বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে এবারে ঈদ স্পেশাল সার্ভিস থাকছে না। যাত্রী সংকটে লোকসান এড়াতে মালিকরা যাত্রীদের ভীড় দেখার পর ঘাটে লঞ্চ আনবেন বলে জানিয়েছেন। এদিকে অধিকাংশ ব্র্যান্ড বাসের ঈদ সার্ভিসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি প্রায় শেষের পথে বলে জানিয়েছেন। তবে টিকিট কালোবাজারি রোধে বাস মালিকরা কঠোর হুশিয়ারী দিয়েছেন। বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে ঈদের ১৫ দিন যেখানে উভয় প্রান্তে প্রতিদিন ২৮ থেকে ৩২টি লঞ্চ চলাচলের স্পেশাল সার্ভিস ঘোষণা করা হতো, এবারে তা থাকছে না।
পদ্মা সেতু চালুর পর সময় স্বল্পতার জন্য সড়ক পথে যাত্রি বেড়ে যাওয়ায় এমনটা ঘটছে বলে জানানো হয়েছে। ডাবল ট্রিপসহ ঈদ স্পেশাল সার্ভিস চালাতে গিয়ে গতবছর অনেক টাকা লোকসান হওয়ায় এবারে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ১৮টি লঞ্চ দিয়ে তিনটি গুচ্ছ করে প্রতিদিন রোটেশনে ৬টি লঞ্চ চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাও আবার ঈদের আগে ঢাকা সদর ঘাট এবং পরে বরিশাল নৌ বন্দরে যাত্রি ভীড় দেখার পর। নো প্যাসেঞ্জার নো লঞ্চ পদ্ধতিতে এবার ঈদে লঞ্চ চালাবেন বলে জানিয়েছেন লঞ্চ মালিক রেজিন উল কবির।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালু হবার পর আমাদের ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে। গত ঈদেও আমরা প্রচুর লোকসান দিয়েছি। এই লোকসান এড়াতে আমরা এবার ১৯টি লঞ্চ নিয়ে তিনটি গ্রুপ করেছি। এতে করে কেউ কোন ডাবল ট্রিপ দেবে না। প্রিতিদিন ৬টি লঞ্চ ছাড়বে। ক, খ এবং গ এই তিন ভাগে ১৮ টি লঞ্চের আপাতত সিডিউল রয়েছে। ঈদ যাত্রা শুরু হবে ২৫ মার্চ ঢাকা থেকে। ওই দিন ঢাকা থেকে বরিশাল আসবে খ গ্রুপভুক্ত ৬ লঞ্চ যথাক্রমে এমভি এডভেঞ্চার-৯, পারাবাত- ১৮, পারাবাত-৯, সুন্দরবন-১৫, কীর্তনখোলা এবং মানামী। ২৬ মার্চ ঢাকা থেকে বরিশাল আসবে গ গ্রুপভুক্ত শুভরাজ-৯, পারাবাত-১১, সুরভী-৯, সুন্দরবন-১৬, কুয়াকাটা-২ এবং এডভেঞ্চার-১। ২৭ মার্চ ঢাকা থেকে বরিশাল আসবে ক গ্রুপভুক্ত প্রিন্স আওলাদ-১০, সুন্দরবন-১৬, পারাবাত-১২, সুরভী-৭, পারাবাত-১০, কীর্তনখোলা-১০ এবং মানামী। এসব লঞ্চের পাশাপাশি অবশ্য অতিরিক্ত লঞ্চ থাকবে।
যদি অতিরিক্ত যাত্রী হয় তবে আমরা তা ব্যবহার করবো। যেখানে যাত্রী থাকবে আমরা সেখানে লঞ্চ দেবো নতুবা নয়। ঈদের সময় যাত্রী সংকটের এমন ঘটনা আগে কোনদিন ঘটেনি। আমরা লাভ ছাড়া লঞ্চ চালাবো না। এবার নগরীর লঞ্চের টিকিট কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের চাপ অনেকটা নেই। অনেক কোম্পানীর কাউন্টারে এখন পর্যন্ত ঈদ লঞ্চের কোন সিডিউলও এসে পৌঁছায়নি।
অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, যাত্রী প্রাপ্তির অনিশ্চিয়তার কারনে এমনটা হচ্ছে। বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে প্রতিবছর যেখানে কমপক্ষে ৩ থেকে ৫ লাখ যাত্রী ঈদ যাত্রী হতো সেখানে এবছর মিলছেনা কোন নিশ্চয়তা। কাউন্টার স্টাফরা জানান, আগে ঈদের সময় টিকিট নিয়ে হিমশিম খেতাম যাত্রীদের চাপে। এখন কোন ভীড় নেই, টিকিটের চাপ নেই। আমর এখনো সিডিউলও পাইনি। কবে আমাদের লঞ্চ থাকবে তাও জানিনা। আগে ঈদ যাত্রার ১৫-২০ দিন আগে থেকে স্পেশাল সার্ভিসের ঘোষণা আসতো, এর ব্যাপক প্রচার হতো। কিন্তু এবারে সেই চিত্র পাল্টে গেছে। আগে ঈদ যাত্রায় সবাই গ্রামের বাড়িতে আসতো লঞ্চে করে, কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। ঈদ রোটেশন সার্ভিসে যে ৬টি লঞ্চ প্রতিদিন থাকবে সেগুলোও যাত্রী পাবে কি না সন্দেহ আছে।
