এইমাত্র
  • ওমরাহ ভিসা বন্ধ হয়‌নি, তথ্য সংগ্রহে যে পরামর্শ দিলেন ধর্ম উপদেষ্টা
  • মুন্সীগঞ্জে মাদক ব্যবসায়ীদের হামলায় ৩ পুলিশ সদস্য আহত
  • গজারিয়ায় অবৈধ চুনা কারখানা গুঁড়িয়ে দিল তিতাস
  • 'নিজেদের চাহিদা পূরণে মসলা জাতীয় ফসল উৎপাদন বাড়াতে হবে'
  • খাগড়াছড়ির রামগড়ে স্কুলছাত্রী অপহরণের চেষ্টা, আটক ২
  • শাকিব খানের ছবি ছাড়া প্রেক্ষাগৃহে দর্শক আসছে না: তানহা তাসনিয়া
  • শিক্ষার্থী কম থাকায় এইচএসসির ১৩ কেন্দ্র বাতিল
  • পঞ্চগড়ে দুই ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগে শিক্ষক কারাগারে
  • মাদারীপুরে স্ত্রীর সঙ্গে অভিমানে স্বামীর আত্মহত্যার অভিযোগ
  • নাবিক ও এমওডিসি নেবে নৌবাহিনী, পদ ৪০০
  • আজ মঙ্গলবার, ৪ চৈত্র, ১৪৩১ | ১৮ মার্চ, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের দাবিতে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মা-ছেলে

    অনিল চন্দ্র রায়, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ৭ মে ২০২৩, ০৪:৩৬ পিএম
    অনিল চন্দ্র রায়, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ৭ মে ২০২৩, ০৪:৩৬ পিএম

    সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের দাবিতে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মা-ছেলে

    অনিল চন্দ্র রায়, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ৭ মে ২০২৩, ০৪:৩৬ পিএম

    কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের দাবীতে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মা-ছেলে। চোখের সামনে স্বামী থাকলেও স্ত্রীসহ এক ছেলে সন্তানের খোঁজ খবর নেয়াতো দুরের কথা টানা ২১ বছর অতিবাহিত হলেও স্ত্রী-সন্তানের স্বীকৃতিটুকুও দেননি গণেশ চন্দ্র বর্মন।

    আইনের আশ্রয় না নিলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন স্ত্রী সাবেত্রী রানী (৪৩) ও ছেলে গৌতম চন্দ্র বর্মন (২১)। টানা ২১ বছর স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে গৌতমের পিতৃ পরিচয়ের জন্য ঢিলেঢালাভাবে দাবী জানিয়ে আসলেও সফল হতে পারেনি মা-ছেলে।

    সন্তানের পিতৃ পরিচয় দাবি করা নারী সাবেত্রী রানী জানান, তার বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের নাওডাঙ্গা গ্রামে। একই এলাকার মৃত করুনা কান্ত রায়ের ছেলে গনেশ চন্দ্র বর্মন। গনেশ চন্দ্র বিবাহিত হলেও সাবেত্রীর সাথে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক পর্যায়ের সাবেত্রী ৫ মাসের অন্তঃসত্তা হওয়ায় স্থানীয় লোকজন দুই জনের সম্মতিক্রমে ২০০২ সালে সাবেত্রীর সাথে গনেশের মালা পড়িয়ে বিয়ে দেন। সাবেত্রীর দাবী গনেশের সাথে বিয়ে হওয়ার ৬ মাস মাস পর ঘরে তুলবেন বলে তাকে প্রতিশ্রতি দেন এবং ৬ মাসের ভরণ পোষনের জন্য ৩ হাজার টাকাও দিয়েছেন। তার স্বামী গনেশ চন্দ্র ৬ মাস তো দুরের কথা টানা ২১-২২ বছরও স্ত্রীর স্বীকৃতি দেননি। সাথে আমার গর্ভে ৫ মাসের ছেলেটার বয়স আজ ২১ বছর। সেই এতিম ছেলেটির পিতৃ পরিচয় টুকুও দিচ্ছেন না।

    তিনি জানান, দীর্ঘ ২১ বছর ধরে একমাত্র সন্তানকে নিয়ে চরম কষ্ট দুঃখে খেয়ে না খেয়ে বড় করে তোলেন। দীর্ঘ ২১ বছর ধরে একমাত্র সন্তানকে নিয়ে তিনি মানুষের জমিতে বসবাস করছেন।

    সাবেত্রী বলেন, ২১ বছর ধরে আমার সন্তানের পিতৃ পরিচয় দিতে পারছি না। তাই আমার স্বামী গনেশ আমাকে স্ত্রীর স্বীকৃতি না দিলেও কোন আপত্তি নেই। কিন্তু আমার একমাত্র সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাবাবাসীর সহযোগীতা চেয়েছেন। এতে কাজ না হলে তিনি তার ছেলের পিতৃ পরিচয় পেতে আইনের আশ্রায় নিবেন বলে জানিয়েছেন সাবেত্রী রানী।

