মানবতার মুক্তিদূত মানবতারও কল্যাণ আনে। তাই ইসলামে দান সদকার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কুরআনুল কারীমের একাধিক আয়াতে দান সদকার প্রতি উদ্বোধ্য করা হয়েছে।
আব্দুল্লাহ ইবনু সালামাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাঃ) আসমাহ (রাযিঃ) কে বলেন-(দান না করে) গুনে গুনে সঞ্চয় করে রেখো না, তাহলে আল্লাহ ও তোমাকে না দিয়ে সঞ্চয় করে রাখবেন (বুখারী হাদিস ১৩৪১)।
আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত নবী (সাঃ) বলেন-মহান আল্লাহ বলেছেনঃ হে আদম সন্তানেরা! তোমরা অকাতরে দান করতে থাক, আমিও তোমাদের উপর ব্যয় করব (মুসলিম হাদিস ২১৭৯)।
আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ) বর্ণনা করেন রাসুল(সাঃ) বলেন-উত্তম সদাক্বাহ হলো যা দান করেও দাতার সম্পদ কমে না । নিজের আত্মীয়দের থেকে (দান খয়রাত) শুরু কর (বুখারী হাদিস ৪৯৫৬);
আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত রাসুল (সাঃ) বলেছেন-একটি দীনার তুমি আল্লাহর পথে ব্যয় করলে, একটি দীনার গোলাম আজাদ করার জন্য এবং একটি দীনার মিসকীনদের দান করলে এবং আরো একটি তোমার পরিবার পরিজনের জন্য ব্যয় করলে । এর মধ্যে (ছওয়াবের দিক থেকে) ঐ দীনারটি উত্তম যা তুমি তোমার পরিবার পরিজনের জন্য ব্যয় করলে (সহীহ মুসলিম হাদিস ২১৮২)
সামান্য হলেও দান করঃ আবী ইবনু হাতিম (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আমি নবী (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, তোমরা জাহান্নাম হতে আত্মরক্ষা কর এক টুকরা খেজুর সদাক্বাহ করে হলেও (বুখারী আঃ প্রঃ ১৩২৫ ইঃ ফাঃ ১৩৩১)
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত এক ব্যক্তি নবী (সাঃ) কে বললেন, আমার মায়ের আকস্মিক মৃতু ঘটে, কিন্তু আমার বিশ্বাস তিনি (মৃতুর পূর্বে) কথা বলতে সক্ষম হলে কিছু সদাক্বাহ করে যেতেন । এখন আমি তার পক্ষ হতে সদাক্বাহ করলে তিনি এর প্রতিফল পাবেন কি ? তিনি নবী (সাঃ) বললেন হ্যাঁ (বুখারী হাদিস ১২৯৭, মুসলিম হাদিস ২১৯৭)
প্রতি ভাল কাজই সদাক্বাহঃ আবু যার গিফারী (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসুল (সাঃ) বলেছেন তোমার ভাইয়ের প্রতি তোমার হাস্যজ্জ্বল মুখ করাটাও একটা দান; কাউকে ভাল কাজের উপদেশ দেয়াটাও একটা দান; পথ ভুলা মানুষকে পথ দেখানোও একটা দান; কোন চক্ষুহীন ব্যক্তিকে সাহায্য করাও তোমার একটা দান; চলার পথ থেকে পাথর, কাঁটা বা হাড় সরিয়ে দেয়াও একটা দান এবং তোমার বালতি হতে তোমার (অপর) ভাইয়ের বালতি ভরে দেয়াও তোমার একটা দান (তিরম্যিী, মেশকাত হাদিস ১৮১৬/২৩);
হুযাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী (সাঃ) বলেন-প্রতিটি ভাল কাজই সদাক্বাহ অর্থাৎ দান হিসেবে গণ্য (মুসলিম হাদিস ২১৯৯);
আবু যর (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী (সাঃ) এর নিকট কিছু সংখ্যক সাহাবী তাঁর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল ! ধন সম্পদের মালিকেরা তো সব ছওয়াব লুটে নিয়ে গেছে। কেননা আমরা যেভাবে নামাজ আদায় করি তারাও সেভাবে আদায় করে। আমরা যেভাবে সিয়াম পালন করি তারাও সেভাবে পালন করে। কিন্তু তারা তাদের অতিরিক্ত সম্পদ দান করে ছওয়াব লাভ করছে অথচ আমাদের পক্ষে তা সম্ভব হচ্ছে না । নবী (সাঃ) বললেন আল্লাহ তা’আলা কি তোমাদের এমন অনেক কিছু দান করেননি! যা সদাক্বাহ করে তোমরা ছওয়াব পেতে পার ? আর তা হলো প্রত্যেক তাসবিহ একটি সদাক্বাহ, প্রত্যেক তাক্ববীর (আল্লহু আকবার) একটি সদাক্বাহ, প্রত্যেক আলহামদুলিল্লাহ বলা একটি সদাক্বাহ, প্রত্যেক লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলা একটি সদাক্বাহ, প্রত্যেক ভাল কাজের আদেশ ও উপদেশ দেয়া একটি সদাক্বাহ এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা ও বাধা দেয়া একটি সদাক্বাহ। এমনকি তোমাদের শরীরের অংশে অংশে সদাক্বাহ রয়েছে। অর্থাৎ আপন স্ত্রীর সাথে সহবাস করাও একটি সদাক্বাহ (মুসলিম হাদিস ২২০০)।
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন রাসুল (সাঃ) বলেছেন-কারো আপন জীবিনকালে এক দিরহাম দান করা তার মৃত্যুকালে একশত দিরহাম দান করা অপেক্ষা অধিক উত্তম (আবু দাউদ, মেশকাত হাদিস ১৭৭৬)।
দানে বিপদ কাটেঃ আলী (রাঃ) বলেন রাসুল (সাঃ) বলেছেন দান আল্লাহ তা’আলার রাগ প্রশমিত করে এবং মন্দ মৃত্যু রোধ করে (তিরমিযি, মেশকাত হাদিস ১৮১৪/২১)।
আলী (রাঃ) বলেন রাসুল (সাঃ) বলেছেন-তোমরা দানের ব্যাপারে তাড়াতাড়ি করবে। কেননা বিপদাপদ তাকে অতিক্রম করতে পারে না (অর্থাৎ দানে দূরীভুত হয়)-মেশকাত হাদিস ১৭৯৩
রাসুল (সাঃ) বলেছেন-ন্যায় নিষ্ঠার সাথে যাকাত দানকারী কর্মী আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী গাজীর ন্যায় (আবু দাউদ, তিরম্যিী, মেশকাত হাদিস ১৬৯৩/১৪)।
এফএস