রাজশাহী সিল্ক ফৌজদার টেক্সটাইল অ্যান্ড প্রিন্টিং কারখানা ও শো-রুমের বিরুদ্ধে বিগত মাসের বেতন না দিয়ে এক নারী শ্রমিককে মারধর শেষে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। কর্মীরা অভিযোগে বলছেন, প্রতিষ্ঠানটির মালিক শফিকুল ইসলাম বেলাল ফৌজদার (৬০) তাদের প্রতি অমানবিক আচরণ করছেন, নিয়মিত বেতন দিচ্ছেন না। সেই সাথে প্রতিষ্ঠানের মালিক নানান অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত।
সোমবার (১৭ মার্চ) দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে নারী কর্মী সুরাইয়া খাতুন শাপলা (২৭) তার বকেয়া বেতন চাইতে গেলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পরপরই মালিক শফিকুল ইসলাম ফৌজদার কারখানা থেকে পালিয়ে যান।
সুরাইয়া জানান, তিনি জানুয়ারি থেকে প্রতিষ্ঠানটির শো-রুমে সেলসম্যান হিসেবে কাজ করছিলেন এবং সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পরিশ্রম করতেন। তার বেতন নির্ধারিত ছিল ১০,০০০ টাকা, কিন্তু ফেব্রুয়ারির বেতন এখনো পরিশোধ করা হয়নি।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, বেতন চাইতে গেলে মালিকপক্ষ তাকে কুপ্রস্তাব দেয়, যা প্রত্যাখ্যান করায় তাকে স্টকের হিসাব নিয়ে হয়রানি করা হয়। এরপর তিনি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন, এমনকি তার ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়েও কটূক্তি করা হয়।
সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ হলো, শফিকুল ইসলাম ফৌজদার তাকে নমিনি বানিয়ে অগ্রণী ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা ঋণ তুলে নিয়েছেন। সুরাইয়া এই ঋণের দায় থেকে মুক্তি চান এবং মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। তিনি বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন। শুধু সুরাইয়াই নন, এর আগেও অনেক নারী কর্মী মালিকের অনৈতিক প্রস্তাব ও হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সাবেক কর্মচারী কাজলী বলেন, "আমি চার বছর এখানে কাজ করেছি। করোনাকালীন সময়ে ব্যবসার অবস্থা খারাপ দেখিয়ে মালিক ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। আমরাও প্রায় ২ লাখ টাকার ঋণ তুলতে নমিনি হিসেবে সহযোগিতা করি। কিন্তু ঋণের টাকা তোলার পর থেকেই মালিক আমাদের নানাভাবে হয়রানি শুরু করেন। বেতন পাওয়া কঠিন হয়ে যায়, অনৈতিক প্রলোভন তো থাকেই।"
তিনি আরও জানান, "প্রথমে মালিক ভালো ব্যবহার করতেন, পরে নানা কৌশলে কর্মীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেন। সুন্দরী নারীদের ব্যক্তিগত কক্ষে ডেকে নিয়ে কুপ্রস্তাব দিতেন। যারা রাজি হতো, তারাই চাকরি ধরে রাখতে পারত।"
মালিকের ছেলে শান্ত ফৌজদার তার বাবার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানেন বলে স্বীকার করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, "বাবার কর্মকাণ্ডে আমি লজ্জিত, কিন্তু এ বিষয়ে আমি কিছু করতে পারব না।"
স্থানীয় বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলেছেন, এত কর্মী চলে গেলেও কারখানাটি কীভাবে চালু আছে? তারা মনে করেন, মালিকের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের দ্রুত তদন্ত হওয়া দরকার।
ভুক্তভোগীরা শফিকুল ইসলাম বেলাল ফৌজদারের বিচার দাবি করেছেন। তার বিরুদ্ধে কর্মচারীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, বেতন পরিশোধ না করা, অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়া এবং ব্যাংক ঋণের অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানা জানিয়েছে, তারা অভিযোগটি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছে এবং দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী সিল্ক শিল্পের সঙ্গে জড়িত একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ সত্যিই দুঃখজনক। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া, যাতে শ্রমিকরা ন্যায়বিচার পান এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করা যায়।
এনআই