''আরে হাসান তুই কই গেলিরে বাবা, আমি তোরে একনজর দেখতে চাই, তুই মারে থ্যুইয়া কই গেলি" এভাবেই ছেলের ছবি হাতে আহাজারি করে চোখের পানি জড়াচ্ছেন সরকার পতনের আন্দোলনের মিছিলে গিয়ে ঢাকার যাত্রাবাড়ি থেকে নিখোঁজ হওয়া ভোলার ছেলে হাসানের মা গোলেনুর বেগম। নিখোঁজ হাসানকে জীবিত বা মৃত অবস্থায় ফেরত পেতে জোর দাবী জানিয়েছেন পরিবার।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে গিয়ে দেখা যায় হাসানের মা তার ছেলের ছবি হাতে আহাজারি করছেন।
হাসান ভোলার সদর উপজেলার কাঁচিয়া ইউনিয়নের শাহমাদর গ্রামের বাসিন্দা মো. মনিরের ছেলে। সে ঢাকার গুলিস্তান কাপ্তান বাজারের একটি ইলেকট্রনিক্স দোকানের কর্মচারী ছিলেন।
সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যাক্তি হাসানকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পরেছেন মা গোলেনুর বেগম ও বাবা মনির। নির্বাক ছাউনিতে শেষবারের মতো একনজর ছেলেকে দেখতে মা গোলেনুর বেগমের আহাজারি যেনো থামছেই না।
হাসানের মা গোলেনুর বেগম জানান, গেল ৫ আগস্ট ঢাকার যাত্রাবাড়ি থেকে সরকার পতনের আন্দোলনের মিছিলে গিয়ে আর ফিরে আসেনি হাসান। ৮ই আগস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেজবুকের একটি ভিডিওতে ভ্যান গাড়িতে ৩ জনের লাশ দেখতে পান। সেই লাশের সাথে হাসানের লাশ রয়েছে বলে দাবী করেন হাসানের মা। এর পরে হাসানের খোঁজে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে এবং আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামসহ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় যায় তার পরিবার। কোথায়ও খুঁজে পাননি হাসানকে।
তিনি আরও জানান, খুনি হাসিনা আমার ছেলেসহ অসংখ্য মায়ের বুক খালি করেছে। আমরা এই খুনির উপযুক্ত বিচার দাবী করছি। এর পাশাপাশি আমার ছেলে হাসানকে জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় আমাদের কাছে ফেরত দেওয়ার দাবী করছি।
হাসানের বাবা মনির জানান, ফেজবুকে ছেলের লাশ ভ্যান গাড়িতে দেখতে পেয়ে ঢাকায় যান তিনি। এরপর ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ছেলের খোঁজ করে কোথাও না পেয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় নিখোঁজের একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ছেলের খোঁজ পেতে করেছেন মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন। তাতেও কোন সুফল পাননি। এছাড়াও তিনি ঢাকার কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের সাথে একাধিকবার দেখা করে তার ছেলে নিখোঁজের বিষয়ে জানিয়েছেন। তাতেও এখন পযন্ত ছেলের খোঁজ মেলেনি।
তিনি আরও জানান, হাসান পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যাক্তি ছিল। তার বেতনের টাকায় সংসার ও হাসানের ছোট দুই ভাইবোনের পড়ালেখার খরচ চলতো। তার অনুপস্থিতিতে সংসার চালানো রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে বাবা মনির মিয়াকে। যেহেতু তার ছেলে স্বৈরাচার সরকার পতনের আন্দোলনে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে, সেহেতু বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ সকলের কাছে সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
ওই এলাকার কয়েকজন স্থানীয়রা বলছেন, হাসান ছেলে হিসেবে অনেক ভালো ছিলেন। অভাব-অনটনে থাকা পরিবারে সচ্ছলতা ফিরে আনতে জীবনের তাগিদে ঢাকায় গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, সেখানে গিয়েও চিরতরে হারিয়ে গেলেন সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম এই ব্যক্তিটি। তাই একটু ভালো থাকতে সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন তাঁরা।
পরিবারের আদরের সন্তানকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে রয়েছেন বাবা মা দুজনেই। ছেলের খোঁজে আজ ভোলায় তো কাল ঢাকায় এভাবেই দিন পার করছেন হাসানের বাবা মা।
সর্বশেষ গত ১০ জানুযারি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সাথে দেখা করতে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম। সেখানেও ছেলে নিখোঁজের বিষয়টি জানান দিতে একটি ব্যানারে দারিয়েছিলেন হাসানের বাবা মা।
এআই