এইমাত্র
  • ‘মুমূর্ষু রোগীকে বাঁচাতে ব্যাংকে ডাকাতির চেষ্টা’
  • বাংলাদেশের হয়ে খেলতে ফিফার অনুমতি পেলেন হামজা চৌধুরী
  • ২০ বিলিয়ন ডলার ছুঁই ছুঁই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ
  • ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার নতুন করে তদন্ত হওয়া উচিত: হাইকোর্ট
  • রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ: যা বললেন জাপানের রাষ্ট্রদূত
  • নির্বাচন সংস্কার কমিশন প্রধানের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের
  • ড. ইউনূসকে পাকিস্তান সফরে শাহবাজ শরিফের আমন্ত্রণ
  • অনুমতি ছাড়াই ভারতীয় চিকিৎসকরা বাংলাদেশে চিকিৎসা করে যাচ্ছেন: ডা. রফিক
  • বাংলাদেশকে ৬৮৫ ভারতীয় বিশিষ্ট নাগরিকের খোলা চিঠি
  • কোণঠাসা জ্যোতিকা জ্যোতি, বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করলেন বাড়িওয়ালা
  • আজ বৃহস্পতিবার, ৫ পৌষ, ১৪৩১ | ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

    শিল্প ও সাহিত্য

    মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চির নিদ্রায় শায়িত কবি হেলাল হাফিজ
    রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চির নিদ্রায় শায়িত হলেন প্রেম ও দ্রোহের কবি হেলাল হাফিজ। শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের মূল দরজার বামপাশে বুদ্ধিজীবীদের জন্য নির্ধারিত কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।এর আগে, সকালে বাংলা একাডেমিতে কবি হেলাল হাফিজের প্রথম নামাজে জানাজা এবং দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা হয়।প্রসঙ্গত, শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত সুপার হোমের বাথরুমে পড়ে গিয়ে রক্তক্ষরণ হয় হেলাল হাফিজের। পরে কর্তৃপক্ষ তাকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে কবি হেলাল হাফিজ গ্লুকোমায় আক্রান্ত ছিলেন। পাশাপাশি কিডনি জটিলতা, ডায়বেটিস ও স্নায়ু জটিলতায় ভুগছিলেন।হেলাল হাফিজের জন্ম ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোণায়। তার প্রথম কবিতার বই ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয়। এ পর্যন্ত বইটির মুদ্রণ হয়েছে ৩৩ বারেরও বেশি। লেখালেখির পাশাপাশি হেলাল হাফিজ দৈনিক যুগান্তরসহ বিভিন্ন পত্রিকায় দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করেন। ১৯৮৬ সালে প্রথম কবিতাগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ প্রকাশের পর জনপ্রিয়তার শীর্ষে চলে আসেন কবি।দেশে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় হেলাল হাফিজের ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’র পঙক্তি ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ উচ্চারিত হয় মিছিলে, স্লোগানে, কবিতাপ্রেমীদের মুখে মুখে।২০১৩ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। তার আগে খালেকদাদ চৌধুরী পুরস্কারসহ নানা সম্মাননা পান তিনি।এইচএ 
    বাংলা একাডেমিতে কবি হেলাল হাফিজের প্রথম জানাজা সম্পন্ন
    কবি হেলাল হাফিজের প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় বাংলা একাডেমিতে এ জানাজা হয়।কবির দ্বিতীয় জানাজা আগামীকাল রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) বাদ জোহর জাতীয় প্রেসক্লাবে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে তাকে।কবির মরদেহ গ্রামের বাড়ি নেত্রকোণায় নেওয়া হবে না বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন কবির বড়ভাই দুলাল এ হাফিজ।এর আগে, শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে সুপার হোম নামে শাহবাগের একটি হোস্টেলে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন কবি হেলাল হাফিজ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে গ্লুকোমায় আক্রান্ত ছিলেন। পাশাপাশি কিডনি জটিলতা, ডায়াবেটিস ও স্নায়ু জটিলতায় ভুগছিলেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস কবি হেলাল হাফিজের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।শুক্রবার এক শোক বার্তায় মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, দ্রোহ ও প্রেমের কবি হেলাল হাফিজের মৃত্যু বাংলা ভাষা ও সাহিত্য অঙ্গনের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।হেলাল হাফিজের জন্ম ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনায়। তার প্রথম কবিতার বই ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয়। এ পর্যন্ত বইটির মুদ্রণ হয়েছে ৩৩ বারেরও বেশি। লেখালেখির পাশাপাশি হেলাল হাফিজ দৈনিক যুগান্তরসহ বিভিন্ন পত্রিকায় দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করেন। ১৯৮৬ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ প্রকাশের পর জনপ্রিয়তার শীর্ষে চলে আসেন কবি।২০১৩ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। তার আগে খালেকদাদ চৌধুরী পুরস্কারসহ নানা সম্মাননা পান তিনি।দেশে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় হেলাল হাফিজের ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’র পঙ্‌ক্তি ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ উচ্চারিত হয় মিছিলে, স্লোগানে, কবিতাপ্রেমীদের মুখে মুখে।এইচএ
    দেশবরেণ্য কবি হেলাল হাফিজ আর নেই
    দেশবরেণ্য কবি ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের প্রবীণ সদস্য হেলাল হাফিজ মারা গেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। ১৩ ডিসেম্বর তিনি মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সেক্রেটারি আইয়ুব ভূঁইয়া।জানা গেছে, ১৩ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে রাজধানীর শাহবাগের সুপার হোস্টেলের বাথরুমে দরজা খুলে মৃত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায় কবিকে। পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পাওয়ার পর রক্তপাত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বেলা আড়াইটার দিকে তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়।আগামীকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে তাঁর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য কবি আবিদ আজম।হেলাল হাফিজ (৭ অক্টোবর ১৯৪৮) বাংলাদেশের একজন আধুনিক কবি। তিনি বিংশ শতাব্দির শেষাংশে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তাঁর কবিতা সংকলন ‌‘যে জলে আগুন জ্বলে’ ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয়। এরপর ৩৩টিরও বেশি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে।২৬ বছর পর ২০১২ সালে আসে তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতা একাত্তর’। তাঁর অন্যতম জনপ্রিয় কবিতা ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’। এ কবিতার দুটি পঙ্‌ক্তি ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ পাঠকের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়।তিনি সাংবাদিক ও সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় কাজ করেছেন। ২০১৩ সালে তিনি বাংলা একাডেমি সহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন।আরইউ
    হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে নেত্রকোনায় হিমু উৎসব আজ
