এইমাত্র
  • রাষ্ট্রপতির পদত্যাগসহ ৫ দাবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের
  • বৃহস্পতিবারের মধ্যে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধে আলটিমেটাম
  • গণমাধ্যমকে ফ্যাসিবাদের দালালমুক্ত করতে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম
  • ব্যারিস্টার সুমন প্রতারণা করে এমপি হয়েছে: পিপি
  • মার্কিন নির্বাচনের আগে শেষ চেষ্টা চালাতে ইসরায়েলে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন
  • আগরতলায় সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়ে যা বলছে আওয়ামী লীগ
  • রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
  • মিরপুর টেস্টে ২য় দিনে ১০১ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ
  • খুলনায় ছাত্রলীগ নেতা হত্যা মামলায় ২১ জনের যাবজ্জীবন
  • বেপজায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
  • আজ মঙ্গলবার, ৭ কার্তিক, ১৪৩১ | ২২ অক্টোবর, ২০২৪
    মুক্তমত

    রাষ্ট্রপতির বক্তব্য নিয়ে ধুম্রজাল

    শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্রের আবশ্যকতা

    মো. রহমত উল্যাহ প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:১৭ পিএম
    মো. রহমত উল্যাহ প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:১৭ পিএম

    শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্রের আবশ্যকতা

    মো. রহমত উল্যাহ প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:১৭ পিএম

    গত ৫ আগস্ট ছাত্র-আন্দোলন ও গণবিক্ষোভের মুখে দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। তবে তাঁর দেশত্যাগের পর যে বিষয়টি আলোচনায় ছিলো, তা হলো- শেখ হাসিনা কি প্রধানমন্ত্রীর পদে থেকে পদত্যাগ করেছেন নাকি করেন নি?

    আড়াই মাস পর এই বিতর্ক নতুন করে আলোচনায় আসে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে। সম্প্রতি দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম “মানবজমিন” এর প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি শুনেছি তিনি (শেখ হাসিনা) পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়তো সময় পাননি।

    যদিও গতকাল (২১ অক্টোবর) রাতে রাষ্ট্রপতির প্রেস উইং থেকে এই বিষয়ে রাষ্ট্রপতির বক্তব্য সুস্পষ্ট করা হয়। প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ইস্যুতে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে প্রচারণা চালানো হয়েছে তা জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। এ বিষয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও দেশত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাংবিধানিক বৈধতার ওপর যত ধরনের প্রশ্ন জনমনে উদ্রেক হয়েছে সেগুলোর যাবতীয় উত্তর স্পেশাল রেফারেন্স নং-০১/২০২৪ এ মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গত ৮ আগস্ট, ২০২৪ এর আদেশে প্রতিফলিত হয়েছে।

    কিন্তু জনমনে এখনও একই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, তা হলো- শেখ হাসিনা কি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন? এ প্রশ্নের উত্তরের সাথে আরও কিছু প্রশ্ন সম্পর্কিত। যেমন- (১) রাষ্ট্রপতি সংসদ বিলুপ্ত করতে পারে কি না? (২) সংসদ বিলুপ্ত হলে প্রধানমন্ত্রীর পদ থাকে কি না? এবং (৩) পাঁচ আগস্ট সৃষ্ট পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের আব্যশ্যকতা কতটুকু?

    প্রথমে শেখ হাসিনা কি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন কি না এ প্রশ্নের উত্তর সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতির ভাষণে পাওয়া যায়। ৫ আগস্ট বিকালে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তাঁর ভাষণে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন।’ একইদিন রাতে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন তাঁর ভাষণে বলেন, ‘আপনারা জানেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি।’

    দ্বিতীয় প্রশ্ন রাষ্ট্রপতি সংসদ বিলুপ্ত করতে পারে কি না? এই প্রশ্নের উত্তর সংবিধানে পাওয়া যায়। সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রয়োজন মনে করলে সংসদ ভেঙে দিতে পারেন।

