বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষ যেখানে আধুনিক জীবন যাপন করছে। সেখানে গত ৩০ বছর ধরে অন্ধকারে দিন কাটছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কালিনগর বাগানপাড়াবাসীর। স্বাধীনতার এতো বছর পরেও এখনো একটি গ্রাম বিদ্যুৎহীন! শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। জনপ্রতিনিধিদের ভুয়া আশ্বাস আর নীতিমালার বেড়াজালে আটকে আছে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ঘোড়াপাখিয়া ইউনিয়নের কালিনগর বাগানপাড়া গ্রামের ঘটনা। এখানে আধা- পাকা ঘরেই বসবাস ১২০টি পরিবারের। নদী ভাঙ্গনসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩০ বছর আগে এই বাগানের মধ্যেই বসতি গড়ে তোলে পরিবারগুলো। দিন দিন সেই সংখ্যাও বাড়ছে। অথচ আজও এই গ্রামটিতে পৌঁছায়নি বিদ্যুৎতের আলো। ফলে উন্নয়ন ও আধুনিকতা থেকে একেবারে বঞ্চিত কালিনগর বাগানপাড়াবাসী।
স্থাণীয়দের দাবি, সন্ধ্যা হলেই গাঢ় অন্ধকারে ঢেকে যায় গোটা এলাকা। সৃষ্টি হয় এক ভূতড়ে পরিবেশের। এমন অবস্থার কথা সকলকে বিস্মিত করলেও। এই আধুনিক সভ্যতার যুগে রাতের অন্ধকার দূর করতে তাই এখনও মোমবাতি, হারিকেন বা কুপির টিমটিমে আলোই ভরসা কালিনগর বাগানপাড়া গ্রামের মানুষের। ফলে প্রচন্ড গরম আর নানা ভোগান্তি নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে আসছে পরিবারগুলো।
গ্রামবাসাীর দাবি, গত ৩০ বছরে বহুবার প্রশাসনের দারস্থ হয়েছেন তারা। ধর্না দিয়েছেন জনপ্রতিনিধিদের দুয়ারে দুয়ারে। কিন্তু আশ্বাস মিললেও ফল মেলেনি। ফলে অন্ধকারেই থেকে গিয়েছে গ্রামটি। এতে অন্যান্য নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। বিদ্যুৎ না থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা চলে তাই হ্যারিকেন ও কুপির আলোয়। ফলে পড়া লেখায়ও পিছিয়ে পড়ছে এখানকার ছেলে-মেয়েরা।
বিদ্যুৎ বঞ্চিত গ্রামটিতে নেই কোন দোকানপাট ও রাস্তাঘাটও। তাই বৈশ্বিক যোগাযোগেও পিছিয়ে গ্রামের স্বপ্নবাজ যুবকরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, জনপ্রতিনিধিদের ভুয়া আশ্বাস, জমির মালিকদের বাধা আর বিদ্যুৎ বিভাগের নীতিমালার বেড়াজালে আটকে আছে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ।
ষাটোর্ধ আব্দুল জাব্বার বলেন, অন্যগ্রাম থেকে ১৮ থেকে ১৯ বছর হলো আমার আসা। তখন থেকেই এসে দেখি বিদ্যুৎ নেই। যাদের জমি তারা খুঁটি পুততে দেয়নি। সে কারণে বিদ্যুৎ নেই।
স্কুল পড়ুয়া যুবক আব্দুল্লাহর কাছে বিদ্যুৎহীন সময়গুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে অন্য সহপাঠীরা যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন আমরা পিছিয়ে পড়ছি। সে কারণে আমরা শিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়ছি এবং আমাদের মেধা শক্তি কমে যাচ্ছে। আমার মতো অনেকেই ঝড়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ থাকলে আমাদের এগুলো করা সম্ভব হতো।
স্থানীয় যুবক রাজু আহমেদ কয়েকবছর ধরে ফ্রিল্যান্সারের কাজ করেন। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় বাইরের গ্রামে ল্যাপটপ ও ফোন চার্জ দিতে যেতে হয়। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে যুব সমাজ দোকানপাট করতে চাইলেও করতে পারছেন না। আর কতদিন এভাবে আমাদের থাকতে হবে। এটার আমার সমাধান চাই।
ঘোড়াপাখিয়া ইউনিয়নের ৮নং ইউপি সদস্য মো. আব্দুল জলিল বলেন, এর আগে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার জন্য বিদ্যুতের খুঁটি রেখে গেছিল। কিন্তু বাগানের মালিক তার জমি দিয়ে বিদ্যুতের খঁুটি পুততে দেয়নি। উর্ধ্বতন কর্মকতার্ থেকে কারো কাছে যেতে বাকী নাই। এজিএম সারকে নিয়ে এসে বলেছি,আমি নিজে থেকে খুঁটি পুতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা ব্যবস্থা করতে পারেনি। তারা বলছে, উপরে নাকী কাগজ পাঠিয়েছে। অনুমতি পেলেই কাজ শুরু হবে।
এ জনপ্রতিনিধি আরও বলেন, আধুনিক যুগে বিদ্যুৎ ছাড়া থাকা বাচা কঠিন। সেখানে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এটা দুঃখ ও লজ্জা জনক।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. ছানোয়ার হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, শতভ্যাগ বিদ্যুতের আওতায় ঠিকাদার কর্তৃক লাইন করার সময় স্থানীয় এক বাগান মালিক বাধা দেয়। যার কারণে সেখানে ঠিকাদার কাজ করতে পারেনি। এখন যেহেতু প্রজেক্ট ক্লজ হয়ে গেছে। সেহেতু শতভাগের আওতায় লাইনটির কাজ করা আর সম্ভব হচ্ছে না।
পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকতার্ আরও বলেন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ডিসি ও ইউএনওর সুপারিশে লাইনটি ফ্রি করার জন্য আরডিপিতে পরবর্তীতে একটি পত্র দিই। কিন্তু সেটার এখনো অনুমতি আসেনি। অনুমতি আসলেই কাজ শুরু হবে।
সকল বাধা কাটিয়ে দ্রুত আলোর দেখা মিলবে বলে প্রত্যাশা; সুবিধা বঞ্চিত এসব নাগরিকদের।
এইচএ