ঘুমকাতুরে স্বভাব আছে অনেকেরই। একটু সুযোগ মিললো এমন সময়ে ঘুম এড়ানোটা কষ্টকর। বিছানায় একটু আরাম করে শুলেন - আবহাওয়াও চনমনে। ব্যাস বেশ একটু ঘুম। বয়োজ্যেষ্ঠরা অবশ্য বলেন, বেশি ঘুম ভালো নয়। কথাটা কিন্তু ভুল নয়।
শরীর সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত খাবারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুমও বেশ জরুরি। ঠিকমতো ঘুম না হলে নানা শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি থেকে যায়। মানসিক অস্থিরতা, ওজন বেড়ে যাওয়াসহ নানা রোগের কারণ ঘুমের ঘাটতি। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, কম ঘুম যেমন ক্ষতিকর তেমনি বেশি ঘুমও ক্ষতির কারণ হতে পারে।
অতিরিক্ত ঘুম ডেকে আনে বিপদ। সেটি ঘুমের ঘাটতির চেয়েও বেশি মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। দিনে ১০ ঘণ্টার বেশি ঘুমানোর কারণে কী কী শারীরিক সমস্যা হতে পারে? চলুন জেনে নিই-
বেশি ঘুমালে টানা অনেকটা সময় শুয়ে কাটাতে হয়। ফলে শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে যেটুকু শরীরচর্চা প্রয়োজন তা আর করা হয় না। আর এই কারণে বাড়ে হার্টের সমস্যার আশঙ্কা। কেবল তাই নয়, অতিরিক্ত ঘুমের কারণে রক্ত চলাচলেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক না থাকলে হৃদরোগের ঝুঁকি থেকে যায়।
কোনো ব্যক্তি কেমনভাবে জীবনযাপন করছেন, তার ওপর নির্ভর করে তার রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি। সারা দিনের খাওয়াদাওয়া, কাজ, শরীরচর্চা— সবকিছুর প্রভাব পড়ে ওই ব্যক্তির বিপাকহারের ওপর। দিনের বেশিরভাগ সময় যদি ঘুমিয়েই কাটে, সেক্ষেত্রে কোনো রুটিন ঠিকমতো মেনে চলা যায় না। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকে।
অতিরিক্ত ঘুম ডিপ্রেশনের কারণ হতে পারে। স্লিপিং সাইকেল নষ্ট হয়ে গেলে উৎকণ্ঠা এবং মানসিক চাপ সৃষ্টি হতে পারে।
বেশি ঘুমানোর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে হতে পারে ক্লান্তি। অত্যধিক ঘুমে দেহঘড়ির স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়। অতিরিক্ত বিশ্রামের কারণে পেশী এবং স্নায়ু শক্ত হয়ে যায়। ফলে শারীরিক চাপ নিতে সমস্যা হয়।
অতিরিক্ত ঘুম হরমোনের উপরও প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনগুলো এর দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়। বেশি ক্লান্ত বোধ করার কারণে শরীরে খুব কম শক্তি থাকে, যার কারণে মানুষ সাধারণত জাঙ্ক ফুড বা উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়া শুরু করে। এই সব কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। যার ফলে ডায়েবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বেশি ঘুমানোর খারাপ প্রভাব নারীদের ফার্টিলিটির উপরও পড়ে।গবেষণায় দেখা গেছে ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন থেরাপিতে থাকা নারীরা যারা সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমান তাদের গর্ভধারণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। ৬ ঘণ্টা বা তার কম ঘুমান তারা তাদের সন্তান ধারণের সম্ভাবনা ৪৬ শতাংশ এবং যারা ৯ থেকে ১১ ঘণ্টা ঘুমান তাদের সন্তান ধারণের সম্ভাবনা থাকে ৪৩ শতাংশ।
প্রজনন ক্ষমতা কমে যাওয়া
দীর্ঘ সময় ঘুমালে শারীরিক সক্রিয়তা অনেকটাই কমে যায়। ফলে নারী ও পুরুষ উভয়েরই প্রজনন ক্ষমতায় প্রভাব পড়ে। শারীরিকভাবে সক্ষম না থাকলে, প্রজননে সাহায্যকারী হরমোনগুলির ভারসাম্যও নষ্ট হয়।
বেশি ঘুমের কারণে ওজন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। দিনের অধিকাংশ সময় ঘুমিয়ে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরচর্চার অভ্যাসে ভাটা পড়ে। আর শরীরচর্চা না করলেই বাড়ে ওজন।
তাই বেশি ঘুমানোর অভ্যাস থাকলে দ্রুত পরিহার করুন। আরামপ্রিয়তাকে কিছুটা সংযত রাখতে পারলে আপনারই লাভ।