    তৃতীয় প্রশ্ন সংসদ বিলুপ্ত হলে প্রধানমন্ত্রীর পদ থাকে কি না? বিদ্যমান সংবিধানের ৫৭ (১) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর পদ শূন্য হইবে, যদি- (ক) তিনি কোন সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট পদত্যাগপত্র প্রদান করেন; অথবা (খ) তিনি সংসদ-সদস্য না থাকেন।’ যেহেতু ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি দ্বাদশ সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন, সেহেতু শেখ হাসিনা সংসদ সদস্য পদ হারিয়েছেন, তাই প্রধানমন্ত্রীর পদও শূন্য হয়েছে।

    আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ কাজী জাহেদ ইকবাল বিবিসি বাংলাকে বলেন, “যদি তর্কের খাতিরেও ধরে নেই শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি, তবে এই বিষয়টি তো স্টেট নেসেসিটি থিউরিতে চলে গেছে”।

    জাহেদ ইকবাল আরও বলেন, “উনি তো কারো কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের অপেক্ষা করেন নি। তিনি তো দেশ ছেড়ে গেছেন। এরপর রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিয়েছে। সংসদ ভাঙার পর ওনার তো প্রধানমন্ত্রীত্ব করার আর কোন সুযোগ থাকে না”।

    সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, “রাষ্ট্রপতি যখন সংসদ ভেঙেছেন, তখন প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ নিশ্চিত হয়ে গেছে। পদত্যাগপত্র জমা দেয়া না-দেয়া কিছুই নয়।”

    চতুর্থ প্রশ্ন পাঁচ আগস্ট সৃষ্ট পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের আব্যশ্যকতা কতটুকু? এ প্রশ্নের ক্ষেত্রে প্রথমে যে বিষয়টি সামনে আসে তা হলো- ৫ আগস্ট ২০২৪ইং তারিখে শেখ হাসিনার পদত্যাগের মতো পরিস্থিতি ছিলো কি না।

    শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে মিছিল নিয়ে যেতে শুরু করে। সময় ছিল না। তিনি ব্যাগ গোছানোর সময়টুকুও পাননি।” অর্থাৎ সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্য থেকে বোঝা যায় ৫ আগস্ট দেশে কোনো স্বাভাবিক পরিস্থিতি ছিলো না।

    সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, গণঅভ্যুত্থান বা যুদ্ধ মুহূর্তে পদত্যাগের অর্থ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলে ঘোষণা দিয়ে কিংবা আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করা না। সংবিধানেও সেটা বলা নেই। ৫ই অগাস্ট যে বিশেষ পরিস্থিতি প্রধানমন্ত্রী পদ শূন্য হয়েছে ও পরবর্তীতে যে সরকার গঠন হয়েছে সেটি কোন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়নি।

    সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলেন, গণঅভ্যুত্থানের বিশেষ পরিস্থিতিতে এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

    সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না বিবিসি বাংলাকে বলেন, “নতুন একটা সরকার গঠনের এক মাস পরে এসে এই প্রশ্ন গুরুত্ব বহন করে না শেখ হাসিনা পদত্যাগ সঠিকভাবে হয়েছে কী না। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র দিছে কী দেন নাই, এটা বলার একমাত্র এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। তিনি যেহেতু ওই দিনই বলেছেন শেখ হাসিনা তার কাছে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন, সুতরাং এখন অস্বীকার করলেও পদত্যাগ কার্যকর হতে কোন বাঁধা নেই”।

    তবে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, ভবিষ্যতে যারা নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করবে, এইসব প্রশ্নের জবাব এড়াতে তারা গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারকে বৈধতা দিতে হবে আগে। তাহলে এ নিয়ে কোন প্রশ্নের সুযোগ থাকবে না ভবিষ্যতে।

    উপরোক্ত বিষয়গুলো থেকে প্রতিয়মান হচ্ছে যে, ৫ আগস্ট সৃষ্ট পরিস্থিতি এবং ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সংসদ ভেঙে দেওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা লিখিতভাবে কিংবা আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগের আবশ্যকতা নেই।

    লেখক: মো. রহমত উল্যাহ, গণমাধ্যমকর্মী

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…