'এই কুকুরকে চিনে রাখেন। শিক্ষকতার নামে প্রাইমারি শিক্ষার্থীদের সাথে পড়ানোর নামে বিকৃত যৌনাচার করতো। এর শাস্তি অবধারিত। এর আগে পেছনে যারা সাহায্য করতেছে। তাদের লিস্ট করা হচ্ছে।' শিক্ষকের ছবি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এমন স্ট্যাটাস দেন খাইরুল ইসলাম নামের বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক।
স্ট্যাটাসের পর বিকেল বেলায় বাজারে অনেক লোকের সামনে ওই শিক্ষককে অপমানও করেন খাইরুল।এসব অপমান সইতে না পেরে একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার দাড়িপাকা গ্রামের নিজ বাড়িতে আজ মঙ্গলবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে।
কেউ কেউ বলছেন, খাইরুল ইসলাম নামের ওই ছাত্র ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ দেওয়ার প্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় থেকে তদন্ত দল আসার কথা ছিল। যৌন হয়রানির এমন অপমান সইতে না পেরে ওই শিক্ষক আত্মহত্যা করেছেন।
নিহত ওই শিক্ষকের নাম নুরুল ইসলাম (৫৭)। তিনি উপজেলার দাড়িপাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। পুলিশ আজ বেলা ১১টার দিকে বাড়ি থেকে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া ওই শিক্ষার্থীর নাম খাইরুল ইসলাম (২৬)। সে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক দাবিদার। নিহত ওই শিক্ষকের সাবেক ছাত্র খায়রুল ময়মনসিংহ পলিটেকনিক্যাল থেকে পাস করে চাকরি খুঁজছেন। গতকাল সোমবার দুপুরে তিনি ওই শিক্ষকের ছবি দিয়ে তাঁকে কুকুর সম্বোধন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দেন। এছাড়াও বিকেল বেলা দাড়িপাকা বাজারে লোকজনের সামনে ওই শিক্ষককে অপমান করেন খাইরুল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কয়েক বছর আগে ওই শিক্ষক ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করেছেন এমন অভিযোগ এনে গত ২৮ আগস্ট দাড়িপাকা গ্রামের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক খাইরুল ইসলামের নেতৃত্বে শিক্ষকের শাস্তি দাবি করে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। ওইদিন বিকেলেই খাইরুল ইসলাম বাদী হয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় দেলদুয়ার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গৌড় চন্দ্র দে কে তদন্তের দায়িত্ব দেন। সোমবার ওই অভিযোগের তদন্ত হওয়ার কথা ছিল।
এদিকে খাইরুল ইসলাম গতকাল সোমবার দুপুরের দিকে ওই শিক্ষককে কুকুর সম্বোধন করে ছবিসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন। এরপর বিকেল বেলা দাড়িপাকা বাজারে অনেক লোকজনের সামনে ওই শিক্ষককে অপমান করেন খাইরুল।
দাড়িপাকা গ্রামের বাসিন্দা এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গতকাল সোমবার বিকেলে দাড়িপাকা বাজারে তাঁর উপস্থিতিতে খাইরুল সবার সামনে ওই শিক্ষককে নানা বকাঝকা দেন। অপমান করেন।
নিহতের স্ত্রী নাজমা খাতুন কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, খাইরুল ও কামাল হোসেন নামের দুইজন ব্যক্তি আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে শিক্ষক সমাজে কুলুষিত করেছেন। তিনি (আমার স্বামী) আমাকে বলেছেন এই মুখ আমি কাউরে দেখাবো না। তিনি যে আজই আত্মহত্যা করবেন তা আমরা বুঝতে পারিনি। এই বলে তিনি আবার বিলাপ শুরু করেন।
নিহত শিক্ষকের একমাত্র মেয়ে নিপা আক্তার বলেন, বাবাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে ওরা। ওরা বাবার নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে। এটা আত্মহত্যা নয় এটা হত্যা। আমি এই হত্যার বিচার চাই।
এ ঘটনায় উপজেলার শিক্ষক সমাজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন। মোজাম্মেল হক নামের একজন প্রাথমিক শিক্ষক বলেন, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এটা আত্মহত্যা নয় এটা হত্যা
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গৌড় চন্দ্র দে বলেন, একটি লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আজ মঙ্গলবার তদন্ত হওয়ার কথা ছিল। সকালে ওই শিক্ষকের মৃত্যুর খবর পেয়ে আর আসা হয়নি। কারণ মৃত ব্যক্তির কোন তদন্ত হয় না।
ওই শিক্ষকের অভিযোগের বাদী খাইরুল ইসলাম তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন কর্মী বলে দাবি করেন। তিনি এখন সমন্বয়ক নন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই শিক্ষক কুকুরের চেয়েও খারাপ। এইজন্য আমি ওই ¯ট্যাটাস দিয়েছিলাম। এখন তিনি মারা গেছেন। ওনার বিরুদ্ধে এখন আমার কোন অভিযোগ নেই। তিনি যে আত্মহত্যা করবেন তা আমার জানা ছিল না। আমি স্যারের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন বলেন, ওই শিক্ষকের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এমআর