এইমাত্র
  • ২০ বিলিয়ন ডলার ছুঁই ছুঁই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ
  • ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার নতুন করে তদন্ত হওয়া উচিত: হাইকোর্ট
  • রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ: যা বললেন জাপানের রাষ্ট্রদূত
  • নির্বাচন সংস্কার কমিশন প্রধানের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের
  • ড. ইউনূসকে পাকিস্তান সফরে শাহবাজ শরিফের আমন্ত্রণ
  • অনুমতি ছাড়াই ভারতীয় চিকিৎসকরা বাংলাদেশে চিকিৎসা করে যাচ্ছেন: ডা. রফিক
  • বাংলাদেশকে ৬৮৫ ভারতীয় বিশিষ্ট নাগরিকের খোলা চিঠি
  • কোণঠাসা জ্যোতিকা জ্যোতি, বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করলেন বাড়িওয়ালা
  • অবশেষে অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করেছে তিন ডাকাত
  • মুন্সীগঞ্জে হত্যা মামলার আসামি মামুন গ্রেফতার
  • আজ বৃহস্পতিবার, ৫ পৌষ, ১৪৩১ | ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

    মুক্তমত

    রবুবিয়ত, রাষ্ট্রীয় পালনবাদ ও মওলানা ভাসানী
    কোনো সামরিক অস্ত্র ছাড়া কেবল বুদ্ধি ও কৌশলের জোরে বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের তরফে একসময় আইরন লেডি তকমা পাওয়া বঙ্গবন্ধু কন্যার রাজনৈতিক দলকে ধূলায় মিশিয়ে দিয়েছে মাহফুজ-নাহিদ-সারজিসরা। এদের অহংকার দেখানোটা তাই সাজে বৈকি। আবার কোনো পক্ষের দ্বারা ওরা পরাজিত হলে তখনকার রাজনৈতিক বন্দোবস্তও ওরাই বুঝে নেবে। ১৫ বছর ধরে যেনতেনভাবে ক্ষমতা চর্চা করা বা জনসমর্থনের তোয়াক্কা না করে আঁকড়ে ধরে রাখা দলটি ওদের কাছে হেরেছে -এটা স্বীকার করে না নেয়া অনুদারতা ও একধরনের মানসিক দৈন্যতা। কঠিন দাম্ভিকতার বীজ পুতে রেখে গিয়েছে জনরোষে পলায়নকারী ওই দলটিই। তিপ্পান্ন বছরের ইতিহাসে তো এমনটা ঘটেনি যে, রুলিং পার্টি ক্ষমতাকে গাট্টি বোঁচকায় গোল করে বেধে নিয়ে চলে গেছে সীমানার বাইরে। এমনকি এমনতর ঘটনা এই বাংলায় ঘটেছিল মাত্র আরেকটি সেই ৮৫০ বছর আগে। ইখতিয়ার উদ্দিন খিলজির মাত্র ১৭ সৈন্যের ভয়ে বাংলা ছেড়ে পালিয়েছিলেন রাজা লক্ষণ সেন।কাজেই ওই Fleeing Partyকে নিয়ে খানিকটা মজা-তামাশা করবে যুদ্ধে জেতা দল -এটা আর অস্বাভাবিক কী? এতো পূর্বতনেরই শিখিয়ে যাওয়া আবর্তনিক তরিকাই। ওই আইরন লেডি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতা‌ ঘোষণা দেয়া মেজর জিয়ার অবদানকে খাটো করেননি? তাঁকে স্বাধীনতাবিরোধী বলেননি? খালেদা জিয়াকে বিনা দোষে জেলে ভরে রাখেননি? বিচার শেষ করার পরও ড. শফিকুর রহমানদেরকে নিয়ে বিষোদগারে মেতে থাকেননি? দলের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম মওলানা ভাসানীর প্রকৃত মর্যাদা খাটো করে রাখেননি? তাহলে অমন এক পলিটিক্যাল কালচার রেখে যাওয়া দেশে মাহফুজ আলমরা বঙ্গভবনের অনার ওয়াল থেকে শেখ মুজিবের ছবি নামিয়ে ফেললে ওদের নিন্দা করবেন কোন মুখে? দায় তো আগে নিজেদেরকে নিতে হবে। কেন স্বাধীনতার স্থপতিকে সর্বমানুষ সমান সম্মান করবে না!বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমকে গণ-অভ্যুত্থানের পেছনের কারিগর বলে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। হালের উপদেষ্টা সেই মাহফুজের সাম্প্রতিক একটি ভিডিও বয়ান নিয়ে আবার আলোচনা হচ্ছে। সেখানে তিনি সতীর্থদের সামনে 'পালনবাদ' বিষয়ে ভাষণ দিচ্ছেন। অনেকেই যেন আকাশ থেকে পড়ছে! পালনবাদ এটা আবার কী? এতো বাংলা অভিধানে নেই! এক্সট্রিমিজম-টিজম কিছু নাকি?শব্দ আসে মানুষের মুখের বয়ান থেকে। মুখনিঃসৃত সেই শব্দবন্ধই কালক্রমে ডিকশনারিতে অঙ্গীভূত হয়। তো পালনবাদ লেক্সিকনে না থাকলেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটি ছিল, এখনও নিশ্চয়ই থাকবে। State Patronage বা রাষ্ট্রীয় পালনবাদ মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর পলিটিক্যাল ন্যারেটিভ থেকে এসেছে। যেহেতু পরাজিত আইরন লেডিকে রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে বাতিল বলে গণ্য করে রাখতে হবে, ওই সূত্রে তার পিতাকেও এখন পাশ কাটাতে চায় নতুন রেজিম। স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়ার বিষয়টিও মনে রাখা হবে না যতক্ষণ না লাস্ট রেজিম তাদের শাসনকাল ও শেখ মুজিবের শাসনকালের ভুলভ্রান্তি নিয়ে জাতির কাছে অ্যাপোলজি প্রকাশ করছে। চর্বিত চর্বন আর কি! নাথিং নিউ।ভাসানী ও বঙ্গবন্ধুর যেমন বিশ্বস্বীকৃত নিজস্ব রাজনৈতিক দর্শন আছে, অমনধারার পলিটিক্যাল ফিলোসফি মাহফুজ-নাহিদদের নেই। ওঁরা কেউ এসেছে শিবির থেকে, কারো অ্যাফিলিয়েশন হিজবুত তাহরীরের সাথে, কেউবা ছাত্র ইউনিয়ন, কেউ দল নিরপেক্ষ, আবার কেউ কেউ সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগের রাজনীতি করে এসেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজনৈতিক দর্শনটা তাহলে কী হবে? বঙ্গবন্ধুকে সরিয়ে দেয়ার পর মাঠ তো শূন্য রাখা যাবে না। মুজিবইজম এখন টোটালি অপাঙ্ক্তেয়। রইল বাকি মুজিব গুরু মওলানা ভাসানী। যিনি একাধারে অসাম্প্রদায়িক, সমাজতান্ত্রিক, উদারমনা এবং ধর্মীয়ভাবেও আধ্যাত্মিক নেতা। এমনতর সর্বজনীন লিডার ভাসানী তাই এইসময় পুরোদস্তুর প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা ভাসানীর জীবনপাঠ নিয়ে একাডেমিক আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। ফরহাদ মজহারের মতো পলিটিক্যাল থিওরিস্ট ও থিওলজিয়ানরা ভাসানীর আলাপে মঞ্চ কাঁপাচ্ছেন।মওলানা ভাসানী যেখানে অতি প্রাসঙ্গিক, তাঁর পালনবাদ নিয়ে সেখানে সরব আলোচনা হতেই হবে।সৈয়দ ওয়াকিল হাসানের লেখা 'বাংলাদেশের বাম রাজনীতি ও মওলানা ভাসানী' গ্রন্থের মতে, মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দর্শন ছিল রবুবিয়ত। ওই দর্শনে ভাসানী এবং আল্লামা আবুল হাসিমের গুরু ছিলেন আল্লামা আজাদ সুবহানী। ‘রবুবিয়ত’ শব্দের বাংলা অর্থ বলা যায় ‘রাষ্ট্রীয় পালনবাদ’। আল্লাহ সমগ্র বিশ্ব এবং সকল জীবনের প্রতিপালক। তিনি সকল জীবের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ সৃষ্টি করেছেন এবং তা ব্যবহার করারও বিধান দিয়েছেন, যার একটি বিশেষ অর্থনৈতিক দিক হল রবুবিয়ত। রবুবিয়ত সমাজে কায়েম করবে এমন রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা যে ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের কর্ণধার সকলের প্রতিপালনের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। রাষ্ট্র সকল মানুষের জীবিকা ও প্রতিপালনের দায়িত্ব গ্রহণ করলে- এই ক্ষেত্রে ইসলাম ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য তেমন থাকে না। এই বিশ্বাস নিয়েই মওলানা ভাসানী রবুবিয়ত কায়েমের জন্য সমাজতন্ত্রকে পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন বলে মনে হয়।'পালনবাদ কী এবং কেন এর প্রাসঙ্গিকতা ফুরোয়নি, এই আলোচনা থেকে পরিষ্কারভাবে প্রতিভাত হলো। মুশকিল হলো বঙ্গবন্ধুকে সর্বজনীন করতে পারেনি তাঁর দল এবং দীর্ঘদিন ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকা নিজ কন্যা। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা পাওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা ভাসানীর রাজনৈতিক দর্শনকে সর্বজননন্দিত হিসেবে উপস্থাপন করতে পারবে? আমরা মনে করি পারবে না। অন্তর্বর্তী সরকার তাদের প্রধানতম লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে একটি সর্বজনগ্রাহ্য নির্বাচন। ওই নির্বাচনে যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে তারা জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী দর্শনের বাইরে যাবে না। যদি জামায়াতের কাছে ক্ষমতা যায়, তাদের আছে আবুল আ'লা মওদূদী। অন্যান্য দলের কোয়ালিশন হলে তারাও ভাসানীকে শ্রদ্ধা করলেও তাঁর রাজনৈতিক দর্শনকে পাত্তা দেবে না। তবে জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বাধীন গণসংহতি আন্দোলন ভাসানীকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্মরণে রাখছে এবং তারা স্লোগান তুলছে, 'ভাসানীর পথ ধরে জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হোন।'এই বাস্তবতায় এমন ঘটনা কি ঘটা সম্ভব স্বীকৃত সব রাজনৈতিক দলকে পেছনে ফেলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের কাছেই বাংলার মসনদের জিম্মাদারি রয়ে যাবে? তারাই মওলানা ভাসানীর আদর্শকে পুনরুজ্জীবিত করবে? জোনায়েদ সাকিরা সেখানে নিরঙ্কুশ সমর্থন দিয়ে যাবে?বলা হয় ৭৫ -এ পরিবারসহ অ্যাসাসিনেটেড হওয়ার পর মওলানা ভাসানী রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পক্ষে ছিলেন। এ কারণে ক্ষমতা হারানো দলটির কাছে যথোচিত সম্মান ও মর্যাদা ভাসানী পাননি। অবশ্য তাদের দিক থেকে একমাত্র বঙ্গবন্ধুকেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানুষ বানিয়ে বাকি বীরদেরকে সাইডলাইনে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। কিন্তু আমরা ভাসানীকে মনে রাখব তাঁর কর্মধারায়।১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা ভাসানী পাকিস্তানের পশ্চিমা শাসকদের 'আসসালামু আলাইকুম' বলে সর্বপ্রথম পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতার ঐতিহাসিক ঘণ্টা বাজিয়েছিলেন।বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করলে তাঁর গুরু ভাসানীকে সম্মান জানিয়েই তা করতে হবে। ক্ষমতাহারা পার্টির এ কালের নেতাদের বয়ানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিবেচ্য হবে না। কেন?বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ রেসকোর্সে ঐতিহাসিক ভাষণের পরই স্বাধীনতার দাবিতে তীব্র হাওয়া লাগে দেশজুড়ে। এর প্রমাণ অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে ৯ মার্চ পল্টনে জনসমুদ্রে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর দেওয়া ভাষণ।৯ মার্চ পল্টনে ভাষণ দিতে সরাসরি টাঙ্গাইলের সন্তোষ থেকে ঢাকা আসেন মওলানা ভাসানী। বঙ্গবন্ধুই তাকে ফোন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ফোনে আলোচনার পরে দুই দলের কেন্দ্রীয় নেতারা প্রায় আড়াই ঘণ্টা বৈঠক করেন। বিকেলে পল্টন ময়দানের ভাষণে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী স্পষ্টতই জানিয়ে দেন ‘স্বাধীনতাই একমাত্র গন্তব্য পূর্ব পাকিস্তানের।’আমরা গর্বভরে ৭ মার্চের কথা বলি। পাঠ্যপুস্তকেও পড়ে এসেছি। কিন্তু ভুলেও ৯ মার্চের ইতিহাস মুখেও উচ্চারণ করি না।