আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে কক্সবাজারের রামু উপজেলায় এক বিশাল জনসভার আয়োজন করা হয়। কক্সবাজার-৩ (কক্সবাজার সদর, রামু, ঈদগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) সাইমুম সরওয়ার কমলের এই জনসভা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। নির্বাচনের আগে বিশাল এই জনসভাকে এমপি কমলের শক্তি প্রদর্শন হিসেবে দেখছেন সবাই।
শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রামু খিজারী স্টেডিয়ামে এই জনসভার আয়োজন করা হয়।
জনসভায় আওয়ামী লীগসহ এর অঙ্গসংগঠনগুলোর উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও কেন্দ্রভিত্তিক নেতারা, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া, ধর্মীয় ও পেশাজীবী নেতারা বক্তব্য রাখবেন।
দুপুর ২টা থেকেই রামু উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ নেচে-গেয়ে এবং মিছিল নিয়ে জনসভায় যোগ দেয়। স্টেডিয়ামের উত্তর প্রান্তে নির্মিত বিশাল উন্মুক্ত মঞ্চে দুপুরের পর থেকে চলে নেতাকর্মীদের বক্তব্য।
জনসমাবেশকে ঘিরে জনতার বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে স্টেডিয়ামের বাইরে চৌমুহনী, বাইপাস ফুটবল চত্বরসহ আশপাশের তিন কিলোমিটার সড়কে। হাজারো মানুষের ভিড়ে সবখানে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়।
জনসভায় এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, 'রেললাইন, আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর, গভীর সমুদ্রবন্দরসহ অনেক মেঘা প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন করে সরকার কক্সবাজারের চেহারা পাল্টে দিয়েছে। চারলেনের সড়ক, বড় বড় সেতু নির্মাণ হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও অকল্পনীয় উন্নয়ন হয়েছে। '
করোনা মহামারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে বিশ্বের অনেক দেশ বিপর্যস্ত ও অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হলেও বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় দূর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। দেশের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে আবারও ক্ষমতায় আনার বিকল্প নেই।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই দেশের কাঙ্খিত উন্নয়ন-অগ্রগতি সম্ভব জানিয়ে এই এমপি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে মানুষ প্রমাণ পেয়েছে, তাই আগামী নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আবারও ক্ষমতায় এনে এদেশের ১৬ কোটি মানুষের নিরাপত্তা, অধিকার ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে নৌকা প্রতীককে বিপুল ভোটে জয়ী করতে হবে।
বিগত ১০ বছর সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছি এ দাবি করে তিনি বলেন, প্রতিটি গ্রামের গলিতে আমি চষে বেরিয়েছি। সেবা করতে গিয়ে কখন রাত, কখন দিন বুঝতে পারিনি। আমার নিরলস পরিশ্রমে অসংখ্য মানুষকে সেবা দিয়েছি। নতুন নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা, রামু কলেজ ও খিজারী উচ্চ বিদ্যালয় সরকারিকরণ ও বিকেএসপি স্থাপনের মাধ্যমে রামুকে শিক্ষার নগরী করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
সমাবেশে এমপি কমল আরও বলেন- যারা দলের দূর্দিনে পাশে ছিলো না, মানুষের দূর্দিনে খবর নেয়নি, করোনাকালে ঘরের বাইরে আসেনি- তারা এখন নৌকার মনোনয়ন পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাদের মানুষ কখনো দেখেনি। অনেকের নামও মানুষ জানেনা। অনেক নেতা ৩ উপজেলার সকল ইউনিয়নের নাম ও ইউপি চেয়ারম্যানদের নামও বলতে পারবে না। একমাস আগে সৃষ্ট বন্যাতেও এসব নেতাদের মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। এসব নব্য নেতারা এখন নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করার মতোই আমার মনোনয়ন ঠেকাতে একজোট হয়েছে। জনবিচ্ছিন্ন এসব মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ঠাঁই দলেও নাই, মানুষের হৃদয়েও নাই। এরা নিশ্চিত ভরাডুবি জেনেই দলের সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য মনোনয়ন নাটক শুরু করেছে।
সমাবেশে আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বলেন, কক্সবাজার-৩ (কক্সবাজার সদর, রামু, ঈদগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য কমল বিগত ১০ বছর দায়িত্ব পালনকালে সবসময় মানুষের সুখে-দুখে পাশে ছিলেন।
রামুর ১১টি ইউনিয়নের সড়ক, সেতু, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল-ক্লিনিক দেখলেই বোঝা যায়, এমপি কমল মানেই উন্নয়নের রূপকার। তাই উন্নয়নের রূপকার কমলই আওয়ামী লীগের যোগ্য মনোনয়নপ্রত্যাশী।
জনসভায় কথা হয় রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের সুখমনিয়া গ্রামের অধিবাসী প্রবাস ফেরত আবদুল হাকিম (৫৪) সাথে। শুধু হাকিম নয়, জনসভায় আসা অগণতি কর্মী বলেন, গত এক দশক আগেও চান্দেরগাড়ি (জিপ) ছাড়া রামুর পাহাড়ঘেরা ইউনিয়ন কচ্ছপিয়া, কাউয়ারখোপ, ঈদগড় ও গর্জনিয়ায় যাওয়ার বিকল্প ছিল না। তা-ও নির্দিষ্ট কিছু সময়েই জড়ো হয়ে যেতে হতো। কিন্তু বর্তমান সরকারের টানা সময়ে এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। এখন নামিদামি যানবাহন নিয়ে দিনরাত যেকোনো সময় এসব এলাকায় যাওয়া যায়। আমি এক যুগ পর প্রবাস থেকে এসে এ উন্নয়ন দেখে বিমোহিত হয়েছি। কৃতজ্ঞতায় নৌকার জনসভায় এসেছি।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মুসরাত জাহান মুন্নী, আওয়ামী লীগ নেতা খুনিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল গণি, কক্সবাজার জেলা পরিষদ সদস্য ফরিদুল আলম, রামু উপজেলা ইউপি চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি ও চাকমারকুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সিকদার, সাধারণ ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভূট্টো, ঝিলংজা ইউপি চেয়ারম্যান টিপু সুলতান, কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শামশুল আলম, ঈদগড় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমদ ভুট্টো, রশিদনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এমডি শাহ আলম, কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু মো. ঈসমাইল নোমান, রাজারকুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুফিজুর রহমান, কক্সবাজার জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য নুরুল হক, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. আলী হোসেন, খুনিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মাবুদ, গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম, দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইউনুচ ভূট্টো, রামু উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নীতিশ বড়ুয়া, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি তপন মল্লিক সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর ছিদ্দিক, সহসভাপতি আনছারুল হক ভুট্টো, ঝিলংজার ৬ নং ওয়ার্ড আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক আমিন প্রমুখ।