এইমাত্র
  • লন্ডনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়লেন খালেদা জিয়া
  • বিমানবন্দরে খালেদা জিয়া, রাতেই যাচ্ছেন লন্ডন
  • ফেলানী হত্যার ১৪ বছর, বিচার দেখে মরতে চান বাবা-মা
  • নেতাকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত খালেদা জিয়া
  • খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী হিসেবে আছেন যারা
  • এবার সিলেট যাচ্ছেন আজহারী
  • সাত বছর পর দেখা হবে মা-ছেলের
  • শেখ হাসিনাসহ ৭৫ জনের পাসপোর্ট বাতিল
  • বিমানবন্দরের পথে খালেদা জিয়া
  • ভারত থেকে আরও ৫০ হাজার টন চাল কিনবে সরকার
  • আজ বুধবার, ২৫ পৌষ, ১৪৩১ | ৮ জানুয়ারি, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    লক্ষ্মীপুরে এনজিও থেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে দম্পতির প্রতারণা

    সময়ের কণ্ঠস্বর রিপোর্ট প্রকাশ: ৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:১৬ পিএম
    সময়ের কণ্ঠস্বর রিপোর্ট প্রকাশ: ৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:১৬ পিএম

    লক্ষ্মীপুরে এনজিও থেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে দম্পতির প্রতারণা

    সময়ের কণ্ঠস্বর রিপোর্ট প্রকাশ: ৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:১৬ পিএম

    লক্ষ্মীপুরে ঋণের টাকা আত্মসাৎ করতে ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের পরিকল্পিতভাবে একের পর এক সাজানো মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে এক মামলাবাজ ধুরন্ধর প্রতারক দম্পতির বিরুদ্ধে। প্রতারক এই দম্পতি ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কয়েকদিনের ব্যবধানে করেছেন ছয়টি মামলা! যার কারণে মামলা আতঙ্কে দিশেহারা ক্ষুদ্রঋণ ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আম্বালা ফাউন্ডেশনের লক্ষ্মীপুর সদর ব্রাঞ্চের কর্মীরা।

    অভিযুক্ত মামলাবাজ এবং প্রতারক দম্পতি হলেন, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বাঞ্ছানগর গ্রামের দেওয়ানবাড়ির আক্কাস দুলালের ছেলে আশরাফ উদ্দিন আরজু (৪০) ও তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদাউস (২৯)। বর্তমানে তারা উত্তর মজুপুর এলাকায় নতুন বসতবাড়িতে বসবাস করছেন।

    জানা যায়, পরিকল্পিতভাবে পূর্বের ঋণকৃত টাকা পরিশোধ করে মৎস্য ও গরুর খামারের ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে গত ৮ই আগস্ট আম্বালা ফাউন্ডেশনের লক্ষ্মীপুর সদর ব্রাঞ্চ থেকে ৫০ হাজার টাকা মাসিক কিস্তির শর্তে ৫ লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন আরজুর স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদাউস।

    ঋণ গ্রহণের পরপরই টাকা পরিশোধ না করতে নেন প্রতারণার আশ্রয়। প্রথম কিস্তির টাকা জমা না করেই একের পর এক মামলা করেছেন ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। মামলার বাদী জান্নাতুল ফেরদাউস মামলায় উল্লেখ করেছেন ঋণের টাকা না দেওয়ার কারণে বিভিন্ন সময়ে ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান আম্বালা ফাউন্ডেশনের কর্মীরা তাদের উপর হামলা করেছেন। যে সময়কাল উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে সেসময় উজানের পানি ও ভারী বৃষ্টিতে নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরে আকস্মিক বন্যার প্রাদুর্ভাব ঘটলে উক্ত এলাকায় মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটির নির্দেশক্রমে আম্বালা ফাউন্ডেশন ঋণ গ্রহীতাদের কিস্তি আদায় শিথিল করে। পাশাপাশি পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত শুধুমাত্র স্বেচ্ছা প্রদত্ত গ্রাহকদের কিস্তি গ্রহণ কর্মসূচী চালু রেখে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে আম্বালা ফাউন্ডেশন প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।

