শরীয়তপুরে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁই ছুঁই। তীব্র দাবদাহে যখন মানুষ এক প্রকার মরতে বসেছে, সেই সময় আবার বিক্রির জন্য গাছ কেটে সাবাড় করে ফেলেছে বন বিভাগ। তীব্র তাপপ্রবাহ ও কম বৃষ্টিপাতের কারণে গ্রীষ্মকাল দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। এসবের পরও উন্নয়নের নামে প্রায় বৃক্ষশূন্য করে ফেলা হচ্ছে শরীয়তপুরকে।
গত কয়েক বছরে সরকারি ভাবে কাটা হয়েছে কয়েক হাজার গাছ। এত পরিমাণ গাছ কাটা হলেও রোপণে নেওয়া হয়নি তেমন কোনো উদ্যোগ। গত তিন অর্থবছরে একটি গাছও রোপণ করেনি বনবিভাগ। পাশাপাশি বৃষ্টিপাত কম হওয়ার ফলে বর্ষার ভরা মৌসুমেও স্বাভাবিক বৃষ্টি না হওয়ায় সেচনির্ভর হয়ে পড়েছে চাষাবাদ। একসময় এখানে ছিল পর্যাপ্ত গাছপালা ও ঝোপঝাড়। এগুলো এখন প্রায় নিঃশেষ।
নদী বেষ্টিত শরীয়তপুর জেলা, এ জেলা চারপাশে রয়েছে পদ্মা ও মেঘনা নদী। তবুও তীব্র গরমে এ বছর নাজেহাল শরীয়পুরবাসী। চলতি অর্থবছরে জেলার ১৯ কিলোমিটার সড়কে প্রায় ১৭শ গাছ অপরিকল্পিতভাবে কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে বন বিভাগের বিরুদ্ধে। এতে করে তীব্র গরম প্রকোপ আকার ধারণ করেছে। জেলার হাসপাতাল গুলোতেও বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে বিপুল সংখ্যক গাছ রোপনের দাবি সচেতন মহলের।
প্রকৃতিতে গ্রীষ্মের তাপদাহ। একটানা তাপপ্রবাহে নাকাল হয়ে পড়েছে দক্ষিণের জনপদ শরীয়তপুরের মানুষ। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যেন বেড়েই চলছে।বাইরে আগুনে পোড়া গরমে জীবন দুর্বিষহ হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে মানুষ। অল্পতেই হাঁপিয়ে উঠছে শ্রমজীবী মানুষ। যেখানে সেখানে ছায়া নেই, পেটের তাগিদে ঘর থেকে বের হতে হচ্ছে পেশাজীবী মানুষের। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। সব মিলিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহে প্রভাব ফেলছে জীবনযাত্রায়।
বন বিভাগের তথ্য মতে, শরীয়তপুর জেলার ছয়টি উপজেলায় চলতি অর্থবছরে ১৯ কিলোমিটার সড়কের পাশে দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্পের আওতাধীন প্রায় ১৭শ গাছ অপরিকল্পিতভাবে টেন্ডার করে বিক্রি করেছে বন বিভাগ। এরমধ্যে ভেদরগঞ্জ উপজেলার পুরাতন মোল্লার বাজার হতে বাংলা বাজার পর্যন্ত ১ কিলোমিটার, চরপায়াতলি হতে হাকিম আলি ব্রিজ পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার, সদর উপজেলার বাংলা বাজার হতে গোড়ার ঘাট পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার, আটং ডিসি রোড হতে পম লাকার্তা পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার। ডামুড্যার স্বনির্ভর হতে কুতুবপুর পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার। গোসাইরহাটের দপ্তরি বাড়ি হতে মলংচরা পর্যন্ত ১ কিলোমিটার রাস্তার গাছ কাটা হয়েছে। এছাড়াও বিপুলসংখ্যক গাছে বিক্রির অপেক্ষায় মার্ক করে রেখেছে বন বিভাগ। এতে করে আরো বাড়ছে প্রকৃতিতে গ্রীষ্মের তাপদাহের তীব্রতা।
অন্যদিকে তীব্র গরমের কারণে গত কয়েকদিনে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে কয়েক শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে। যাদের মধ্যে ডায়রিয়া, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, খিচুনিসহ নানান রোগের প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। তাই সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের।
শরীয়তপুর জেলা পরিষদের সদস্য সৈয়দ ইকবাল হোসেন সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, শরীয়তপুরে প্রচন্ড তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। এর প্রতিকার পেতে হলে সকলের গাছ লাগিয়ে তা পরিচর্যা করে বড় করতে হবে। এর জন্য সকল শ্রেণির মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। আমি জেলা পরিষদের পক্ষে থেকে সবাইকে বলবো সবাই বেশি করে গাছ লাগান এতে পরিবেশর ভারসাম্য রক্ষা পাবে।
সমাজ সেবক ও সচেতন নাগরিক এডভোকেট তৌহিদ কোতোয়াল সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, তিব্র গরমে শরীয়তপুরের জনজীবনে বিপদগ্রস্থ। বর্তমান শরীয়তপুরের ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধমান রয়েছে। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারন হল জলবায়ু পরিবর্তন। এই জলবায়ু পরিবর্তনকে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের প্রচুর পরিমাণ গাছ লাগাতে হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, শরীয়তপুরের বন বিভাগ নতুন করে সরকারি বিভিন্ন জমিতে রাস্তার পাশে গাছ লাগাবেতো দূরের কথা, তারা এই গত অর্থবছরে প্রায় ১ হাজার ৯শ গাছ কেটেছে। সরকারি একটা সংস্থা যদি তাদের যেই দায়িত্ব ছিলো, তা সঠিক ভাবে পালন না করে, গাছ না লাগিয়ে, নতুন করে গাছ কাটে। তা পরিবেশের ভারসাম্য যদি নষ্ট করে তাহলে এই তাপদাহ আর কমবে না আরো বারবে।
শরীয়তপুর ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা মো: সালাহউদ্দিন সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, আমরা এই বছরের দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্পের আওতাধীন ১৯ কিলোমিটার রাস্তার প্রায় ১ হাজার সাতশো গাছ কর্তন করা হয়েছে। ১০ বছরে হলেই আমরা এই গাছ কর্তন করে ফেলি। তবে আমরা চুক্তিশর্ত অনুযায়ী এই বছর আমরা ১৯ হাজার পরিবেশ বান্ধব গাছ লাগাবো। তবে গত তিন অর্থবছরের কেন গাছ লাগানো হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এড়িয়ে যান।
এবিষয়ে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন আহম্মেদ সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, গাছগুলো যে কেটে ফেলা হয়েছে সেই বিষয়টা দেখছি। নতুন করে গাছ লাগাবে কিনা জানতে চাইলে বলেন আপাতত আমরা কাজ চালাচ্ছি পরে জানাবো বলে তিনিও এড়িয়ে গেছেন।
শরীয়তপুরবাসীর দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন গাছ রোপন করলে তীব্র তাপদাহের থেকে কিছুটা স্বস্তি পাবে সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা নেবে বন বিভাগ এমনটাই প্রত্যাশা এই অঞ্চলের মানুষের।
এফএস