    আজ ১৩ নভেম্বর। দেশবরেণ্য লেখক হুমায়ুন আহমেদ এর ৭৬তম জন্মদিন। আর এ দিনে প্রতিবারের মতো এবারও পালিত হচ্ছে হিমু উৎসব। লেখকের নিজ জেলা নেত্রকোনায় তারুণ্য নির্ভর সংগঠন হিমু পাঠক আড্ডার আয়োজনে দিনব্যাপী হিমু উৎসবের মেতে উঠবে জেলা শহর। তরুণ পাঠক ভক্তরা প্রতিবারের ন্যায় এবারো দিবসটিতে হিমু-রূপা সেজে পায়ে হেঁটে অতিক্রম করবে দুই কিলোমিটার সড়ক। বিভিন্ন বয়সের কবি, লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা হিমু উৎসবের প্রথমার্ধে শোভাযাত্রা বের করবে। সাতপাই অস্থায়ী কার্যালয় থেকে শোভাযাত্রাটি মোক্তারপাড়া মাঠে গিয়ে শেষ হবে। পরে কেক কাটার মধ্য দিয়ে দিবসের সূচনা করা হবে। সন্ধ্যায় রয়েছে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন।তারুণ্য নির্ভর সামাজিক সংগঠন হিমু পাঠক আড্ডার আয়োজনে বুধবার(১৩ নভেম্বর) সকালে ১১ টায় সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয় সাতপাই থেকে হলুদ পাঞ্জাবিতে হিমু আর নীল শাড়িতে রূপা সেজে লেখকের নাটক সিনেমায় ব্যবহৃত গানের সাথে নেচে গেয়ে মোক্তারপাড়া মুক্তমঞ্চ পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার হেঁটে অতিক্রম করবে। সেখানে হিমু-রূপাদের নিয়ে কেক কাটবেন জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস ও পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদ। পরে সন্ধ্যা সাত টায় হিমু পাঠক আড্ডার আয়োজনে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় আড্ডায় আড্ডায় লেখকের তৈরি নাটক সিনেমায় ব্যবহৃত কালজয়ী গান ও নৃত্য পরিবেশিত হবে। শিল্পকলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে আড্ডায় আড্ডায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে লেখক সম্পর্কে আলোচনা করবেন স্থানীয় কবি লেখক সাহিত্যিকরা। মূলত প্রতিবছর নতুন প্রজন্মের মাঝে হুমায়ুন আহমেদ এর সাহিত্য সংস্কৃতি আনন্দের ছলে এবং লেখকের আকর্ষণীয় কাল্পনিক চরিত্রের রূপায়নের মাধ্যমে তুলে ধরাই লক্ষ্য।বর্তমান তরুণ প্রজন্মের মাঝে বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় তাদেরকে সাহিত্যের প্রতি আকর্ষণ বাড়াতেই লেখকের এমন কাল্পনিক চরিত্রের কার্যক্রম ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা মাত্র জানালেন আয়োজক সদস্য সৈয়দা নাজনীন সুলতানা সুইটি। তিনি বলেন, দীর্ঘ প্রায় এক যুগ ধরে চলা এই উৎসব এখন সকলের উৎসবে পরিণত হয়েছে। আর এই আয়োজনকে ঘিরে এক মাস ধরে প্রস্তুতি চলে। যে প্রস্তুতিতে হলুদ টি শার্ট করা হয়। এই টি শার্টে প্রতি বছর লেখকের এক একটি শিক্ষনীয় উক্তি লিখা থাকে। আমাদের নতুন প্রজন্ম তারা প্রতিযোগিতা করে এসকল উক্তি থেকে একটা উক্তি বাছাই করে। এতে তাদের মধ্যে একটা সহনীয় মনোভাব তৈরি হয়। সাহিত্যকে জানা হয়। একজন অন্যজনের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া শেখে। এসব কর্মকাণ্ড দিয়েই প্রায় মাসব্যাপী ছেলে মেয়েদেরকে আমরা ব্যস্ত রাখতে পারি। হিমু রিফাত আহম্মেদ রাসেল জানান, হলুদ টি শার্ট পড়া বড় ব্যাপার না। বড় ব্যপার হচ্ছে এই টি শার্টের গায়ের লিখাটা। এটি মানুষ দেখে জানে। এতে হুমায়ুন চর্চা যেমন হয় তেমন নতুনেরা জানতে পারে অন্য লেখকদের সম্পর্কেও।হিমু পাঠক আড্ডার প্রতিষ্ঠাতা আলপনা বেগম জানান, একটি আয়োজনকে ঘিরে মাসব্যাপী কার্যক্রমে এখন শহরবাসীও প্রস্তুত থাকে প্রতিবছর।  এর সাথে প্রশাসন থাকেন। অনেকে হুমায়ুন আহমেদকে শুধু পড়েছেন। কিন্তু এভাবে তাকে স্মরণ করার মধ্য দিয়ে জানা টাকেও নতুন করে গ্রহণ করছেন।বিশেষ করে এ অঞ্চলের ছেলে মেয়েরা যেন এক বাক্যে হুমায়ুন আহমেদ সম্পর্কে ইন্টারভিউ বা যে কোন স্থানে বক্তব্য তুলে ধরতে পারে এই প্র‍্যাকটিসটিও হচ্ছে আমাদের এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে।এক বরেণ্য ব্যক্তির উৎসব প্রতি বছর অপর বরেণ্য বুদ্ধিজীবী সংগঠনের উপদেষ্টা অধ্যাপক যতীন সরকার উদ্বোধন করেন। বর্তমানে প্রতি বছর দিনটি তরুণ প্রজন্মের সাথে বিভিন্ন প্রজন্মের একটি মেল বন্ধন ঘটার দিনে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও লেখকের জন্মস্থান নানার বাড়ি জেলার মোহনগঞ্জের শেখ বাড়িতে ও লেখকের পৈত্রিক ভিটা কেন্দুয়ার কুতুবপুরে লেখক প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপিঠে দোয়া মাহফিল করা হবে। উল্লেখ্য, লেখক হুমায়ুন আহমেদ এই দিনে মায়ের প্রথম সন্তান হওয়ায় নানার বাড়ি মোহনগঞ্জের শেখ বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। নানার বাড়িতে থাকার আরও একটি কারণ ছিলো। হুমায়ুন আহমেদ এর পিতা সরকারি চাকুরী করার স্ত্রীকে শ্বশুর বাড়িতেই রেখে যেতেন। পরবর্তীতে ২০১২ সনের ১৯ জুলাই তিনি আমেরিকায় মারা যান।  এমআর
    বইমেলা শুধু বাংলা একাডেমিতে, বরাদ্দ মেলেনি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান
    বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়েছে অমর একুশে বইমেলা। তবে এবার বইমেলার পরিধি শুধু বাংলা একাডেমিতেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।একাডেমিকে পাঠানো গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।গত ৬ নভেম্বরের ওই চিঠিতে বলা হয়, গত বছরের ২১ নভেম্বরের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিবর্তে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণেই অমর একুশে বইমেলা-২০২৫ আয়োজন করতে হবে। এ বিষয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একুশে বইমেলার অনুমতি দেয়নি গণপূর্ত ও গৃহায়ণ মন্ত্রণালয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাড়া বইমেলা জমবে না, এটার অনুমতি নিতে হবে। তার জন্য আবার বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে আপিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই করতে চাই।’গত এক দশক ধরে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলার আয়োজন হয়ে আসছে। চলতি বছর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে এ আয়োজন হয়।এসএফ
    'ছড়ার জাদুকর' খ্যাত সুকুমার রায়ের আজ জন্মদিন
    বাঙালির শৈশব মানেই কিন্তু সুকুমার রায়। তাঁর ছোঁয়ায় ছোটরা পেয়েছে অচেনা এক জগতের সন্ধান। যেখানে রয়েছে নির্মল আনন্দ, অফুরান মজার স্বাদ। তিনি ছিলেন একজন বাঙালি শিশুসাহিত্যিক ও ভারতীয় সাহিত্যে ‘ননসেন্স ছড়া’র প্রবর্তক। তিনি একাধারে লেখক, ছড়াকার, শিশুসাহিত্যিক, রম্যরচনাকার, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার ও সম্পাদক। তার পুত্র খ্যাতিমান ভারতীয় চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়।  তিনি বাংলা সাহিত্যের বিস্ময়। তিনি যতটা সাহিত্যমনস্ক, ততটাই সমাজ ও বিজ্ঞানমনস্ক। তিনি বিজ্ঞানের কৃতী ছাত্র ছিলেন। সাহিত্য জগতে বাবার পথ অনুসরণ করেছিলেন সুকুমার। তাঁর প্রতিটি বই আজও পাঠকমহলে সমাদৃত। তবে একটি বইও তিনি নিজে দেখে যেতে পারেননি। প্রথম বই 'আবোল তাবোল' প্রকাশের আগেই চলে যান না ফেরার দেশে। আজ ৩০ অক্টোবর তাঁর জন্মদিন।     সুকুমার রায় ১৮৮৭ সালের এই দিনে কলকাতার এক দক্ষিণ রাঢ়ী কায়স্থ বংশীয় ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বাংলা শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর পুত্র। তার মা বিধুমুখী দেবী ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের মেয়ে। তার আদিনিবাস বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ মহকুমার (বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলা) কটিয়াদি উপজেলার মসূয়া গ্রামে। মসূয়াতে বসবাসের আগে তার পূর্বপুরুষের আদিনিবাস ছিল অধুনা পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার অন্তর্গত চাকদহে। সুবিনয় রায় ও সুবিমল রায় তার দুই ভাই। এ ছাড়াও তার তিন বোন ছিল, তারা হলেন সুখলতা, পুণ্যলতা ও শান্তিলতা।সুকুমার রায় জন্মেছিলেন বাঙালি নবজাগরণের স্বর্ণযুগে। তার পারিবারিক পরিবেশ ছিল সাহিত্যানুরাগী, যা তার মধ্যকার সাহিত্যিক প্রতিভা বিকাশে সহায়ক হয়। পিতা উপেন্দ্রকিশোর ছিলেন শিশুতোষ গল্প ও জনপ্রিয়-বিজ্ঞান লেখক, চিত্রশিল্পী, সুরকার ও শৌখিন জ্যোতির্বিদ। উপেন্দ্রকিশোরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি সুকুমারকে সরাসরি প্রভাবিত করেছিলেন। এ ছাড়াও রায় পরিবারের সাথে জগদীশ চন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রমুখের সম্পর্ক ছিল। উপেন্দ্রকিশোর ছাপার ব্লক তৈরির কৌশল নিয়ে গবেষণা করেন, এ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান এবং মানসম্পন্ন ব্লক তৈরির একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। মেসার্স ইউ. রয় অ্যান্ড সন্স নামে ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সুকুমার যুক্ত ছিলেন।