকে শুরু করে বন্দর, মফস্বল কিংবা পাড়াগাঁয়ের নদ-নদী তীড়, রাস্তা ঘাটের আশেপাশে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনায়, বসতবাড়ি সংলগ্ন অনাবাদি জায়গায়, অফিস আদালত প্রাঙ্গনে তীব্র গন্ধ বিলোচ্ছে ছাতিম ফুল।

    ছাতিম গাছের নামানুযায়ী এ ফুলের নামকরণ করা হয়েছে ছাতিম ফুল। স্থানীয় ভাবে অনেকে ছাতিম গাছকে ছাতিয়ান গাছ ও বলে থাকেন। ইংরেজিতে ছাতিম গাছকে বলা হয় ডেভিল’স ট্রি। ওষুধী গুনাগুন সমৃদ্ধ ছাতিম গাছের ছাতিম ফুল এর গন্ধ অনেক দূর পর্যন্ত চলে যায়। শাখার শীর্ষের সবুজাভ শুভ্র থোকা থোকা ফুল থেকে বের হওয়া মিষ্টি সৌরভ অন্য যে কোন ফুলের চেয়ে তীব্রতর। তাই প্রকৃতিপ্রেমীরা মুগ্ধ হন ছাতিম ফুলের গন্ধে। মোহিত হয়ে অবাক বিষ্ময়ে ছাতিম ফুলের সৌন্দর্য্য অবলোকন করেন।

    ভারতীয় উপমহাদেশ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ছাতিম গাছের আদি নিবাস হওয়ায় বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র ছাতিম গাছ দেখা যায়। ধারণা করা হয়, মূল গাছের চারদিকে ডালপালা ছাতার মতো ছড়িয়ে থাকায় এ গাছের নামকরণ করা হয়েছে ছাতিম গাছ। ভাল দাম না থাকায় মানুষ খুব বেশি ছাতিয়ান গাছ লাগান না। সৌন্দর্য্যপ্রিয় মানুষ মনের খোড়াক জোগাতে, ছাতিমের বুনো গন্ধ পেতে ছাতিম গাছ লাগান। এই গাছের মূলাবর্তে সাতটি পাতা এক সঙ্গে থাকে বলে সংস্কৃত ভাষায় একে 'সপ্তপর্ণ' বা 'সপ্তপর্ণা' নামে ডাকা হয়।

    সুবিন্যস্ত লম্বাটে পাতাগুলোর মাঝ বরাবর ফোটে সফেদ রঙা থোকা ফুল। পাতার আধিক্য থাকায় গাছকে দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন প্রকৃতি সবুজ রঙের ছাতা মেলে ধরেছে। সম্ভবত একারণেই এই গাছের নাম ছাতিম। আর গাছের নামেই ফুলের নামকরণ। অঞ্চলভেদে এটি ছাতিয়ান, ছাইত্যান, ছাতইন ইত্যাদি নামে পরিচিত। ছাতিমের পাতা দিয়ে গ্রাম্য শিশুরা খেলনা ঝুড়িও বানিয়ে থাকে।

    ছাতিম গাছ লম্বায় প্রায় ৪০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। একাধিক শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট গাছটির ছাল অসমতল ও ধূসর। এর পাতার ওপরের অংশ চকচকে আর তলার দিক ধূসর। পাতাগুলো ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। শরতের শেষ থেকে হেমন্তে সারা গাছ ভরে গুচ্ছবদ্ধ, তীব্রগন্ধযুক্ত, হালকা ঘিয়ে রঙের ছোট ছোট ফুল ফোটে।

    যান্ত্রিকতায় ভরপুর এই শহরে ছাতিম যে দুর্লভ তা কিন্তু নয়। শহরের অসংখ্য স্থানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে গাছটি। আর তার বুনো সৌরভে মাতাল করছে শহরবাসীকে।

    রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, গণভবনের রাস্তা, আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন সড়ক, মিরপুর জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, রমনা পার্ক, শাহবাগ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, জাতীয় তিন নেতার মাজার প্রাঙ্গণ, জাতীয় প্রেসক্লাব সংলগ্ন চামেরি হাউস, আব্দুল গনি রোড, হাতিরঝিল, ইস্কাটন, বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোন- সর্বত্র রয়েছে ছাতিমের উপস্থিতি।

    প্রকৃতিতে নিজেই নিজের অবস্থান সৃষ্টি করা একটি গাছ ছাতিম। শখ করে এই গাছ তেমন একটা কেউ লাগান না। তবু সারা দেশে বিক্ষিপ্তভাবে ছাতিমগাছ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। কারণ কি জানেন? ছাতিমের বীজের রয়েছে বাতাসে ভেসে বেড়ানোর দারুণ এক ক্ষমতা। ছোট কাঠির মতো বীজের এক প্রান্তে থাকে পশমের মতো অঙ্গ। ফল ফেটে বীজ বাতাসে ছড়িয়ে পড়লে তা বাতাসে ভেসে ভেসে অনেক দূরে চলে যায়। আর সুবিধামতো জায়গায় সেই বীজ পড়লেই গজিয়ে ওঠে নতুন গাছ।

    ছাতিমের বৈজ্ঞানিক নাম অ্যালস্টনিয়া স্কলারিস (Alstonia scholaris)। ইংরেজিতে একে Blackboard Tree বলা হয়। স্কলারিস আর ব্ল্যাকবোর্ডের সঙ্গে বিদ্যা অর্থাৎ লেখাপড়ার যোগ আছে। এর কারণও আছে। ছাতিমের নরম কাঠ থেকে ব্ল্যাকবোর্ড ও পেনসিল তৈরি হয়। প্যাকিং বাক্স, দেশলাইয়ের কাঠি এবং খুব সাধারণ মানের আসবাব তৈরিতেও এ গাছের কাঠ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। শ্রীলঙ্কায় ছাতিমের কাঠ দিয়ে কফিন বানানো হয়।

    ছাতিমে ঔষধি গুণ রয়েছে। এর ছাল ও আঠা জ্বর, হৃদরোগ, হাঁপানি, ক্ষত ও কুষ্ঠ রোগ নিরাময়ে সহায়ক। আমাশয়ের চিকিৎসায়ও এর ব্যবহার রয়েছে। চর্মরোগেও ছাতিম ফলপ্রদ। স্নায়ুর শক্তিসূত্রে অসাড়তা আনে বলে রক্তের চাপ কমাতে ছাতিম উপকারী।

    উপকারিতা থাকলেও ছাতিম থেকে কিন্তু সাবধানেও থাকা উচিত। ইংরেজিতে গাছটিকে Devil's Tree বা শয়তানের গাছও বলে। কারণ, ছাতিমের ঘ্রাণে মাদকতা থাকলেও এর তীব্র ঘ্রাণ অনেকেই সহ্য করতে পারেন না। এই ফুলের রেণু থেকে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে। ছাতিম গাছ থেকে নিঃসৃত রজনজাতীয় সাদা রস থেকেও সংক্রমণ হতে পারে।

    ছাতিমের তীব্র ঘ্রাণে দেখা দিতে পারে মাথা ব্যথা, গা গোলানো, বমি বমি ভাবের মতো সমস্যাও। বিশেষত সাইনাসাইটিস, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, চোখের সংক্রমণ বা ক্রনিক সর্দিকাশির সমস্যা থাকলেও ছাতিম ফুলের গন্ধ থেকে সমস্যা হতে পারে।

    এমআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…