    এমন পরিস্থিতিতে ধুরন্ধর দম্পতি আরজু-জান্নাতুল ফেরদাউস পরিকল্পনামাফিক প্রথম কিস্তি দেওয়ার মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে একের পর এক মিথ্যা সাজানো মামলা দায়ের করেন আম্বালা ফাউন্ডেশনের লক্ষ্মীপুর সদর ব্রাঞ্চের কর্মীদের বিরুদ্ধে। একটি মামলায় হাজিরা দিয়ে জামিন নিতে না নিতেই আরেকটি মামলা দায়ের করেন ওই স্বামী-স্ত্রী। লক্ষ্মীপুর ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল কোর্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, যা ক্রমান্বয়ে সিআর ১৫৯৯/২৪ তারিখ ২৯/০৯/২৪, পিটিশন মামলা ২১৬/২৪ তারিখ ৩০/০৯/২৪, মিছ মামলা ১৬৬/২৪ তারিখ ০১/১০/২৪, মিছ মামলা ১৬৫৫/২৪ তারিখ ০৩/১০/২৪, মিছ মামলা ১৮০/২৪ তারিখ ৩০/১০/২৪ ও জিআর ৫০১/২৪ তারিখ ০১/১২/২৪।

    এভাবে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে পরপর ৬টি মিথ্যা বানোয়াট মামলায় জড়ানো হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জীবিকার তাগিদে আসা আম্বালা ফাউন্ডেশন লক্ষীপুর সদর ব্রাঞ্চে কর্মরত কর্মীদের। এমনকী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এক মামলায় জড়ানো হয়েছে আম্বালা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালককেও।

    অনুসন্ধানে জানা যায়, মামলাবাজ ঋণ খেলাপি জান্নাতুল ফেরদাউস, স্বামী আশরাফ উদ্দিন আরজু ও তার শ্বশুরালয়ের লোকজন অত্যন্ত সুচতুর, ধুরন্ধর ও কৌশলী প্রকৃতির মানুষ। নগদ টাকা নিয়ে জমি বিক্রি করে তা খরিদ্দারকে দখল না দেওয়া, বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে নামে বেনামে ঋণ গ্রহণ করে পরিশোধ না করা, মানুষকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো, পুলিশের উপর হামলা, এলাকায় দাঙ্গা হাঙ্গামা, ভূমি দখল, মাদকের ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই যেখানে তাদের সম্পৃক্ততা ছিল না।

    বিগতদিনে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা আরজু এক সময় ছিল সুপারি বেপারী। গডফাদারের হাত ধরে সময়ের ব্যবধানে হয়ে ওঠেন যুবলীগ ক্যাডার। পরবর্তীতে লক্ষ্মীপুর শহর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নিয়ে আধিপত্য বিস্তার করে চাঁদাবাজির ব্যবসায় কামিয়েছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ। আর তার এসব অপকর্মের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছেন আওয়ামী লীগের একাধিক স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।

    স্থানীয়রা জানায়, রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপটে গত ১০ বছরে নামে বেনামে অঢেল বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন আশরাফ উদ্দিন আরজু। আর তার এসব কাজে সহযোগিতা করেছেন তার স্ত্রী ও বাবা। অবৈধভাবে আরজুর পরিবার এখন চার চারটে বাড়ির মালিক। আরজু ও তার বাবার পূর্বের দেওয়ান বাড়িটি দীর্ঘদিন আগে বিক্রি করে দিলেও হস্তান্তর না করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেরা ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। এছাড়া বর্তমান বাড়িটিও বিক্রি করে হস্তান্তর করেনি বলে জানা গেছে।

    এরই ধারাবাহিকতায় প্রতারণার নেশায় বুঁদ থাকা আশরাফ উদ্দিন আরজু আম্বালা ফাউন্ডেশন থেকে কৌশলে ৫ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে সেটি আত্মসাৎ করতে নানা ফন্দি আটেন। পরিকল্পনামাফিক গেল বছরের ২৯ সেপ্টেম্বরে আম্বালা ফাউন্ডেশনের কর্মী পাভেল রানা, ব্রাঞ্চ ম্যানেজার সিরাজুল ইসলাম ও এরিয়া ম্যানেজার বেলাল হোসেনকে আসামি করে আদালতে প্রথম মামলা করেন তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদাউস।

    এখানে উল্লেখ করা হয়, কিস্তির টাকার জন্য ২৬ সেপ্টেম্বর বাদির ঘরে প্রবেশ করে আম্বালা ফাউন্ডেশনের লোকজন ঘর-দরজা ভাঙচুর করে বাদিকে রড দ্বারা আঘাত করে আহত করে। এসময় বাদির গলার ৬৫ হাজার টাকা মূল্যের ১৪ আনা চেইন, ৪নং স্বাক্ষীর কানের দুল, স্বামীর মোবাইল এবং ৩টি করে ৪ জনের ১২টি চেকের পাতা নিয়ে যায়।