ড. মোঃ ফোরকান মিয়ার লেখা 'মওলানা ভাসানীঃ রাজনীতি, দর্শন ও ধর্ম' গ্রন্থ মতে, 'ভাসানীর মতো অসাম্প্রদায়িক লিডার বিশ্বের ইতিহাসে খুব হাতেগোনা। তিনি ছিলেন একই সাথে রাজনৈতিক নেতা ও আশ্চর্য ব্যতিক্রম আধ্যাত্মিক নেতা। তাঁর কাছে ব্যক্তিগত ধর্ম বিশ্বাস ছিল গৌণ, মনুষ্যত্বই ছিল মুখ্য। সে জন্যে হিন্দু-মুসলিম, আস্তিক-নাস্তিক নির্বিশেষে সকলেই তাঁর কাছে আশ্রয় পেত। তিনি নিজে ইসলামের প্রতিটি বিধিনিষেধ অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পালন করতেন, অথচ এসব পালন করার জন্য তিনি তাঁর অনুসারীদের কখনো জবরদস্তি করতেন না। তবে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাই তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালন করুক এটা তিনি চাইতেন। প্রত্যেককে তিনি নিজ নিজ পালন করার উপদেশ দিতেন। ধর্মীয় ব্যাপারে ভাসানী এতটাই উদার ছিলেন যে, অন্য ধর্মের লোকেরা কেউই তাঁর কাছে এসে তাঁর ধর্মকে ঘৃণা করতে পারে নি।'মওলানা ভাসানী রাজনীতির সহাবস্থানে রেখে সংস্কৃতি চর্চাকে আন্তর্জাতিকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার সঙ্গেও সম্পৃক্ত রাখতে চেয়েছেন। কাজটা করতে গিয়ে তিনি ধর্মব্যবসায়ীদের তো বটেই, মার্কিনপন্থি সোহরাওয়ার্দীর অনুসারী ইত্তেফাক পত্রিকা দ্বারাও ভীষণ ভাবে আক্রান্ত হয়েছিলেন।উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের মুখে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা বা পালনবাদের ন্যারেটিভ শুনে চমকে যাওয়ার আগে আমাদের সবারই ভাসানী পাঠ জরুরি।১৯৭৬ সালের ১৩ নভেম্বর খোদায়ী খিতমতগার সম্মেলনে সর্বশেষ ভাষণে মওলানা ভাসানী বলেন, 'জাতি-ধর্ম-দল-মত নির্বিশেষে সাধারণ নাগরিক, রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের প্রতি আমার আবেদন- আপনারা খোদার ওয়াস্তে খোদার বান্দা তথা সমগ্র সৃষ্টির সেবায় আত্মনিয়োগ করুন। রব্বানি জীবনবিধান কায়েমের সংগ্রামে আগাইয়া আসুন। রবুবিয়াতের পথই অর্থাৎ সর্বজনীন মানবাধিকার ও সামগ্রিক কল্যাণের পথই সাফল্য ও শান্তির পথ। আল্লাহর শত্রু অর্থাৎ শোষক, জালিম, মুনাফাখোর, চোরাকারবারি, দুর্নীতিবাজ ও দুষ্কৃতিকারীদের দুশমন জানুন। আল্লাহর দোস্ত অর্থাৎ যাহারা সৎভাবে জীবনযাপন করে, হালাল রোজগার করে, হক কথা বলে, শোষিত-বঞ্চিতের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য সংগ্রাম করে, আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মানিয়া চলে, তাহাদিগকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করুন। আল্লাহর দোস্ত আমাদের দোস্ত, আল্লাহর দুশমন আমাদের দুশমন। তাহা হইলে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় নিকটবর্তী জানিবেন।'ক্ষমতার প্রতি নির্মোহ ভাসানী ধার্মিক ছিলেন, গোঁড়া ছিলেন না। তিনি ধর্মকে বাণিজ্যিক স্বার্থে ব্যবহার করতে বলেননি। তাঁর আধ্যাত্মিকতা ছিল মজলুমকে জালিমের হাত থেকে বাঁচনো এবং সমাজে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার পয়গাম মাত্র। তাই তো তিনি চিরায়ত বিপ্লবীদের জন্য সবকালের জন্য প্রাসঙ্গিক নির্দেশনাটি দিতে পেরেছিলেন। ভাসানী বলতেন, 'ধার্মিকের বেশে দুনিয়াতে যেমন বহু রকমের ভন্ডের আবির্ভাব ঘটিয়াছে তেমনি অহিংসাপরায়ণ সাজিয়া মোনাফেক শোষক গড়িয়া উঠিয়াছে। এই সকল পরিস্থিতির মোকাবিলা করিতে বিপ্লবী মহলকে সচেতন ও সক্রিয় থাকতে হয়।'কাজেই মওলানা ভাসানীর রবুবিয়ত তথা রাষ্ট্রীয় পালনবাদ বিষয়ে বিরূপ চিন্তাকে প্রাধান্য দেয়ার কিছু নাই। ধর্মীয় গণ্ডির মধ্যে আটকে রেখে তাঁর জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে বিচার করবার উপায় নেই। বাংলাদেশের ইতিহাস আলোচনায় বঙ্গবন্ধুর সাথে ভাসানী নিশ্চিতই অনিবার্য উচ্চারিত নাম। ভাসানীর রাজনৈতিক দর্শনের অনুবর্তী থেকে কেউ যদি রাষ্ট্র ও জনপরিসরে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার প্রয়াস পায় আমরা তাদেরকে সমর্থন দেব। কিন্তু আমাদের দৃঢ় আস্থা ও পবিত্র বিশ্বাসকে অটুট রাখতে পারবে অমন অহিংস মানুষ কারা?আমাদের মিলিত সংগ্রাম: মওলানা ভাসানীর নাম কবিতায় আবদুল গাফফার চৌধুরী লিখেছেন,পাঁচ কোটি মানুষের প্রাণের কালাম-কন্ঠে শুনি তার। হতবাক সবিস্ময়ে দেখিজীবনে জীবনে এ কীমিলিত প্রাণের গতি; কলকন্ঠে আকাশ মুখরবজ্রে আর ঝড়ে শুনি স্বচ্ছ স্বরমুখের ভাষায় শুনি নাম।মৌলানা ভাসানীর নাম।লেখক: সাংবাদিক ফারদিন ফেরদৌস
    শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্রের আবশ্যকতা
    গত ৫ আগস্ট ছাত্র-আন্দোলন ও গণবিক্ষোভের মুখে দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। তবে তাঁর দেশত্যাগের পর যে বিষয়টি আলোচনায় ছিলো, তা হলো- শেখ হাসিনা কি প্রধানমন্ত্রীর পদে থেকে পদত্যাগ করেছেন নাকি করেন নি?আড়াই মাস পর এই বিতর্ক নতুন করে আলোচনায় আসে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে। সম্প্রতি দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম “মানবজমিন” এর প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি শুনেছি তিনি (শেখ হাসিনা) পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়তো সময় পাননি।যদিও গতকাল (২১ অক্টোবর) রাতে রাষ্ট্রপতির প্রেস উইং থেকে এই বিষয়ে রাষ্ট্রপতির বক্তব্য সুস্পষ্ট করা হয়। প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ইস্যুতে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে প্রচারণা চালানো হয়েছে তা জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। এ বিষয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও দেশত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাংবিধানিক বৈধতার ওপর যত ধরনের প্রশ্ন জনমনে উদ্রেক হয়েছে সেগুলোর যাবতীয় উত্তর স্পেশাল রেফারেন্স নং-০১/২০২৪ এ মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গত ৮ আগস্ট, ২০২৪ এর আদেশে প্রতিফলিত হয়েছে। কিন্তু জনমনে এখনও একই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, তা হলো- শেখ হাসিনা কি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন? এ প্রশ্নের উত্তরের সাথে আরও কিছু প্রশ্ন সম্পর্কিত। যেমন- (১) রাষ্ট্রপতি সংসদ বিলুপ্ত করতে পারে কি না? (২) সংসদ বিলুপ্ত হলে প্রধানমন্ত্রীর পদ থাকে কি না? এবং (৩) পাঁচ আগস্ট সৃষ্ট পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের আব্যশ্যকতা কতটুকু?প্রথমে শেখ হাসিনা কি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন কি না এ প্রশ্নের উত্তর সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতির ভাষণে পাওয়া যায়। ৫ আগস্ট বিকালে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তাঁর ভাষণে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন।’ একইদিন রাতে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন তাঁর ভাষণে বলেন,  ‘আপনারা জানেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি।’দ্বিতীয় প্রশ্ন রাষ্ট্রপতি সংসদ বিলুপ্ত করতে পারে কি না? এই প্রশ্নের উত্তর সংবিধানে পাওয়া যায়। সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রয়োজন মনে করলে সংসদ ভেঙে দিতে পারেন।তৃতীয় প্রশ্ন সংসদ বিলুপ্ত হলে প্রধানমন্ত্রীর পদ থাকে কি না? বিদ্যমান সংবিধানের ৫৭ (১) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর পদ শূন্য হইবে, যদি- (ক) তিনি কোন সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট পদত্যাগপত্র প্রদান করেন; অথবা (খ) তিনি সংসদ-সদস্য না থাকেন।’ যেহেতু ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি দ্বাদশ সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন, সেহেতু শেখ হাসিনা সংসদ সদস্য পদ হারিয়েছেন, তাই প্রধানমন্ত্রীর পদও শূন্য হয়েছে। আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ কাজী জাহেদ ইকবাল বিবিসি বাংলাকে বলেন, “যদি তর্কের খাতিরেও ধরে নেই শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি, তবে এই বিষয়টি তো স্টেট নেসেসিটি থিউরিতে চলে গেছে”।জাহেদ ইকবাল আরও বলেন, “উনি তো কারো কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের অপেক্ষা করেন নি। তিনি তো দেশ ছেড়ে গেছেন। এরপর রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিয়েছে। সংসদ ভাঙার পর ওনার তো প্রধানমন্ত্রীত্ব করার আর কোন সুযোগ থাকে না”।সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, “রাষ্ট্রপতি যখন সংসদ ভেঙেছেন, তখন প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ নিশ্চিত হয়ে গেছে। পদত্যাগপত্র জমা দেয়া না-দেয়া কিছুই নয়।”চতুর্থ প্রশ্ন পাঁচ আগস্ট সৃষ্ট পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের আব্যশ্যকতা কতটুকু? এ প্রশ্নের ক্ষেত্রে প্রথমে যে বিষয়টি সামনে আসে তা হলো- ৫ আগস্ট ২০২৪ইং তারিখে শেখ হাসিনার পদত্যাগের মতো পরিস্থিতি ছিলো কি না।শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন,  “বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে মিছিল নিয়ে যেতে শুরু করে। সময় ছিল না। তিনি ব্যাগ গোছানোর সময়টুকুও পাননি।” অর্থাৎ সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্য থেকে বোঝা যায় ৫ আগস্ট দেশে কোনো স্বাভাবিক পরিস্থিতি ছিলো না। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, গণঅভ্যুত্থান বা যুদ্ধ মুহূর্তে পদত্যাগের অর্থ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলে ঘোষণা দিয়ে  কিংবা আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করা না। সংবিধানেও সেটা বলা নেই। ৫ই অগাস্ট যে বিশেষ পরিস্থিতি প্রধানমন্ত্রী পদ শূন্য হয়েছে ও পরবর্তীতে যে সরকার গঠন হয়েছে সেটি কোন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়নি।সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলেন, গণঅভ্যুত্থানের বিশেষ পরিস্থিতিতে এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না বিবিসি বাংলাকে বলেন, “নতুন একটা সরকার গঠনের এক মাস পরে এসে এই প্রশ্ন গুরুত্ব বহন করে না শেখ হাসিনা পদত্যাগ সঠিকভাবে হয়েছে কী না। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র দিছে কী দেন নাই, এটা বলার একমাত্র এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। তিনি যেহেতু ওই দিনই বলেছেন শেখ হাসিনা তার কাছে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন, সুতরাং এখন অস্বীকার করলেও পদত্যাগ কার্যকর হতে কোন বাঁধা নেই”।তবে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, ভবিষ্যতে যারা নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করবে, এইসব প্রশ্নের জবাব এড়াতে তারা গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারকে বৈধতা দিতে হবে আগে। তাহলে এ নিয়ে কোন প্রশ্নের সুযোগ থাকবে না ভবিষ্যতে।উপরোক্ত বিষয়গুলো থেকে প্রতিয়মান হচ্ছে যে, ৫ আগস্ট সৃষ্ট পরিস্থিতি এবং ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সংসদ ভেঙে দেওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা লিখিতভাবে কিংবা আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগের আবশ্যকতা নেই।লেখক: মো. রহমত উল্যাহ, গণমাধ্যমকর্মী
    ব্যাংক খাতের সংস্কার ও খেলাপি ঋণ থেকে মুক্তি কীভাবে?
    ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। ওই দিনই তিনি দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। ৩৬ দিনের এ আন্দোলনে অনেক ছাত্র-জনতা ও পুলিশ মারা যাওয়ার পাশাপাশি দেশে আইনশৃঙ্খলায় ব্যাপক অবনতি ঘটে। যদিও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। দেশের এই সংকটময় সময়ে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আইন শৃংখলা স্বাভাবিক ও ভেঙে পড়া আর্থিক খাত সংস্কার করা। এছাড়া নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে চলমান বিভিন্ন কাজ/প্রজেক্ট শেষ করার অনিশ্চয়তা। বিদেশে অর্থ পাচার হওয়ার পাশাপাশি দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নাজুক অবস্থা। তারমধ্যে খেলাপি ঋণ তো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় সমস্যা। কেননা নতুন রাষ্ট্র গঠনে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া অত্যন্ত জরুরি। খেলাপি ঋণ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই কমবেশি হয়। তবে বাংলাদেশের মতো সমসাময়িক অর্থনীতির দেশে লাখ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হওয়ার নজির নেই বললেই চলে। রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার খেলাপি ঋণ স্ফীতি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। দীর্ঘদিনের গড়ে ওঠা এ সমস্যা সঠিকভাবে তদারকির অভাবে ধীরে ধীরে এখন বিশাল আকার ধারণ করেছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ আদায়ে বাংলাদেশে প্রচলিত আইন অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩, এন অ্যাক্ট-১৩৮ বেশি ব্যবহার করা হয়।আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ঋণ আদায়ের জন্য প্রচলিত আইনের অধিকতর সংশোধন ও সংহতকরণকল্পে প্রণীত আইনানুযায়ী ২০০৩ সালে অর্থঋণ আদালতের যাত্রা। এ আইনের কার্যকারিতাকে দেশের অন্য সব আইনের ওপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে দেশের আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়েই স্থাপিত করা হয়েছিল অর্থঋণ আদালত। সময়ের বিবর্তনে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ না কমে উল্টো বহুগুণ বেড়েছে। তাই অর্থঋণ আদালতের পাশাপাশি নতুন করে আলাদা Negotiable Instrument Act-1881 আদালত প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। বর্তমানে আদালতের বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা ও বিচারক সল্পতার কারণে মানুষ এখন আদালত বিমুখ আচরণ করেন। যার ফলে আর্থিক খাত ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয় ঋণ খেলাপিরা। এর থেকে মুক্তি পেতে যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ।০১। অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর ৩৪(১) ধারা অনুযায়ী আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ডিক্রীর টাকা পরিশোধে বাধ্য করার জন্য আদালত দায়িককে ৬ মাস পর্যন্ত দেওয়ানী কারাগারে আটক রাখতে পারবে। ৩৪(১২) ধারা অনুযায়ী, কোন একজন দায়িককে একবার গ্রেফতার করে পরিপূর্ণ মেয়াদের জন্য দেওয়ানী কারাগারে আটক রাখা হলে, তাকে পুনরায় গ্রেফতার ও দেওয়ানী কারাগারে আটক করা যাবে না। এক্ষেত্রে আটকাদেশের মেয়াদ শুধু ৬ (ছয়) মাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বরং খেলাপি ঋণের টাকার পরিমাণ অনুযায়ী তা ৬ মাস হতে ৬ বছর পর্যন্ত বর্ধিত করা যেতে পারে।০২। অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর ধারা ৪৬ অনুযায়ী কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পাদিত চুক্তি বা চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ঋণ গ্রহীতা হতে ঋণ পরিশোধ সূচী অনুযায়ী ঋণ পরিশোধ শুরু হবার পরবর্তী- (ক) প্রথম এক বছরে প্রাপ্য অর্থের অন্যুন ১০%, বা (খ) প্রথম দুই বছরে প্রাপ্য অর্থের অন্যুন ১৫%, বা (গ) প্রথম তিন বছরে প্রাপ্য অর্থের অন্যুন ২৫% পরিমাণ অর্থ আদায় না হলে, পরবর্তী এক বছরের মধ্যে মামলা দায়ের করার বিধান রয়েছে। আর উল্লিখিত ঋণ পরিশোধ সূচী অনুযায়ী ঋণ পরিশোধের নির্ধারিত সাকুল্য মেয়াদ ৩ (তিন) বছর অপেক্ষা কম হলে উক্ত নির্ধারিত সাকুল্য মেয়াদের মধ্যে আদায়ের পরিমাণ ২০% অপেক্ষা কম হলে তার পরবর্তী ১ (এক) বছরের মধ্যে মামলা দায়ের করার বিধান রয়েছে। ০৩। মামলা চলাকালীন অর্থঋণ আদালতের কোন আদেশ বা ডিক্রীকে চ্যালেঞ্জ করে ঋণগ্রহীতা মহামান্য হাইকোর্টে কোন রিট মামলা দায়ের করলে সেক্ষেত্রে দেখা যায় উক্ত রিট মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিম্ন আদালতে দায়েরকৃত অর্থঋণ বা অর্থজারী মামলা উপর স্থগিতাদেশ আসে। এতে বছরের পর বছর মামলা স্থগিত হয়ে থাকে। এতে একদিকে যেমন আদালতের ঘাড়ে মামলা জট বাড়ে তেমন অন্যদিকে বাদী আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ আদায় অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে রিট মামলা দায়েরের সময় ঋণগ্রহীতা যাতে বাদী আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হালনাগাদ পাওনা টাকার ২০% বা ২৫% টাকা জমা দিয়েই রিট করে তেমন বিধান করা যেতে পারে।০৪। অর্থঋণ আদালত আইনের অধীনে মামলা দায়ের ও পরিচালনার ক্ষেত্রে বাদী আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী সরল বিশ্বাসে কোন কর্ম করে থাকলে, সেক্ষেত্রে দায়মুক্তির ক্ষমতা আদালতের বিবেচনার উপর ছেড়ে দেওয়া উচিত যাতে মামলা পরিচালনায় তারা অহেতুক হয়রানির শিকার না হন।০৫। ডিক্রীর টাকা পরিশোধে বাধ্য করার প্রয়াস হিসাবে দায়িককে দেওয়ানী কারাগারে আটক রাখা ছাড়াও আরও কীভাবে বাধ্য করা যায় সেই বিষয়ে অর্থঋণ আদালত আইনে কিছু বিধান যুক্ত করা যেতে পারে। যেমন: পাসপোর্ট জব্দের ক্ষমতা, নতুন ব্যবসা করতে না পারা, কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে না পারা, যে কোনো লাইসেন্স নিতে না পারার বিধানও এই আইনে সরাসরি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।০৬। আইনে ঋণগ্রহীতার উত্তরাধিকারদেরও ঋণ গ্রহীতার মতই সমান দায়ি করে মামলা চালাবার বিধান রাখতে হবে যদি তারা মৃত ঋণগ্রহীতার সম্পত্তি ভোগ করে থাকে। তাই তাদেরও দেওয়ানী আটকাদেশের আওতায় আনতে হবে। এর অন্যথা হলে উত্তরাধিকারীরা ঋণ পরিশোধে আগ্রহী হবে না।০৭। বিদ্যমান আইনে অর্থঋণ মামলার জারী পর্যায়ে নিলামের ব্যবস্থা রয়েছে মাত্র। মূল মামলায়ও যাতে উপযুক্ত ক্রেতা পেলে নিলামের মাধ্যমে জামানত বিক্রি করে ঋণের টাকা সমন্বয় করা যায় সেই বিধান করতে হবে। অর্থাৎ মূল মামলা দায়েরের দিন থেকে রায়ের আগ পর্যন্ত নিলাম এর বিধান রাখা হয়।০৮। অর্থঋণ মূল মামলায় সাক্ষীর পর্যায় সংক্ষিপ্ত রাখার বিধান করা ও দ্রুত শেষ করা। যেমন: বিবাদী যাতে অহেতুক জেরার নামে সময় ক্ষেপন করতে না পারে।০৯। খেলাপি ঋণের দাবি ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত হলে সেক্ষেত্রে এর বিপরীতে দায়েরকৃত আপিল/রিভিশন মামলা জেলা জজ আদালতে নিষ্পত্তির বিধান করা।১০। দায়েরকৃত অর্থঋণ মামলায় যদি কোন জামানত না থাকে সেক্ষেত্রে ঋণ খেলাপির মালিকানাধীন সম্পত্তির ক্রোকের জন্য খুঁজে বের করার দায়িত্ব পুলিশের বিশেষ বা প্রশাসনের অন্য কোন সংস্থাকে দায়িত্ব অর্পনের বিধান করা। যেহেতু প্রশাসনের যথেষ্ট ক্ষমতা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা আছে এসব খুঁজে বের করার।১১। মামলায় ঋণ খেলাপি, জামিনদার, বন্ধকদাতার পাশাপাশি সিএনএফ এজেন্ট, কাস্টম কর্তৃপক্ষ ও প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পক্ষকে পক্ষভুক্ত করার বিধান রাখা যাদের অপরাধমূলক সহযোগিতায় কোন ঋণ খেলাপির উৎপত্তি হয়েছে।১২। অর্থঋণ সংক্রান্ত দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির জন্য অর্থঋণ আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বর্তমানে দেশে এ আদালতের সংখ্যা খুবই কম। কিন্তু সেই তুলনায় মামলার সংখ্যা অনেক বেশি। আদালতের তুলনায় মামলা বেশি বলে মামলাগুলোর মেরিট বিবেচনায় নিষ্পত্তি হতে সময় বেশি লেগে যাচ্ছে। ১৩। অর্থঋণ মামলার বিভিন্ন পর্যায়ে মধ্যস্থতা কার্যক্রম মামলাকে বিলম্বিত করে। এটা বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে দেখা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় অর্থঋণ মামলায় মধ্যস্থতা কার্যক্রম সফল হয় না। সেক্ষেত্রে এই আইনের অধীনে দায়েরকৃত মামলায় মধ্যস্থতা কার্যক্রম বাতিল করা উচিত।১৪। খেলাপি ঋণের দায় আদায়ে কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শুধু নিম্ন পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের উপর দায় না চাপিয়ে আইনের মাধ্যমে উক্ত দায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের উচ্চ বা ব্যবস্থাপনা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উপরও দায় দায়িত্ব সমভাবে অর্পণ করা সমীচীন। এতে দেশে খেলাপি ঋণের দায় আদায় জোরদার হবে।১৫। অনেক সময় বিবাদী পক্ষ অর্থাৎ ঋণ খেলাপিরা উচ্চ আদালতে সংশ্লিষ্ট মামলার বিষয়ে বা আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে কোন মামলা করেছে মর্মে লইয়ার সার্টিফিকেট নিয়ে এসে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর মামলা স্থগিত করে রাখে। যদিও পরে দেখা যায় এতে উচ্চ আদালত হতে কোন স্থগিত আদেশ প্রদান করা হয়নি। আবার অনেক সময় দেখা যায়, পরবর্তী ধার্য তারিখে বিবাদীপক্ষ স্থগিত আদেশের সার্টিফাইড কপি দাখিল করবে বলে আদালতে বার বার সময়ের আবেদন দেয়। এভাবে তারা সময় ক্ষেপণ করে প্রতিটা ধার্য তারিখে। এটা মূলত আদালতের সঙ্গে প্রতারণা করার শামিল। তাই আইন করে এসব বন্ধ করা উচিত। বিশেষ করে মূল অর্থঋণ মামলায় বিজ্ঞ আদালতের এই বিষয়টা বিবেচনায় আনা উচিত।১৬। আইনে মামলার আর্জিতে ঋণগ্রহীতার বন্ধককৃত সম্পত্তি বাদে অন্যান্য সম্পত্তিও যাতে আলাদা সিডিউল আকারে যুক্ত করা যায় তদরূপ বিধান করা। যাতে করে বন্ধককৃত সম্পত্তি হতে কোন কারণে ঋণের দায় আদায় না হলেও বা কোন বন্ধক ত্রুটিপূর্ণ হলেও উক্ত বর্ণিত অপরাপর সম্পত্তিসমূহ হতে ঋণের দায় আদায় করা যায়। এছাড়াও এতে আদালতের কাছে ঋণ গ্রহীতার ঋণ পরিশোধের আর্থিক সক্ষমতার চিত্র ফুটে উঠবে।১৭। আইনে মামলা পরিচালনাকালে ঋণ বিতরণে দৃশ্যমান অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে আদালত কর্তৃক তা দুদক, সিআইডি বা পিবিআইকে তদন্ত ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দানের বিষয় যুক্ত করার বিধান আনা। এর ফলে ঋণ বিতরণের সময় ব্যাংকাররা আরও সচেতন হবে।১৮। কারো বিরুদ্ধে ঋণের দায় আদায়ে মামলা হলে সেক্ষেত্রে অর্থঋণ আদালত ও সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানের যৌথ মতামতের ভিত্তিতে বিবাদীর বিদেশ যাত্রার অনুমতির বিধান আইনে সন্নিবেশ করা। অর্থাৎ অনুমতি ছাড়া মামলাধীন কোন ঋণ খেলাপি দেশ ত্যাগ করতে পারবেন না।১৯। মামলার শুরুতেই আদালতকে বন্ধকী সম্পত্তি সনাক্ত ও মূল্যায়নের নির্দেশ প্রদানের ক্ষমতা দেওয়া। এতে অচিহ্নিত বন্ধকী সম্পত্তি কিংবা মূল্য সম্পর্কে শুরুতে আদালত ধারণা পেলে তাতে মামলার গতিপথ এমনভাবে নির্ধারিত হবে যা মামলা জট নিরসনে ভুমিকা রাখবে।২০। বিবাদী জবাব দেওয়ার পরে আর হাজির না হলে উক্ত মামলায় একতরফা রায় না হয়ে দো তরফা রায় হবে মর্মে বিধান করা। এতে বিবাদী পরিবর্তিততে এক তরফা রায়ের অযুহাতে মিস মামলা করে মামলা দীর্ঘায়িত করতে পারবে না। যেহেতু মিস মামলা আদালতে মামলা জট বাড়ায়।২১। বিদেশে পলাতক ঋণ খেলাপিদের যাতে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে দেশে এনে বিচারের সম্মুখীন করা যায় তৎবিষয়ে আদালতের আদেশ দানের বিষয়েও ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান করা প্রয়োজন। এমন কোন বিধান অর্থঋণ আদালত আইনে সংযুক্ত করা যায়।২২। অর্থঋণ আইনে ফৌজদারি মামলার মত স্বশরীরে ঋণগ্রহীতা আদালতে হাজির থাকা এবং পাওয়ার অব অটর্নী দিয়ে অর্থঋণ মামলা পরিচালনা না করার বিধান যুক্ত করা। অর্থাৎ বিদেশে অবস্থান করে মামলা পরিচালনা নিষিদ্ধ করা। অর্থঋণ মামলা দায়ের হবার সঙ্গে সঙ্গে আদালত কর্তৃক ঋণ খেলাপির পাসপোর্ট জব্দ করার ও দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সরাসরি বিধান যুক্ত করা।২৩। বিবাদীর বন্ধকী সম্পত্তি ব্যতীত অপরাপর সম্পত্তির সন্ধান পেলে মূল অর্থঋণ মামলার যেকোন পর্যায়ে তা অর্থঋণ আদালত কর্তৃক সরাসরি ক্রোক করার বিধান আনায়ন করা।২৪। সর্বোপরি অর্থঋণ আদালতের কার্যক্রম যাতে দ্রুত শেষ হয় সে জন্য পর্যাপ্ত বিচারক ও কোর্ট প্রতিষ্ঠা করা উচিত। 
    ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, উপজাতি নাকি আদিবাসী?
