এইমাত্র
  • বোমা বিস্ফোরণে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ৯ সদস্য নিহত
  • বিশ্বের দীর্ঘতম চালকবিহীন ট্রেন চালু করল সৌদি
  • মেট্রোরেলের সেবায় ভ্যাট অব্যাহতি
  • সিএনজি থেকে নামিয়ে তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ
  • কেউ সচেতন ভাবে কাজ করতে আসে না, তারা আসে ফায়দা লুটতে: প্রয়াত অভিনেতা প্রবীর মিত্র
  • শহীদ পরিবার ও আহতদের আজীবন পুনর্বাসন করা হবে: নাহিদ
  • বিচার ব্যবস্থা এনালগ করে রেখেছেন পলককে আদালত
  • সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর ও তার স্ত্রীর নামে দুর্নীতির ২ মামলা
  • অনুমতি পেলে ভারতে গিয়ে শেখ হাসিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে স্বাধীন তদন্ত কমিশন
  • বিরামপুরে মাদক সেবনের দায়ে যুবকের কারাদণ্ড
  • আজ সোমবার, ২৩ পৌষ, ১৪৩১ | ৬ জানুয়ারি, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    শখের বাইক, প্রিয় বই সব আছে নেই শুধু রাকিব

    মাহফুজুর রহমান উদয়, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি প্রকাশ: ৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:৪০ পিএম
    মাহফুজুর রহমান উদয়, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি প্রকাশ: ৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:৪০ পিএম

    শখের বাইক, প্রিয় বই সব আছে নেই শুধু রাকিব

    মাহফুজুর রহমান উদয়, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি প্রকাশ: ৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:৪০ পিএম

    ঘরের একপাশে ঠাই দাঁড়িয়ে আছে বাইকটি। পরিপাটি সাজানো রয়েছে বিছানা। পড়ার টেবিলে থরে থরে সাজানো রয়েছে বইখাতা। ফ্রিজে আজও জমানো রয়েছে তাঁর পছন্দের নানান রকম খাবর। নিস্তব্ধ ঘরে শুধু নেই রাকিব। ছেলের স্মৃতি আঁকড়ে তাই ডুকরে কাঁদেন বাবা-মা।

    বলছিলাম বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত শহিদ রাকিবুল হোসেনের অসহায় বাবা আবু বকর সিদ্দিক ও মা হাফিজা খাতুনের অসহায়ত্বের কথা। প্রিয় সন্তানকে হারিয়ে এখন নিঃসঙ্গ তাঁরা। ছেলে হারা বাবা-মায়ের শোকের মাতম থামেনি আজও। প্রিয় সন্তানের নানান স্মৃতি তাঁদেরকে কাঁদিয়ে বেড়াই প্রতিক্ষণ প্রতিমুহূর্ত।

    রাকিবদের বাড়ি ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামে। সেখানেই পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়েছে।

    গত ১৯ জুলাই ঢাকার মিরপুর ১১নং এর মেট্রোরেল ষ্টেশন এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন রাকিব। বর্তমানে তাঁর বাবা-মা বসবাস করছেন জেলা শহরের সার্কিট হাউজ রোডের মহিষাকুন্ডু এলাকায়। সেখানেই শুক্রবার(৩জানুয়ারি) সকালে তাঁদের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। শহিদ রাকিবের বাবা বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার আবু বকর সিদ্দিক।

    তিনি জানান, রাকিব রাজধানীর বনানী এলাকায় সুপার জুট মিল নামে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতো। সে ওই প্রতিষ্ঠানটির টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার ছিল। ঢাকার মিরপুরে ১১ নম্বর এলাকার একটি ভাড়া বাসায় কয়েকজন সহকর্মীর সাথে থাকতো সে। দুই ভাইয়ের মধ্যে রাকিব ছোট। বড় ভাই ইকবাল হোসেন সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার হিসেবে ঝিনাইদহ শাখায় কর্মরত।

    আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আন্দোলনের সময় আমরা রাকিবকে ফোন করলে সে লোকজনের ভিড় থেকে সরে গিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলতো। সে আন্দোলনে অংশ নিয়েছে এটা আমাদের বুঝতে দিতে চাইতো না। পরে আমরা ওর এক সহকর্মীর কাছ থেকে জানতে পারি।

    রাকিবের মা হাফিজা খাতুন বলেন, ১৮ জুলাই ঢাকায় যখন আন্দোলনে হামলা শুরু হয় তখন থেকেই আমাদের মধ্যে ভয় আর শঙ্কা শুরু হয়। শুধু ভাবতাম আমার রাকিব অফিসে যাবে কিভাবে? ১৯ জুলাই শুক্রবার রাকিবকে ফোন করে বললাম, আব্বু অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরো। কিন্তু আব্বুটা বলেছিল, মা কাজ আছে। বাসায় ফিরতে দেরি হবে। তখনও বুঝতে পারিনি ছেলে আমার আন্দোলনে শরিক হয়েছে। এসব কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