    এরপর চেকের পাতা উদ্ধার চেয়ে পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় মামলা করেন জান্নাতুল। এখানেই ক্ষান্ত হননি তিনি, একদিন পর ০১ অক্টোবর আম্বালা ফাউন্ডেশনের ওই তিনজনের নামে হুমকির অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন। মাঝখানে একদিন বিরতি দিয়ে ০৩ অক্টোবর চতুর্থ মামলা করেন জান্নাতুল ফেরদাউস।

    সেখানে উল্লেখ করা হয়, মামলা ও চেক উদ্ধারের ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ৩ অক্টোবর সকাল ১০টায় আম্বালা ফাউন্ডেশনের উক্ত কর্মী পাভেল রানা, ব্রাঞ্চ ম্যানেজার সিরাজুল ইসলাম ও এরিয়া ম্যানেজার বেলাল হোসেন জান্নাতুল ফেরদাউসের বসতঘরে গিয়ে তাকে লাথি মেরে ফেলে দিয়ে গলায় পাড়া দিয়ে ধরে। পরে বটি দিয়ে কোপ মারলে তার হাত কেটে যায়। পরে তাকে হাসপাতালের ভর্তি করা হয়।

    এছাড়া মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ ও হত্যার হুমকির অভিযোগ তুলে ৩০ নভেম্বর পঞ্চম মামলা করেন জান্নাতুল ফেরদাউসের স্বামী প্রতারক আশরাফ উদ্দিন আরজু। এবং সর্বশেষ ০১ ডিসেম্বর পাভেল রানা, সিরাজুল ইসলাম, বেলাল হোসেনসহ খোদ আম্বালা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আরিফ সিকদারকে আসামি করে হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেন জান্নাতুল ফেরদাউস।

    মামলায় উল্লেখ থাকে, গত ২৯ নভেম্বর উত্তর মজুপুর এলাকার আনু বেপারীর বাড়ির সামনে আসামিরা মোটরসাইকেলযোগে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ওঁৎ পেতে থাকে। এক নম্বর আসামি বাদি জান্নাতুল ফেরদৌসের মাথায় চাপাতি দিয়ে কোপ মেরে মারাত্মকভাবে জখম করে। পরে তাকে উদ্ধার করে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে মাথায় ৬টি সেলাই দেওয়া হয়।

    জানা গেছে, আশরাফ উদ্দিন আরজুর ধারাবাহিক এই ৬টি মামলায় আইনজীবী হিসেবে রয়েছেন আওয়ামী পন্থি আইনজীবী সমিতির নেতা রেজাউল করিম রাজু পাটোয়ারী। আরজুর নিকটতম প্রতিবেশী এই আইনজীবী রাজুর বিরুদ্ধেও রয়েছে এলাকাবাসীর নানা অভিযোগ।

    এছাড়া আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আম্বালা ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে এই প্রতারক সিন্ডিকেটের ধারাবাহিক মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে আরজু ও তার স্ত্রীর আত্মীয় স্বজনকে। এসব মামলার তথ্য বিবরণী দেখলে প্রাথমিকভাবে লক্ষ্য করা যায় সকল মামলা অত্যন্ত চাতুরতার সহিত পূর্বপরিকল্পিত।

    এদিকে আরজুর স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদাউসের দায়ের করা প্রথম মামলার অভিযোগে বলা হয়, বন্যায় তাদের মাছের ঘের ভেসে যায় ও খামারের চারটি গরু মারা যায়। যে কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ায় ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। তবে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, আদৌতে তাদের কোন মৎস্য খামার বা গরুর খামারই নেই। এমনকি বন্যায় তাদের তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতিও হয়নি।

    আরও একটি মামলায় অভিযোগ করা হয় যে, আম্বালা ফাউন্ডেশনের লোকজন এবং এর নির্বাহী পরিচালকসহ সবাই তাদেরকে হামলা করে গুরুতর আহত করে, তাদের বসতবাড়ি ভেঙে ফেলে, ছিনতাই লুটপাট করে তাদেরকে হত্যা চেষ্টা করে।