    আদিবাসী সংজ্ঞা খোঁজার সাথে সাথে এই অঞ্চলে আদিবাসী যদি বলতেই হয়, আসলে কারা সেই আলাপ দিয়ে আজকের আলোচনা শুরু করা যাক।♣প্রথমেই সংবিধান অনুসারে পাহাড়ি আদিবাসী দাবী করা নাগরিকদের পরিচয় ক্লিয়ার করা দরকার।আদিবাসী নিয়ে বিতর্কে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে সমাধান দেয়া হয়েছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬ এর ২ ধারা মতে, জাতি হিসেবে বাঙালি ও নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশি বলে বিবেচিত হবে। এছাড়া বাঙালি ব্যতীত অন্যান্য যারা আছে তারা উপজাতি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলে পরিচিত হবে। বাংলাদেশে বসবাসরত কয়েকটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নিজেদের আদিবাসী স্বীকৃতির দাবি করলেও তা অস্বীকৃত।♣আভিধানিক ও নৃতাত্ত্বিক সংজ্ঞা অনুযায়ী আদিবাসী মানে আদিবাসিন্দা। আদিবাসী শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ Indigenous people। প্রখ্যাত নৃতত্ত্ববিদ লুই মর্গানের সংজ্ঞানুযায়ী আদিবাসী হচ্ছে, ‘কোনো স্থানে স্মরণাতীতকাল থেকে বসবাসকারী আদিমতম জনগোষ্ঠী যাদের উৎপত্তি, ছড়িয়ে পড়া এবং বসতি স্থাপন সম্পর্কে বিশেষ কোনো ইতিহাস জানা নেই। আদিবাসী শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ indigenous যার অর্থ the people regarded as the original inhabitants of an area(Oxford Advanced Learner’s Dictionary) .নৃতত্ত্ববিদ লুই মর্গান মনে করেন.“The aboriginals are the groups of human race who have been residing in a place from time immemorial. They are the sons of the soil”এখন প্রশ্ন পার্বত্যচট্টগ্রামে যাদের অধিবাস তারা কি ভুমিপুত্র হিসেবে দাবি করতে পারে? যদি না পারে তাহলে তারা আদিবাসী হয় কীভাবে? এই প্রশ্ন জানার স্বার্থে আপাততঃ ইন্ট্রোতে রেখে গেলাম।♣আদিবাসী বিষয়ে আভিধানিক সংজ্ঞার বাইরে জাতিসংঘের তরফ থেকে একটি সংজ্ঞা আমরা পেয়ে থাকি। এ বিষয়ে জাতিসংঘ ও এর অধিভূক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে এ পর্যন্ত প্রধানত: তিনটি চার্টারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এগুলো হলো: ১)১৯৫৭ সালের ৫ জুন অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের অধিভূক্ত প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ৪০তম অধিবেশনে প্রদত্ত- Indigenous and Tribal Populations Convention, 1957 (No. 107),২)আইএলও’র ১৯৮৯ সালের ৭ জুন অনুষ্ঠিত ৭৬তম অধিবেশনে প্রদত্ত-Indigenous and Tribal Peoples Convention, 1989 (No. 169) , এবং ৩)২০০৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ৬১তম অধিবেশনে The United Nations Declaration on the Rights of Indigenous Peoples.এখানে আইএলও’র প্রথম চার্টার দুটি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। চার্টার দুটির শিরোনাম হচ্ছে- Indigenous and Tribal Populations Convention . অর্থাৎ আদিবাসী ও উপজাতি জনগোষ্ঠী বিষয়ক কনভেনশন। অর্থাৎ এই কনভেনশনটি আদিবাসী ও উপজাতি বিষয়ক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। কনভেনশনে পাস হওয়া ধারাগুলো একই সাথে আদিবাসী ও উপজাতি নির্ধারণ ও তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে। শুধু আদিবাসীদের নয়। অথচ বাংলাদেশে এই চার্টারকে আদিবাসীদের জন্য এক্সক্লুসিভ করে উপস্থাপন করা হয়।এখানে উপজাতি ও আদিবাসীদের জন্য আলাদা সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে।- Indigenous and Tribal Peoples Convention, 1989 (No. 169)– এর আর্টিকল ১ এর (a)তে ট্রাইবাল বা উপজাতির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, ‘tribal peoples in independent countries whose social, cultural and economic conditions distinguish them from other sections of the national community, and whose status is regulated wholly or partially by their own customs or traditions or by special laws or regulations’’. অর্থাৎ একটি দেশের মূল জনগোষ্ঠী থেকে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে ভিন্নতর যারা তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও আইন দ্বারা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে পরিচলিত তাদেরকে উপজাতি বলা হয়। এখন আইএলও’র এই সংজ্ঞাটি যদি আমরা বাংলাদেশের চাকমা, মারমা, সাঁওতাল ও অন্যান্য সাবস্পেসিসসমূহের সাথে বিচার করি তাহলে পরিষ্কার বোঝা যায় এরা উপজাতি। কিন্তু বাংলাদেশের মতলববাজ বুদ্ধিজীবীরা আইএলও কনভেনশনের আর্টিকল ১-এ্র উপস্থাপিত ট্রাইবাল ডেফিনেশনটি সম্পূর্ণ চেপে গিয়ে শুধু ইনডিজিন্যাসের সংজ্ঞাটি উপস্থাপন করে।♣বলে রাখা ভালো যে, Indigenous and Tribal Populations Convention, 1957 (No. 107)- ১৯৫৭ সালে পাস হলেও এ পর্যন্ত বিশ্বের মাত্র ২৭টি দেশ এই কনভেশন র‌্যাটিফাই করেছে। ১৯৭২ সালের ২২ জুন বংলাদেশ এটি রেটিফাই করে। অন্য দিকে Indigenous and Tribal Peoples Convention, 1989 (No. 169)- – ১৯৮৯ পাস হলেও এখন পর্যন্ত বিশ্বের মাত্র ২২টি দেশ এই কনভেনশন র‌েটিফায় করেছে।উপমাহদেশের একমাত্র নেপাল ছাড়া আর কোনো দেশ এই কনভেনশন র‌েটিফায় করেনি।বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সমতলের বিভিন্ন জায়গায় যেসব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বসবাস করেন তারা আদিবাসী কিনা সে বিতর্ক বেশ পুরনো।সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যায় বাংলাদেশে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা এবং সাঁওতালসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার প্রায় ৩০ লাখ মানুষ বসবাস করে ,সেখানে বসবাসকারী ১৩ টি উপজাতির সবাই বহিরাগত ও অভিবাসিত।পার্বত্য চট্রগামে ছাড়াও বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলে আরো ১৬ টি উপজাতীয় জনগোষ্ঠী রয়েছে। তারা কখনোই শোষণ – বঞ্চনার কিংবা ধর্মীয় কারনে নিগৃহীত হবার অভিযোগ তোলেনি। আদিবাসীর দাবি শুধু পাহাড়েই কেন তাহলে?  উদ্দেশ্য একটাই স্বাযত্বশাসন। স্বায়ত্বশাসনের যে দাবী করছে তার অন্য নাম স্বাধীনতা।তারা তাদের জাতি সাংবিধানিক স্বীকৃতি চাচ্ছে।অথচ তারা কোন জাতি নয়।এদের প্রভু বিৃটিশ সরকার তাদেরকে “উপজাতি” বলে চিহ্নিত করে গেছে।এদের পুর্ব পুরুষরা কেউ এর বিরোদ্ধে কথা বলেনি।ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে বহিরাগত ক্ষুদ্র জাতিসত্তা সমুহের আনাগোনা শুরু হয় ষোল শতক থেকে। এ সময়ে আসামের মিজোরাম থেকে কুকি নামের উলঙ্গ জনগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশ করে। একই সময়ে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী খাগড়াছড়ি এলাকায় বন কেটে বসনত গড়ে এবং জুম চাষ শুরু করে।১৬৬০ এর দিকে অর্থাৎ সতের শতকের মাঝামাঝি চাকমাদের একটি দল আদিবাস আরাকান থেকে বিতাড়িত হয়ে রামু থানার অদুরে সাময়িক অবস্থান নেয়। তারা পরে আরও গহিন অরণ্য আলী কদমের দিকে এবং রাঙামাটির দিকে যায় স্থায়ীভাবে বাস করার জন্য। মগ বা মারমা জনগোষ্টীর অভিবাসন ঘটে ১৭৮৪ দিকে প্রায় একই সময়ে বোমাঙদের ও আগমন ঘটে।মোটামুটিভাবে বলা যায় পাব্র্ত্য চট্টগ্রামে যে ক্ষুদ্র জাতিসসত্বা সমুহের অধিবাস তাদের অভিবাস হয়েছিল ১৬ থেকে ১৮ শতকের মধ্যে। এর বাইরে পার্বত্য চট্টগ্রামে আছে আরও আটটি ক্ষুদ্র জাতি। তাদের কোনো কোনোটি চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাদেরও পূর্ব থেকে এই অঞ্চলে বসবাস করছে। সংখ্যায় নগণ্য হলেও তাদের পৃথক নৃতাত্ত্বিক সত্ত্বা দৃশ্যমান। চাকমারা কোথা থেকে এখানে এসেছে এবং এদের উৎপত্তিই-বা কোথায়, এ প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই মনে আসে। চাকমা জাতি যে এককালে ব্রক্ষ্মদেশে ছিল, সে সম্বন্ধে কর্নেল ফেইরী আলোকপাত করেছেন।ব্রক্ষ্মদেশে পুরাবৃত্ত ‘চুইজং ক্য থং’ এবং আরাকান কাহিনী ‘দেঙ্গাওয়াদি আরেদফুং’ নামক গ্রন্থদ্বয়েও অনুরূপ উল্লেখ রয়েছে।♣পরিচয়ের বিচারেই উপজাতিরা আদিবাসী হিসাবে টেকেনা।সেটা যেই ডেফিনশনে হউক।হউক নৃতাত্ত্বিক বা জাতিসংঘের ডেফিনেশনে। যদি নৃতাত্ত্বিক ভাবে ঐতিহাসিক মানদন্ডে বিচার করি তাহলে বাঙালিদেরকেই বরং বলতে হবে আদিবাসী। পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান লোকসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই বাঙালি এবং বাকি অর্ধেক বিভিন্ন মঙ্গোলীয় গোষ্ঠীভুক্ত উপজাতীয় শ্রেণীভুক্ত। একথা ঐতিহাসিক ভাবে সত্য আদিকাল থেকে এ অঞ্চলে উপজাতি জনগোষ্ঠীর বাইরের ভূমিপুত্র বাঙালিরা বসবাস করে আসছে। তবে জনবসতি কম হওয়ায় বিভিন্ন ঘটনার বা পরিস্থিতির কারণে আশপাশের দেশ থেকে বিভিন্ন ুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজন এসে বসতি স্থাপন করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের কুকি জাতি বহির্ভূত অন্য সকল উপজাতীয় গোষ্ঠীই এখানে তুলনামূলকভাবে নতুন বসতি স্থাপনকারী। এখানকার আদিম জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ম্রো, খ্যাং, পাংখো এবং কুকিরা মূল ‘কুকি’ উপজাতির ধারাভুক্ত। ধারণা করা হয়, এরা প্রায় ২শ’ থেকে ৫শ’ বছর আগে এখানে স্থানান্তরিত হয়ে আগমন করে। চাকমারা আজ থেকে মাত্র দেড়শ’ থেকে ৩শ’ বছর পূর্বে মোগল শাসনামলের শেষ থেকে ব্রিটিশ শাসনামলের প্রথম দিকে মায়ানমার আরকান অঞ্চল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশ করে (Lewin 1869)। প্রখ্যাত নৃতত্ত্ববিদ এবং ব্রিটিশ প্রশাসক টি. এইচ. লেউইন-এর মতে, “A greater portion of the hill tribes at present living in the Chittagong Hill Tracts undoubtedly come about two generations ago from Aracan. This is asserted both by their own traditions and by records in Chittagong Collectorate”. (Lewin, 1869, p. 28)। পার্বত্য অঞ্চলের মারমা বা মগ জনগোষ্ঠী ১৭৮৪ সনে এ অঞ্চলে দলে দলে অনুপ্রবেশ করে এবং আধিপত্য বিস্তার করে (Shelley, 1992 and Lewin, 1869)। এরা ধর্মে বৌদ্ধ মতাবলম্বী। এরা তিনটি ধারায় বিভক্ত। যেমন : জুমিয়া, রোয়াং ও রাজবংশী মারমা।  চাকমাদের কল্পিত গৌরব নিয়ে আজগুবি ইতিহাস রচনাকারী বিরাজ মোহন দেওয়ান “চাকমা জাতির ইতিবৃত্ত” শীর্ষক গ্র্ন্থে চাকমাদের আদি বাসস্থান তথা শিকড় সন্ধান করতে গিয়ে চাকমা ঐতিহাসিকগণ চম্পাপুরী বা চম্পক নগর রাজ্যের যে ফিরিস্থি দিচ্ছেন তার পিছনে কোন ঐতিহাসিক প্রমান নেই। বিরাজ মোহন কমপক্ষে ভারতের ৫ টি স্থানের নাম চম্পক নগর বলে উল্লেখ করেছেন।বস্তুত: চাকমারা একটি অজ্ঞাত স্থানের পাহাড়ী যাযাবর জাতি, যারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভুখন্ডে আশ্রয় নিয়েছিল।আবার বিভিন্ন ভুখন্ড হতে বিতাড়িত হয়েছিল।চাকমা বুদ্ধিজীবিদের মতে তারা কখনো হিমালয়ের পাদদেশে, কখনো ত্রিপুরায় কখনো সিলেটে কখনো বার্মায় বসবাস করেছিল।সুতরাং চাকমারা বাংলাদেশের আদিবাসী নয়, বরঞ্চ আশ্রিত, বহিরাগত।একথা বিরাজ মোহন স্বীকার করেছেন। “ব্রক্ষ রাজশক্তি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে চাকমারা সেখানে শক্তিহীন হয়ে পড়ে এবং অস্তিত্ব রক্ষার জন্য মানবিক কারনে চট্টগ্রামস্থ সুবেদারের অনুমতি সাপেক্ষে সর্ব প্রথম তৈনছড়ি নদীর তীরে বসবাস শুরু করে।ইতিহাস থেকে আমরা দেখতে পাই, পার্বত্য চট্টগ্রামের যে প্রাচীন মানচিত্র সেখানে বাঙালিরা সুপ্রাচীন কাল থেকেই বসবাস করতো। এর বাইরেও মোগল আমলে, ব্রিটিশ আমলে বাঙালিদের সেখানে গমনের ইতিহাস পাওয়া যায়। তবে ১৯০০ সালের শাসন বিধি পাস হওয়ার পর বাঙালিদের আর সেখানে গিয়ে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ ছিল না। ♣আদিবাসীরা তাহলে কোন যুক্তিতে স্বীকৃতি চাচ্ছে? তাদের সমস্ত যুক্তিকে একযোগে বললে নিচের কয়েকটি বিষয় দাড়ায়।১) সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিদের চেয়ে তাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও রীতি-নীতি আলাদা।সেদিক থেকে তারা আদিবাসী। কে আগে এসেছে কে পরে এসেছে সেটা বিষয় না। তাহলে নৃবিজ্ঞানের সমস্ত সংজ্ঞা ও জাতিসংঘের ডেফিনিশনের কি হবে? অধিকার চাচ্ছে জাতিসংঘ চার্টার অনুসারে পরিচয় দিচ্ছে নিজের মতো তাতো হয়না।২)আদিবাসী মানে হচ্ছে - মূলধারা থেকে যাদের ভাষা ভিন্ন এবং সংস্কৃতি ভিন্ন তাদেরকে আদিবাসী বলে। সে হিসেবে নিজেদের আদিবাসী হিসেবে দাবি করছে। বুঝলাম তাহলে উপজাতি কারা? মুলধারা থেকে আলদা বলেইত আন্তর্জাতিক আইন তাদের উপজাতি বলছে।৩) ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বা উপজাতি শব্দগুলো বৈষম্যমূলক। তাহলে বৈষম্য একদম না থাকে মতো বাঙ্গালী হওয়ার আন্দোলন কটেন।♣আন্তর্জাতিক আইন ও সার্বভৌমত্বের বিচারে বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্যেও খুব স্পষ্ট। এখানে কোন হেরফের নেই। সরকারেরআদিবাসী হিসাবে পাহাড়িদের অস্বীকারে পেছনে যুক্তিগুলো হল:-১) এখানকার মানুষের ইতিহাস ও সংস্কৃতি চার হাজার বছরের পুরনো। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা সেটিই প্রমাণ করে।কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবারত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ ১৬ শতকে মিয়ানমার এবং কম্বোডিয়া থেকে আসা শুরু করে। সেজন্য তারা সেখানকার আদিবাসী নয় বলে সরকার মনে করছে।