এইমাত্র
  • আবারও কমলো সোনার দাম
  • আবাসিক হোটেলে অভিযান, নারীসহ আটক ৭
  • মাদারীপুরে বাস-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১
  • মির্জাপুরের বৃষ্টি প্রার্থনায় অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা
  • ভালুকায় খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে স্যালাইন ও পানি বিতরণ
  • রাবিতে জীববিজ্ঞানে ‘ট্রান্সলেশনাল’ গবেষণার ওপর সম্মেলন অনুষ্ঠিত
  • 'সংসদ সদস্যরা উপজেলা প্রার্থীর হয়ে প্রচারণা করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে'
  • বেরোবিতে ‘এ’ ইউনিটের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
  • ইবিতে পরিক্ষা কক্ষে নেই শিক্ষক!
  • চট্টগ্রামে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের ডাক
  • আজ শনিবার, ১৪ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৭ এপ্রিল, ২০২৪
    দেশজুড়ে

    কালিয়াকৈরের হাতে ভাজা মুড়ির সুনাম বহুদিনের

    মো. সেলিম রানা, কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:২২ পিএম
    মো. সেলিম রানা, কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:২২ পিএম

    কালিয়াকৈরের হাতে ভাজা মুড়ির সুনাম বহুদিনের

    মো. সেলিম রানা, কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:২২ পিএম

    মুড়ি অতিথি আপ্যায়ন , নাস্তা অথবা অন্য কোন খাবারের সহযোগী হিসেবে বাঙালি ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে। গ্রামের নারীরা মুড়ি তৈরিতে বেশ পারদর্শী। কৃষক নতুন ধান ঘরে তুলেই উৎসবমুখর পরিবেশে মুড়ি প্রস্তুত শুরু করে দেয়। প্রতি বাড়িতেই চলে মুড়ি তৈরি ধুম; পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাকিটা বিক্রি করে দেয়। এতে বাড়তি আয় করে অনেক পরিবার। কিছু পরিবার পেশা হিসেবে নিয়েছে বহুকাল থেকে। একটা সময় ছিল মুড়ি তৈরি করে হাটে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কালের বিবর্তনে সাথে সাথে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে এই পেশাতেও। এতে করে উৎপাদন বেড়েছে কয়েক গুণ। সনাতন পদ্ধতিতে হাতে ভাজা মুড়ির স্বাদ ও গন্ধ নেই আগের মতো। হাতে ভাজা মুড়ি তৈরিতে রয়েছে নানা কলাকৌশল। এতে করে যেমন শ্রম ও অর্থ ব্যয় হয় মেশিনে তৈরিতে তুলনামূলক ভাবে দুটোই কম হয়। হাতে ভাজা মুড়ির খরচের পরিমাণ অনেক বেশি। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে মুড়ি তৈরি পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে অনেকেই।

    গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের কম্বল পড়া, বাশাকৈর গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের পত্রিক পেশা মুড়ি ভেজে বিক্রি করা। এখান কার মুড়ি স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি হতো দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে। কয়েক বছর আগে গ্রামের মেঠো পথ ধরে হাঁটতেই নাকে ভেসে আসে গরম মুড়ির মিষ্টি গ্রান। বর্তমানে অতি চেনা মুড়ি ভাজা গ্রামের মানুষ গুলো পেশা বদল করছে। রমজান আসলেই আবার প্রান চঞ্চল ফিরে আসে এই গ্রামে। নতুন উদ্যমে মুড়ি ভাজার কারিগররা লেগে পরে তাদের পুরনো পেশায়। বাড়তি আয়ের টাকা দিয়ে ঈদ উদযাপন করতে পারে পরিবারের সদস্যরা।

    কম্বল পড়া গ্রামের অর্ধশত বছর বয়সী রহিমা খাতুন জানান, এই গ্রামে নতুন বৌ হয়ে আসার পরদিন থেকেই মুড়ি ভাজার কাজে লেগে পরি। প্রথম দিকে ভালো মুড়ি ভাজতে পারতাম না। স্বাশুরির কাছ থেকে শিখেছি মুড়ির ধান প্রস্তুত সেখান থেকে মুড়ি ভাজার নানা কৌশল। প্রতিদিন গড়ে ৭ মন চালের মুড়ি ভেজে ছি। দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে পাইকাররা মুড়ি কিনতে বাড়িতে আসতো। মুড়ির পাশাপাশি খই , চিড়া ও মুওয়া তৈরি করে বিক্রি করেছি। এ সব মুখরোচক শুকনো খাবার বিক্রি করে সংসার চালিয়েছি পাশাপাশি স্থায়ী সম্পদ করেছি অনেক। এসব এখন গল্পের মতো মনে হয়। বাজারে তাহলে মুড়ির চাহিদা কমে গেছে। অনেকের মুখে শুনি বাজার নাকি ছেয়ে গেছে মেশিনে ভাজা মুড়ির কারনে। সাদা রঙের অনেক বড় হয় হাতে চাপ দিলেই আটার মতো গুড়া হয়ে যায়। খেতে কোন স্বাদ লাগে না মুড়িতে নাই আগের মতো গ্রান। থাকবে কি করে এসব মুড়ি তৈরিতে ব্যাবহার হয় হাইব্রিড জাতের ধান; ভাজার সময় দেয়া হয় নানা ধরনের ওষুধ , হাতের স্পর্শে পায়না। আমরা মুড়ি ভাজার আগে ধান থেকে চাল; চাল থেকে মুড়ি কোথাও ব্যাবহার করিনি ওষুধ নিজেদের হাতে করেছি সব। ওই সব মুড়ির কারনে হাতে ভাজা মুড়ির কদর কমে গেছে। তাদের খরচ অনেক কম । আমাদের একদিকে খরচ বেশি অন্যদিকে আগুনের সাথে যুদ্ধ করে তপ্ত বালিতে ভাজতে হয় মুড়ি, ভালো মানের মুড়ি ভাজতে সময় লাগে অনেক। সবকিছু মিলিয়ে আমাদের আগের মতো দেশীয় মুড়ির চাহিদা নাই বলে জানালেন।