    নিজেকে সামলে ফের অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলতে শুরু করেন, ১৯ জুলাইয়ের ঘটনা। সেদিন শুক্রবার ছিল। বেলা আড়াইটার দিকে ছেলের সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়। সকালে রুটি আর ডিম ভাজি দিয়ে নাস্তা করেছিল বলে আমাকে জানিয়েছিল।

    তিনি আরও বলেন, ওইদিন মিরপুর ১১তে মেট্রোরেল লাইনের নিচে আন্দোলনকারীদের পানি বিতরণ করছিল আমার রাকিব। যতক্ষণ সে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিল ততক্ষণ নিরাপদেই ছিল। যখনই সে শিক্ষার্থীদের থেকে কিছুটা আলাদা হয়ে যায় তখনই তাঁকে টার্গেট করে গুলি করা হয়। আমার ছেলের সাথে থাকা সহকর্মীরা জানিয়েছে, ওপর থেকে গুলি এসে ওর গলায় ঢুকে যায়। পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে আমার মারা যায় আমার রাকিব। বলতে বলতে ফের অঝোরে কাঁদতে থাকেন তিনি।

    রাকিবের বাবা বলেন, পিয়াস নামে ওর এক বন্ধু জানিয়েছে, আন্দোলন চলাকালে একজন বয়স্ক মহিলা দৌঁড়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় সড়কের ওপর লুটিয়ে পড়েন। রাকিব তাঁকে টেনে তুলতে এগিয়ে গিয়েছিল। ঠিক তখনই ওপর থেকে গুলি এসে ওর গলাই লাগে।

    তিনি জানান, রাকিবের বন্ধু পিয়াসের মাধ্যমেই তাঁরা প্রথম ছেলের মৃত্যুর খবর পান। পরে ওর সহকর্মীরা মৃতদেহ ঢাকা থেকে ঝিনাইদহে পাঠানোর ব্যবস্থা করে।

    রাকিবের মা বলেন, ১৯ জুলাই রাত আটটার দিকে একমাত্র ভাতিজা ৪ বছরের শিশু রাফসানের সাথেই রাকিবের শেষ কথা হয়। রাফসানকে ও খুব ভালোবাসত। ওকে ছোট আব্বু ডাকত সে। ফোনে কথা বলার সময় রাফসান রাকিবকে বলেছিল- ছোট আব্বু তুমি বাড়ি চলে আসো। গাড়ি না পেলে তোমার বাইক নিয়ে চলে আসো। না হয় তুমি অ্যাম্বুলেন্সে বাড়ি চলে আসো। কে জানতো চার বছরের অবুঝ শিশুটির সেই কথাই এমন নির্মম বাস্তবে পরিণতি হবে! আমার ছেলে এভাবে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যাবে। আমরা কখনও ভাবতে পারিনি বলেই কাঁদতে শুরু করেন তিনি। অসহায় এই বাবা-মায়ের কান্না যেন কিছুতেই থামছে না। ছেলের এসব স্মৃতি বলতে বলতে প্রায়ই মূর্ছা যাচ্ছেন তাঁরা।

    আবু বকর সিদ্দিক আবেগাপ্লুত কণ্ঠে আরও বলেন, এই দিনগুলি আমাদের জন্য কত কষ্টের তা কাউকে বলে বোঝাতে পারব না। রাতে বিছানায় ঘুমাতে পারি না। ছেলের নানান স্মৃতি শুধুই কাঁদায়। ছেলে হারানোর বেদনায় বুকফাটা নিরব আর্তনাদে সারাক্ষণ ছটফট করি।

    রাকিবের মা আরও বলেন, আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করতো না। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভূতি জানাতে আন্দোলনে গিয়েছিল। আর ফিরল লাশ হয়ে। ঘরের একপাশে রাখা রাকিবের বাইকটি দেখিয়ে তিনি বলেন, আমি আর ওর বাবা প্রতিদিন এটি যত্ন করে মুছে রাখি। এতে স্পর্শ করতে মনে হয় আমাদের রাকিবকে আদর করছি। ওর ব্যবহৃত সবকিছুই আমরা যত্ন করে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখি। এসব স্মৃতি ফের দু'চোখ বেয়ে অশ্রুধারা নেমে আসে তাঁর।

    শহিদ রাকিবের বাবা আরও বলেন, আমাদের ছেলেরা একটা সুন্দর, মানবিক, সহিষ্ণু ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন নিয়ে রাজপথে আত্মদান দিয়েছে। সরকারের কাছে অনুরোধ করব যারা এই আন্দোলনে শহিদ হয়েছে তাঁদের যেন ভুলে না যায়। ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতনে হাজার হাজার মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে রাষ্ট্র যেন তাঁদের দায়িত্ব নেয়। এত রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নতুন এই স্বাধীনতা যেন মলিন না হয়।

    তিনি জানান, রাকিবের মৃত্যুর পর জেলা বিএনপি, আমরা বিএনপি পরিবার এবং জামায়াতে ইসলামীর নেতারা খোঁজ নিয়েছেন। তাঁরা কিছু অনুদানও দিয়েছেন। তবে সরকারিভাবে এখনও পর্যন্ত কেউ তাঁদের খোঁজ নেয়নি বা কোনো অনুদানও তাঁরা পাননি।

    এইচএ

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…