২) আদিবাসী হতে হলে কলোনিয়াল কিংবা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কলোনাইজেশন হতে হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে সে ধরনের কিছুই হয়নি। অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকায় যাদের আদিবাসী বলা হয়, তাদের ক্ষেত্রে যে ধরনের পরিস্থিতি হয়েছিল বাংলাদেশে সে রকম কিছু হয়নি।৩) ১৯৯৭ সালে সম্পাদিত শান্তি চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামকে 'উপজাতি অধ্যুষ্যিত অঞ্চল' হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সরকার বলছে, সে চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলের নেতারা উপজাতি শব্দটি মেনে নিয়েছে।৪) জাতিসংঘের কোন দলিলে 'আদিবাসীর' সর্বসম্মত সংজ্ঞাও নেই বলে মনে করে বাংলাদেশ সরকার।যে ঘোষণাপত্র ২০০৭ সালে গৃহীত হয়েছিল সেখানে 'আদিবাসীদের' অধিকারের কথা বলা হলেও 'আদিবাসীদের' কোন সংজ্ঞা দেয়া হয়নি।♣কেন উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠিরা আদিবাসী হতে চাইছে তার উত্তর খুব পরিষ্কার হয় তাদের বিভিন্ন সময়ের কর্মকাণ্ডে, সভা সমাবেশে বক্তৃতায়। তবুও জাতিসংঘের ঘোষনাপত্রে কি অধিকার আদিবাসীদের দেওয়া হয়েছে সুগুলো দেখে আসলেই তাদের উদ্দেশ্য আরো পরিষ্কার হবে। সেই ঘোষণাপত্রে ১২টি ক্ষেত্রে আদিবাসীদের অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল জাতিসংঘ। সে ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে:*ভূমি ও ভূখণ্ডের অধিকার*আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি ও ভূখণ্ডের উপর সামরিক কার্যক্রম বন্ধের অধিকার*তাদের ভূমি থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ প্রক্রিয়া থেকে রেহাই পাবার অধিকার•তাদের সম্মতি ছাড়া যেসব ভূমি, ভূখণ্ড এবং সম্পদ ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে সেগুলো পুনরুদ্ধার ও ফেরত পাবার অধিকার। * আত্বনিয়ন্ত্রনের অধিকার। *অন্যান্য।যদি তাদেরকে আদিবাসী হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় তাহলে তারা মোটাদাগে কিছু অধিকার চাইতে পারবে যেমন:-১. ভূমি অধিকার, ২. আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার, ৩. স্বায়ত্তশাসন অধিকার, ৪. জাতীয়তা লাভের অধিকার, ৫. জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ।বাংলাদেশ সরকার মনে করে সীমান্ত এলাকা হওয়ায় নিরাপত্তার দৃষ্টিভঙ্গিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম অত্যন্ত স্পর্শকাতর। সে এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যাপক তৎপরতাও রয়েছে।আদিবাসীদের অধিকার'' মেনে নিলে সামরিক তৎপরতাও সেখান থেকে গুটিয়ে নিতে হবে।যদি সামরিক তৎপরতা গুটিয়ে নিতে হয় তাহলে পাহাড়িরা পার্বত্য চট্টগ্রামকে যে বিচ্ছিন্ন সার্বভৌমত্ব গঠনের চিন্তা করতেছে তাতে সফল হবে। যার কারণে তারা অলরেডি আদিবাসী হিসাবে অধিকার চাওয়া শুরু করে দিয়েছে। তারা স্লোগান দিচ্ছে।*এক দুই তিন চারবাঙ্গালিরা পাহার ছাড়।* সেনাবাহিনীর আস্তানা জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও।পরিশেষে বলা যাক, পাহাড়িরা আদিবাসী স্বীকৃতি নিয়ে আগে কথা বললও মূলত বেশি সোচ্চার হয়েছে ২০০৭ সালের জাতিসংঘের ঘোষনাপত্রের পর। তারা  আত্বনিয়ন্ত্রনের অধিকার চায় মূলত। যেটা স্বীকৃত হলে মএকটা জাতি স্বাধীনতা দাবি করতে পারে। যেটা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য চরম হুমকির। সেটাকি বাঙ্গু শাহবাগী ও আওয়ামীয় সমতলীয় সুশীলরা বুঝেনা? অবশ্যই বুঝে। তারা আমার আপনার চেয়ে বেশি বুঝে। তারা বুঝে বলেই আদিবাসী ও উপজাতি বিষয়ক কনভেনশন থেকে শুধু আদিবাসীর সংজ্ঞা শুনায় আমাদের। কারণ  উপজাতির সংজ্ঞাসহ বললে যে তাদের ভণ্ডামি ধরা পড়ে যাবে।লেখক পরিচিতি: তৌহিদুল ইসলাম। লেকচারার ,আইন বিভাগ। বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ।
    সুইস ব্যাংক বনাম টাইম ব্যাংক
    সুইস ব্যাংক সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ব্যাপক কৌতূহল রয়েছে। সুইস ব্যাংকে কারও অ্যাকাউন্ট আছে শুনলেই বিষয়টি অনেক অভিজাত বলে মনে হয়। প্রথমেই বলে রাখা ভালো, সুইস ব্যাংক বলে কোনো নির্দিষ্ট ব্যাংক নেই। সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকিং নীতিমালার অধীনে পরিচালিত তিনশ’র বেশি ব্যাংক মিলেই সুইস ব্যাংক নামে অভিহিত। সুইস শব্দটি এসেছে সুইজারল্যান্ড থেকে। সুইস ব্যাংক হলো সুইজারল্যান্ডভিত্তিক একটি ব্যাংকিং সিস্টেম। মূলত গোপনীয়তা রক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য সুইস ব্যাংক সারাবিশ্বে জনপ্রিয়। সুইজারল্যান্ডের জেনেভা নগরীতে ইউনাইটেড ন্যাশনস কতৃক আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে (The Global Compact Leaders Summit)  অংশগ্রহণ উপলক্ষে দেশটিকে স্বচক্ষে দেখার সুযোগ হয় আমার। আর তার সুবাদেই এ লেখনী। সুইজারল্যান্ড ইউরোপ মহাদেশে অবস্থিত একটি ছোট্ট রাষ্ট্র, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যভুক্ত নয়। সুইজারল্যান্ডের মুদ্রার নাম সুইস ফ্রাংক।এটি পৃথিবীর সবচেয়ে স্থিতিশীল মুদ্রা। সুইজারল্যান্ডের অর্থনীতি পৃথিবীর অন্যতম স্থিতিশীল অর্থনীতি। দেশটির রাজনৈতিক অবস্থাও খুব ভারসাম্যমূলক ও সুস্থির। সুইস সরকারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিবছর ১ জানুয়ারিতে এর রাষ্ট্রপতি পরিবর্তিত হয়। ছয় বছরের জন্য গঠিত মন্ত্রিপরিষদের একজন মন্ত্রী পালাক্রমে এক বছরের জন্য রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। সুইজারল্যান্ড কখনো কোনো যুদ্ধে জড়ায় না। নিরপেক্ষ থাকার বিষয়েই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। আর এ জন্যই রাষ্ট্রটিকে অত্যন্ত নিরাপদ রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই ব্যাংক ব্যবস্থাও এখানে খুব নিরাপদ। গ্রাহকের তথ্য প্রকাশ করার বিষয়ে বাধ্যবাধকতা না থাকায় সারাবিশ্বের ধনীদের অর্থ জমানোর জনপ্রিয় উৎস হলো সুইস ব্যাংক। বিশ্বের নানা দেশের রাষ্ট্রনায়ক থেকে শুরু করে বহু বিত্তশালী ব্যক্তি সুইস ব্যাংকে টাকা জমা রাখেন।এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন তা হলো, অনেকেই গোপনীয়ভাবে টাকা রাখতে গিয়ে তার পরিবারের কাছেও সুইস ব্যাংক বিষয়ক কোনো তথ্য দেন না। ফলে, এমন ব্যক্তির মৃত্যুর পর কেউ জানতেই পারে না যে, তার সুইস ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট আছে। সেদেশের নিয়ম অনুসারে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যদি কোনো উত্তরাধিকারী সম্পত্তি দাবি না করেন, তবে সুইস সরকার সে সম্পত্তি তাদের কোষাগারে জমা করেন।ফিলিপিন্সের একসময়ের প্রভাবশালী শাসক মার্কোস তীব্র গণআন্দোলনের মুখে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। ক্ষমতা ছাড়ার আগে দেশ থেকে মোটা অঙ্কের ডলার সুইস ব্যাংকে পাচার করেন। তার মৃত্যুর পর এসব ডলার সুইজারল্যান্ডের সরকারি কোষাগারে চলে যায়। একইভাবে লিবিয়ার তৎকালীন শাসক কর্নেল গাদ্দাফি ও মিসরের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটে।সরকারিভাবে সুইজারল্যান্ডের অধিবাসীরা সুইস নামে পরিচিত। রাজধানী বার্ন। অন্যতম দুটি শহর হলো জেনেভা ও জুরিখ। আল্পস পর্বতমালা ও প্রশস্ত হ্রদ সুইজারল্যান্ডকে এক অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বিভূষিত করেছে। বিশ্বের পর্যটকদের জন্য এটি একটি অন্যতম আকর্ষণীয় দেশ। সুইজারল্যান্ডে সুইস ব্যাংক ছাড়াও আরেক ধরনের ব্যাংক রয়েছে, যার নাম ‘টাইম ব্যাংক’। বিশ্বের আর কোথাও এ ধরনের ব্যাংক আছে বলে আমার জানা নেই। সুইজারল্যান্ডের এ টাইম ব্যাংকিং সিস্টেম আমাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে। ব্লাড ব্যাংকের নাম তো নিশ্চয়ই শুনেছেন। টাইম ব্যাংক অনেকটাই ব্লাড ব্যাংকের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে। ব্লাড ব্যাংকে যেমন ব্লাড সংরক্ষণ বা জমা রাখা হয়, একইভাবে টাইম ব্যাংকেও টাইম জমা রাখা হয়। টাইম ব্যাংক মূলত Swiss Federal Ministry of Social Security কর্তৃক উদ্ভাবিত একটি অবসরকালীন ভাতা প্রকল্প (Old Age Support Programme)। এতে কমবয়সীরা কর্মক্ষম অবস্থায় নিজেদের কাজের ফাঁকে ফাঁকে অসুস্থ বয়স্ক মানুষদের যতটা সময় ধরে সেবা প্রদান করেন, সেই সময়টা টাইম ব্যাংকে জমা থাকে। যেমন- বয়স্ক মানুষের জন্য বাজার ঘাট করা, ঘর দোর পরিষ্কার করা, তার জন্য পুষ্টিকর খাবার তৈরি করা, তাকে রোদে নিয়ে যাওয়া, তার সঙ্গে গল্প করা ইত্যাদি ইত্যাদি যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘Old Age Support’। টাকা-পয়সার মতো টাইম জমিয়ে রাখার লক্ষ্যে সুইজারল্যান্ডের বেশির ভাগ মানুষ সে দেশের টাইম ব্যাংকে সোশ্যাল সিকিউরিটি অ্যাকাউন্ট বা টাইম ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলেন। এই অ্যাকাউন্টের বিপরীতে উক্ত ব্যাংক তাকে ‘টাইম ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড’ ইস্যু করেন, যা দ্বারা তিনি পরবর্তীতে বার্ধক্য সেবা হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন। সুইজারল্যান্ড ধনী দেশ। অবসরকালীন সময় তাদের পেনশনও বেশ ভালো। শেষ বয়সে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের তেমন একটা অসুবিধা হয় না। কিন্তু তা সত্ত্বেও বার্ধক্যের সময়টা তারা আরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে টাইম ব্যাংকে টাইম জমান। সেবাপ্রদানকারী ব্যক্তি যখন নিজেও বয়োবৃদ্ধ হবেন, আগের মতো নড়াচড়া করতে পারবেন না, তখন তার ক্রেডিট কার্ডের রেফারেন্স দিয়ে টাইম ব্যাংককে দরখাস্ত করলেই তাকে দেখভাল করার জন্য তারা সেবাকর্মী পাঠাবেন। সুইজারল্যান্ডে টাইম ব্যাংকিং সিস্টেম ব্যবহার করে সেখানকার বার্ধক্য সেবা প্রদান প্রকল্প বা Old Age Support Programme এক দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এতে দেশের অবসরকালীন খরচ কমার সঙ্গে সঙ্গে অনেক সামাজিক সমস্যারও সমাধান হয়েছে। প্রশ্ন হলো, সুইজারল্যান্ড পারে। আমরা কবে পারব? ড. ইউসুফ খান ।। লেখক, গবেষক ও অর্থনীতি বিশ্লেষক
    ড. ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা সম্মেলন যখন বার্লিনে
    জার্মানির রাজধানী বার্লিন ইউরোপের একটি ঐতিহাসিক শহর। বার্লিনকে বলা হয় ‘সিটি অব ক্রিয়েটিভ আইডিয়া’। অর্থাৎ নতুন ধারণা বা নতুন চিন্তার শহর হিসেবে বার্লিনের রয়েছে আলাদা একটি খ্যাতি। আর এ কারণেই ২০১৫ সালে ড. ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা সম্মেলনের জন্য এ শহরটিকে বেছে নেয়া হয়। আয়োজকরা মনে করেন, এ শহরে অনুষ্ঠিত সম্মেলন থেকে সমগ্র বিশ্বকে দারিদ্র্য ও বেকারত্বমুক্ত করার একটি সুন্দর ধারণা বেরিয়ে আসবে। যে ধারণার হাত ধরে ভবিষ্যতে সামাজিক ব্যবসার আরো প্রসার ঘটবে।দারিদ্র্য ও বেকারত্বমুক্ত এক পৃথিবী তৈরির স্বপ্নকে সামনে রেখে শুরু হয় চার দিনব্যাপী সামাজিক ব্যবসা শীর্ষ সম্মেলন-২০১৫। অংশগ্রহণকারীদের পারস্পরিক পরিচয় পর্বের মধ্য দিয়েই সম্মেলন শুরু হয়। বিশ্বের প্রায় ৭০টি দেশ থেকে সহস্রাধিক বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বা এসডিজির লক্ষ্যমাত্রাগুলো পূরণে কীভাবে সামাজিক ব্যবসা ভূমিকা রাখতে পারে, তার পথ খুঁজে বের করাই ছিল এ সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। এ জন্য একাধিক সেমিনারের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছিল। ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস জার্মানির প্রধান নির্বাহী সাসকিয়া ব্রুচতেন জানান, আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান ৫০ জন আমন্ত্রিত বিশেষজ্ঞ এসব আলোচনায় অংশ নেবেন। এদের মধ্যে ছিলেন বৈজ্ঞানিক, সামাজিক ব্যবসা উদ্যোক্তা ও করপোরেট ব্যক্তিত্বসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল ব্যক্তিরা।বার্লিনে এ রকম একটি শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ আমার জন্য ছিল একটি স্বপ্নাতীত ব্যাপার। সবকিছুই খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়। বিশ্বজুড়ে সামাজিক ব্যবসা যে কতটা শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে গেছে, তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতাম না। সামাজিক ব্যবসায় কীভাবে বদলে যাচ্ছে বিশ্ব, তা এই সম্মেলনে এসে বুঝতে পারলাম। পৃথিবীর ৪০টিরও বেশি দেশে ড. ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার মডেল চালু হয়েছে, যা ১৩০টির বেশি প্রতিষ্ঠান ধারণ করে চলেছে। বিভিন্ন দেশে ৮০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে তার নামে ‘ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টার’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।বিশ্বে প্রতিদিন নানারকম  ঘটনা-দুর্ঘটনা ঘটে। আবার অনেক কিছুর উদ্ভাবন-উন্মোচনও ঘটে। জন্ম ও মৃত্যু হয় অনেকের। রোজকার সব ঘটনা কি আমরা মনে রাখি? তবে কিছু বিষয় স্থায়ীভাবে দাগ কাটে মানুষের মনে। কিছু ঘটনা ইতিহাসের পাতায় উঠে যায়। তেমনই একটি বিষয় হলো জার্মানির বার্লিন প্রাচীর। বার্লিন যাব আর ঐতিহাসিক বার্লিন প্রাচীর কোথায় তৈরি হয় এবং কেনই বা ভেঙে ফেলা হলো, তা দেখব না, জানব না তা কি করে হয়? বিকেলে চা বিরতির এক ফাঁকে শহরটি ঘুরে দেখার সুযোগ হারালাম না। কয়েকজন মিলে বের হয়ে পড়লাম। উদ্দেশ্য বার্লিন প্রাচীর দেখা। কিছুক্ষণের মধ্যেই নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে গেলাম।পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানিকে বিভক্ত করার জন্য একটি প্রাচীর নির্মাণ করা হয়, যাকে বলা হয় বার্লিন প্রাচীর। যেটি ইতিহাসে পরিচিত হয়ে আছে পশ্চিম জার্মানি ও পূর্ব জার্মানির সীমানা প্রাচীর হিসেবে। সুদীর্ঘ ২৮টি বছর এই প্রাচীর দুই  জার্মানিকে আলাদা করে রাখে, যা ১৯৯০ সালে আবার সবাই মিলে ভেঙে ফেলে। অর্থাৎ বার্লিন দেয়ালের পতন হয়, যা সমগ্র বিশ্বে তখন তুমুল সাড়া ফেলে। শীতল যুদ্ধ শেষে দুই জার্মানির পুনর্মিলন হয়। জার্মানরা এখন শান্তি চায়। প্রতিবেশীদের সঙ্গে চায় সদ্ভাব। বার্লিন শহরের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত হয়ছে স্প্রি নদী। শহরটি বেশ নিচু এবং অনেক ক্যানেল রয়েছে। তাই ব্রিজের সংখ্যাও কম নয়। ফোক্সওয়াগন মোটরগাড়ি কোম্পানির কারখানাকে ঘিরে শহরটি গড়ে উঠেছে। ঘোরাঘুরি শেষ করে প্যানেল ডিসকাশনে ফিরে এলাম।পৃথিবী সৃষ্টির জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত ব্যক্তি বিশেষ, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে দারিদ্র্য ছিল, দারিদ্র্য আছে এবং দারিদ্র্য থাকবে। আবার স্থান, কাল ও পাত্র ভেদে দারিদ্র্যের ধরন একেক জনের জন্য একেক রকম। যুগে যুগে মাুনষ তার আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্যকে জয় করার যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। এতে কেউ সফল হতে পেরেছেন আবার কেউ সফল হতে পারেননি।বিশ্বে যেসব হাতেগোনা কিছু অর্থনীতিবিদ, সমাজতত্ত্ববিদ কিংবা শিল্পপতি আর্থসামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে নানা মত ও তত্ত্বের ভিত্তিতে কাজ করে সফলতা অর্জন করেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম প্রধান হচ্ছেন বাংলাদেশের কৃতী সন্তান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে এ দেশের পিছিয়ে পড়া সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ভাগ্য পরিবর্তন ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের এক দৃঢ় স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ সৃষ্টির পর পরই নিজ হাতে গড়ে তোলেন গ্রামীণ ব্যাংক।১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক মুক্তির সঙ্গে সঙ্গে এ দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, রাজনৈতিকভাবে মুক্তি পেয়ে দেশ স্বাধীন হলেও অর্থনৈতিকভাবে তখনো দেশের মানুষ মুক্ত হতে পারেনি। তাই স্বাধীন বাংলাদেশ বিশেষ করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রাখার জন্য বিশিষ্ট কিছু ব্যক্তিবর্গ তাদের স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ করা শুরু করেন। তাদের মধ্যে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্যতম, যার হাতে গড়ে ওঠে গ্রামীণ ব্যাংক।গ্রামের মানুষের কাছে গ্রামীণ ব্যাংক খুব জনপ্রিয় ও আস্থার জায়গা। বর্তমানে এর আড়াই হাজারেরও অধিক শাখা রয়েছে এবং সদস্য সংখ্যা ১ কোটি ৫ লাখ। মোট সঞ্চয়ের পরিমাণ ২৫ হাজার কোটি টাকা এবং ঋণের স্থিতি ১৭ হাজার কোটি টাকা। আদায় হার ৯৭ শতাংশ। গ্রামীণ ব্যাংকের আদলে বিশ্বের ৯৭টি দেশে এর কার্যক্রম চলছে। বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে, তা দেখতে, শিখতে ও জানতে বিশ্বের বহু দেশের গুণীজন, সাংবাদিক ও ছাত্রছাত্রীরা প্রায় ইউনুস সেন্টারে ভিড় করে থাকেন।ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দেশের দরিদ্র মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গ্রমীণ ব্যাংক এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং তারই ফলস্বরূপ ২০০৬ সালে নরওয়ে ভিত্তিক নোবেল কমিটি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার নিজ হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংককে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করে, যা আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত ও স্বীকৃত। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীব্যাপী তার কৃতকর্মের জন্য সম্মানীত ও সমাদৃত।বর্তমানে তিনি দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে নতুন একটি ধারণা ও তত্ত্ব নিয়ে সারা পৃথিবীব্যাপী কাজ করে যাচ্ছেন। আর সেটি হলো সামাজিক ব্যবসা বা সোশ্যাল বিজনেস। সামাজিক ব্যবসার এই ধারণাটি পৃথিবীর প্রতিটি দেশ ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে। আর সেই লক্ষ্য নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাতদিন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।এখন প্রশ্ন হলো, সামাজিক ব্যবসা বা সোশ্যাল বিজনেস কী? বিশ্বের অর্থনৈতিক মানচিত্রে দুটি তত্ত্ব দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত। আর তা হলো পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্র। নানা কারণে এখন আর সমাজতন্ত্র আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুুতে নেই। কিন্তু সারা পৃথিবীজুড়ে পুঁজিবাদ বিরাজ করছে দোর্দণ্ড প্রতাপে। সেই পুঁজিবাদও আজ নানা কারণে সংকট ও প্রশ্নের সম্মুখীন।এরকম বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ক্ষুদ্রঋণের উদ্ভাবক, বাংলাদেশের গর্ব, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছেন তার সাম্প্রতিক ‘সামাজিক ব্যবসা’ তত্ত্ব। এই ব্যবসায় বিনিয়োগকারী একটা সামাজিক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বিনিয়োগ করবেন, কিন্তু সেই ব্যবসা থেকে বিনিয়োগকারী কোনো ধরনের মুনাফা গ্রহণ করবেন না। শুধু বিনিয়োগের অর্থ তুলে নিতে পারবেন। মুনাফার অর্থ দিয়ে নতুন কোনো সামাজিক ব্যবসা শুরু করতে পারেন অথবা বর্তমান ব্যবসার সম্প্রসারণ করতে পারবেন। অর্থাৎ মুনাফার অর্থ পুনর্বিনিয়োগ করা যাবে, যার মাধ্যমে তৈরি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান। বিশ্বব্যাপী ব্যবসায় মুনাফা বৃদ্ধির যে প্রবণতা দেখা যায়, তার বাইরে ব্যবসাকে সামাজিক কল্যাণের জন্য নিয়ে আসাই সামাজিক ব্যবসার মূলকথা।পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আজ সামাজিক ব্যবসা ছড়িয়ে পড়েছে। যেমন- ইউরোপের দেশ আলবেনিয়ার রাজধানী তিরানায় সামাজিক ব্যবসার আওতায় বৃদ্ধ নিবাস তৈরি করা হয়েছে। ২০১২ সালে এই উদ্যোগ নেয়া হয়। বর্তমানে এই বৃদ্ধ নিবাসে ২৫০ জন বয়স্ক ব্যক্তি রয়েছেন, যা ইতোমধ্যে একটি সফল উদ্যোগ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতে, বেকারত্ব দূর করতে সামাজিক ব্যবসা একটি কার্যকর ব্যবস্থা। বেকারত্ব এখন পুঁজিবাদের নতুন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার মতে, এই সামাজিক ব্যবসা দিয়েই বর্তমান বিশ্বের বেকারত্বের সমাধান করা সম্ভব। তরুণ-তরুণীদের স্বপ্ন ও উদ্যোগ দিয়ে বেকারত্ব দূর করতে হবে। তাইতো তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন তারুণ্য, প্রযুক্তি ও সুশাসনকে। তার মতে, ভালো চাকরি না খুঁজে উদ্যোক্তা তৈরিতে জোর দিতে হবে। তাই তরুণ প্রজন্মকে উদ্যোক্তা হতে হবে। কারো অধীনে নয়, বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে হবে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে। এ লক্ষ্য অর্জনে সামনে থাকছে তার থ্রি জিরো তত্ত্ব। এগুলো হলো- দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও কার্বন নিঃসরণ। বসবাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে হলে এগুলোকে শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। তৈরি করতে হবে তিন শূন্যের পৃথিবী। অর্থাৎ শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য কার্বন নিঃসরণ।ড. ইউনূস মনে করেন, পৃথিবীতে এমন পরিস্থিতি আসবে, যখন বেকারত্ব বলে কিছু থাকবে না। একজন সুস্থ শরীরের লোক বেকার থাকবে এটা হতে পারে না। তিনি তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, তোমরা ব্যবসার ধারণা নিয়ে আসো। আমরা তোমাদের সহযোগিতা করব। ড. ইউনূসের মতে, কাজের ক্ষেত্রে বয়সের কোনো সীমা থাকা উচিত নয়। অবসর বলে কোনো শব্দই থাকা উচিত নয়। রিটায়ারমেন্টকেই রিটায়ারমেন্টে পাঠানো হবে। তাই সামাজিক ব্যবসাকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবী থেকে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব দূরীকরণের মাধ্যমে মানুষকে স্বচ্ছল ও স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিশ্বের সব দেশ এগিয়ে আসবে, এটাই আমাদের সবার প্রত্যাশা।ড. ইউসুফ খান : কলাম লেখক।
    আমরা তো এমন বাংলাদেশেরই স্বপ্ন দেখি: আজহারী
    ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে দেশের চলমান বন্যা পরিস্থিতি। এ পর্যন্ত ১২ জেলায় ১৫ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। পানিবন্দি অন্তত ৯ লাখ পরিবার।ভারতীয় পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে ডুবে আছে দেশের অন্তত ১২ জেলার বহু মানুষ। কোথাও কোথাও পানি কমতে শুরু করলেও বেশিরভাগ এলাকায় বাড়ছে। বেশ কয়েকটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে।দেশের চলমান এমন বন্যা পরিস্থিতিতে ‘গণত্রাণ’ কর্মসূচি শুরু করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। যেখানে ত্রাণ পৌঁছে দিতে হাজারো মানুষের ঢল নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি)।ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষজন টিএসসিতে যাচ্ছেন তাদের ত্রাণ দিতে। যা দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন অনেকেই। এমন পরিস্থিতি দেখে প্রশংসাও করছেন অনেকে।শনিবার (২৪ আগস্ট) বেলা ১১টার পর নিজের ফেসবুক আইডিতে টিএসসির ত্রাণ কর্মসূচি নিয়ে পোস্টে করেছেন জনপ্রিয় ইসলামী আলোচক মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী।ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, বিকেলের ঝালমুড়ি আর ফুচকা যাদের মিস হয়না, বাসে হাফ ভাড়ার জন্য যারা তর্ক জুড়ে দেয়— সেই ছাত্র ছাত্রীরা আজ তাদের পুরো মাসের হাত খরচটা অবলীলায় দিয়ে দিচ্ছে টিএসসির ত্রাণ তহবিলে। মাশাআল্লাহ! আমরা তো এমন বাংলাদেশেরই স্বপ্ন দেখি।বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে সকাল ১০টা থেকে টিএসসির ফটকে স্থাপিত বুথে ত্রাণ সংগ্রহ শুরু হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। ত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রম চলে রাত ১০টা পর্যন্ত।রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে বিভিন্ন পরিবহনে করে বন্যার্তদের জন্য খাবার, জামা-কাপড়, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে আসেন। অসংখ্য মানুষ তাদের ব্যক্তিগত গাড়িতে করে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেন। তা ছাড়া বিকেলে বিজিবির একটি কাভার্ড ভ্যান ভর্তি করে ত্রাণ শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
    চিকিৎসকদের লাগামছাড়া ভিজিটও সমন্বয় করা দরকার
    চক্ষু চিকিৎসা করেন অধ্যাপক ডা. রিপন সরকার। রোগী সাপ্তাহে একদিন কুড়িগ্রামে আসেন। বাকি দিন রংপুরে বসেন। কুড়িগ্রামে রোগী দেখেন সেবা ক্লিনিকে। নতুন রোগীর কাছ থেকে ফি (ভিজিট) নেন ৭০০ টাকা। একই রোগী দ্বিতীয়বার দেখাতে গেলে নেন ৫০০ টাকা। আবার চক্ষু রোগী ৪ মাস পরে গেলেই দিতে হবে নতুন রোগী হিসেবে টাকা মানে পুরো ৭০০ টাকাই। তিনি কুড়িগ্রামে সাপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার প্রায় শতাধিক রোগী দেখেন ও অপারেশন করেন। একজন রোগীকে তিনি সর্বোচ্চ ২/৩ মিনিট সময় দিয়ে থাকেন।কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলা থেকে আসা কৃষক মানিক মিয়া খুঁজছিলেন চক্ষু ডাক্তার। পরিচিত একজনের কাছ থেকে ডা: রিপন সরকারের নাম শুনে তাঁর অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার জন্য খোঁজখবর নেন। কিন্তু ভিজিট শুনেই খেপে ওঠেন তিনি। কথা বলেন, ’সময়ের কন্ঠস্বরের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'এটা কী করে সম্ভব! ভিজিটই যদি ৭০০ টাকা দিতে হয় তবে এই ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করাব কিভাবে? আমরা তো গরীব মানুষ।সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ‘সময়ের কন্ঠস্বরের এ প্রতিবেদক তার মাকে চোখ দেখাতে নিয়ে যান ডা: রিপন সরকারের কাছে। সেখানে গিয়ে দেখা যায় ডাক্তার প্রায় শতাধিক রোগীকে বসিয়ে রেখে ৫ জনকে অপারেশন করতে নিয়ে গেছেন। ডাক্তারের জন্য টানা ৩ ঘন্টা অপেক্ষার পর ডাক্তার ওটি থেকে নামেন। পরে এ প্রতিবেদক তার মাকে দেখান। দুচোখ দেখে ডাক্তর বলেন সমস্যা নেই। ডাক্তারে কাছে ভিজিট কত বলতেই তিনি বলেন ৭০০ দেন। বলেই অন্য রোগী দেখা শুরু করেন। এত সল্প সময়ে এত ভিজিট কেনো জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি রংপুর থেকে এসে এখানে রোগী দেখি রংপুরে আরো বেশি ভিজিট নেই।অন্যদিকে রাজধানীসহ সারা দেশে ডাক্তারদের ভিজিট বা পরামর্শ ফি ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন।ভুক্তভোগীদের দাবি চিকিৎসকদের লাগামছাড়া ভিজিটও সমন্বয় করা দরকার।এফএস
    বছরের পর বছর কি বিদ্যুতের মিটার ভাড়া দিতে হবে?