    এই মামলার সাক্ষী বিবি রহিমার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, কোন মামলা? কিসের মামলা? এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। অপর সাক্ষী বৃষ্টিকে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করে পরিচয় দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই লাইন কেটে দেন।

    এদিকে ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী ঋণ খেলাপি হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে লক্ষ্মীপুর ও ঢাকা আদালতে সিআর- ৬৭৯/২৪ তারিখ ০৩-১০-২৪ ও সিআর ১৮১০/২৪ তারিখ ২৮-১০-২৪ দুইটি মামলা দাখিল করে আম্বালা ফাউন্ডেশন। আদালত মামলা দুটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য সদর থানায় প্রেরণ করে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে অদ্যাবধি সেই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়নি পুলিশ।

    এদিকে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরের ত্রাস জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি, সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, লক্ষ্মীপুরের গডফাদারখ্যাত এমএ তাহেরের বড় ছেলে এ কে এম সালাউদ্দিন টিপুর দুর্ধর্ষ ক্যাডার ছিলেন জান্নাতুলের স্বামী আশরাফ উদ্দিন আরজু। তার নামে রয়েছে পুলিশের উপর হামলা, হত্যা মামলাসহ নানা অভিযোগ। এছাড়া আওয়ামী সরকার বিরোধী ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে গত ৪ আগস্ট লক্ষ্মীপুরের রাজপথে ছাত্র হত্যার একাধিক মামলায় গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন আশরাফ উদ্দিন আরজু। রিমান্ড শেষে বর্তমানে তিনি জেলহাজতে রয়েছেন।

    বাঞ্ছানগর গ্রামের নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক মসজিদের ইমাম বলেন, আশরাফ উদ্দিন আরজু ও তার বাবা অত্যন্ত সুচতুর, ধুরন্ধর ও কৌশলী প্রকৃতির মানুষ। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন এমন কোনো অপকর্ম নেই যার সঙ্গে তারা যুক্ত ছিল না। প্রভাবশালী যুবলীগ ক্যাডার হওয়ার সুবাদে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পর্যন্ত পায়নি এলাকাবাসী। নানা অপকর্মের কারণে কোনো এলাকাতেই দীর্ঘদিন থাকতে পারে না তারা।

    জানতে চাইলে আরজুর পাশ্ববর্তী ঘরের বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, আরজু আগে সুপারির ব্যবসা করতো, বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

    গত ২৬ সেপ্টেম্বর আরজুর ঘরে এসে আম্বালার লোকজনের হামলার অভিযোগের বিষয়ে আবুল কাশেম বলেন, এনজিওর কোনো লোক কর্তৃক এমন হামলার ঘটনা ঘটেনি। গত কয়েক মাসেও কোনো এনজিও কর্তৃক এমন কিছু হতে আমরা দেখিনি। ঘটলে কেউ না কেউ শুনতো।

    স্থানীয় বাসিন্দা জাবেদ বলেন, এনজিওর লোক এসে হামলা করেছে এমন কিছু আমি শুনিনি। যদি এমন কিছু করতো এলাকার লোকজন কানাঘোষা (আলোচনা) করতো।

    ২৮ নভেম্বর আনু মিয়ার বাড়ির সামনে হামলা এবং মাথায় চাপাতি দিয়ে কোপের বিষয়ে ঘটনাস্থলের পাশের বাড়ির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বলেন, ওই দিন বিকালে এখানে এমন কিছু ঘটতে আমি দেখিনি। পরে কারো মুখ থেকেও শুনিনি।

    তবে আরজুর প্রতিবেশী সাজু নামে এক সিএনজি চালক বলেন, জমিজমা সংক্রান্ত জের ধরে এক দেড় মাস আগে আরজুর বাড়িঘরে ভাঙচুর হয়েছে। তার বাড়ির পাশের ফাঁকা প্লটে তার স্ত্রী বালু ফেলতে দেয়নি। পরে এলাকার ছেলেপেলে এসে বাড়ির বাউন্ডারি টিনে ভাঙচুর করে। শুনেছি, জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আরজুর স্ত্রীর সঙ্গে তার আত্মীয়দের ঝামেলা চলতেছে।

    উক্ত বাড়িঘর ভাঙচুরের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে প্রতিবেশী একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে প্রতিবেদক। তবে আশরাফ উদ্দিন আরজুর পরিচয় শুনে তার বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে ভয়ে কথা বলতে কেউ আগ্রহী হননি। এমনকী এই নামে কাউকে চিনেন না বলে কেউ কেউ দ্রুত সটকে যান।

