দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের টংগুয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে স্কুলের জমি কৌশলে হাতিয়ে নিয়ে ঘর-বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ খোদ ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষক সতীশ চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে। এর প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ঐ স্কুলের সাবেক সভাপতি গোলাম রব্বানী ও চিত্তরঞ্জন রায়, স্থানীয় বাসিন্দা মহিউদ্দিন ও রহিদুল ইসলাম রাফি।
এসব অভিযোগ তদন্তে মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সরেজমিনে ঐ স্কুল পরিদর্শন করেন ইউএনও মোঃ তাজ উদ্দিন। এর আগে গত ০৫ আগস্টের পর থেকে জমি দখল, আর্থিক অনিয়ম ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সতীশ চন্দ্র রায়ের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং স্থানীয় বাসিন্দারা।
একাধিক ব্যক্তি কয়েকটি অভিযোগে ইউএনও বরাবর অভিযোগ দিলে ইতিপূর্বে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশিক আহমেদ তদন্ত করেন। সর্বশেষ গত ২৭ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করেন তাঁরা।
সেই অভিযোগের সূত্র ধরে সরেজমিনে মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মাঠের পার্শ্বেই প্রথম মন্দির নির্মাণ করে কৌশলে বেড়া দিয়ে ধীরে ধীরে জমি দখল করে ঘরবাড়ি নির্মাণ ও বসবাস করছেন ওখানে। সেই সাথে স্কুলের জমিতেই দোকান তৈরী করে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। এই বাড়ি ছাড়াও বেশ কয়েকটি স্থানে তাঁর বাড়ি আছে বলে স্থানীয়রা নিশ্চিত করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয়টির স্থানীয় জনসাধারণের উদ্যোগে জমি সংগ্রহ ও অবকাঠামো নির্মাণ করে সরকারী নীতিমালা অনুসরণ করে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠালগ্নে চিত্তরঞ্জন রায় প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে ৮ আগস্ট ১৯৯৬ সালে ৩০২৮ নং দানপত্র দলিল মূলে বিভিন্ন দাগে ১ একর ৩০ শতাংশ জমি নিম্ন মাধ্যমিক/উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অনুকুলে দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত খানসামা থানাধীন ২নং ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের টংগুয়া মৌজায় টংগুয়া আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি বরাবরে পার্শ্ববর্তী নীলফামারী জেলার দুকুড়ী এলাকার গয়চাঁদ ব্রজবাসীর ছেলে হরেক চাঁদ ব্রজবাসী পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত নিজ দখলীয় মালিকানা জমি রেজিস্ট্রি দেয়। সেই মোতাবেক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জমির খাজনা পরিশোধ করে ব্যবহার করে আসছে এবং জমির স্কেচ ম্যাপ দৃশ্যমান রয়েছে।
কিন্তু ঐ বিদ্যালয়ে ১৯৯৭ সালের ২৯ আগস্ট প্রধান শিক্ষক পদে সতীশ চন্দ্র রায় তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি চিত্তরঞ্জন রায়ের নিয়োগপত্রের আলোকে গত ০১ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭ ইং তারিখে যোগদান করে অদ্যাবধি চাকুরী করে আসছে। এমতাবস্থায় বিদ্যালয়ের জমি সংরক্ষণ না করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হওয়া স্বত্বেও বিদ্যালয়ের জমি বিদ্যালয়ের নামে সংশোধনী রেজিস্ট্রি না নিয়ে অন্য ওয়ারিশের কাছে নিয়মবহির্ভূত ভাবে সতীশ চন্দ্র রায় তার নিজ নামে ৪৮ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে নেয়। এই পুরোনো খেলার মাঠে এখন আধাপাকা বাড়ী নির্মাণ করে তার নিজ দখলে নিয়ে বসবাস করছে ঐ প্রধান শিক্ষক।
এছাড়াও অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঐ স্কুলের নামীয় ২৭ শতক জমি নিয়ম না মেনেই গোপনে স্থানীয় এক ব্যক্তিকে দিয়েছেন ঐ প্রধান শিক্ষক। সেই জমিতে পুকুর খনন করে নিজের বাড়ি তৈরী ও বাড়ি নির্মাণ করেছেন এই অভিযুক্তরা।
স্থানীয় বাসিন্দা রহিদুল ইসলাম রাফি বলেন, এই প্রধান স্কুলের জমিদখলসহ নানা অনিয়ম করেছে। দ্রুত এনার অপসারণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক সতীশ চন্দ্র রায় কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। তিনি বলেন, নিয়ম মেনেই আমি জমি রেজিস্ট্রি নিয়েছি। তবে ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে খোদ স্কুলের জমি দখল বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি ইউএনও স্যার তদন্ত করছে। যদি আমার জমি না টিকে তাহলে তিনি যেটা করবেন ওটা এখানে তো আর আমার কিছু বলার নাই।
তবে স্কুলের জমি অন্যজনকে নিয়ম না মেনে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলা তো অনেক আগের ঘটনা। এত জানাশোনা ছিল না তাই হয়ে গেছে। তবে রেজুলেশন করে চুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ তাজ উদ্দিন বলেন, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সতীশ চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্তে প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এমআর