এ অবস্থায় লঞ্চের অফিসগুলোতে যারা টিকিট নিতে আসছেন তারা টিকিট পাচ্ছেন। এতে যাত্রীরা খুশি। তারা বলছেন, আগে ১৫ দিন আগে এসেও টিকিট পেতাম না, এবার যখন আসছি টিকিট পাচ্ছি। সে তুলনায় বাসের টিকিট পাওয়া বেশ মুশকিল। এক যাত্রী বলেন, মেয়ে জামাই ঈদ করতে আসবে। এখানে এসে ঈদ টিকিট পেয়ে গেলাম, পদ্মা সেতু হওয়ার পূর্বে ১৫ দিন আগে এসেও টিকিট পেতাম না।
ঈদ ফেরত এক যাত্রি বলেন, আমি ঈদের পরে ঢাকা যাবার কেবিনের টিকিটের জন্য এসেছিলাম। ওনাদের লঞ্চের কোন সিডিউলই নেই। আগে আসা-যাওয়া দুটো টিকিটই মিলতো। সিডিউল আগাম ঘোষণা করা দরকার। কারন লঞ্চের নিশ্চিয়তা না পেলে ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হয়। লঞ্চ এখনো গাড়ির চেয়ে নিরাপদ। এতকিছুর পরেও বরিশাল নৌ বন্দর কর্তৃপক্ষ এবার ঈদ যাত্রায় যাত্রী হবে বলে আশা করছেন। তাদের মতে লঞ্চ কোম্পানীগুলো তাদের জাহাজ নিয়ে প্রস্তুতি সেরে রেখেছে। লোকসানের ভয়ে তারা আগাম ঘোষণা দিচ্ছে না। বন্দর কর্নকর্তা শেখ মোহাম্মদ সেলিম রেজা বলেন, সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন হওয়ায় এবারে লঞ্চ ব্যবসা চাপে আছে। তবে মনে হচ্ছে এবারেও লঞ্চে ভালো যাত্রী পাওয়া যাবে। আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছি। লঞ্চ মালিকরাও প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন তবে তারা আগাম কিছু বলতে সাহস পাচ্ছে না। কারণ প্রতি ট্রিপে অনেক টাকা ব্যায়ের একটা বিষয় জড়িয়ে আছে। এদিকে ঢাকা-বরিশাল রুটে ঈদের সময় প্রতিদিন অন্তত ৭ থেকে ৮শ বাস চলাচল করবে।
সার্বক্ষনিক বাস চলাচল করায় টিকিটের বালাই খুব একটা নেই। তবে মান সম্পন্ন ব্র্যান্ড গাড়িগুলোর টিকিট ইতিমধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে। টিকিটের কালো বাজারি রোধে কঠোর হুশিয়ারী দিয়েছে বাস মালিক সমিতি।
ব্র্যান্ড বাসের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের ঈদের আসা-যাওয়ার সিডিউল বাসের টিকিট ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। ২৫ মার্চ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সব টিকিট বিক্রি শেষ। অন্যজন বলেন, এবারে রাস্তায় যানজট কম, অল্প সময়ের মধ্যেই বরিশাল আসা যাচ্ছে বিধায় বাসের দিকে যাত্রীরা ঝুঁকছে। যে কোন সময় বাস পাওয়া যাচ্ছে বলেই যাত্রিরা এমুখো হচ্ছে। বরিশাল বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন বলেন, মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে সভা করে জানিয়ে দিয়েছি সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় টিকিট বিক্রি করতে হবে। কোন কালোবাজারি হবে না। ৭ থেকে ৮শ বাস চলাচল করবে। কোন গাড়ি কোন অপরাধ করলে সে গাড়ির চলাচল বন্ধ করে দেয়া হবে।
এমআর