    পিতৃ পরিচয়হীন ছেলে গৌতম চন্দ্র বর্মন (২১) বলেন, অনেক কষ্টে আমার মা অন্যের জমিতে থেকে আমাকে খেয়ে না খেয়ে বড় করে তোলেন। চোখের সামনে বাবা থাকলেও আমাকে ছেলের স্বীকৃতি দিচ্ছেন না। আমার বড় কষ্ট লাগে। মাসহ এলাকার অনেক লোকের মূখে শুনেছি আজ গনেশ নামের ওই ব্যক্তি আমার বাবা। কিন্তু আমি একদিন বাবার কাছে ছেলের স্বীকৃতি চাইলে তিনি অস্বীকৃতি জানান। সেই দিন অনেক বড় কষ্ট পেয়েছি। তাই আমার মাসহ পিতৃ পরিচয়ের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি।

    গৌতম আরও বলেন, আমিতো কোন অপরাধ করিনি। কেন আমি বাবা থাকার পরেও ছেলের স্বীকৃতি পাবো না। প্রয়োজনে আইনের আশ্রয় নিবো, তিনি সবার সহযোগীতা চেয়েছেন।

    স্থানীয় মিলন দে জানান, গনেশ ভালবেসে সাবেত্রীকে বিয়ে করেছেন আমি তার কালের সাক্ষী। সাবেত্রী প্রতিবন্ধী ও গরীব বলে স্ত্রীর স্বীকৃতিটুকুও দেয়নি। এটা চরম অন্যায় করেছে গনেশ। সাবেত্রীর গর্ভের সন্তানটির বয়স এখন ২১ বছর। ২১ বছর ধরে গৌতম বাবার ভালবাসা থেকে বঞ্চিত। ছেলেতো কোন দোষ করেনি। গনেশ নিজেই তাকে বিয়ে করেছেন। আমরা চাই সাবেত্রীর ছেলে গৌতমকে যেন গনেশ ছেলের স্বীকৃতি দেয়।

    গনেশ চন্দ্র বর্মনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ওই সময় আমি একটা ভুল করেছি। সেই ভুলের জন্য সাবেত্রীর সাথে মালা পড়িয়ে স্ত্রীর স্বীকৃতি দেই। তবে তাকে কোন দিন ঘরে তোলাসহ স্বামীর স্বীকৃতি দেইনি এবং সাবেত্রী কোন দিন আমার কাছে স্ত্রী অধিকার নিয়ে আসবে না বলে সেই সময় হালের গরু ও জমি বন্ধক রেখে তার ভরন পোষনের জন্য টাকা দিয়েছি। এখন ২১ বছর পর এসে ছেলের পিতৃ পরিচয়ের দাবী জানালে হবে না। এটা কোনক্রমেই সম্ভব না বলে গনেশ চন্দ্র রায় জানিছেন।

    নাওডাঙ্গা ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মমিনুল ইসলাম মন্টু জানান, গনেশ চন্দ্র রায় বিবাহিত হলেও সাবেত্রীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক পর্যায়ে গনেশের সাবেত্রী ৫ মাসের অন্ত:সত্তা হয়। আমি সে সময় ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। অন্ত:সত্বার বিষয়টি জানাজানি হলে উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে হিন্দু রীতি মতে আমিসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে ২০০২ সালে বিয়ে সম্পন্ন হয়। সে সময় গনেশ স্ত্রী সাবেত্রীকে ৬ মাস সময় নিয়ে ঘরে তুলবেন বলে ওই সময় ৬ মাসের ভরণপোষণের জন্য ৩ হাজার টাকাও দেন। পরে সে কোন ক্রমেও ঘরে তোলেননি। বিয়ের ২১-২২ বছর হয়ে গেলেও সাবেত্রী পাচ্ছে না স্ত্রীর স্বীকৃতি ও ছেলে পাচ্ছে না পিতৃ পরিচয়। বিষয়টি বড়ই বেদনাদায়ক ঘটনা।

    তবে গনেশের উচিত হবে অন্তত ছেলে গৌতমের পিতৃ পরিচয় দেওয়াটা খুবই জরুরি। কারণ ছেলে বড়ই এতিম। টানা ২১ বছর ধরে বাবা থাকার পরেও বাবা শব্দটা ব্যবহার করতে না পাড়াটা ছেলের জন্য যে কত বড় কষ্টের। তাই গৌতম যেন দ্রুত তার বাবার স্বীকৃতি পায় সেই দাবী জানাচ্ছি।

    নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ হাছেন আলী জানান, ২১ থেকে ২২ বছর আগের ঘটনা। তবে বিষয়টি দুই পক্ষই আমাকে জানিয়েছে। দেখি দুই পক্ষকে নিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হবে।

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    চলতি সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…