রাজশাহী বিভাগে সরকারি গুদামে ধান-চাল সংগ্রহে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। দীর্ঘ সময়সীমা বাড়িয়েও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হয়নি। কৃষকরা সরকারের নির্ধারিত দামে ধান দিতে আগ্রহ দেখাননি, আর মিল মালিকরা চুক্তি করেও ঠিকমতো চাল সরবরাহ করেননি। ফলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ৯১৩টি চালকলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ পাঠিয়েছে রাজশাহীর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক দপ্তর।
রাজশাহী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ না করা ও চুক্তি না করায় ৯১৩টি চালকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৫১টি মিল চুক্তিযোগ্য ছিল, কিন্তু চুক্তি করেনি। ১৬২টি মিল চুক্তি করেও ঠিকমতো চাল সরবরাহ করেনি।
খাদ্য বিভাগের সহকারী উপপরিচালক ওমর ফারুক জানান, ‘‘চুক্তি অনুযায়ী ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ চাল সরবরাহ করা মিলগুলোর জামানত থেকে টাকা কেটে জরিমানা করার সুপারিশ করেছি। যারা চাল দেয়নি, তাদের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।’’
চলতি মৌসুমে রাজশাহীর আট জেলায় ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। খাদ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ৫৬ হাজার ৩৫৯ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মাত্র ৩৯৫ টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৭ শতাংশ।
অন্যদিকে, সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ১১ হাজার ২৬৩ টন, কিন্তু সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৯৪ হাজার ৭০৭ টন। আতপ চালের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১ হাজার ৮৯১ টন, কিন্তু সংগ্রহ হয়েছে ১৯ হাজার ৫২৯ টন।
কৃষকদের মতে, সরকারি গুদামে ধান বিক্রি ঝামেলাপূর্ণ ও কম লাভজনক। প্রতি মণ ধানের সরকার নির্ধারিত দাম এক হাজার ৩২০ টাকা। কিন্তু হাট-বাজারে এক হাজার ৪৫০ টাকা দর পাওয়া যায়। কৃষকরা নগদ টাকা পেতে হাটেই ধান বিক্রি করছেন। সরকারি গুদামে ধান দিলে টাকা পেতে দেরি হয়, যা তাদের জন্য বাড়তি ঝামেলা।
খাদ্য বিভাগের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, সরকারি গুদামে নতুন ধানের পরিবর্তে মিল মালিকরা পুরনো চাল সরবরাহ করেছেন। ভারত থেকে আমদানি করা পুরনো চালও গুদামে এসেছে। এসব চালের পুষ্টিমান কম, যা ভোক্তাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকারি গুদামে ধান-চাল সংগ্রহ ব্যবস্থা আরও আধুনিক করতে হবে। কৃষকদের আকৃষ্ট করতে বাজারদরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দাম নির্ধারণ করা জরুরি। পাশাপাশি, খাদ্য বিভাগের তদারকি বাড়িয়ে মানহীন চাল সংগ্রহ বন্ধ করা দরকার।
সরকারি গুদামে ধান-চাল সংগ্রহের বর্তমান সংকট শুধু মিলারদের নয়, বরং পুরো খাদ্যব্যবস্থার দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়। কৃষক, মিল মালিক ও সরকারের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।
এইচএ