যশোরে শীতের আমেজ কুমড়ো বড়ি তৈরির ধুম পড়েছে। গ্রামে ভোরের রোদ উঠলেই বাড়ির উঠান, বারান্দা ও ছাদে শুরু হয় বড়ি শুকানোর দৃশ্য। নারী-পুরুষ মিলে বড়ি তৈরিতে অংশ নিচ্ছেন। গ্রামজুড়ে এখন কুমড়ো বড়ি বানানোর এক ধুম লেগেছে। কুমড়ো বড়ি শুধু সুস্বাদুই নয়। এটি গ্রামবাংলার একটি প্রাচীন ও জীবন্ত ঐতিহ্য, যা এখনও শীতের সকালে ঘরে ঘরে রঙ ছড়িয়ে দেয়।
জানা গেছে, মাষকলাই ডাল, চাল ও কুমড়োর বাটা দিয়ে তৈরি এ বড়ি দীর্ঘদিন ধরে শীতকালীন রান্নায় আলাদা স্বাদ যোগ করে আসছে। প্রতি বছর শীত এলেই পরিবারের সারা বছরের চাহিদা অনুযায়ী বড়ি তৈরি করা হয়। অনেক পরিবার অতিরিক্ত বড়ি বানিয়ে বাজারে বিক্রিও করেন। এতে শীত মৌসুমে অনেক নারীর বাড়তি আয় হয়।
বর্তমানে বাজারে মাষকলাই ডালের দাম কেজি প্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা এবং চালকুমড়া ৭০ থেকে ১০০ টাকা। ৫ কেজি কুমড়া ও ২ কেজি মাষকলাই দিয়ে উন্নতমানের বড়ি তৈরি করা যায়। উৎপাদন খরচ কেজি প্রতি দাঁড়ায় ১২০ থেকে ১৭০ টাকা। বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়।
যশোর সদর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের নুরজাহান বেগম জানান, শীতের ঐতিহ্য হল কুমড়ো বড়ি তৈরি। তারা পরিবারের লোকজন দলবদ্ধ হয়ে কুমড়ো বড়ি তৈরি করেছেন।
চান্দুটিয়া গ্রামের হাসি বেগম জানান, শীতের সময় কুমড়ো বড়ি তৈরি উৎসব বাড়িয়ে দেয়।
অভয়নগর উপজেলার শ্রীধরপুর ইউনিয়নের দিঘীরপাড় গ্রামের নুরজাহান বেগম বলেন, আগে ডাল বাটতে অনেক সময় লাগতো। এখন মেশিন থাকার কারণে অল্প সময়ে বেশি বড়ি বানানো যায়। সবচেয়ে জরুরি হলো রোদ পাওয়া। দুই থেকে তিন দিন রোদ পেলেই বড়ি শুকিয়ে খাওয়ার উপযোগী হয়।
চলিশিয়া ইউনিয়নের কাদিরপাড়ার ফিরোজা বেগম বলেন, ছোটবেলা থেকেই দেখছি সবাই বড়ি বানাতো। প্রযুক্তির কারণে এখন সেই কষ্ট নেই। কাজও সহজ হয়েছে।
নওয়াপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী গৌড় চন্দ ও উজ্জ্বল চন্দ্র জানান, এখানকার বড়ির চাহিদা শুধু স্থানীয় বাজারেই নয় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। স্বাদের কারণে বছরের এই সময়ে কুমড়ো বড়ির বাজার বেশ জমে ওঠে।
মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ এলাকার রেবেকা খাতুন, বন্যা বেগমসহ আরও কয়েকজন জানান, কুমড়ো বড়ি তৈরি এখন গ্রামীণ নারীদের জন্য বাড়তি আয়ের একটি মাধ্যম। বড়ি তৈরি করে নিজেরাও খাচ্ছেন আবার বিক্রিও করছেন। গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী করতে কুমড়ো বড়ি তৈরির প্রশিক্ষণ ও যথাযথ সহায়তা প্রয়োজন
এসআর