তিনি গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর কলকাতার সিটি স্কুল থেকে এন্ট্রাস পাস করেন। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে রসায়ন ও পদার্থবিদ্যায় বিএসসি (অনার্স) করার পর সুকুমার মুদ্রণবিদ্যায় উচ্চতর শিক্ষার জন্য ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে বিলেতে যান। সেখানে তিনি আলোকচিত্র ও মুদ্রণ প্রযুক্তির ওপর পড়াশোনা করেন এবং কালক্রমে তিনি ভারতের অগ্রগামী আলোকচিত্রী ও লিথোগ্রাফার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। শিশুসাহিত্যিক হিসেবে পৌঁছেছিলেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। মাত্র আট বছর বয়সে তাঁর প্রথম কবিতা‘নদী’ প্রকাশিত হয়‘মুকুল’ পত্রিকার ১৩০২ জ্যৈষ্ঠ সংখ্যায়। তবে যেটুকু জানা যায়, ছাত্রাবস্থায় বিশেষ সাহিত্যচর্চা করেননি। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে সুকুমার কলকাতাতে ফিরে আসেন। সুকুমার ইংল্যান্ডে পড়াকালীন, উপেন্দ্রকিশোর জমি ক্রয় করে, উন্নত-মানের রঙিন হাফটোন ব্লক তৈরি ও মুদ্রণক্ষম একটি ছাপাখানা স্থাপন করেছিলেন। ১৯১৩ সালে উপেন্দ্রকিশোরের সম্পাদনায় ছোটদের একটি মাসিক পত্রিকা ‘সন্দেশ’ বেরোয়। তখন থেকেই মূলত সুকুমারের সাহিত্যের আঙিনায় প্রবেশ। ২৬ বছর বয়সে। মাত্র দুই বছর যেতে না যেতেই উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যু। উপেন্দ্রকিশোর জীবিত থাকতে সুকুমার লেখার সংখ্যা কম থাকলেও উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যুর পর সন্দেশ পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব সুকুমার নিজের কাঁধে তুলে নেন। শুরু হয় বাংলা শিশুসাহিত্যের এক নতুন অধ্যায়। পিতার মৃত্যুর পর আট বছর ধরে তিনি সন্দেশ ও পারিবারিক ছাপাখানা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। তার ছোট ভাই এই কাজে তার সহায়ক ছিলেন এবং পরিবারের অনেক সদস্য ‘সন্দেশ’-এর জন্য নানাবিধ রচনা করে তাদের পাশে দাঁড়ান।তবে খুব দীর্ঘ হয়নি সেই যাত্রা। তাঁর সাহিত্য চর্চা শেষ হয় মাত্র দশ বছরের পরিসরেই। রোগশয্যায় শেষ আড়াই বছর বিশেষভাবে সৃজনশীল ছিলেন। সুকুমার রায়ের স্বল্পস্থায়ী জীবনে তার প্রতিভার শ্রেষ্ঠ বিকাশ লক্ষ্য করা যায়। ‘সন্দেশ’র সম্পাদক থাকাকালীন তার লেখা ছড়া, গল্প ও প্রবন্ধ আজও বাংলা শিশুসাহিত্যে মাইলফলক হয়ে আছে। তার বহুমুখী প্রতিভার অনন্য প্রকাশ তার অসাধারণ ননসেন্স ছড়াগুলোতে। তার প্রথম ও একমাত্র ননসেন্স ছড়ার বই ‘আবোল তাবোল’ শুধু বাংলা সাহিত্যে নয়, বরং বিশ্বসাহিত্যের অঙ্গনে নিজস্ব জায়গার দাবিদার।প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় তিনি ননসেন্স ক্লাব নামে একটি সংঘ গড়ে তুলেছিলেন। এর মুখপাত্র ছিল সাড়ে বত্রিশ ভাজা নামের একটি পত্রিকা। সেখানেই তার আবোল-তাবোল ছড়ার চর্চা শুরু। পরবর্তীতে ইংল্যান্ড থেকে ফেরার পর মানডে ক্লাব (ইংরেজি ভাষা: Monday Club) নামে একই ধরনের আরেকটি ক্লাব খুলেছিলেন তিনি। মানডে ক্লাবের সাপ্তাহিক সমাবেশে সদস্যরা ‘জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ’ পর্যন্ত সব বিষয়েই আলোচনা করতেন। সুকুমার রায় মজার ছড়ার আকারে এই সাপ্তাহিক সভার কয়েকটি আমন্ত্রণপত্র করেছিলেন সেগুলোর বিষয়বস্তু ছিল মুখ্যত উপস্থিতির অনুরোধ এবং বিশেষ সভার ঘোষণা ইত্যাদি।ইংলান্ডে থাকাকালীন তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের বিষয়ে কয়েকটি বক্তৃতাও দিয়েছিলেন, রবীন্দ্রনাথ তখনো নোবেল পুরস্কার পাননি। ইতোমধ্যে সুকুমার লেখচিত্রী/প্রচ্ছদশিল্পীরূপেও সুনাম অর্জন করেছিলেন। তার প্রযুক্তিবিদের পরিচয় মেলে, নতুন পদ্ধতিতে হাফটোন ব্লক তৈরি আর ইংল্যান্ডের কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত তার প্রযুক্তি বিষয়ক রচনাগুলো থেকে।সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল কার্য ছাড়াও সুকুমার ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের সংস্কারপন্থি গোষ্ঠীর এক তরুণ নেতা। ব্রাহ্ম সমাজ, রাজা রামমোহন রায় প্রবর্তিত একেশ্বরবাদী, অদ্বৈতে বিশ্বাসী হিন্দুধর্মের এক শাখা যারা ৭ম শতকের অদ্বৈতবাদী হিন্দু পুরান ঈশ-উপনিষদ মতাদর্শে বিশ্বাসী। সুকুমার রায় ‘অতীতের কথা’ নামক একটি কাব্য রচনা করেছিলেন, যা ব্রাহ্ম সমাজের ইতিহাসকে সরল ভাষায় ব্যক্ত করে - ছোটদের মধ্যে ব্রাহ্ম সমাজের মতাদর্শের উপস্থাপনা করার লক্ষ্যে এ কাব্যটি একটি পুস্তিকার আকারে প্রকাশ করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি ওই সময়ের সবথেকে প্রসিদ্ধ ব্রাহ্ম ছিলেন, তার ব্রাহ্মসমাজের সভাপতিত্বের প্রস্তাবের পৃষ্ঠপোষকতা সুকুমার করেছিলেন।১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে কালাজ্বরে (লেইশ্মানিয়াসিস) আক্রান্ত হয়ে মাত্র পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে সুকুমার রায় মৃত্যুবরণ করেন। সে সময় এই রোগের কোনো চিকিৎসা ছিল না। তার মৃত্যু হয় একমাত্র পুত্র সত্যজিত এবং স্ত্রীকে রেখে। সত্যজিত রায় ভবিষ্যতে একজন ভারতের অন্যতম চলচ্চিত্র পরিচালকরূপে খ্যাতি অর্জন করেন ও নিজের মৃত্যুর ৫ বছর আগে ১৯৮৭ সালে সুকুমার রায়ের উপরে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রযোজনা করেন।এবি 
    বৈপরীত্য
    বৈপরীত্যএস এম আবু নাছেরযে মানুষটা প্রেম বিলায়, তারও প্রেমের কমতি হয়ভালোবাসার প্রাপ্তিতে হরেক পদের ঘাটতি হয়,প্রাণোচ্ছ্বল মানুষটারও মন কখনও খারাপ হয়কষ্ট পুষে, অপ্রকাশিত আবেগের জোয়ার বয়।আপন করে ভাবে যারা, তারও পর হতে সাধ হয়।খুব দূরে চুপটি করে, আপনাতে বিলীন রয়। খুব মিশুক মানুষটাও মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়সবকিছু মানিয়ে নিতে দম বুঝি বন্ধ হয়,অসহনীয়, অস্থিরতায় কাটে যখন দিনঘড়িতবুও তাদের মানাতেই হয়, বিভেদ ভুলে তাড়াতাড়ি।যে মানুষটা স্বপ্ন দেখায়, সাহসের গল্প শোনায়তারও আবার দুঃস্বপ্নে, বিশ্বাসের অভাব ঘটায়।যে মানুষটা আবেগ দিয়ে আগলে রাখে সবকিছুতারও আবার উটকো ঝড়ে ভেঙে যায় বেশ কিছু,খুব শক্ত, কঠিন মনের, বাইরে যার এক অবয়বতারও দেখি হৃদ মাঝারে উঁকি দেয় প্রেম সরোবর।ভাবছো বুঝি, এত কেন লুকোচুরি, বৈপরীত্যের ফুলঝুড়ি?এরই মাঝে লুকিয়ে আছে, মানব মনের ফুলকুঁড়ি।অল্প, আলতো স্নেহের পরশ, একটু শ্রদ্ধা আস্থা পেলেসে মানুষটিই ভেংগেচুরে যায় সব অভিমান দূরে ফেলে,সে মানুষের বুকের মাঝে বয়ে চলে এক আস্ত নদীভালোবাসা আর বিশ্বাসের ঝর্ণা বয় নিরবধি। (কবি: এস এম আবু নাছের, ব্যাংকার, গবেষক ও লেখক)
    বাউল সম্রাট শাহ্ আব্দুল করিমের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
    বাউলসম্রাট শাহ আব্দুল করিমের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৯ সালের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। এই বাউল সাধকের গাওয়া ‘বন্দে মায়া লাগাইছে’, ‘বসন্ত বাতাসে সই গো’, ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’, ‘কেন পিরিতি বাড়াইলারে’, ‘তুমি মানুষ আমিও মানুষ’, ‘রঙের দুনিয়া তরে চায় না’, ‘প্রাণে সহে না দুঃখ বলব কারে’, ‘কোন মেস্তরি নাও বানাইল’, ‘ওরে ভব সাগরের নাইয়া’, ‘মাটির পিঞ্জিরায় সোনার ময়নারে’, ‘সখী কুঞ্জ সাজাও গো’, ‘কেমনে ভুলিব আমি বাঁচি না তারে ছাড়া’ প্রভৃতি গানগুলো এখনও দেশের মানুষের মুখে মুখে।এর মধ্যে ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’ গানটি বেশ শ্রোতাপ্রিয়। যেখানে তিনি অতীতের স্মৃতিতে ভেসেছেন। তোলে ধরেছেন গ্রাম-বাংলার অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা।  গানটি নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে এই বাউলসম্রাটকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল—‘আপনার একটা বিখ্যাত গানই আছে যেখানে বর্তমান ও অতীতের একটা চমৎকার তুলনা টেনে এনেছিলেন। গানের প্রথম দিকটা বোধ হয় এইরকম—‘গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান/ মিলিয়া বাউলাগান আর মুর্শিদী গাইতাম/ আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম।’ সন্দেহ নেই গানটা মর্মস্পর্শী। কিন্তু একটা বিষয় এখানে লক্ষণীয়, মনে হয় আপনি যেন তুলনামূলকভাবে অতীতমুখী; বর্তমান আপনার কাছে বিশ্রী এবং বিভৎস। বর্তমান থেকে এ রকম মুখ ফেরালেন কেন?’উত্তরে শাহ আব্দুল করিম বলেছিলেন, ‘বর্তমান আমার কাছে গৌণ কোনো বিষয় নয়। আমার চোখের সামনে এই পরিবেশ-পরিপার্শ্ব আমূল বদলে গেছে। নগরায়ন ও যন্ত্রসভ্যতার বিকাশ মানুষের জীবনযাত্রার মানকে পরিবর্তন করেছে। আমি একে খারাপ চোখে দেখি না। কিন্তু আমার কান্না পায়, ভেতরে তীব্র হাহাকার অনুভব করি চোখের সামনে অবিকল যন্ত্র হয়ে উঠলো মানুষগুলো। ‘মন’ বলতে আমরা যে জিনিসটাকে বুঝাই সেটার চিহ্নমাত্র থাকল না আর। তা ছাড়া সবচেয়ে আক্ষেপ লাগে যখন দেখি এই বিজ্ঞান বা যন্ত্রসভ্যতার ফল ভোগ করছে কয়েকজন হাতেগোনা কোটিপতি। এই যন্ত্রসভ্যতা ফলত ধনী-গরিবের মধ্যকার বৈষম্যকে আকাশ-পাতাল পর্যায়ে উন্নীত করেছে। আপনারা আমার গাঁয়ে এসেছেন, দেখে যান এখানে, এই বিশাল ভাটি অঞ্চলজুড়ে মানুষগুলো কী অপরিসীম দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে বাস করে। যখন মাঝেমাঝে শহরে স্তম্ভিত হয়ে এই ব্যবধান লক্ষ্য করি। লোকে কয়, আমি নিরণ্ণ দুঃস্থ মানুষের কবি। আমি আসলে তাক ধরে দুঃস্থদের জন্য কিছু লিখিনি। আমি শুধু নিজের কথা বলে যাই, ভাটি অঞ্চলের একজন বঞ্চিত নিঃস্ব দুখী মানুষ আমি, আমার কথা সব হাভাতে মানুষের কথা হয়ে যায়… দ্যাখেন তো এই অঞ্চল ঘুরে, মানুষের আয়ের কোনো উৎস আছে কিনা? (করিম শাহ ক্রমশ উত্তেজিত এবং তাঁর চোখ দুটো আর্দ্র হয়ে উঠছে) চারদিকে ভাসান পানি। জলে থৈথৈ করছে প্রতিটি বাড়ির উঠান। মানুষ কী খেয়ে বাঁচবে? (করিম শাহের চোখে অশ্রুধারা) দিনে তিনবেলা নয়, শুধু একবেলা যদি দু’মুঠো খেতে না পারে, এই জন্ম কি মানুষের জন্ম?’‘এই পৃথিবীটা একদিন বাউলের হবে’‘এই পৃথিবীটা একদিন বাউলের হবে’প্রসঙ্গত, ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাই থানার ধলআশ্রম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন লোকগানের এই কিংবদন্তি শিল্পী। তাঁর বাবার নাম ইব্রাহীম আলী ও মা নাইওরজান।আব্দুল করিম জীবনভর তাঁর গানে অবহেলিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির কথা বলে গেছেন। তাঁর গানে যেমন প্রেম-বিরহ ছিল, তেমনি ছিল খেটেখাওয়া মানুষের কথা। একই সঙ্গে আধ্যাত্মিক ভাবনাও রয়েছে এই শিল্পীর সৃষ্টিকর্মজুড়ে।এসএফ 
    বিতর্কে জড়ালেন শিল্পকলার নতুন ডিজি
    বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক (ডিজি) পদে নিয়োগ পেয়েছেন সৈয়দ জামিল আহমেদ। আজ মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে একাডেমিতে যোগদানও করেছেন।সৈয়দ জামিল আহমেদের সাম্প্রতিক একটি বক্তব্য বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তার সেই বক্তব্য ঘিরে ব্যাপক সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এরই মধ্যে তাকে ‘স্বৈরাচারের দোসর’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।ওয়াজ-মাহফিলের বিরুদ্ধে নাট্যকর্মীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘আমরা কীভাবে ওয়াজ-মাহফিলের বিরুদ্ধে আমাদের নাটকটাকে আরও জোরদার করতে পারি। এই কাজগুলো করতে হবে আমাদের। আমাদের অভিনয়ের মান, প্রযোজনার মান বাড়াতে। এই জায়গাগুলো যদি আমাদের ঠিক থাকে, দর্শক যদি আসে বাদবাকি জায়গাগুলো আমরা রাষ্ট্রের কাছে চাইলে, জনগণবান্ধব রাষ্ট্র আছে আমাদের কাছে, ভয় পাওয়ার দরকার নেই। আমাদের বলার দরকার যে, এই জায়গাগুলো আমাদের দরকার।’নারীকের বোরকা পরার বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান জানিয়ে সৈয়দ জামিল আহমেদের বলেন, ‘আমি যদি সুযোগ পাই, আমি চাইব যেন সেখানে জামায়াত আসে। এজন্য জামায়াত বলুক না, কেন মেয়েকে এখনো ২০২৪ সালে বোরকা পরতে হবে। তারা আমাদের…. কনভেন্স করবে কেন ২০২৪ সালে শরীয়তি রাষ্ট্রব্যবস্থা দরকার। কারণ কোরআনে বলা আছে, “তুমি তোমার কোনো নারীর দিকে চোখ পড়লে দৃষ্টি নামাও”। তো আমি যদি দৃষ্টিটা নামাই, তাহলে আমি যদি সংযত হই, আমি যদি দৃষ্টির লাগাম ধরি, তাহলে কেন নারীকে মাথায় বোরকা দিতে হবে?” এই কথাটার উত্তর জামায়াতকে দিতে হবে এবং সেটা দাবি করতে হবে।’এমন বক্তব্যের পর সৈয়দ জামিল আহমেদকে ‘স্বৈরাচারের দোসর’ উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রশ্ন তুলেছেন, তিনি কীভাবে শিল্পকলা একাডেমির ডিজি হন?রিজভী বলেন, ‘আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি কেউ কেউ আবার বলছে, শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপ করা দরকার দেশে একটি স্থিতিশীল পরিবেশের জন্য। কেন? হিটলারের সঙ্গে কি সংলাপ করা যায়? আবার আমরা ইয়াহিয়া খান, টিক্কা খানকে ডেকে নিয়ে এসে সংলাপ করব? এসব বলা লোক সৈয়দ জামিল আহমেদকে শিল্পকলা একাডেমির ডিজি বানানো হয়েছে। এগুলো হচ্ছে কেন? তিনি কয়েকদিন আগে বলেছেন, পালিয়ে থাকা রামেন্দু মজুমদার, নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু-এদের নিয়ে আসা দরকার। আমার প্রশ্ন তারা পালিয়েছে কেন? তারা আত্মগোপনে আছে কেন?’এফএস
    বাংলা একাডেমির নতুন মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম
    বাংলা একাডেমির নতুন মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ড. মোহাম্মদ আজম।বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রপ্রতির আদেশক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মুহাম্মদ ইব্রাহীম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা গেছে।নিয়োগ বিষয়ে ড. মোহাম্মদ আজমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে বিষয়টি জানিয়েছে।মোহাম্মদ আজমের জন্ম ১৯৭৫ সালের ২৩ আগস্ট নোয়াখালীর হাতিয়ায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে বাংলা ভাষার উপনিবেশায়ন ও বিউপনিবেশায়ন নিয়ে গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। আগ্রহের বিষয় সাহিত্য, নন্দনতত্ত্ব, ইতিহাস, রাজনীতি ও সংস্কৃতি অধ্যয়ন।ড. মোহাম্মদ আজমের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘বাংলা ও প্রমিত বাংলা সমাচার’, সম্পাদিত গ্রন্থ ‘নির্বাচিত কবিতা: সৈয়দ আলী আহসান’, ‘কবি ও কবিতার সন্ধানে’।এসএফ
    স্বপ্ন
    মধ্যরাতে ঘুম ভেঙে যায় অরজিতের। সে স্বপ্ন দেখছিল, বিশাল দেহাকৃতি এক মানব শম্ভুর। যার অবয়ব জুড়ে ছোট ছোট মানুষের অবাধ বিচরণ। কেউ বুক পকেটে, কেউ কাঁধে, কেউ নাকের ডগায়, কেউবা আবার কোমরে-পাঁজরে।যার সমস্ত শরীর জুড়ে ছোট ছোট মানুষ বসবাস করছে। অরজিত একটু আগেই তার দেখা স্বপ্নের স্মৃতিচারণ করতে চেষ্টা করে। কিছু স্পষ্ট আবার কিছু অস্পষ্টতা তাকে ঘিরে বেশ ভাবিয়ে তোলে। এমন স্বপ্ন মানুষ দেখে!  দেখে তো, না দেখলে অরজিত এমন স্বপ্ন দেখলো কেনো?   দৈত্যাকৃতি শম্ভুর শরীরে, বসবাসরত পিচ্চি-পিচ্চি মানুষের অবাধ বিচরণ, চোখের দৃষ্টি, দিক বিদিক ঘুরছে। টহল দিচ্ছে, তাদের দৃষ্টিসীমার মধ্যে সপ্তাচার্য কিছু ঘটছে। মাঝে মধ্যে কানের কাছে গিয়ে ফিস ফিস করে কী যেন বলছে, তা অরজিত বুঝতে পারে না। জোনাথন সুইফটের গালিভার ট্রাভেলসের কথা মনে পড়ে যায়। লিলিপুটের চরিত্রগুলো তাকে ভাবিয়ে তোলে। অবিকল সে গল্পের দায়ভার অরজিতের ঘাড়ে চেপে বসে। সে আন্দাজ করে, পিচ্চি পিচ্চি মানুষের কান কথায়; শম্ভু তার দৈনন্দিন কার্যাদি সম্পাদন করে।  অরজিত ঘুমিয়ে যায়। স্বপ্ন দেখা শুরু হয়। পাহাড়ের চূড়ায় সে বসে আছে। সামনের উচু পাহাড় চূয়ে ঝরনা ঝড়ছে। চমৎকার দৃশ্য। পাথরের বুকে ঝরনার আছড়ে পড়ার শব্দ মুহূর্তে মুহুর্তে অরজিত পুলকিত হয়। নয়নাভিরাম সে দৃশ্যের মূর্ছনায় নিজেকে বিমোহিত করে তোলে। জোসনার আলো এসে পড়ে অরজিতের গায়। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই তার। অপলক চেয়ে আছে ঝরনার দিকে। এক সময় মনে হয় কেউ একজন পাথরে বসে স্নান করছে। বিচলিত হয়ে আবিস্কার করে। সত্যিই তো; এক মানবী। অপরুপ সৌন্দর্যের রঙ মেখে সে জোসনা জলে স্নান করছে। অরজিত চুপিসারে একটু এগিয়ে যায়। ঝোপের আড়াল থেকে অবলোকন করে।এমন সুন্দর দৃশ্য যেন অরজিতের পৃথিবীতে আর একটিও নেই। কখনও সে কল্পনাও করতে পারেনি; মানুষ এতো সুন্দর হয়! অরজিত আবিষ্কার করে তার চোখে জোসনার আলো যেন এই মুহূর্তে মৃত। সেখানে ঝরনার জলে যে সরবর স্রোতসিনি জলের ধারা তৈরি হয়েছে সে সরবর জল-মানবীর রুপে আলোকিত। জলের কলকলানিতে রুপালি ঢেউ। লতা-গুল্মে জলের ফোটা পড়ে চিকিচিক করছে; মন ভরে দৃশ্যগুলো অরজিত দেখে যায়। শান্তির শীতল বাতাস তার গায়ে লাগে, ভালো লাগার পেখমগুলো মেঘের গর্জনে ডানা মেলতে থাকে।   নির্ভয়ে অবয়বের ভাজ খুলে রুপসি স্নান করছে। ভিখুর চোখ মেলে অরজিত ঝোপের আড়াল থেকে স্নান করা দেখে যায়। নয়নাভিরাম দৃশ্য দুচোখের পাতা মেলে উপভোগ করার মতো আনন্দ, সুখ পৃথিবীতে দ্বিতীয় নেই। ধিরে ধিরে অরজিত জোসনা স্নানে এগিয়ে গিয়ে থেমে যায়। এতোক্ষণ যেটাকে পাথর ভেবে নিয়েছিল সেটা আসলে পাথর না; সেই বিশাল দেহাকৃতি, দৈত্যরুপি শম্ভু। আতংকে বিছানায় বসে পড়ে অরজিত। কী দেখলাম! এমন স্বপ্ন দেখলাম কেন? আবারও প্রশ্নের ঝড় তাকে খুব ভাবিয়ে তোলে। এ রাতে আর ঘুমানো যায় না। এমন অদ্ভূত স্বপ্ন তার ঘুমের ঘোরে প্রবেশ করে কেন? ভাবতে পারে না। স্বপ্নের ভেতর সেই ভয়ঙ্কর মানুষটির মাথায় বসে অপরুপ সুন্দরী নারী জোসনা জলে স্নান করছে। বড়ই আশ্চর্য হয় অরজিত।  ধারাবাহিক স্বপ্নের সে রাতে আর ঘুম আসে না অরজিতের। বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। রাতের পৃথিবী এ নগরীতে স্থবির হয়ে আছে। চোখের সীমানায় একটি কাক পক্ষিও নেই জেগে থাকার; সোনার কাঠি রুপার কাঠি দিয়ে রাজকন্যাকে যেন ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে। এ এক ঘুমন্ত শহর। দিনের আলোয় মানুষের কোলাহল। রঙ বেরঙের মানুষের বসবাস অথচ এই রাতের গভিরে একটি মানুষও নেই জেগে থাকার। মাঝে মধ্যে নিজের শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ যেন নিজের কানটাকে ভারি করে তুলছে।  বেলকুনিতে পায়চারি করে কোন লাভ হয় না তার। অঘুমে শরীরটা বাতাসে দোলে; কৌশলে নিজেকে গুটিয়ে; হাই তোলে। রাত বাড়ে। ঝিঁঝিঁদের ডাক নেই, নগরের কুকুরগুলো ঝিমিয়ে পড়েছে অথচ অরজিত! অরজিত ঘুমাতে পারে না। অবাঞ্চিত স্বপ্নের অনুপ্রবেশের ধারাবাহিকতায় সে অস্থির হয়ে ওঠে। পায়চারি করে বেলকুনিতে। নাহ, ঘুম আসে না। আধো আলো-অন্ধকারে বিছানায় নিজেকে এলিয়ে দেয়।অরজিত অদূরে পদ্মাসনে বসে দেখছে। দেখছে, শম্ভু হাত জোড় করে, হাটু গেরে বসে প্রার্থনা করছে। শম্ভুর এমন দৃশ্যে অরজিত আশ্চর্য হয় এই ভেবে যে, শম্ভু এ নগর পিতা। তার হুকুম ছাড়া গাছের কাক ডাল থেকে নড়ে না, তাকে দেখে শিশুর কান্না স্তব্ধ হয়ে যায়। সেই শম্ভু হাত জোর করে বসে আছে! হঠাৎ করে কিছু অমিয় বাণী ভেসে আসে। শব্দ চয়ন, বাচন ভঙ্গি অরজিতের ভাল লাগে। উৎসুক হয়ে খুঁজে বেড়ায়; সে বাণী কোনদিক থেকে ভেসে আসছে। অল্পক্ষন পরে আবিস্কার হয়, বেদীতে বসে সেই মানবী। যাকে স্নানরতাবস্থায় শম্ভুর মাথায় দেখেছিল। ভাললাগার সব ফুল খুশিতে নেচে ওঠে। সুবাস বিলিয়ে দেয়। দুচোখ বন্ধ করে অরজিত সুবাতাস গ্রহন করে। আশ্চার্য! সেই মায়াবী এখানে!অরজিত এগিয়ে যায়। অবুঝ বালকের মতো হাটু গেরে বসে পড়ে। দুহাত নত করে প্রার্থনা করে। তার প্রার্থনায় তাবৎ উপাসনালয় শান্ত হয়ে যায়। কিছুক্ষণের জন্য বরফ ঢাকা গালিচায় জড়িয়ে নেয় উপাসনালয়ের সভাসদগণ।  ঈশ্বর বেচা-কেনার এই মঞ্চে অরজিত বড় নগন্য, বড়ই বেমানান তবু নির্দিধায় প্রার্থনা করে- মাগো, কৃপা করো। শান্ত শিতল যাদুর কন্ঠ ভেসে আসে- ওঠো অরজিত। তুমি এখানে, কী চাই তোমার?-যুগে যুগে তুমি বেদীতে বসে রাজত্ব করো পৃথিবীর, আর আমি শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। শতবর্ষ দাসত্ব আর শোষণের দায় ঠেলে; এখনো মানুষ শোষণের শিকার, রুখে দাঁড়াবার শক্তি নেই; দুর্বল চিত্তে শক্তির যোগান চাইতে, অবহেলিত মানুষের প্রতিনিধি হয়ে তোমার কাছে এসেছি। আমার নগরীতে শোকের মাতম। অভাব-অনটন, প্রতিটি ঘরে হাহাকার, দৈন্যতায় ঘিরে আছে পুরো সমাজ। তোমার শম্ভুর পদভারে পিষ্ট হচ্ছে আমার গোলাপ বাগান, শাপলা বিল, জুই-চামেলির মনোরম দৃশ্য। মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে শাহবাগ, পরীবাগ, পল্টন, শহিদ মিনার। পানির বদলে বোতলজাত হচ্ছে রক্ত। লাল-লাল রক্ত, চাপ-চাপ রক্ত, রক্ত বন্যায় আমরা ভেসে চলছি; কৃপা করো মা, কৃপা করো।-ওঠো অরজিত। তুমি জানো মানুষ মরণশিল। রক্তে মাংসে গড়া শম্ভু একজন মানুষ। তার মৃত্যু হবে?-প্রাণের মৃত্যু অবধারিত কিন্তু ততোদিনে আমার নগরীর তাজাপ্রাণ, কোমল প্রাণ, সদ্যফোটা প্রাণ, নীরবে স্থির হয়ে যাবে।  -কেন?-শম্ভুর শরীর জুড়ে কিছু লিলিপুটের বসবাস। নাকের ডগায়, কানের কাছে, কাঁধের উপর, বুক পকেটে, পায়ের তলায় যে যেখানে স্থান পেয়েছে; স্থান নিয়েছে। তাদের কথায় শম্ভুর হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেয়েছে। প্রলোভনে আসক্ত হয়েছে। তাদের প্রলোভনে, স্বার্থ রক্ষায় প্রতিদিন শত শত জনগণ শম্ভুর পায়ের তলায় পিষ্ঠ হচ্ছে। শম্ভু ফিরেও তাকায় না। স্বার্থ রক্ষায় হাজারো প্রাণের বলি হচ্ছে প্রতিদিন। এ শোষণের হাত থেকে রক্ষা করো মা।  -ধ্বংস অনিবার্য। জেগে ওঠে অরজিত; জেগে ওঠো কোমল প্রাণে! সে এতোক্ষণ স্বপ্নের ঘোরে আক্রান্ত ছিল। কার ধ্বংস অনিবার্য! সীমাহীন বালিরেখায় দাগ টেনে যায় অরজিত। স্বপ্নের ঘোর কাটে না। কে ওই মানবী? আমাকে চেনে! জনম জনম ধরে তার সাথে আমার সম্পর্ক। খুব পরিচিত মনে হয়। তার স্পর্শ অরজিত শরীরের কোষে কোষে অনুভব করে। রোমকূপের প্রতিটি বিন্দুতে তারই পরশ তবে কেন তাকে চিনতে পারলো না। তাহলে কী স্মৃতিভ্রষ্ট হয়েছে অরজিতের?অরজিত স্মরণ করার চেষ্টা করে, না স্মৃতির সীমানা যতোদূর যায় তার মধ্যে এই মানবীর কোন দৃশ্য নেই যে, স্মৃতির পট থেকে তুলে নিয়ে আসবে। পূর্বপুরুষের স্পর্শ; হবে হয়তো। সে অনুভূতি অরজিতের মনে পড়ে না। পিতামহের চেহেরাটুকুও আবছা হয়ে আছে। জন্মের পর মা-বাবার আদর, স্পর্শ কতোটুকু পেয়েছে তা মনে পড়ে না। জীবনের বেশির ভাগ সময়ই তো পথে পথে কাটিয়েছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। মানবের ধর্মে মশগুল থেকেছে। তাহলে এমন নগরী, পিচ্চি পিচ্চি মানুষ, দৈত্যাকার শম্ভু এসব কিসের প্রতিচ্ছবি? কিংবা সেই স্বপ্নের মায়াবী নারী?-আজ সন্ধ্যায় শম্ভুর মৃত্যু!অদৃশ্য বাণী শুনে অরজিত চমকে ওঠে। এদিক ওদিকে তাকায়। সে ব্যতিত দ্বিতীয় কোন মানবের অস্তিত্ব নেই। তাহলে কে বলল? সময়ের সাথে অদৃশ্যও কথা বলে। অরজিত অপেক্ষা করে একটি সন্ধ্যা রাতের। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে শম্ভুর মৃত্যু ঘটবে। সে ভ্যানিস হয়ে যাবে, তার অস্তিত্ব বিলীন হবে; সে হঠাৎ করেই গায়েব হয়ে যাবে এ পৃথিবী থেকে। তখন তার শরীরে ঝুলে থাকা সেইসব মানুষেরা আছড়ে পড়বে সমতলে। আহত হবে, পঙ্গু হবে; বেঁচে থাকার জন্য করুণা ভিক্ষে করবে। দৃশ্যটি দেখার মতোন। অরজিতের ভেতর থেকে এক ধরণের ভালো লাগা কাজ করতে শুরু করে। তার ঘুমের রেশ কেটে যায়; আড়মোড়া ভাঙ্গে। ঘুমের ক্লান্তি দূর হয়। ভোরের দৃশ্য উপভোগ করে। দেখতে দেখতে সুন্দর একটি পৃথিবী ওর সামনে জেগে ওঠে। রাতের আধার কেটে গেলে সূর্যদয় হয়। এমন সুন্দর একটি সকাল তার জন্য অপেক্ষায় ছিল সে ভাবতেও পারেনি। গায়ের চাদর ফেলে হাজারো কোমল প্রাণের ভিড়ে সে মিশে যায়। লেখক: আল-আমিন খান সাগর, নাট্যকার  
    ছয়শো বছরের অটোমান সাম্রাজ্যের শুরু ও শেষ যেভাবে