    দেশে সাধারণ জনগণের ভোগান্তির আরেক নাম বিদ্যুৎ মিটার। প্রিপেইড মিটারের দাম সংযোগ নেয়ার সময় পরিশোধ করলেও বছরের পর বছর প্রতি মাসে টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে কেন? এ প্রশ্ন এখন সাধারণ ভুক্তভোগীদের।পিডিবি, ডিপিডিসি, ডেসকো, আরইবি মিটার স্থাপন করেছে আর তার ভাড়া বছরের পর বছর আদায় করছে গ্রাহকদের কাছ থেকে।বিদ্যুতের অযৌক্তিক মিটার ভাড়া ও ডিম্যান্ড চার্জ প্রত্যাহারের দাবি সাধারণ ভুক্তভোগীদের। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, নিজের টাকায় মিটার কিনে আবার মাসে মাসে তার ভাড়া কেন দিতে হয় বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোকে।সাধারণ মানুষের দাবী, গ্রাহক নিজের টাকায় বিদ্যুতের মিটার ক্রয় করার পরও যদি প্রতি মাসে মাসে মিটার ভাড়া দিতে হয়, তাহলে বিদ্যুৎ সংস্থা আমাদের জমিতে বিদ্যুতের খুঁটি পুতে লাইন টানিয়ে ফসলি জমিগুলো নষ্ট করে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করার পরও আমাদের জমির ভাড়া দেবে না কেন?ভুক্তভোগীদের চাওয়া এসব অযৌক্তিক মিটার ভাড়া ও ডিমান্ড চার্জ বাতিল করার এখনই সময়।এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভুমিকা রাখবেন বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা।এফএস
    প্রোফাইল পিকচার লাল করাদের বেহাত করা যাবেনা
    জুন মাসে খুব ছোট্ট পরিসরে শুরু করা কোটা সংস্কার আন্দোলনের অগ্নিশিখা নিভাতে দেরী করায় তা রুপ নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে। তারপর ছাত্রের সাথে যোগ হয় জনতা। জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে সেই আগুনে ঝাঁপ দেয় দেশের আপামর ছাত্র-জনতা। বছরের পর বছর বুকের ভেতর আটকে রাখা ক্ষোভ নিয়ে যে বিক্ষোভের মিছিলটি গিয়ে ঠেকে গণভবনে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা এটাকে আরো পাকাপোক্ত করে। তারপরই আসে ৫ই আগস্ট।  জীবন উৎসর্গ করা রংপুরের আবু সাঈদ এই বিপ্লবের প্রতীক। তিনিসহ অন্যান্য মৃত্যুর ঘটনায় রাষ্ট্র শোক পালনের ঘোষণা দিলেও শোকের কালো ব্যাজ প্রত্যাখ্যান করে বুলেটের সামনে আবু সাঈদের বুক পেতে দেওয়া সেই ছবি ফেসবুকে আসে লাল হয়ে। শোভা পায় ফেসবুকের প্রোফাইলে প্রোফাইলে। স্বৈরতন্ত্রের সামনে দাঁড়িয়ে ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার লাল করাটা আমার কাছে এই বিপ্লবের প্রথম সম্মিলিত ঘোষণা বলে মনে হয়েছে। ব্যাপারটা সহজ ছিলোনা। যারা ফেসবুক প্রোফাইল লাল করেছিলেন তারা জানে।৮ই আগস্ট ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ১০ই আগস্ট রংপুরের পীড়গঞ্জে শহীদ আবু সাঈদের বাড়িতে ছুটে যান তিনি। কিন্তু এই বিপ্লবে কত আবু সাঈদের প্রাণ গিয়েছে, কত আবু সাঈদ হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে তা রাষ্ট্রের চোখে দেখতে হবে, পাশে থাকতে হবে। অবশ্য ইতোমধ্যে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। তবে প্রশাসনের সহায়তায় এই কাজ সম্পন্ন করতে হবে দ্রুত বেগে। ‘কেউ এলোনা’, ‘কেউ খবর নিলোনা’ এমন কথা মুখ দিয়ে বের হওয়ার আগে।একতাকে উজ্জীবিত রাখতে হবে, প্রোফাইল পিকচার লাল করাদের বেহাত করা যাবেনা।লেখকঃ মো. জোবায়ের হোসেন।  সদস্য প্রেসক্লাব মির্জাপুর, টাঙ্গাইল।
    নবগঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা
    সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে অর্জিত বিজয় রাষ্ট্র মেরামতের একটি দুর্লভ দ্বার উন্মোচিত করেছে। ছাত্র ও সাধারণ জনতার রক্তের দাগ এখনো রাজপথ থেকে শুকায়নি। এমন এক ক্রান্তিলগ্নে গঠিত হলো ১৪ সদস্য বিশিষ্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সংগত কারণেই এ সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশার ফর্দ অনেক লম্বা। এটি স্মরণে রেখে তাঁদেরকে তাঁদের ওপর ন্যাস্ত দায়িত্ব সমূহ পালন করতে হবে। এটি খুবই প্রত্যাশিত যে জনপ্রত্যাশার যথাযথ কার্যকর প্রতিফলন ঘটানোর মাধ্যমেই তাঁরা নিজ নিজ যোগ্যতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন। আপামর জনসাধারণের আস্থার প্রতীক হয়ে থাকবেন। মনে রাখতে হবে এ ক্রান্তিকালীন পর্যায়টি কেবল নেতৃত্বের পরিবর্তনই নয়, বরং জাতির আকাঙ্ক্ষাকে পুনরুজ্জীবিত করার এবং দীর্ঘস্থায়ী চ্যালেঞ্জ এবং উদীয়মান সুযোগ উভয়ই মোকাবেলার একটি গভীর সুযোগের প্রতিনিধিত্ব করে। পরিবর্তন প্রায়শই একটি সম্ভাবনাময় চ্যালেঞ্জ; এতে যেমন থাকে সম্ভাবনার উত্তেজনা তেমনি প্রত্যাশার ওজন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য, এই মুহূর্তটি আলাদা নয়। এটি এমন একটি সময়কাল যা আশা দ্বারা চিহ্নিত করা হয় - অগ্রাধিকারগুলি পুনঃনির্ধারণ করার, সমালোচনামূলক সংস্কার বাস্তবায়নের এবং দেশকে আরও স্থিতিশীল এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে পরিচালিত করার একটি সুযোগ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটভূমিতে অন্তর্বর্তী সরকার একটি অনন্য অবস্থানের অধিকারী। যদিও এর প্রাথমিক ভূমিকা হল একটি নতুন, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রশাসনে রূপান্তরের তত্ত্বাবধান করা, এটি আস্থা বৃদ্ধির দায়িত্বও বহন করে এবং প্রদর্শন করে যে শাসন কার্যকারী এবং সহানুভূতিশীল উভয়ই হতে পারে। এটা প্রমাণ করার সময় যে অন্তর্বর্তী নেতৃত্ব প্রকৃতপক্ষে দেশের সর্বোত্তম স্বার্থে কাজ করতে পারে, রাজনৈতিক বিভাজন অতিক্রম করে সামষ্টিক কল্যাণে কাজ করতে পারে।অন্তর্বর্তী সরকারের একটি তাৎক্ষণিক কাজ হলো রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনা। এই প্রচেষ্টায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমন পরিবেশ গড়ে তোলার প্রয়াস করা  যা গণতান্ত্রিক শাসনের পরবর্তী পর্যায়ের জন্য অপরিহার্য হবে।আমরা পূর্বেও বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা দেখেছি। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপটটি নানা কারণে ভিন্নতর। এমন একটি সময়ে এ সরকার দায়িত্ব নিলো যখন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই নাজুক অবস্থায়। হাসপাতালে আন্দোলনে আহতরা কাতরাচ্ছে। শহিদ পরিবারগুলো শোকে নুব্জ্য। দ্রব্যমূল্য অসহনীয় পর্যায়ে। সাধারণ মানুষকে সেবা পেতে প্রায় প্রতিটি খাতে ঘুষ দিতে হয়। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী বা মতের মানুষরা শংকিত। এ তালিকা অনেক দীর্ঘ। অতিদ্রুত এসব বিষয় এড্রেস করা প্রয়োজন। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই মূল্যস্ফীতি মোকাবেলা করে, ছোট ব্যবসাকে সমর্থন করে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সমাজের সকল স্তরকে উপকৃত করে তা নিশ্চিত করে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে উদ্দীপিত করে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করে এমন নীতি প্রণয়ন এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হবে।সামাজিক বিভাজন দূর করা এবং সামাজিক সম্প্রীতি বৃদ্ধি করা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফোকাস হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে বৈষম্য, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত সমস্যাগুলি সমাধান করার সুযোগ রয়েছে। সম্পদ এবং সুযোগগুলিতে ন্যায়সঙ্গত অ্যাক্সেস নিশ্চিত করা কেবল সামাজিক সংহতিই বাড়াবে না বরং আরও ভারসাম্যপূর্ণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের গতিপথে অবদান রাখবে।গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি অঙ্গীকার পুনর্নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্তর্বর্তী প্রশাসনের উচিত আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে, একটি স্বাধীন বিচার বিভাগকে সমর্থন করা এবং একটি মুক্ত ও প্রাণবন্ত সংবাদমাধ্যমকে উৎসাহিত করার জন্য কাজ করা উচিত। এই স্তম্ভগুলিকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে, সরকার আরও শক্তিশালী এবং স্থিতিস্থাপক গণতন্ত্রের পথ প্রশস্ত করতে সহায়তা করতে পারে।বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অবস্থানও কৌশলগত কূটনীতি থেকে উপকৃত হতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত বিশ্বব্যাপী অংশীদারদের সাথে সম্পর্ক জোরদার করা, বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহযোগিতা করা। আন্তর্জাতিক সমর্থন দেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যে আশা বিনিয়োগ করা হয়েছে তা কেবল তাৎক্ষণিক মেয়াদে কী অর্জন করা যেতে পারে তা নয় বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি দৃষ্টিভঙ্গি নির্ধারণের বিষয়ে। এই অন্তর্বর্তী সময়টি স্থায়ী অগ্রগতির ভিত্তি স্থাপনের একটি সুযোগ। উদ্ভাবনী সমাধান গ্রহণ করে, জনগণের চাহিদার কথা শুনে এবং সততার সাথে কাজ করে অন্তর্বর্তী নেতৃত্ব ইতিবাচক পরিবর্তনের উত্তরাধিকার গঠন করতে পারে।বাংলাদেশ যখন এই মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে, তখন জাতির জনগণ তাদের অন্তর্বর্তীকালীন নেতাদের দিকে আশা ও আশাবাদ নিয়ে তাকিয়ে আছে। সামনের পথটি তার চ্যালেঞ্জ ছাড়া হবে না, তবে এটি সম্ভাবনাতেও পূর্ণ। ঐক্য, স্থিতিশীলতা এবং প্রবৃদ্ধির জন্য এই মুহূর্তটিকে কাজে লাগিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশকে একটি উজ্জ্বল, আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতের দিকে পরিচালিত করতে পারে।উপসংহারে বলা যায়, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে শুধু প্রশাসনিক দায়িত্বের চেয়ে বেশি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে; এটি অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য আগ্রহী একটি জাতির আশা ও স্বপ্ন বহন করে। নিষ্ঠা ও দৃষ্টিভঙ্গির সাথে এই দায়িত্বটি গ্রহণ করার মাধ্যমে, এটি একটি উন্নত আগামীর দিকে দেশের যাত্রায় একটি অমোঘ চিহ্ন রেখে যাওয়ার সম্ভাবনা রাখে।   লেখক: মো. ওবায়দুর রহমান, প্রধান শিক্ষক, ঘোড়াশাল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, নরসিংদী
    খাদ্যের পাশাপাশি ত্রাণ হিসেবে বস্ত্র দরকার বানভাসিদের
    মানুষের মৌলিক চাহিদা বলতে খাদ্য (অন্ন), বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও নিরাপত্তাকে বোঝায়, কিন্তু প্রধানত অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান- এই তিনটি। তবে এগুলি জীবনধারণের মৌলিক উপকরণ। মৌলিক অধিকার নয়।কুড়িগ্রামে আজ ১৫ দিন থেকে বন্যা অব্যাহত আছে। নিম্নাঞ্চলের সড়কগুলো ডুবে আছে এখনো। আজ (১৪ই জুলাই) একজন দানবীর মানুষের সহযোগিতায় কিছু ত্রাণ নিয়ে গিয়েছিলাম কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের উড্ডামারি গ্রামে। শতাধিক পরিবারের মাঝে সেগুলো বিতরণ করছিলাম। হঠাৎ কয়েকজন মহিলা পেছন থেকে আমাকে তাদের বাড়িতে ডাকলেন। বাড়িতে গিয়ে দেখলাম বন্যার পানি এখনও শুকায়নি। আমি তাদের বাড়িতে গিয়ে দাড়িয়ে আছি অথচ বাড়িতে ডেকে তারা ঘর থেকে বেরোচ্ছিলেন না!বাইরে থেকেই প্রশ্ন করলাম কিছু কি বলবেন? ঘর থেকে তারা বললো, আজ টানা ১৫ দিন থেকে পানিতে অবস্থান করছি। আমাদের পরনের কাপড়ের বেহাল অবস্থা। কাপড়গুলো পড়ার অনুপোযোগী। তারা আক্ষেপ করে আরো বললো কিছু কিছু লোক আসে খিচুড়ি, চিড়া, মুড়ি নিয়ে। কিন্তু কেউ পরনের কাপড় দেয় না। এরকম আক্ষেপ ওই বাড়িতে থাকা আরও সাত আট জনের। যখন সেখান থেকে ফিরছিলাম অনেক মানুষ আমাকে বলছিল মহিলাদের ও ছোট ছোট বাচ্চা ও বৃদ্ধদের পরনের কাপড়ের বড়ই অভাব। আমার মনে হয় বানভাসিদের খাদ্য সহায়তা (ত্রাণ) দেওয়ার পাশাপাশি বস্ত্রও ত্রাণ দেওয়া উচিত।কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো নেমে যায়নি বন্যার পানি। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, জেলার ৯ উপজেলায় বন্যার্ত মানুষের জন্য এখন পর্যন্ত প্রায় ৫শ মেট্রিক টন চাল, ৩৫ লাখ টাকা ও ২৩ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।লেখক, এস এম ফয়সাল শামীম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট সময়ের কন্ঠস্বর- ইমেইল[email protected] এফএস
    ডিভোর্স দেয়ার সঠিক নিয়ম, মামলা করার পদ্ধতি ও শাস্তি কী?