    মুড়ি ভাজার কাজের মূল কারিগর গৃহিণীরা তাদের সঙ্গে এই কাজে যুক্ত হচ্ছেন তাদের পরিবারের ছোট ছোট সদস্যরাও বাদ পরছেনা তাদের স্বামীরা। স্বামী-স্ত্রী মিলেমিশে মুড়ি ভাজার দৃশ্য দেখা গেছে বিভিন্ন বাড়িতে।

    মুড়ি ভাজার সাথে সহযোগী রেবেকার স্বামী সুলতানা মিয়া বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে বাড়িতে মুড়ি ভেজে বিক্রি করছি। মুড়ি বিক্রি করে কোন মতে সংসার চলে যায়। রমজান মাস এলে মুড়ির চাপ বেড়ে যায় অনেক। আমাদের গ্রামের হাতে ভাজা মুড়ির খ্যাতি রয়েছে দেশব্যাপী। এই মুড়িতে কোনো রাসায়নিক সার দেয়া হয় না। লবণ আর বালু দিয়ে ভাজা হয় মুড়ি। তাই সারা বছর ধরে আমাদের মুড়ির চাহিদা বেশিই থাকে। মুড়ি ভাজতে আমন,পুইকা,বি আর-১১ ব্যাবহার হয়। ১ মণ ধানে ২৭ কেজি চাল হয়।১মণ চালের মুড়ি ভাজলে ১৮ -২০ কেজি মুড়ি তৈরি হয়। রমজান মাসে সারাদিন মুড়ি ভাজালেও অন্য সময় আমরা এক বেলা মুড়ি ভাজার কাজ করি।

    কদম আলী গ্রামে ঘুরে ঘুরে মুড়ি কিনতে আসা পাইকারের সাথে দেখা তিনি বলেন, আমি গ্রাম থেকে মুড়ি কিনে ঢাকা শহরের বড় বড় ব্যবসায়ীদের দোকানে পাঠিয়ে দেই। হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা সারা বছর থাকলেও রমজানে এর চাহিদা বাড়ে কয়েক গুণ। বর্তমানে হাতে ভাজা প্রতি কেজি মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকায়। মেশিনে তৈরি মুড়ি বিক্রি হয়৭০-৮০ টাকায়। হাতে ভাজা মুড়ি রাসায়নিক মুক্ত হাওয়ায় স্বাস্থ্য সচেতন লোকরা বেশি কিনে। রমজানের মাসজুড়ে হাতে ভাজা মুড়ি সাপ্তাহে ২০থেকে ২৫ মন করে কিনি। বছরের অন্যান্য দিনগুলোতে সাপ্তাহে ১০ থেকে ১২ মন কিনি। মেশিনের মুড়ির দাম কম থাকায় ওইসব মুড়ি বেশি চলে।

    কালিয়াকৈর সদরের মুড়ির দোকান থেকে হাতে ভাজা মুড়ি কিনতে আসা ক্রেতা স্বপ্না বলেন, মেশিনের মুড়ির স্বাদ ভালো হয়না। কিন্তু হাতে ভাজা মুড়ি অনেক সুস্বাদু এবং খেয়েও তৃপ্তি পাওয়া যায়। তাই প্রতিবছর এখান থেকেই মুড়ি কিনে নিয়ে যাই। গত বছরের তুলানায় এ বছর মুড়ির দাম বেশি । যে মুড়ি আগে ৪৫-৬০টাকা কেজিতে কিনেছি এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৮০টাকায়। আর হাতে ভাজা মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকায়।

    বহুদিনের পত্রিক পেশা অল্প পুঁজির এই ব্যবসা করে কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষরা সুনাম কামিয়েছে। কোনো সরকারি বেসরকারি ব্যাংক এগিয়ে আসেনি তাদের পাশে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুলো স্বল্প সুদে এসব মুড়ি উৎপাদনকারীদের ঋণ সহায়তা দিলে ব্যবসার পরিধি বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করছেন মুড়ি উৎপাদনকারীরা। তাদের দাবি, সরকার তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করলে তারা বেশী করে মুড়ি ভাজতে ও বিক্রি করতে পারবে।

    কালিয়াকৈর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মিজানুর রহমান জানান, হাতে ভাজা মুড়ি খেতে অনেক সুস্বাদু। এই মুড়িতে কোন ধরনের রাসায়নিক না থাকায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে না। মেশিনে ভাজা মুড়ি বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করে । ওইসব মুড়ি খেলে বিভিন্ন ধরনের রোগের আক্রমণ হতে পারে। মুড়ি ভাজা এই শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টদের সরকারিভাবে সহযোগিতা করার তেমন কিছু না থাকলেও দলগতভাবে তারা যদি আবেদন করে সেক্ষেত্রে সুদ বিহীন ঋণ বিতরণ করা যেতে পারে।

    এফএস

    ট্যাগ :

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…