    জহির-উদ-দীন বাবর ভালো করেই জানতেন যে তার সেনাবাহিনীর সংখ্যা শত্রু বাহিনীর তুলনায় আট ভাগ কম, তাই তিনি এমন একটি পদক্ষেপ নেন, যা ইব্রাহিম লোদি কল্পনাও করতে পারেননি।বাবর ছিলেন মধ্য এশিয়ার মুসলিম সম্রাট ও মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি পানিপথের প্রথম যুদ্ধে লোদি রাজবংশের শেষ সুলতান ইব্রাহীম লোদিকে পরাজিত করে দিল্লি দখল করে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।আর সেই পানিপথের যুদ্ধে অটোমান তুর্কিদের যুদ্ধ কৌশল ব্যবহার করেছিলেন বাবর।অটোমানদের উপহার যুদ্ধ কৌশল তুর্কি অটোমানের যুদ্ধ কৌশল অনুযায়ী বাবরের বাহিনী যুদ্ধের ময়দানে প্রথম সারিতে চামড়ার দড়ি দিয়ে সাতশ গরুর গাড়ি বাঁধেন।তাদের পেছনেই বসানো হয় যুদ্ধ কামান। বলে রাখা ভালো, এটি ছিল পানিপথের প্রথম যুদ্ধ এবং এর আগে ভারতের কোনও যুদ্ধে কামানের ব্যবহার হয়নি। কামানের বিষয়ে অনেকে তখন জানতোই না।শুরুর দিকে এই কামানগুলোর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার ক্ষমতা খুব একটা ভালো ছিল না।তবে বাবর বাহিনী কামান থেকে নির্বিচারে গোলা বর্ষণ শুরু করলে এর আকস্মিক কান-ফাটানো বিস্ফোরণ ও ধোঁয়ায় আফগান বাহিনী বিভ্রান্ত ও ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পালাতে শুরু করে।অথচ ইব্রাহীম লোদির বাহিনীতে ৫০ হাজার সৈন্য ছাড়াও এক হাজারের মতো যুদ্ধ হাতি বা গজবাহিনী ছিল, কিন্তু সৈন্যদের মতো ‌এই হাতিগুলোও আগে কখনও কামানের বিস্ফোরণ শোনেনি।এ কারণে কামান থেকে গোলা বিস্ফোরণের সাথে সাথে হাতিগুলো যুদ্ধে অংশ নেয়ার পরিবর্তে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়, ধোঁয়ায় সবার শ্বাসরোধ হয়ে আসে।অন্যদিকে, বাবরের ১২ হাজার প্রশিক্ষিত অশ্বারোহী বাহিনী অর্থাৎ ঘোড়ার পিঠে চড়ে যুদ্ধ করা যোদ্ধারা এমন মুহূর্তের জন্যই অপেক্ষা করছিল।তারা বিদ্যুতের গতিতে এগিয়ে গিয়ে লোদির সেনাবাহিনীকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে এবং বাবরের বিজয় সুনিশ্চিত হয়ে পড়ে।ইতিহাসবিদ পল কে. ডেভিস তার বই ‘হান্ড্রেড ডিসাইসিভ ব্যাটেলস'-বইটিতে এই যুদ্ধকে ইতিহাসের সবচেয়ে ভাগ্য নির্ধারণী যুদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।সেই থেকেই মহান মুঘল সাম্রাজ্যের সূচনা হয়েছিল।                                        ১৭ শতকে অটোমান সাম্রাজ্যের বিস্তৃতিঅটোমান বা উসমানীয় যুদ্ধ কৌশল ছাড়াও বাবরের ওই যুদ্ধে দুই তুর্কি গোলা নিক্ষেপকারী ওস্তাদ আলী ও মুস্তফা এই বিজয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন।বাবরকে অটোমান সাম্রাজ্যের প্রথম খলিফা সেলিম তার ওই দুই সেনাকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন।বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সাম্রাজ্যগুলির মধ্যে একটি, অটোমান সাম্রাজ্য ১৩ শতকে উসমান গাজীর হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।এই সময়ের মধ্যে, বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের পতন হয় এবং আনাতোলিয়া অনেক ছোট ছোট রাজ্যে বিভক্ত হয়েছিল।উল্লেখ্য, বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য বর্তমান ইতালি, গ্রীস ও তুরস্ক আর উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের কিছু অংশ নিয়ে বিস্তৃত ছিল। অন্যদিকে, আনাতোলিয়া হচ্ছে বর্তমান তুরস্কের বড় একটি অংশ।উসমান গাজী, ১২৫৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। সোগুত নামে ছোট একটি রাজ্যের তুর্কি সেনাপতি ছিলেন তিনি।একদিন তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন যে তিনি পৃথিবীর ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে দেবেন।উসমান স্বপ্ন দেখেছিলেন যে তিনি পৃথিবীর ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে দেবেন।উসমানের স্বপ্নব্রিটিশ ইতিহাসবিদ ক্যারোলিন ফিঙ্কেল তার 'উসমানস ড্রিম' বইতে লিখেছেন যে উসমান এক রাতে শেখ আদিবালি নামে এক বৃদ্ধ দরবেশের ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন।ওই রাতে উসমান স্বপ্ন দেখেন যে তার বুক থেকে একটি বিশাল গাছ বেরিয়ে ডালপালা ছড়াচ্ছে এবং সারা বিশ্বে ছায়া ফেলছে।উসমান পরে শেখ আদিবালীর কাছে তার এই স্বপ্নের কথা জানান। শেখ এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন: "হে উসমান, বাবা আমার, ধন্য হও, আল্লাহ তোমাকে এবং তোমার বংশধরদের কাছে রাজকীয় সিংহাসন অর্পণ করেছেন।"এই স্বপ্নটি উসমান গাজীর জন্য একটি প্রভাবক হিসাবে কাজ করেছিল কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে তিনি এখন ঈশ্বরের সমর্থন পেয়েছেন।তারপর আনাতোলিয়ার বেশিরভাগ অংশ জয় করে, আশেপাশের সেলজুক ও তুর্কোমান রাজ্যসহ বাইজেন্টাইন দখল করে নেন।উসমানের স্বপ্নটি পরবর্তীতে অটোমান সাম্রাজ্যের যৌক্তিকতা এবং একইসঙ্গে মিথ বা পৌরাণিক কথায় পরিণত হয়।এই অটোমান সাম্রাজ্য ছয়শ' বছর ধরে শাসন করেছে। এমন দীর্ঘ সময় ধরে তারা কেবল আনাতোলিয়া নয়, বরং তিনটি মহাদেশের বিশাল অংশ শাসন করে গিয়েছে।উসমানের উত্তরসূরিরা ইউরোপের দিকে নজর দেয়। তারা ১৩২৬ সালে গ্রীসের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর থেসালোনিকি জয় করে। এরপর ১৩৮৯ সালে সার্বিয়া জয় করে।কিন্তু তাদের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহাসিক বিজয় ছিল ১৪৫৩ সালে। ওই বছর তারা বাইজেন্টাইনের রাজধানী কনস্টান্টিনোপল (বর্তমান ইস্তাম্বুল) জয় করে।মুসলমানরা এর আগের সাতশ' বছর ধরে এই শহরটি দখলের চেষ্টা করলেও এটির ভৌগলিক অবস্থান এমন ছিল যে, তারা প্রতিবারই ব্যর্থ হয়।কনস্টান্টিনোপলের তিন দিক বসফরাস সাগরে বেষ্টিত হওয়ায় এই শহরটি আশ্রয়ের শহর হয়ে উঠেছিল।বাইজেন্টাইনরা গোল্ডেন হর্ন পথটি বন্ধ করে দিয়েছিল। তাদের ২৮টি যুদ্ধজাহাজ অন্য দিকে পাহারা দিয়েছিল।গোল্ডেন হর্ন হচ্ছে বসফরাস সাগরের সরু এক প্রণালী, যা ছিল ইস্তাম্বুল শহরের প্রধান জলপথ।উসমানীয় সুলতান মেহমেত ফতেহ ১৪৫৩ সালের ২২শে এপ্রিল এমন এক পদক্ষেপ নেন যা কেউ ভাবতেও পারেনি।তিনি মাটিতে তক্তা দিয়ে একটি মহাসড়ক তৈরি করেন এবং তেল-ঘি মিশিয়ে পথটিকে খুব পিচ্ছিল করে ফেলেন।তারপর গবাদি পশুর সাহায্যে তার ৮০টি জাহাজকে এই পথে টেনে নিয়ে যান এবং এভাবে সহজেই ওই শহরের বিস্মিত প্রহরীদের পরাস্ত করেন তিনি।বিজয়ী হয়ে মেহমেত তার রাজধানী কনস্টান্টিনোপলে স্থানান্তর করেন এবং তাকে ‘সিজার অব রোম’ (রোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা) উপাধি দেয়া হয়।কনস্টান্টিনোপলে সুলতান মেহমেতের বিজয়ী আগমনপ্রথম উসমানীয় খলিফাএরপর বিজয়ী মেহমেতের নাতি ‘প্রথম সেলিম’ অন্যান্য দিকে দৃষ্টিপাত করেন।তিনি ১৫১৬ ও ১৫১৭ সালে মিশরের মামলুকদের পরাজিত করে, মিশর ছাড়াও বর্তমান ইরাক, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, জর্ডানসহ সর্বোপরি হিজাজ জয় করে তার সাম্রাজ্যের আকার দ্বিগুণ বাড়িয়ে ফেলেন।এর পাশাপাশি, আজ থেকে ঠিক পাঁচশ বছর আগে হিজাজের দুটি পবিত্র শহর মক্কা ও মদিনা অধিগ্রহণ করে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী শাসক হয়েছিলেন প্রথম সেলিম।ধারণা করা হয়, উসমানীয় খিলাফত ১৫১৭ সালে শুরু হয়েছিল, এবং প্রথম সেলিমকে প্রথম খলিফা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তার আগ পর্যন্ত উসমানীয়দের 'সুলতান' বা 'পাদশাহ্' বলা হতো।মাওলানা আবুল কালাম আজাদ তার 'ইস্যু অফ খিলাফত' বইতে লিখেছেন: 'সুলতান সেলিম খান প্রথমের সময় থেকে আজ পর্যন্ত অটোমান তুর্কি সুলতানরা সব মুসলমানের খলিফা ও ইমাম ছিলেন।’‘এই চার শতাব্দীর মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে খিলাফতের দাবিদারও উঠেনি। সরকারের কাছে শত শত খলিফা দাবিদার উঠেছে ঠিকই কিন্তু কেউ ইসলামের কেন্দ্রীয় খিলাফত দাবি করতে পারেনি।’প্রথম সেলিমের সবচেয়ে বড় গুণ ছিল তিনি অল্প সময়ের মধ্যে একের পর এক সাম্রাজ্য দখল করতে পারতেন। এর বড় কারণ ছিল তার কার্যকর যুদ্ধ কৌশল।পানিপথের যুদ্ধে তার এই রণকৌশল অনুসরণ করে ওই যুদ্ধে প্রথম গোলা বারুদ ব্যবহার করেন সম্রাট বাবর।ওই যুদ্ধে ইব্রাহীম লোদিকে হারানোর পরই মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাবর।প্রথম সেলিমকে সাধারণত প্রথম উসমানীয় খলিফা হিসেবে বিবেচনা করা হয়হুমায়ুন বনাম খলিফা বাবরের উত্তরসূরি হুমায়ুনও অটোমানদের এই অনুগ্রহের কথা মনে রেখেছিলেন। সেলিমের ছেলে সালমান আলিশানকে লেখা একটি চিঠিতে হুমায়ুন লেখেন:'খিলাফতের মর্যাদার ধারক, মহানতার স্তম্ভ, ইসলামের ভিত্তির রক্ষক সুলতানের জন্য শুভ কামনা। আপনার নাম সম্মানের সিলমোহরে খোদাই করা হয়েছে এবং আপনার সময়ে খেলাফত নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। মহান আল্লাহ যেন আপনার খেলাফত অব্যাহত রাখেন।'হুমায়ুনের ছেলে আকবর অবশ্য উসমানীয়দের সাথে কোনও সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেননি।যার কারণ সম্ভবত এই যে, ইরানের সাফাভিদ শাসকদের সাথে অটোমানরা তখন ক্রমাগত যুদ্ধে লিপ্ত ছিল এবং আকবর সাফাভিদ শাসকদের ক্ষেপাতে চাননি।তবে আকবরের উত্তরসূরি শাহজাহান ও আওরঙ্গজেবের অটোমান সুলতানদের সাথে সুসম্পর্ক ছিল।উপহার বিনিময় আর কূটনৈতিক মিশন তাদের মধ্যে সাধারণ বিষয় ছিল এবং তারা তাকে সমস্ত মুসলমানদের খলিফা বলে মনে করতেন।শুধু মুঘলরা নয়, অন্যান্য ভারতীয় শাসকরাও অটোমানদেরকে তাদের খলিফা হিসেবে বিবেচনা করতেন এবং ক্ষমতায় আসার পর তাদের কাছ থেকে আনুগত্য নেওয়া জরুরি বলে মনে করতেন।টিপু সুলতান মহীশুরের শাসক হওয়ার পর, তিনি তৎকালীন অটোমান খলিফা তৃতীয় সেলিমের কাছ থেকে তার শাসনের জন্য সমর্থন চাইতে কনস্টান্টিনোপলে একটি বিশেষ প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছিলেন।তৃতীয় সেলিম টিপু সুলতানকে তার নাম সম্বলিত একটি মুদ্রা টাকশাল করতে এবং শুক্রবারের খুতবায় তার নাম পাঠ করার অনুমতি দেন।তবে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য টিপু সুলতান যখন সামরিক সহায়তা চেয়েছিলেন তখন অটোমান খলিফা সেই অনুরোধ গ্রহণ করেননি।কারণ সে সময় তিনি নিজে রাশিয়ানদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন এবং তখন শক্তিশালী ব্রিটিশ শত্রুদের পরাস্ত করা বেশ কঠিন হতো।তুরস্কের জনপ্রিয় সিরিয়াল সুলতান সুলেইমানসুলতান সুলেইমানঅটোমানরা শুরুতে ইউরোপের অনেক অঞ্চল দখল করে। তবে এই সাম্রাজ্য রাজনীতি, রণনীতি, অর্থনীতি - এই তিনটি ক্ষেত্রেই সবচেয়ে প্রসার লাভ করে প্রথম সুলেইমানের আমলে।তিনি ১৫২০ থেকে ১৫৬৬ সালে টানা ৪৫ বছর আমৃত্যু শাসনভারে ছিলেন।সুলেইমান আলী খানের শাসনামলে সালতানাত বা অটোমান সাম্রাজ্য তার সামরিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক শীর্ষে পৌঁছেছিল।এ কারণে তিনি পশ্চিম ইউরোপে 'সুলেইমান দ্য মেগনিফিসেন্ট' নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন। অন্যদিকে, নিজ সাম্রাজ্যে তাকে বলা হতো কানুনি সুলতান।বেলগ্রেড ও হাঙ্গেরি জয় করে সুলেইমান তার সীমানা মধ্য ইউরোপ পর্যন্ত প্রসারিত করেছিলেন। তবে দু'বার চেষ্টা করেও অস্ট্রিয়ার বিলাসবহুল শহর ভিয়েনা জয় করতে পারেননি তিনি।(যাকে ঘিরে তুরস্কের জনপ্রিয় সিরিয়াল সুলতান সুলেইমান নির্মাণ করা হয়েছে। সিরিয়ালটি বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করে।)অটোমানরা দুইবার ভিয়েনা অবরোধ করলেও জয় করতে ব্যর্থ হয়ইউরোপ এগিয়ে যায়ইউরোপ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ১৬ ও ১৭ শতকে বিশ্বের বাকি অংশকে ছাড়িয়ে যায়। এর একটি কারণ সে সময় জাহাজ শিল্প বিকাশ লাভ করছিল।এটি ছিল ইউরোপের 'আবিষ্কারের যুগ'। অর্থাৎ ইউরোপীয় নৌবহর বিশেষ করে স্প্যানিশ, পর্তুগিজ, ডাচ আর ব্রিটিশ নৌবহরগুলো সারা বিশ্বের সমুদ্র অন্বেষণ করছিল।এভাবে আমেরিকা মহাদেশের আবিষ্কার হয় এবং ইউরোপীয়রা তা দখল করে। এই দখলদারিত্বের কারণে ইউরোপ বাকি বিশ্বের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে।এসময় ইউরোপীয় বিশ্বের বিভিন্ন অংশে তাদের উপনিবেশ স্থাপন করতে শুরু করে।ইউরোপীয়দের জন্য বেশি বেশি জলযান চালাতে নতুন নতুন যন্ত্র উদ্ভাবন করা এবং যন্ত্রগুলো উন্নত করার প্রয়োজন হয়ে ওঠে।এই প্রয়োজনীয়তা থেকে সে সময় ইউরোপ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়ন করতে থাকে।এ সময় দ্বিতীয় আরেকটি শিল্প বেশ বিকাশ লাভ করে। আর সেটি হচ্ছে ছাপাখানা। এই ছাপাখানার উদ্ভাবন হয়েছিল ১৪৩৯ সালে।ইউরোপে বৈজ্ঞানিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লব ঘটানোর ক্ষেত্রে এক বিশাল ভূমিকা রেখেছিল এই ছাপাখানা।সেই সময় বিজ্ঞান ও কলা - দুটি বিষয়ের উপর শুধুমাত্র অভিজাত ও গির্জার একচেটিয়া আধিপত্য ছিল, ছাপাখানার বদৌলতে তা সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে চলে আসে।অটোমানরাও যদি ছাপাখানা ব্যবহার করা শুরু করতো, তাহলে হয়তো আজ পৃথিবীর ইতিহাস অন্যরকম হতো।আমেরিকা মহাদেশে কলম্বাসের আগমন ছিল ইউরোপের ইতিহাসে একটি টার্নিং পয়েন্ট। ওই সময় থেকে ইউরোপে জ্ঞান ও শিল্পের এক নতুন যুগের সূচনা হয়।আমেরিকা মহাদেশে কলম্বাসের আগমন ছিল ইউরোপের ইতিহাসে একটি টার্নিং পয়েন্ট। ওই সময় থেকে ইউরোপে জ্ঞান ও শিল্পের এক নতুন যুগের সূচনা হয়।ছবির ক্যাপশান,আমেরিকা মহাদেশে কলম্বাসের আগমন ছিল ইউরোপের ইতিহাসে একটি টার্নিং পয়েন্ট। ওই সময় থেকে ইউরোপে জ্ঞান ও শিল্পের এক নতুন যুগের সূচনা হয়।কিন্তু সুলতান ফাতিহের পুত্র দ্বিতীয় বায়েজিদ ১৪৮৩ সালে, যারা আরবি হরফে বই ছাপাতেন, তাদের জন্য মৃত্যুদণ্ড আরোপ করেন।এর কারণ ছিল, আলেমগণ ছাপাখানাকে ফেরাঙ্গিদের উদ্ভাবন বলে ফতোয়া দিয়েছিলেন। তাদের মতে, ফেরাঙ্গিদের আবিষ্কারের উপর ভিত্তি করে কুরআন বা আরবি লিপিতে বই ছাপানো ধর্মবিরোধী।তাই ইউরোপ যখন সময়ের সাথে এগিয়ে যাচ্ছিল তখন অটোমান সাম্রাজ্য বছরের পর বছর ততটাই পেছাতে থাকে এবং সংকুচিত হতে থাকে।এরপর ব্রিটিশরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আনাতোলিয়া ছাড়া তাদের প্রায় সমস্ত অঞ্চল দখল করে নেয়।ভারতের মুসলমানরা এতে অনেক ভেঙে পড়ে কারণ তারা অটোমান খলিফাকে তাদের ধর্মীয় শাসক ও নেতা হিসাবে বিবেচনা করতো।প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর উসমানীয় সাম্রাজ্যের পরিকল্পিত ভাঙ্গন এবং তাদের উপর ব্রিটিশ নীতির বিরুদ্ধে ভারতীয় মুসলমানরা একটি রাজনৈতিক প্রচারণা শুরু করে যাকে ‘খিলাফত আন্দোলন’ বা ‘তেহরিক-ই-খিলাফাহ’ বলা হয়।১৯১৯ সালে মাওলানা মুহাম্মদ আলী ও মাওলানা শওকত আলীর নেতৃত্বে এই খিলাফত আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়।এই আন্দোলন থেকে ব্রিটিশদের হুমকি দেওয়া হয়েছিল যে যদি তারা অটোমান খলিফা আবদুল হামিদকে পদচ্যুত করার চেষ্টা করে তবে ভারতীয় মুসলমানরা তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে।খলিফা আন্দোলনে যোগ দেয়া নেতাদের মধ্যে আতাউল্লাহ শাহ বুখারী, হাসরাত মোহানি, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, জাফর আলী খান, মাওলানা মাহমুদুল হাসান ও হাকিম আজমল খান অন্যতম ছিলেন।গান্ধী ছিলেন খিলাফতের সাথে, সরে দাঁড়িয়েছিলেন কায়েদ-ই-আজমভারতের কংগ্রেস পার্টি বা ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস-আইএনসি’ ১৯২০ সালে খিলাফত আন্দোলনকে সমর্থন করতে শুরু করে।মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আইন অমান্য অভিযানের সূত্রপাত হয়েছিল এই খিলাফত আন্দোলনের মধ্য দিয়েই।মজার ব্যাপার হলো, কায়েদ-ই-আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ নিজেকে এই আন্দোলন থেকে দূরে রেখেছিলেন কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন যে এটি সফল হবে না।এই আন্দোলন গতি পাওয়ার আগে, ১৯২২ সালে কামাল আতাতুর্কের নেতৃত্বে তুরস্কের জাতীয়তাবাদী বাহিনী দেশটি দখল করে এবং খলিফা আবদুল হামিদকে ক্ষমতাচ্যুত করে খিলাফতের পদ বাতিল করে।এর মাধ্যমে অটোমানদের ৬২৩ বছরের মহান সাম্রাজ্যের সূর্য চিরতরে অস্তমিত হয়।ভারতীয় মুসলমান সম্প্রদায় খিলাফত আন্দোলনে বেশ উৎসাহ নিয়ে অংশগ্রহণ করে। মাওলানা সৈয়দ আবুল হাসান আলী নদভী লিখেছেন: 'যারা ১৯২১ থেকে ১৯২২ সময়কাল দেখেননি তাদের জন্য বলতে হয় যে সে সময় ভারত একটি আগ্নেয়গিরির রূপ নিয়েছিল, উসমানীয় সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে 'মিত্রশক্তি'র বিজয় তাদের পরিকল্পনা এবং খিলাফতের অবসান ঘটিয়েছিল।’