    বিয়ে একটি সামাজিক বন্ধন, সেই সাথে এটি একটি ধর্মীয় বিষয়। যদিও মুসলিম আইন বিয়েকে একটি দেওয়ানী চুক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন। বিয়ের মাধ্যমে প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে মেয়ে একসাথে বসবাস করা, পরিবার গঠন, সন্তান জন্মদান ও বংশবিস্তার করার বৈধ্য অধিকার লাভ করে থাকে। একটি সুস্থ বিয়ে দুটি মানুষকে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, নির্ভশীলতা, দায়িত্ববোধ ও ভালোভাসা তৈরি করে থাকে। তাছাড়া দুইটি পরিবারকেও আবদ্ধ করে রাখে। এই সম্পর্ক মাঝপথে ভেঙে যেতে পারে এই চিন্তা বা আশঙ্কা কারো কল্পনাতেও আসে না।তবে ঠুনকোসহ ছোট-বড় নানা কারণে দেশে তালাকের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে পুরুষদের পাশাপাশি মেয়েদের শিক্ষা বাড়ছে, অর্থনৈতিক সচ্ছলতা বাড়ছে, সচেতনতা বাড়ছে ও আত্মসম্মানবোধ বাড়ছে সে জন্য মেয়েদের মধ্যে একতরফা মানিয়ে নেওয়া, স্যাক্রিফাইজ, অ্যাডজাস্ট করার মানসিকতা বর্তমানে লক্ষ্য করা য়ায় না। সংসারে খুব সামান্য ও ছোট ছোট বিষয় নিয়ে আলাদা থাকার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। ধর্মীয় অনুশাসন, পারিবারিক বন্ধন ও ধর্মপালনের মাধ্যমে ডিভোর্সের হার কমানো সম্ভব। ডিভোর্স নিয়ে সম্ভাব্য প্রশ্নের উত্তর তুলে ধরা হলো-১. সাধারণত স্বামী-স্ত্রী যে কেউ ডিভোর্স দিতে পারেন। বিয়ে নিবন্ধনের সময় ১৮ নম্বর কলামে স্ত্রীকে ডির্ভোসের অধিকার দেওয়া থাকে। তবে ডির্ভোসের অধিকার দেওয়া না থাকলে স্ত্রীকে আদালতে গিয়ে মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন, ১৯৩৯ অনুসারে পারিবারিক আদালতে আবেদন করে ডির্ভোস দেওয়া যায়।২. পারস্পরিক সম্মত্তিতে ডির্ভোস দেওয়া যায় এ ক্ষেত্রে বেশি প্রচলিত হচ্ছে খুলা। স্ত্রীকে প্রাপ্য দেনমোহর ও ভরণপোষন (স্বামী-স্ত্রী যেই তালাক প্রদান করুক আইন অনুসারে স্ত্রী তার প্রাপ্য দেনমোহর ও ভরণপোষন পাবেন) প্রদান করে মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯৭৪ এর ৬ ধারা মতে ডির্ভোস বা তালাক রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। এ ক্ষেত্রে স্ত্রী নতুন করে বিবাহ করতে হলে ইদ্দতকালীন তিন মাস অতিবাহিত হওয়ার পর বিবাহ করতে হবে। তালাক দেওয়ার সময় যদি স্ত্রী অন্ত:সত্বা থাকেন তাহলে সন্তান ভূমিষ্ট হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবে না। যে দিন সন্তান ভূমিষ্ট হবে সেদিন তালাক কার্যকর হবে।৩. স্বামী-স্ত্রী তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯৭৪ অনুসারে ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান, সিটিকর্পোরেশন এর মেয়র বরাবর নোটিশ প্রদান করতে হয়। স্বামী বা স্ত্রীকেও নোটিশের এক কপি পাঠাতে হবে। চেয়ারম্যান বা মেয়র নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করবেন। যদি চেয়ারম্যান বা মেয়র ব্যর্থ হন বা স্বামী-স্ত্রী তাদের সিদ্ধাস্তে অটল থাকে ৯০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর তালাক কার্যকর হবে। তালাক কার্যকর হওয়ার পর পুনরায় সংসার করতে চাইলে আবার নিয়ম মেনে বিয়ে করতে হবে। ৪. হিন্দু আইনে বিবাহ-বিচ্ছেদ বা তালাক এর বিধান নাই। দাম্পত্য জীবন চরম পর্যায়ে গেলে ভরণপোষণ এবং পৃথক বাসস্থান দাবি করে দেওয়ানী আদালতে বিবাহ-বিচ্ছেদ চেয়ে ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করতে হবে।৫. খ্রিষ্ঠান ধর্মালম্বীদের বিবাহ বিচ্ছেদ একটি জটিল ও ঝামেলাপূর্ণ বিষয়। ডির্ভোস অ্যাক্ট, ১৮৬৯ এর ১৭ ও ২০ ধারা অনুসারে জেলা জজ ও হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন করে বিবাহ বিচ্ছেদ করতে হয়।শাস্তি: বিয়েসংক্রান্ত অপরাধ দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪৯৩ থেকে ৪৯৮ ধারাতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ডির্ভোস না দিয়ে পুনরায় বিয়ে করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এক্ষেত্রে সাত বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন এবং বিবাহ বাতিল বলে গণ্য হবেন। ব্যতিক্রমও রয়েছে যদি স্বামী বা স্ত্রী কেউ সাত বছর পর্যন্ত নিরুদ্দেশ বা জীবত নাই বলে মনে করা হয় তাহলে তালাক ছাড়া বিবাহ করতে পারবেন। আগের বিবাহ গোপন করে বা প্রতারণার মাধ্যমে বিবাহ করলে তা দন্ডবিধি ৪৯৫ ধারা মোতাবেক ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। আবার জেনেশুনে অন্যের স্ত্রীকে বিবাহ করলে তা ৪৯৭ ধারা অনুসারে ব্যভিচার হিসেবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ ও বিবাহ বাতিল হবে।মামলা কোথায় করবেন:বিয়ে সংক্রান্ত যে কোন মামলা আইনজীবীর মাধ্যমে প্রতিটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সহকারী জজ/পারিবারিক আদালতে করতে হয়। কারো যদি মামলা পরিচালনা করার সামর্থ্য না থাকে তাহলে জেলা লিগ্যাল এইড বরাবর আবেদন করতে হয়।সবশেষে বলা যায়, আদর্শ পরিবার গঠন, মানুয়ের জৈবিক চাহিদাপূরণ ও মানসিক প্রশান্তি লাভের একমাত্র বিধান ও মাধ্যম হচ্ছে বিয়ে। তাই ডিভোর্স এর মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিজে বার বার ঠান্ডা মাথায় পরিবারের সাথে আলোচনা করা উচিত। ডির্ভোস একটি পরিবার, সমাজ বা কারো জন্য সুখকর নয়।মো: মাহমুদ হাসান নাজিম ।। আইনজীবী, জজ কোর্ট ঢাকা।[email protected]
    শুধুমাত্র চুমু খাওয়ার জন্যই তৈরি এই সেতুটি
    ভিয়েতনামের দক্ষিণ ফু কোক দ্বীপে শুধুমাত্র চুমু খাওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে সেতু। আর এই সেতুটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘কিস ব্রিজ’। দম্পতিরা সূর্যাস্তের সঙ্গে একটি রোমান্টিক মুহূর্ত ভাগ করে নিতে পারবে এখানে। গত বছর সেতুটি উন্মোচন করা হয়েছে। ইতালির স্থপতি মার্কো ক্যাসামন্টি এবং বিলাসবহুল পর্যটন বিকাশকারী সান গ্রুপ সেতুটি নির্মাণ করেছে। সেতুটির নকশা করা হয়েছে ক্লাসিক মাইকেলেঞ্জেলো ফ্রেস্কো পেইন্টিং ‘দ্য ক্রিয়েশন অফ অ্যাডাম অ্যাট দ্য সিস্টিন চ্যাপেল’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে।সেতুটি নির্মাণ করেছে ইতালির স্থপতি মার্কো ক্যাসামন্টি এবং বিলাসবহুল পর্যটন বিকাশকারী সান গ্রুপ। সেতুটির নকশা করা হয়েছে ক্লাসিক মাইকেলেঞ্জেলো ফ্রেস্কো পেইন্টিং ‘দ্য ক্রিয়েশন অফ অ্যাডাম অ্যাট দ্য সিস্টিন চ্যাপেল’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৮০০ মিটার (অর্ধ মাইল) এবং দুটি পৃথক অংশ নিয়ে গঠিত। অংশ দুটির মধ্যে ব্যবধান শুধুমাত্র ৩০ সেন্টিমিটার (১২ ইঞ্চি)।      যেসব দম্পতিরা সেখানে যাবে, তারা সেতুর দুই পাশের দুই অংশে দাঁড়াবে এবং চুমু খাওয়ার জন্য নাটকীয়ভাবে একটু ঝুঁকতে হবে। শুধু তাই নয় সেতুর দুই অংশের মধ্যকার দূরত্ব এত নিখুঁতভাবে করা হয়েছে যে, বছরের প্রথমদিন সূর্য দুটি অংশের মধ্যবর্তী ফাঁকে পড়বে। সেতুটির ভিয়েতনামী নাম, ‘কাউ হন বা বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া।’ যে দর্শনার্থী তার সঙ্গীকে এই প্রশ্নটি করতে চান, তাদের জন্য একদম সঠিক স্থান এটি। ‘কিস ব্রিজ’ ভিয়েতনামের দক্ষিণাঞ্চলীয় কিয়েন গিয়াং প্রদেশের ফু কোক দ্বীপের সানসেট টাউনে অবস্থিত। ফু কোক দ্বীপ অবকাশ যাপনের জন্য বেশ পরিচিত। বিশেষ করে নব দম্পতিদের মধুচন্দ্রিমার জন্য পছন্দের স্থান। এফএস
    ডাক্তার দাবি করা মুনিয়া জানেন না ওটি-আইসিইউ কী
    সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। টেলিভিশন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন ডাক্তার পরিচয় দেওয়া এক নারী। তিনি চিকিৎশাস্ত্রে ব্যবহৃত সাধারণ কিছু শব্দের অর্থও বলতে পারছেন না।গত ডিসেম্বরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে আনসার সদস্যরা মুনিয়া খান রোজা (২৫) নামে এক ভুয়া গাইনি চিকিৎসককে আটক করেন। এরপর তাকে প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। সেখান থেকে ওই তরুণীর ঠাই হয় জেলহাজতে।পরে তিনি জেল থেকে বের হয়ে দাবি করেন তিনি ভুয়া ডাক্তার না। তাকে জিজ্ঞেস করা হয় ওটি মানে কী? তিনি বলেন, ওটি মানে সার্জারি করা, ওটি করা। প্রশ্নকারী আবার বলেন, ওটির একটি অর্থ আছে। এটার পুরো মানেটা কী? তিনি উত্তর দিতে পারেননি।তাকে জিজ্ঞেস করা হয় আইসিইউ মানে কী, এই প্রশ্নেরউত্তর দিতে গিয়ে বলেন, যেখানে রোগীকে আইসিইউতে মানে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়, অক্সিজেন দেওয়া হয়। তাকে আবার জিজ্ঞেস করা হয় আইসিইউ মানেটা কী, তিনি উত্তর দিতে পারেননি।একটি রোগীর বিষয়ে কথা বলছিলেন মুনিয়া। উপস্থাপক তাকে জিজ্ঞেস করেন কী হয়েছিল তার? মুনিয়া বলেন, ব্রেন স্টোমাক। উপস্থাপক বুঝতে না পেরে আবার জিজ্ঞেস করেন ব্রেইন টিউমার? মুনিয়া বলেন, না; ব্রেইন স্টোমাক হয়েছে।মুনিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে তিনি ডাক্তার কী না, কেন টিকটক করেন। এর উত্তরে মুনিয়া বলেন , আমি যদি ডাক্তার না হই তাহলে কী আমাকে ঢাকা মেডিকেলে এমনি এমনি পেশেন্ট দেখতে দেয়?অভিযুক্ত তরুণী ঢাকা মেডিকেল থেকে বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভাগিয়ে নিতেন এবং সুযোগ পেলে চিকিৎসকদের রুমে ঢুকে মোবাইলসহ বিভিন্ন মালামাল চুরি করতেন। এ ছাড়া নীলক্ষেত থেকে অ‍্যাপ্রোন, আইডি কার্ড এবং মিডফোর্ড থেকে স্টেথোস্কোপ কিনে প্রতারণায় ব্যবহার করতেন এবং নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিতেন।একাধিক সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত মুনিয়া খান রোজা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটকের সেলিব্রিটি। তিনি ডাক্তার সেজে ও বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামাদি নিয়ে ঢামেকে টিকটক ভিডিও তৈরি করতেন। টিকটকে নিজেকে চিকিৎসক হিসেবেও পরিচয় দিতেন এই তরুণী।চিকিৎসকের মিথ্যা পরিচয় দেওয়া মুনিয়া খান চাঁদপুর সদরের হামান কর্দ্দি গ্রামের প্রয়াত মো. করিম খানের মেয়ে। তিনি পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে ভাড়া বাসায় থাকেন।মুনিয়া এসেছিলেন নাগরিক টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে। সেখানে তার মুখোমুখী হন আরেকজন নারী উপস্থাপক। এফএস

    Loading…