    তবে প্রতিবেশী একাধিক ব্যক্তি জানান, গত ২৮ নভেম্বর আনু মিয়ার বাড়ির সামনে আরজুর স্ত্রীর উপর হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। যদিও এর কয়েকদিন পর তার মাথায় ব্যান্ডেজ দেখতে পেয়েছি।

    এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিবেশীরা জানায়, এরা অত্যন্ত দুষ্ট প্রকৃতির লোক, আওয়ামী লীগ শাসনামলেও অনেক অন্যায় অবিচার করেছে। এদের বিচার হওয়া জরুরী।

    এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার আসামি আম্বালা ফাউন্ডেশনের লক্ষীপুরের এরিয়া ম্যানেজার মো. বেল্লাল হোসেন বলেন, আরজুর পরিবারের সঙ্গে আমাদের হামলা বা মারামারির কোনো ঘটনা ঘটেনি। রাজনৈতিক বা অন্য কোনো কারণে হয়তো ভিন্ন কোনো স্থানে তাদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে, যা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এনজিও কর্মী করেছে বলে চালিয়েছে। পুলিশ সঠিক তদন্ত করলেই বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে।


    প্রতিষ্ঠানের ঋণকৃত টাকা আত্মসাৎ করার জন্যই ওই দম্পতি এ ধরণের মিথ্যা মামলার আশ্রয় নিয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

    আম্বালা ফাউন্ডেশনের চট্টগ্রাম জোনের দায়িত্বে থাকা মাইক্রোফাইন্যান্স প্রোগ্রামের (এমএফপি) সহকারী পরিচালক পলাশ চক্রবর্তী বলেন, খবর পেয়ে আমি লক্ষীপুর ছুটে গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি আশরাফ উদ্দিন আরজু ও জান্নাতুল ফেরদাউস দম্পতি অত্যন্ত লোভী ও প্রতারক প্রকৃতির লোক। তারা কর্মীদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে টানা ছয়টি মামলা দায়ের করেছে। সম্প্রতি আদালতের প্রতি সম্মান জানিয়ে তিনজন কর্মী আদালতে উপস্থিত হলে বিজ্ঞ আদালতে ঘটনা বিচার বিশ্লেষণ করে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। তবুও তাঁরা ভয়ে শঙ্কিত ও আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

    তিনি আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিভিন্ন মানবিক কার্যক্রমে আম্বালা ফাউন্ডেশন সরকারি ত্রাণ তহবিল ও মানবসেবায় বিভিন্ন খাতে আর্থিক অনুদান করে যাচ্ছেন। এখানে ৫ লক্ষ টাকার জন্য প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক তার প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সঙ্গে স্বয়ং ফৌজদারী অপরাধ করতে আসবেন বিষয়টি একেবারেই হাস্যকর ও বেমানান। এসব মামলা আরজুর সঙ্গে পরিকল্পিত ও সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য করাচ্ছেন।

    সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে পাঁচটি মামলার বাদী জান্নাতুল ফেরদাউস গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলতে চাননি। তিনি বলেন, আদালতে মামলা করেছি, যা বলার সেখানে গিয়ে বলব। ঋণ নেয়ার সময় চেকের পাতা জমা দিয়ে আম্বালা ফাউন্ডেশন রেজিষ্ট্রার বুকে আপনি স্বাক্ষর করেছেন কিনা জানতে চাইলে উত্তরে তিনি বলেন, হ্যাঁ এটা আমার স্বাক্ষর।

    মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লক্ষ্মীপুর সদর থানা পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) মুহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, আমি জান্নাতুল ফেরদাউসের দায়ের করা দুইটি মামলার তদন্ত করছি। মামলার তদন্তের কাজ অনেক দূর এগিয়েছে, খুব শিগগিরই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

    জান্নাতুল ফেরদাউসের দায়ের করা আরেক মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মনির হোসেন বলেন, 'মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধিন রয়েছে।' এর বেশিকিছু না বলে ফোন কেটে দেন তিনি।

    এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল মোন্নাফ সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, আরজু লক্ষ্মীপুর পৌর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও যুবলীগ ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থী হত্যার একাধিক মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেলহাজতে আছেন।

    আম্বালা ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে ৬টি মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবগুলো মামলাই তারা আদালতে দাখিল করেছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। দ্রুত সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…