‘তাদের দখলের এই খবর সারা ভারতে আগুন ছড়িয়ে দিয়েছিল। মসজিদ, সমাবেশ, মাদ্রাসা, বাড়িঘর, দোকানপাট, কোথাও যেন এই বিষয় ছাড়া আর কোনও কথাবার্তাই হতো না।উল্লেখ্য, প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় ফ্রান্স, গ্রেট ব্রিটেন, রাশিয়া, ইতালি, জাপান এবং ১৯১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে 'মিত্রশক্তি' বলা হতো।সে সময় প্রতিটি যুবক, বৃদ্ধ, শিশু ও নর-নারীর মুখে এই একটি কবিতা উচ্চারিত হতো, যার বাংলা অনুবাদ অনেকটা এরকম:বল মোহাম্মদ আলীর মা/দাও বাছা, তোমার জান দাও খলিফাকেআন্দোলন সফল করার জন্য সাধারণ মানুষ উৎসাহী ছিল এবং নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে অবদান রেখেছিল।এমনকি সারা ভারত থেকে নারীরা তাদের চুড়ি ও কানের দুল খুলে খিলাফত কমিটিতে দিতেন।প্রচলিত আছে যে, এক নারী তার সন্তানকে নিয়ে এসে খিলাফত কমিটির কাছে হস্তান্তর করেন এই বলে যে, এই বাচ্চা ছাড়া আমার দান করার কিছু নেই।এরপরও খিলাফত আন্দোলন সফল হয়নি, কিন্তু তুরস্কের মানুষ আজও এই চেতনাকে মনে রেখেছে।যারা তুরস্কে গেছেন তারা বলছেন, ভারতবর্ষের এই মুসলমান সম্প্রদায়ের যে সম্মান তুরস্কে আছে তা অন্য কোনও দেশে নেই।
    মারা গেছেন শিশুসাহিত্যিক আশরাফুল আলম পিনটু
    সাংবাদিক, শিশুসাহিত্যিক ও ছড়াকার আশরাফুল আলম পিনটু মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) ভোরে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।মৃত্যুর বিষয়ট নিশ্চিত করেছেন ঢাকা সাব-এডিটর কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি মামুন ফরাজী।আশরাফুল আলম পিনটুর জন্ম ১৯৬৪ সালের ১৫ মার্চ বরেন্দ্রভূমির নানাবাড়ি কাদিপুরে। তার দাদাবাড়ি তালপুকুর ও বাবার বাড়ি রাজশাহী শহরের শালবাগান।১৯৭৬ সাল থেকে লেখালেখি শুরু করেন পিনটু। দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। ছোটো-বড় সবার জন্যই লিখেছেন। লিখেছেন গল্প, উপন্যাস, ছড়া, কবিতা ও কলাম। বড়দের জন্য প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩৫টি। ছোটোদের জন্য ছড়ার বই ‘তালপাতার বাঁশি’, গল্পের বই ‘শশানতলির সার্কাস’, উপন্যাস ‘টুপিন ভাই জিন্দাবাদ’, ‘দাদুর বেড়াল’। শৈশববিষয়ক বই ‘রূপকথা নয় চুপকথা’।লেখালেখির পাশাপাশি চাকরি করতে দৈনিক যুগান্তরে।এসএফ
    লেখক-গবেষক ড. গোলাম মুরশিদ আর নেই
    লেখক, গবেষক, সংবাদ উপস্থাপক এবং অভিধান বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক গোলাম মুরশিদ মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় লন্ডনের কুইন্স হাসপাতালে মারা গিয়েছেন গোলাম মুরশিদ। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।গোলাম মুরশিদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যের সাবেক অধ্যাপক।আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের অধ্যাপক স্বরোচিষ সরকার কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, গোলাম মুরশিদ পারকিনসনসহ বার্ধক্যজনিত অন্যান্য রোগে ভুগছিলেন। কয়েক মাস ধরে তিনি হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। আজ লন্ডন সময় সকাল ১১টায় তিনি মারা গেছেন। তাকে এই খবর জানিয়েছেন গোলাম মুরশিদের স্ত্রী এলিজা মুরশিদ।গোলাম মুরশিদের জন্ম ১৯৪০ সালের ৮ এপ্রিল। তিনি ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (বিবিসি)-এর সংবাদ পাঠক এবং উপস্থাপক হিসেবে কাজ করেছেন। তবে গোলাম মুরশিদ বিশেষভাবে আলোচিত তার ‘হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি’ বইটির জন্য। মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও কাজী নজরুল ইসলামের জীবন নিয়ে গবেষণার জন্যও তিনি খ্যাতিমান।২০২১ সালে তিনি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক লাভ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি লন্ডনে অবসর জীবন যাপন করছিলেন।অধ্যাপক স্বরোচিষ সরকার কালের কণ্ঠকে আরো জানান, গোলাম মুরশিদের স্ত্রী এলিজা মুরশিদ নিজেও ক্যান্সারের রোগী। তিনিও লন্ডনেই রয়েছেন। তবে তাদের সন্তান আমেরিকায় থাকেন।চেষ্টা করছেন টিকিট কেটে দ্রুত লন্ডন পৌঁছতে। তাঁর লন্ডন পৌঁছার পর সেখানেই তাকে সমাহিত করা হতে পারে বলে জানান স্বরোচিষ সরকার।
    বরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের শততম জন্মবার্ষিকী
    এস এম সুলতান। পুরো নাম-শেখ মোহাম্মদ সুলতান। নড়াইলবাসীর কাছে ‘লাল মিয়া’ হিসেবে সমধিক পরিচিত তিনি। যার রঙ তুলিতে দারিদ্র-ক্লিষ্ট ও খেটে খাওয়া মানুষগুলো পেশিবহুল। শ্রমজীবী মানুষগুলো হয়েছেন শক্তিশালী ও দৃঢ় মনোবলের অধিকারী; তিনি বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতান।খ্যাতিমান এই চিত্রশিল্পীর শততম জন্মদিন আজ। ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়ায় বাবা মেছের আলী ও মা মাজু বিবির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন এসএম সুলতান। তার চিত্রকর্মের স্বকীতায় ‘লাল মিয়া’ থেকে হয়ে ওঠেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। তিনি ‘মাটি ও মানুষের শিল্পী’ হিসেবেও পরিচিত। এদিকে, সুলতানের জন্মবর্ষ নিয়ে বিভ্রান্তি চলছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী গত বছর (২০২৩) এস এম সুলতানের জন্মশতবর্ষ জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালন করেছেন। তবে, নড়াইলবাসীসহ সুলতানপ্রেমীরা তা প্রত্যাখ্যান করে সুলতানের ৯৯তম জন্মবার্ষিক পালন করেন। এ বছর (২০২৪) বর্ণাঢ্য আয়োজনে সুলতানের জন্মশতবর্ষ পালনে সুলতানপ্রেমীরা নড়াইলে ব্যাপক প্রস্তুতি নিলেও দেশে চলমান পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। শুধুমাত্র কোরআন খতম এবং সুলতানের সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ও এস এম সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোহাম্মাদ আশফাকুল হক চৌধুরী। এ ব্যাপারে আর কোনো বক্তব্য দিতেও রাজি হননি তিনি।এদিকে সুলতান ফাউন্ডেশনসহ স্থানীয়দের মতে, ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট এস এম সুলতান জন্মগ্রহণ করেন। প্রতিবছর এ হিসেবে জন্মবার্ষিকী পালন হয়ে থাকে। সেই হিসেবে এবার সুলতানের ১০০তম জন্মবার্ষিকী। এমনকি সুলতান জীবিত থাকাকালীনও এই হিসেবে জন্মবার্ষিকী পালিত হতো। সুলতানের সমাধি, বিভিন্ন বইপত্র, পত্রিকাসহ সব ধরণের তথ্য-উপাত্তেও সুলতানের জন্মসাল ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট।তবে, এ ধরণের তথ্য-উপাত্ত ও নিয়ম উপেক্ষা করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী গত বছর সুলতানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করায় বিক্ষুদ্ধ হন সুলতানপ্রেমীরা। তিনি (লাকী) চিঠিপত্র, ব্যানার, পোস্টার, বিলবোর্ডসহ সবকিছুতে সুলতানের জন্মসাল ২০২৩ উল্লেখ করে জন্মশতবার্ষিকী পালন করেন। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ নড়াইলবাসী প্রতিবাদ করেও কোনো প্রতিকার পায়নি।দেশে নতুন সরকারের কাছে নড়াইলবাসীর প্রত্যাশা বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের জন্মসাল নিয়ে বিভ্রান্তি দুর করে-একটা প্রজ্ঞাপন জারি করবে। এতে বিভ্রান্তিমুক্ত হবেন সবাই।বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান চিত্রশিল্পের মূল্যায়ন হিসেবে ১৯৮২ সালে পেয়েছেন একুশে পদক, ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক, ১৯৮৪ সালে রেসিডেন্ট আর্টিস্ট স্বীকৃতি, ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননাসহ ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’, নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া’ পুরস্কারসহ বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছেন।অসুস্থ অবস্থায় ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। প্রিয় জন্মভূমি নড়াইলের কুড়িগ্রাম এলাকায় সংগ্রহশালা চত্বরে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন এসএম সুলতান।এসএফ

    Loading…